ক্রমশ উত্তেজনা বেড়েই চলেছে ইউক্রেন সীমান্তে। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই দুই ইউক্রেনিয়ান সেনার মৃত্যু হয়েছে। তবে রক্তক্ষরণের পরেও শান্ত হচ্ছে না পরিস্থিতি। এবার ইউক্রেন সীমানায় রাশিয়া মোতায়েন করল ভয়ঙ্করতম ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইস্কান্দার’। তবে এই দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বন্দ্ব যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আকার নিতে পারে, তেমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই যুদ্ধ পরিস্থিতি? আসলে আকস্মিক মনে হলেও, এই দ্বন্দ্বে বীজ রোপণ হয়েছিল ২০১৪ সালে। ইউক্রেনের ডোনবাস অঞ্চলে ২০১৪ সাল থেকেই চলছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। আর এই আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল রাশিয়া। এমনকি বছর সাতেক আগে ইউক্রেনের থেকে ক্রিমিয়া প্রদেশ বিচ্ছিন্ন করে, তার দখল নিয়েছিল মস্কো। ইউক্রেনের অভিযোগ এবারেও ঘটতে চলেছে একই ঘটনা। যদিও রাশিয়ার বক্তব্য, সীমান্তে শান্তি ফেরাতেই এই বন্দোবস্ত।
তবে বিশ্বের অধিকাংশ কূটনীতিবিদই অন্য এক তত্ত্ব খাড়া করছে রাশিয়ার এই সক্রিয়তা প্রসঙ্গে। রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়ায় জল দুষ্প্রাপ্য সম্পদ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সেখানে আরও চরমে পৌঁছেছে জলাভাব। আর সেই কারণেই রাশিয়া বাগে আনতে চাইছে ডোনবাস প্রদেশকেও। ডোনবাস অধিগ্রহণ সম্ভব হলে ইউক্রেনের মধ্যে দিয়ে ক্রিমিয়া পর্যন্ত করিডোর বানাতে পারবে রাশিয়া। তাতে অনেকটাই আয়ত্তে আনা যাবে জলের সমস্যাকে।
আজভ সাগর এবং আর্মিয়ানস্ক অঞ্চলে ক্ষমতা দখল করেও, জলের সমস্যা সমাধান করতে পারত রাশিয়া। তবে সেখানে ইউক্রেনের সেনার শক্ত ঘাঁটি থাকায় ঝুঁকি নিচ্ছেন না পুতিন। বরং জনবসতিপূর্ণ ডোনবাসকেই বেছে নিয়েছেন অধিগ্রহণের জন্য। কারণ, সেখানে সাধারণ মানুষের বসতির জন্যই সেইভাবে প্রত্যাঘাত করতে পারবে না ইউক্রেন। পাশাপাশি রাশিয়ার মদতপুষ্ট মিলিশিয়া দলেরও সহযোগিতা পাবেন ভ্লাদিমির পুতিন।
আরও পড়ুন
বাইডেন-কে নির্বাচনে হারাতে চেয়েছিল রাশিয়া!
রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে এই যুদ্ধকালীন তৎপরতার মধ্যেই ইউক্রেনকে সামরিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বাইডেন। এমনকি ইতিমধ্যেই কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে নজরদারি বাড়িয়েছে মার্কিন যুদ্ধবিমান। পাঠানো হয়েছে বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজও। অন্যদিকে রাশিয়াকে নিরস্ত্র হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জার্মান প্রশাসন এবং তুরস্ক।
এককথায় বলা যায়, ডোনবাসকে ঘিরেই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি। আর এই ঘটনাকেই বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাস বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্বালেও ঘটেছিল এমনটাই। এখন দেখার, কূটনীতিবিদদের এই আশঙ্কা সত্যিই রক্তক্ষয়ী মোড় নেয় কিনা…
আরও পড়ুন
মাত্র এক বছরে ৫ লক্ষ জনসংখ্যা হ্রাস, রাশিয়ার রিপোর্ট ঘিরে উদ্বেগ
Powered by Froala Editor