দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক মোটেই সুখকর নয়। আমেরিকা আর রাশিয়ার দ্বৈরথ তো সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে চলে আসছে। আজও সেই অম্লতিক্ত সম্পর্কের তেমন পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু বিপদটা যখন সমস্ত মানুষের, তখন সেই দূরত্বটুকু সরিয়ে রেখে হাতে হাত রেখেই এগোতে হবে। আর সেই উদ্দেশ্যেই করোনা বিধ্বস্ত আমেরিকার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল রাশিয়া। মস্কো বিমান বন্দর থেকে আকাশে উড়লো কার্গো বিমান। আর সেই বিমানের মধ্যে ছিল মাস্ক, মেডিক্যাল গাউন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য।
আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার রাজনৈতিক সম্পর্ক যাই হোক, তাতে অবশ্য মানবিক সম্পর্কে ছেদ পড়েনি কোনোদিন। কিছুদিন আগেও যখন ক্যাটরিনা ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল আমেরিকার জনজীবন, তখনও ত্রাণসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছিল রাশিয়া। আর সাম্প্রতিককালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন গোটা পৃথিবী। আমেরিকার মতো উন্নত দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও বিপর্যস্ত। আর তাই ৩১ মার্চ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে আমেরিকার মাটিতে পা রাখল রাশিয়ার বিমান। এএন-১২৪।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অনেকেই মনে করছেন, নিছক সাহায্য নয়, এর মধ্যে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে রাশিয়া। কিন্তু সেই সব জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে পুতিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেস্কভ জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন প্রতিটা দেশই বিপদের সম্মুখীন তখন সবাইকে একসঙ্গেই এগোতে হবে। আর কোনো গত্যন্তর নেই। অতএব আমেরিকার প্রয়োজনে রাশিয়া সাহায্য করেছে এবং আমেরিকাও এই পরিস্থিতিতে সাধ্যমতো রাশিয়ার পাশে দাঁড়াবে, এটুকুই প্রত্যাশিত।
বর্তমানে নোবেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কতটা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে, সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সময়টা অবশ্যই সমস্ত রাজনৈতিক তরজা দূরে সরিয়ে রেখে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর। রাশিয়ার মতোই বিপর্যস্ত আমেরিকার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাইওয়ানও। এই মানবিক উদ্যোগগুলি নিশ্চই আগামী দিনে পথ দেখাবে। সমস্ত দেশ-কাঁটাতারের সীমানার বাইরে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইটা যে সর্বত্রই একইরকম।