ভাঙাচোরা মাটির দেওয়াল। তার ওপরেই সযত্নে কালো রং-এর প্রলেপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ব্ল্যাকবোর্ড (Blackboard)। দেওয়াল লিখনের ধাঁচে লেখা হয়েছে নামতা থেকে শুরু করে বাংলা অক্ষরমালা— সবই। খোলা আকাশের নিচেই চলছে পঠন-পাঠন। বর্ধমান (Bardhaman) জেলার জামুরিয়ার জবা গ্রামের আটপাড়ায় গেলে এই দৃশ্য চোখে পড়তে বাধ্য। সেইসঙ্গেই নজর কাড়বে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা ‘রাস্তার মাস্টার’ শব্দবন্ধটিও।
প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত। এখনও প্রকোপ বজায় রেখেছে করোনাভাইরাস। আর মহামারীর আবহে তালা ঝুলেছে স্কুল-কলেজের গেটে। তবে থমকে নেই পড়াশোনা। প্রযুক্তির দৌলতে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই চলছে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস। কিন্তু প্রান্তিক অঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা? যাদের ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাদের কাছে স্মার্টফোন খানিকটা বাতুলতাই বটে। তাছাড়াও মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়াও দুষ্কর অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে। তবে কি শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এইসব ছাত্রছাত্রীরা?
সমস্যার সমাধান করতে নিজের কাঁধেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন জামুরিয়ার ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক (Dwipnarayan Nayek)। রাস্তাকেই যেন স্কুলে পরিণত করেছেন তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
তবে শুধু কচিকাঁচাদেরই নয়, তাঁর এই কর্মসূচি অভিভাবকদের জন্যেও। প্রান্তিক এই গ্রামের অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্করাও প্রথাগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁদের কিশোরবেলায়। তাই ফার্স্ট জেনারেশন লার্নারদেরও এই প্রকল্পের অংশ করে নিয়েছেন দীপনারায়ণ। শুরু করেছেন একদম শূন্য স্তর থেকে। সাধারণ পঠন-পাঠনের পাশাপাশি একইভাবে চলছে গ্রামবাসীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার লড়াই-ও। কুসংস্কারের পর্দা সরাতে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলেছেন ছোটোখাটো একটি ল্যাবরেটরি। অণুবীক্ষণ যন্ত্র থেকে শুরু করে নানাভাবে হাতে ধরেই তিনি পাঠ দিচ্ছেন বিজ্ঞানের।
আরও পড়ুন
মাটির দেওয়ালই ব্ল্যাকবোর্ড, গোটা গ্রামকেই ক্লাসঘর বানিয়ে নজির শিক্ষকের
মাস কয়েক আগের কথা। গ্রামবাসীদের ভ্যাকসিনভীতি কাটাতেও অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলেন দীপনারায়ণ। ভ্যাকসিন নিলে কুপন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। পাশাপাশি সচেতনতা গড়ে তুলতে গোটা গ্রামে প্রচার চালিয়েছিলেন পুরোদমে। সব মিলিয়ে প্রান্তিক জেলার এই শিক্ষকের কর্মসূচি শুধু প্রশংসনীয়ই নয়, বরং তা শিক্ষণীয়ও বটে। তাঁর এই শিক্ষাপ্রসারের মডেল বৃহত্তরভাবে সারা রাজ্যে লাগু হলে হয়তো বদলে যেতে পারে সমাজের গোটা ছবিটাই।
আরও পড়ুন
‘সন্তানকে শিক্ষিত সাইকোপ্যাথ বানাবেন না’, আর্জি হলোকাস্ট-ফেরত শিক্ষকের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ঐতিহ্যবাহী টেস্ট পেপার, অবিভক্ত বাংলার শিক্ষক-ঐক্য ও শতবর্ষের এবিটিএ