মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে স্কেটিং-চর্চা, নেপথ্যে জার্মান পর্যটক

স্কুলবাড়ির সামনে ছোট্ট এক টুকরো জমি। সেখানেই রয়েছে আস্ত একটি স্কেটিং পার্ক। গাছ-গাছালিতে ঘেরা সেই পার্কেই স্কেট বোর্ডে ভর করে উড়ান দিচ্ছে জনা পঁচিশ খুদে। এ যেন এক অন্য উড়ান। না, বিদেশের গল্প নয়। এই দৃশ্য ভারতেরই। মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম জানওয়ার। এখনও পাকা রাস্তা গড়ে ওঠেনি এই গ্রামে, সব বাড়িতে পৌঁছায়নি বৈদ্যুতিক আলোও। কিন্তু তা সত্ত্বেও অত্যাধুনিক স্কেটিং-এর পরিকাঠামো কীভাবে গড়ে উঠল সেখানে?

বছর ছয়েক আগের কথা। ২০১৫ সাল। খাজুরাহোর টানে মধ্যপ্রদেশে ছুটে এসেছিলেন এক জার্মান পর্যটক। উলরিকে রেনহার্ড। কিন্তু শুধুই কি খাজুরাহো? কথায় আছে ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া। ভারতের প্রতি প্রান্তেই যে ছড়িয়ে রয়েছে বিস্ময়ের ডালি। শুধু খাজুরাহো দেখেই তাই আর নিজের দেশে ফেরা হয়নি উলরিকের। বদলে, গ্রামীণ ভারতকে অন্বেষণের নেশা চেপে বসেছিল তাঁর মাথায়। 

সেভাবেই পান্না জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পের নিকটবর্তী জানওয়ার গ্রামে এসে পৌঁছান তিনি। প্রত্যন্ত এই গ্রামে এসে উলরিকে বিস্মিত হন গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো দেখে। স্কুল বলতে, গ্রামে একটিই মাত্র প্রাথমিক স্কুল। সেখানেও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হাতে গোনা। না, হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি উলরিকে। বদলে গ্রামের শিশুদের পড়াশোনায় ফেরাতে নিজেই অভিনব এক উদ্যোগ নেন তিনি। পান্নার তৎকালীন সাংসদের থেকে অনুমতি নেওয়ার পর তৈরি করে ফেলেন আস্ত একটি স্কেটিং পার্ক এবং একটি দাতব্য স্কুল। 

কিন্তু ভারতের বুকে, বিশেষত মধ্যপ্রদেশের এমন প্রত্যন্ত জেলায় স্কেটিং শেখানোর লোক কই? প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে নিজেই মাঠে নেমেছিলেন উলরিকে। ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিলেন স্কেটিং-এর মাদকতা। স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন তাদের শৈশবকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই নেশা মিশে গেছে তাদের রক্তে। পাশাপাশি স্কেটিং-এর আকর্ষণে বেড়েছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও। 

আরও পড়ুন
হার মেনেছে দৃষ্টিহীনতাও, স্কেটবোর্ডে ভর দিয়েই অলিম্পিকের স্বপ্ন জন্মান্ধ খেলোয়াড়ের

বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামে গেলে খুদে স্কেটারদের দক্ষতা দেখলে বিস্মিত হতে হবে যে কাউকেই। উপযুক্ত পরিকাঠামো কিংবা আর্থিক সাহায্য পেলে, নিঃসন্দেহে তারাই হয়ে উঠবে ভারতের আগামীদিনের নতুন তারকা। কিন্তু সরকারের কাছে আবেদন করেও এখনও সাড়া মেলেনি কোনো। আগামীতেও আদৌ কোনো সাহায্য মিলবে কিনা, ঠিক নেই তারও। তা বলে তো স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে যেতে পারে না। অর্থিক অনটনকে উপেক্ষা করেই তাই প্রতিদিন নিজেদের একটু একটু করে গড়ে তুলছে মধ্যপ্রদেশের ভবিষ্যৎ-তারকারা…

আরও পড়ুন
লকডাউনেই বিশ্বরেকর্ড, স্কেটবোর্ডে ১০৮০ ডিগ্রির মোচড় ১১ বছরের অ্যাথলিটের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্কেটিং-এ খুঁজে পাওয়া স্বাধীনতার মন্ত্র, অস্কারের মঞ্চে স্বীকৃতি আফগান মেয়েদের