চলতি করোনা অতিমারীতে বারবার প্রশ্ন উঠছে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে। কোথাও হাসপাতালে শয্যা নেই, কোথাও শয্যা থাকলেও নেই অক্সিজেনের যোগান। কালোবাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে জীবনদায়ী ওষুধ। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেশের প্রতিটা শহর বিপন্ন। কিন্তু গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠিক কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে? এই প্রশ্নটা কিছুটা আলোচনার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আর তার মধ্যেই সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, দেশের মোট কোভিড আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই বড়ো শহরের। গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের মাত্রা হয় কম, নয়তো পরীক্ষা পরিকাঠামোর অভাব। তবে মহামারীকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে এবার গ্রামাঞ্চলের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে দেশের সমস্ত হাসপাতালের ৭৫ শতাংশের বেশি রয়েছে শহরাঞ্চলে। অথচ সেখানেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ঠিক বিপরীত দৃশ্য দেখা যাবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। অথচ অতিমারীর প্রাথমিক অবস্থায় এটা স্বাভাবিক হলেও প্রায় দেড় বছর পর এমনটা হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। অতএব একমাত্র সম্ভাবনা এবং আশঙ্কার বিষয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষ সঠিকভাবে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। সার্বিকভাবে ভারতে এখনও কোভিড নিয়ে যথেষ্ট কুসংস্কার থেকে গিয়েছে। শহরাঞ্চলে ব্যাপক সংক্রমণের কারণে তা কিছুটা কাটলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষ নিজেকে কোভিড আক্রান্ত ভাবতেই ভয় পাচ্ছেন। সামান্য উপসর্গ দেখা দিলে তাকে সাধারণ সর্দি-কাশি ভাবতেই পছন্দ করছেন মানুষ। তাছাড়া সমস্ত জায়গায় পরীক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামোও নেই। শুধু আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানোর জন্যই হয়তো একজন মানুষকে ৫০ কিলোমিটার দূরের শহরে যেতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে মানুষ পরীক্ষা করাতে চাইবেন না, এটাও স্বাভাবিক।
অতিমারীর প্রথম তরঙ্গেই দেখা গিয়েছিল, শহরাঞ্চলে সংক্রমণ যখন নিম্নমুখী, ঠিক তখনই গ্রামাঞ্চলে প্রকোপ বাড়তে থাকে। এখন সার্বিক পরিসংখ্যান বলছে দেশজুড়ে সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখী। তবে এই তথ্য প্রায় সবটাই শহরকেন্দ্রিক। অতএব এই সময়েই গ্রামাঞ্চলে প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। ফলে সেইসমস্ত জায়গায় চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে অবিলম্বে। আর এই কাজে কেন্দ্র-রাজ্য বোঝাপড়ার পাশাপাশি পঞ্চায়েত স্তরের প্রশাসনকেও এক সূত্রে বেঁধে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। যে সমস্ত মানুষদের বাড়িতে আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেই, সেখানে পৃথক পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। সব স্তরের মানুষের মিলিত অংশগ্রহণই পারে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে। নাহলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই রোগের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
লোহার ফুসফুস নিয়েই ৬৮ বছর, করোনায় সন্ত্রস্ত আলেকজান্ডার