রাস্তায় কখনও খুঁজে দেখেছেন ব্যোমকেশ বক্সীর বাড়ি? চিনাপট্টির মেসবাড়ি থেকে যেখানে উঠে এসেছিল অজিত। খুঁজতে গেলেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে সেই বুড়ো বাড়িটার সামনে। যে বাড়ির ভেঙে পড়া সাইনবোর্ডের গায়ে লেখা আছে প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউস, স্থাপিত ১৯১৭। ঠিকানা ৬৬ নং, হ্যারিসন রোড (অর্থাৎ আজকের মহাত্মা গান্ধী রোড)। কিন্তু ৬৬ নং-এর পর যেন হ্যারিসন রোড কথাটাই আজও এসে পড়ে। ইতিহাস যেন এভাবেই তাড়া করে বেড়ায়। এই মেসবাড়িতে বসেই ব্যোমকেশের হাত দিয়ে কত রহস্যের সমাধান করেছেন লেখক শরদিন্দু। আর সেই পুঁটিরাম নেই, কিন্তু বৃদ্ধ শেখ কাশেম আলিকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেন তিনতলার কোন ঘরে থাকতেন শরদিন্দু।
শুধু শরদিন্দুই নন, এই মেসবাড়িতে থেকেছেন জীবনানন্দ দাশও। আর তাই যেন আজও চুন খসে পড়া দেয়ালের গায়ে সেইসব পুরনো কাগজের আর দোয়াতের গন্ধ লেগে আছে। এত স্মৃতি এসে ভিড় করছে কারণ সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাঘুরি করছে একটি খবর। একশ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাস বুকে নিয়ে নাকি প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউসও হয়ে যাচ্ছে ইতিহাস। চিরকালের জন্য নাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেসবাড়ি।
এই কথার সত্যতা জানতেই প্রহরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল বর্তমান মালিক সন্দীপ দত্তের সঙ্গে। তবে প্রশ্ন শুনেই তিনি অবাক হয়ে বললেন, “লকডাউনের জন্য এখনও মেস বন্ধ আছে। কিন্তু করোনার আতঙ্ক শেষ হলে আবারও খুলবে।” তবে কি সামাজিক মাধ্যমের জল্পনা একেবারেই ভিত্তিহীন? জবাবে সন্দীপ বাবু জানান, “নিন্দুকেরা অনেক কথাই রটাতে পারে। প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউস এবং ভাতের হোটেল মহল দুইয়েরই যথেষ্ট ঐতিহ্য আছে। এত সহজে তাতে চিড় ধরানো যাবে না।”
তবে এর মধ্যেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রমশ স্বাভাবিক হওয়ায় মেসের দু-একজন আবাসিক ফিরে এসেছেন। সামাজিক মাধ্যমের জল্পনায় তাঁদের চিন্তাতেও মেঘ জমেছে। আবার বিশেষ কাজের সূত্রে সন্দীপ বাবু কলকাতার বাইরে থাকায় দুশ্চিন্তা আরও জমাট বেঁধেছে। তবে সন্দীপ দত্ত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিন পুরুষের ব্যবসা যেভাবেই হোক টিকিয়ে রাখবেন তিনি। হ্যাঁ, কলকাতার মেস হয়তো সত্যিই এবার ইতিহাসের পাঠ্য হয়ে উঠতে চলেছে। কিন্তু ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরেও তো বেঁচে থাকতে চায় মানুষ। এমন একটা ঐতিহ্যশালী বাড়ির যথাযোগ্য সংস্করণ হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু আধুনিকতার তলায় এখনও সবকিছু চাপা পড়ে যায়নি।
আরও পড়ুন
টেলিভিশনে ব্যোমকেশ; রাজিত কাপুরকে সঙ্গী করে হিন্দিতেই বাজিমাত বাসু চট্টোপাধ্যায়ের
ছবি ঋণ - মেসবাড়ি প্রোজেক্ট
আরও পড়ুন
সিনেমায় চশমা-পরা ব্যোমকেশ, সত্যজিতের ‘চিড়িয়াখানা’ দেখে অখুশি শরদিন্দু
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অসময়েও ইলিশের ঢল, ‘রুপোলি শস্যে’র স্বাদে মজেছে জীবনানন্দের বরিশাল