আজ থেকে ৭০০ বছর আগে প্রয়াত হয়েছিলেন ইতালির কিংবদন্তি কবি দান্তে আলিগিয়েরি। তাঁর ‘ডিভাইন কমেডি’ আজও আধুনিক কবিদের অবাক করে। সেই কবিকে সম্মান জানাতেই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত হয়েছিল একটি সভার। উপস্থিত বক্তারা কেউ সাহিত্যে দান্তের অবদান নিয়ে আলোচনা করলেন, কেউ দান্তের স্মৃতিতে নিজের লেখা কবিতা পাঠ করলেন। আর এরপর মঞ্চে উঠে এল আই-ডা (Aida)। এবার থমকে গেলেন সমবেত দর্শক-শ্রোতারা। কারণ আর কিছুই না, আই-ডা তো মানুষ নয়। সে একজন রোবট (Robot)। অথচ সে হাজির হয়েছে তাঁর নিজের লেখা কবিতা নিয়ে।
হ্যাঁ, রোবটের লেখা কবিতা। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। এর আগেও একাধিক কবিতা লিখেছেন আই-ডা। অতিমারী পরিস্থিতিতে একাধিক অনলাইন কবিতা সম্মেলনে সেই কবিতা পড়েছেন তিনি। তবে সরাসরি দর্শকদের সামনে বসে কবিতা পড়া এই প্রথম। শুধু কবিই নন, আই-ডা একজন শিল্পী এবং একজন ভাস্করও। মূলত ছবি আঁকার জন্যই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তৈরি করেছিলেন আই-ডাকে। আর এর নেপথ্যে ছিলেন ব্রিটিশ গ্যালারির শিল্পী আইডান মেলার। ২০১৮ সালে শুরু হয় পরিকল্পনা। এক বছরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় আই-ডা, বলা ভালো জন্ম হয় তার। তবে প্রথম প্রথম কিছু জ্যামিতিক ছবি ছাড়া কিছু আঁকতে পারত না সে। কিন্তু দেখতে দেখতে ছবি আঁকার কৌশল আয়ত্ত করে নেয় তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কয়েকমাস আগে আত্মপ্রতিকৃতি এঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আই-ডা।
দান্তেকে নিয়ে কবিতা লেখার আগে তাঁর তিন খণ্ডের ‘ডিভাইন কমেডি’ খুঁটিয়ে পড়েছে আই-ডা। শুধু তাই নয়, যে মহাকাব্য পড়তে শিক্ষিত মানুষদের বারবার হোঁচট খেতে হয়, আই-ডা সেই মহাকাব্য শেষ করেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। আসলে একটা কথা প্রায়ই শোনা যেত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর যাই করুক, মানুষের সৃজনশীলতার জায়গা দখল করতে পারবে না কোনোদিন। এই ভুল ধারণাটাই ভাঙতে চেয়েছেন আইডান মেলার। তবে তারপরেও তাঁর বিশ্বাস, রোবটের কাছে মানুষ হেরে যাবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং মানুষের সৃষ্টিকে মানুষই নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু তার আগে জানতে হবে রোবট কী কী করতে পারে।
Powered by Froala Editor