‘খুনি দরওয়াজা’, ঝরতে থাকা রক্ত এবং মধ্যযুগের চম্বল

দুর্ধর্ষ দুশমন – ৯

আগের পর্বে

রাস্তা রয়েছে, কিন্তু গাড়ি নেই। কৃষকদের হাতে জমি আছে, ফসল আছে, কিন্তু টাকা নেই। রেশনকার্ড তা শুধু ভোট দেওয়ার জন্য। কারণ রেশনের দোকান বহুদূরে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। পাঠশালার পর উচ্চশিক্ষার জন্য নদী পেরিয়ে যেতে হবে মধ্যপ্রদেশে। চম্বলের চায়ের দোকানে বসে এক বৃদ্ধ বলেছিলেন দুর্দশার কথা। নদী পেরিয়ে জিপে করে ভিন্ড। যমুনা, চম্বল আর তার শাখা নদী কুঁয়ারী, কালীসিন্ধ ও পাহুজ এই পাঁচ নদীকে মিলে স্থানীয় ভাষায় পাঁচনদা। যা ছিল বাগী সভ্যতার কেন্দ্র। ভিণ্ড যাওয়ার পথে জিপের ড্রাইভারও বলেছিল আজ ডাকাত না থাকলেও। ও বেহড় হাতছানি দেয় আজও। কারণ তাঁর মন্ত্রবীজ ‘খুন কা বদলা খুন’...

এই গান আমি কালকেও শুনেছি খেড়া রাঠোরের মানুষের মুখে। তারা বলে ডাকাত এখনো আছে, তবে খুব বেশি কিছু না। কিছু কিছু দল এখনো আছে। হঠাৎ হঠাৎ উদয় হয় রাতের অন্ধকারে। যখন খাবারের দরকার পরে। তবে আগের মতো আর নেই। পুলিশ সবকো খতম কর দিয়ে। রাস্তায় গল্প করতে করতে হঠাৎ চোখে পড়ে একটি বেহড়ের মাথায় এক পরিত্যক্ত রাজপ্রাসাদ। জিজ্ঞেস করায় জানতে পারি এটা ভদাওর রাজাদের তৈরি অটের দুর্গ। এর মূল নাম দেবগিরি দুর্গ। চম্বলনদীর উত্তর দিক থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে। এই দুর্গ তৈরি করেছিলেন মহারাজ বদন সিংহ। এক সময় এরাই মানসিং-এর মতো ডাকাতদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মনে পড়ল কাল পূরণ সিং বলেছিলেন, যে ভদাওর রাজাদের বর্তমান রাজাকেই তারা ভোটে সমর্থন করেন। যেতে যেতে জানতে চাইলাম এই অটের কেল্লার কি কোনো কাহিনি আছে? যশবর্ধন জানালেন, ‘সাহাব ইয়ে এক আজিব কিলা হ্যায়। ইসকা রাজ আজতক কোই জান নেহি পায়া। না জান পায়া ইসকা খুনি দরওয়াজা সে খুন টপকনেকা রাজ’। আবারো গল্পের গন্ধ। জানতে চাইলাম, তুমি জানো এর কাহিনি? যশবর্ধন বলেন, শুধু আমি কেন চম্বলের বাচ্চা বাচ্চা জানে এর কথা। বললাম অনেকটাই তো যেতে হবে। শোনাও না গল্প। যেতে যেতে যে গল্প, যে বিস্ময়কর গল্প আমি জানতে পারলাম তা সত্যিই অবাক করার মতো।

চম্বলনদীর তীরে অবস্থিত অটের দুর্গের ঐতিহাসিক ইমারত আজো ভদাওর রাজাদের শৌর্যগাঁথার সাক্ষী বহন করে চলেছে। শৌর্যের প্রতীক এই কেল্লার লাল দরজা থেকে রক্ত ঝরে পড়ত, আর সেই রক্তের তিলক কপালে আঁকার পরেই গুপ্তচর রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতেন। আজো এই দরজাকে ঘিরে বহু কাহিনিই প্রচলিত আছে চম্বলে। এই খুনি দরজার রংও লাল। সেই সঙ্গে এখনো দরজার উপরের সেই জায়গাটিও চিহ্নিত রয়েছে যেখান থেকে একসময় রক্ত ঝরে পড়ত। এটি একটি মধ্যযুগীয় কেল্লা। এই কেল্লা চম্বলনদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত যা নিজের গৌরবান্বিত মহিমার পাশাপাশি নিজের সৌন্দর্য্যের কারণেও বিখ্যাত ছিল। অটের কেল্লা চম্বলের পাড়ে একটি উঁচু পাহাড়ের মতো জায়গায় অবস্থিত। মহাভারতের যে দেবগিরি পাহাড়ের উল্লেখ রয়েছে এই কেল্লা সেই পাহাড়ের উপরই অবস্থিত। মহাভারতের যে দেবগিরি পাহাড়ের উল্লেখ রয়েছে এই কেল্লা সেই পাহাড়ের উপরই অবস্থিত। এই দুর্গ বা কেল্লার আসল নাম হল ‘দেবগিরি দুর্গ’। হিন্দু আর মুঘল স্থাপত্যকলার এক অদ্বিতীয় নমুনা। এই কেল্লাটির নির্মাণ ভদোরিয়া রাজা বদন সিংহ ১৬৬৪ সালে শুরু করিয়েছিলেন। ভদোরিয়া বা ভদাওর রাজাদের নামেই ভিণ্ড এলাকাকে এক সময় ‘বধাওয়ার’ নামে ডাকাত হত। গভীর চম্বলনদীর ঘাটি (উপত্যকা)-তে অবস্থিত এই কেল্লা ভিণ্ড জেলার পঁয়ত্রিশ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত।

 ভদাওর রাজাদের ইতিহাসে এই কেল্লার গুরুত্ব অপরিসীম। এই কেল্লার প্রধান আকর্ষণ হল ‘খুনি দরজা’, ‘বদন সিংহের মহল’, ‘হাতিয়াপোর’ (হাতিয়ারশালা), ‘রাজা কা বাংলা’, ‘রানী কা বাংলা’ আর ‘বারা খাম্বা মহল’। কিন্তু এই কেল্লার সবচেয়ে চর্চিত হল খুনি দরজা। যশবন্তের মুখ থেকে শোনা চম্বলের প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী ভদাওর রাজারা লাল পাথরের তৈরি দরজার উপরে ভেড়ার মাথা কেটে রেখে দিতেন। দরজার নীচে একটি পাত্র রাখা হত। এই পাত্রে রক্ত ঝরে পড়ত। গুপ্তচরেরা রক্ত দিয়ে কপালে তিলক এঁকে তবেই রাজার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন এবং তারপরই রাজপাট এবং শত্রু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সূচনা রাজাকে দিতেন। সাধারণ মানুষ কেল্লার দরজা থেকে বওয়া এই রক্তের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানতে পারত না। 

 

আরও পড়ুন
‘বীহড়ো মে শাপ হ্যায়, পতা নেহি ফির কিসকো কব খিঁচ লে’

অটের দুর্গের ঐতিহাসিক প্রবেশদ্বারের নির্মাণ করেন রাজা মহাসিংহ। লাল পাথরের তৈরি এই দরজা আজো খুনি দরজা নামেই পরিচিত। সাম্প্রতিককালে ঐতিহাসিকরা জানতে পেরেছেন যে এই কেল্লার উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে মহাভারতেও। যদিও ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এই কেল্লা মাত্র সাড়ে তিনশো বছরের পুরোনো। এই কেল্লার সঙ্গে বহু কিংবদন্তি ঘটনার যোগ রয়েছে, যার মধ্যে সোনা-রুপোভর্তি গুপ্তধনের পাশাপাশি ক্ষতিকারক জাদুবিদ্যা এবং অন্যান্য গুপ্তধনের কাহিনিও রয়েছে। এই অটের দুর্গের আজকে ধ্বংপ্রাপ্ত হওয়ার কারণও কিন্তু স্থানীয় মানুষদের লোভ। এই দুর্গের প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী গুপ্তধনের লোভে স্থানীয় মানুষেরা ভাঙচুর পর্যন্ত করেছে। এই দুর্গের দেওয়াল, মেঝে শয়ে-শয়ে মানুষ গুপ্তধনের লোভে খুঁড়ে ফেলেছে। যে কারণে এই স্থাপত্য আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আজ এই কেল্লা পরিত্যক্ত, নির্জন, নির্বান্ধব। পুরাবিভাগের একটা সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছু রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। রাত-বিরেতে আশ্রয় নেয় চোরছ্যাঁচোড়ের দল। বসে জুয়ার আড্ডা। এত বড়ো কেল্লায় একজন মাত্র কেয়ারটেকার। অতীতের সেই ঝলমলে ভদাওর রাজাদের দুর্গ আজ চরম অবহেলায় ধ্বংসের মুখে।

 

আরও পড়ুন
চম্বলের ডাকাতদের খপ্পরে পড়েছিলেন হিউয়েন সাং; খুন হন আকবরের জীবনীকার আবুল ফজলও

গল্প শুনতে শুনতে জিপ এসে থামে একটি জায়গায়। একটা ঘিঞ্জি বাজার মতো এলাকা। এখানেই জিপের গন্তব্য শেষ। এবার একটা মাথা গোঁজার আস্তানা খুঁজতে হবে আমাকে। তারপর শুরু করতে হবে কাজ। উত্তরপ্রদেশ আর রাজস্থানের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রদেশের এই ভিণ্ড। কারণ এই ভিণ্ডই অন্যান্য দুটি রাজ্যের তুলনায় ডাকাতের জন্ম দিয়েছে অনেক অনেক বেশি। একে তাকে জিজ্ঞাসা করে সেই ঘিঞ্জি এলাকা পেরিয়ে এলাম প্রশস্ত রাজপথে। সামনেই হাসপাতাল, ইন্টারস্টেট-বাসস্ট্যান্ড, কিন্তু হোটেল পাচ্ছি না কোনো। শেষ পর্যন্ত  এক পুলিশকর্মীকে জিজ্ঞাসা করে একটা লজে উঠলাম। অন্য দু-একটা লজ যা দেখেছিলাম তার ভাড়া আর আমার বাজেট এক না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এমন একটা লজে উঠলাম, যেটা নামেই লজ। আসলে বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। প্রথমে যে ঘরটা আমাকে দেওয়া হল, সেটায় একটা খাট, কোনোমতে একটা আয়না লাগানো, ঘরে পা ফেলার জায়গা নেই। আর অ্যাটাচ্‌ড বাথরুম! আহা সে যত কম বলা যায় ততই ভালো। মোট চার-হাত একটা ঘর, তার মধ্যে চেপেচুপে একটা কমোড লাগানো। ওটাই স্নান ঘর, আর ওটাই বাথরুম। আমাকে বলা হল আপাতত এখানে বিশ্রাম নিন। আগামীকাল বিয়েবাড়ি খালি হলে আমাকে ভালো ঘর দেওয়া হবে। কোনোমতে ফ্রেশ হলাম। এই লজেরই নিজস্ব একটি মিষ্টির দোকান আছে, সেখানেই সিঙ্গারা সবজি আর চা সহযোগে ব্রেকফাস্ট সেরে ঘরে এসে ঘণ্টা-দুয়েকের ঘুম দিলাম। কারণ কাল অজগর আর রাতের বাইক আতঙ্ক আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে। খাবার না পেলেও চলবে, যে কাজের জন্য এসেছি তার জন্য যথেষ্ট ঘুম দরকার।

 

আরও পড়ুন
মানসিং-এর আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে হাজির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী রুক্মিণীদেবী

ভিণ্ডে আমার প্রধান লক্ষ্য তিনজন। মোহর সিং, মালখান সিং আর মানসিং-এর প্রিয় সহচরদের অন্যতম, যিনি মানসিং-এর এনকাউন্টারের সময়ও তার পাশে ছিলেন, সেই লোকমান দীক্ষিত ওরফে লুক্কাডাকাত। হোটেল থেকে লুক্কাডাকাতের বাড়ি খুব বেশি দূর নয়, আর তার যেহেতু বয়েস হয়েছে তাকে গেলেই পাওয়া যাবে। তাই সেটা সবার শেষে যাব। তার আগে আমি আমি মালখান সিং আর মোহর সিং-এর খোঁজে যাব। আর এখান থেকে মুরেনা বা অন্যান্য জায়গাগুলো কতদূর সেটা খোঁজ খবর করব। কারণ মুরেনা আমার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং কারণ সেখানকার মন্দির যা লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছে, অনেকেই জানে না। সেই সঙ্গে সেইসব মন্দির সংলগ্ন জলাশয়ে কুমীর স্যাংচুয়ারী আর অতি অবশ্যই বাগী মাধো সিং। চম্বলের যে কয়েকজন ডাকাত জনপ্রিয়, মাধো সিং তারমধ্যে অন্যতম। তবে ডাকাতির কারণে মাধো সিং আমার কাছে ইন্টারেস্টিং নন। আমার কাছে তার ইন্টারেস্ট অন্য জায়গায়। আত্মসমপর্ণের পর তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ তিনি পাননি। নিতান্ত দারিদ্র্যের মধ্যে তার দিন কেটেছিল। তিনি ছিলেন তহসিলদার সিং-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ১৯৭২-এ জয়প্রকাশ নারায়ণের সামনে যে বিশালসংখ্যক ডাকাত আত্মসমপর্ণ করেছিলেন তার নেপথ্য কারিগর ছিলেন তিনি আর তহসিলদার সিং।

 

আরও পড়ুন
পুলিশের ‘বিশ্বাসঘাতকতায়’ গুলিবিদ্ধ রূপা সিং, আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন কুইন

মাধো সিং-এর ব্যাপারে আমার আরো আগ্রহের কারণ শেষ জীবনে বেনারসের রাস্তায় রাস্তায় তিনি ম্যাজিক শো দেখিয়ে রোজগার করতেন। এমনকি ম্যাজিক শেখার জন্য তিনি কলকাতায় পিসি সরকার (সিনিয়র) এর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন। মুখ্যধারার হিন্দি কয়েকটি সিনেমাতেও তিনি এক্সট্রার পার্ট করেছেন ভিলেনের সহযোগী হয়ে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হল, যখন প্রথমদিকে জয়প্রকাশ নারায়ণ মাধো সিং-কে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাগীদের আত্মসমপর্ণের ব্যাপারে, সেই সময় তিনি কলকাতা এসে গোপনে দেখা করেছিলেন জ্যোতি বসুর সঙ্গে। এসেছিলেন সাহায্য চাইতে। তবে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জ্যোতি বসুও। ফলে মাধো সিং আমার কাছে ভীষণই একটা ইন্টারেস্টিং চরিত্র।  

 

আরও পড়ুন
চম্বলের দুর্ধর্ষ লাখন সিং-এর চরিত্রে সুশান্ত, মনোজ বাজপেয়ী ছিলেন মানসিং-এর ভূমিকায়

‘অভিশপ্ত চম্বল’, ‘বেহড় বাগী বন্দুক’-এর মাধো সিং-এর কাহিনি আমি এই দুটো বই থেকে যতটা না জেনেছি, তার বেশি জেনেছি ভিণ্ড বাসস্ট্যান্ডের এক টাইমকিপারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে কাঁধের ঝোলাব্যাগ নিয়ে নীচের মিষ্টির দোকানে আসি। প্রথমেই এই লজের কেয়ারটেকারকে আমার উদ্দেশ্যের কথা জানাই। কেন এসেছি আমি ভিণ্ডে। সেখানকার কেয়ারটেকার আমাকে খানিকটা নিরাশই করেন। তিনি খানিকটা গালাগালি দিয়েই আমাকে বলেন, এখন আর কোথায় ডাকু! ও সব বদমাশ লোক। আগে তো বন্দুক হাতে মানুষকে লুঠ করত এখন তাদের কেউ কেউ নেতা হয়ে বন্দুক ছাড়াই মানুষকে লুঠছে। কেয়ারটেকারই আমাকে বলেন এখান থেকে খানিকটা দূরে মেহেগাঁও বলে একটা জায়গায় থাকেন মোহর সিং। তিনি আর কোনো কথা বলতে চাইলেন না। অগত্যা বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাই, মেহেগাঁওয়ের কী কী বাস আছে জানার জন্য। সেই সঙ্গে যদি মালখানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়। বাসস্ট্যান্ডের একটা ঠেলা গাড়ির হোটেলে ছোলে ভটুরে খেতে খেতে একটা লোকের সঙ্গে আলাপ হয়। তাকেই প্রশ্ন করি, আচ্ছা এখান থেকে মেহেগাঁও কত দূর? তিনি বলেন দূর আছে, এক-দেড় ঘণ্টা লাগবে। বছর সত্তর পঁচাত্তরের সেই লোকটা আমাকে বলে, তোমাকে তো দেখে এখানকার মানুষ মনে হচ্ছে না। মেহেগাঁওতে গিয়ে তুমি কী করবে?

Powered by Froala Editor

More From Author See More