দুর্ধর্ষ দুশমন : ২
আগের পর্বে
চম্বল মানেই ডাকাতদের হেড-কোয়ার্টার। চম্বলের কুখ্যাত ডাকাত ছিলেন মানসিং। পুলিশ হোক বা সরকার, মানসিংকে অন্য চোখেই দেখত সকলে। পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হলেও মারা যাননি তিনি। বেঁচে ছিলেন বাকিদের মুখে মুখেই। তাঁর সেই আসনে বসেছিলেন তাঁর পালিত পুত্র রূপনারায়ণ সিং বা রূপা মহারাজ। পরবর্তীকালে যিনি পালক পিতা ও দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। তাঁর রাজত্বে হয়েছিল প্রায় দেড়শোর বেশি খুন, কয়েকশো ডাকাতি, থানা দখল, অপহরণ। মধ্যপ্রদেশে এখনও ‘ডাকাত-মুক্ত চম্বল’-এর কথা নির্বাচনে ঘোষণা করলেও, এখনও বহু মানুষই প্রতিদিন যোগ দিচ্ছেন সেই দলে।
শত্রুদের নিকেশ করতে যে-কোনও সীমা পার করে দেওয়া রূপা চম্বলের সবচেয়ে বুদ্ধিমান আর সাহসী অফিসারের সঙ্গে বন্ধুত্বও করে ফেললেন। দুই শত্রুর মধ্যে এমন এক বন্ধুত্ব, যা চম্বলের পুলিশ আর ডাকাতের সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। দুজনেরই নিশানা একজন - লাখন সিং। মানসিং-এর পর ভাগ্যের সহায়তায় গ্যাং-এর সর্দার হওয়া রূপাও ভাগ্যের হাতেই মারা পড়ল। বন্ধুত্ব আর শত্রুতার এক অদ্ভুত খেলা চম্বলের এই ডাকাতের কাহিনি। চম্বলে সবচেয়ে বেশি পুলিশকে নিজের গুলির নিশানা বনানো রূপার কাহিনি আসলে চম্বলের এক সুপুরুষ এবং মায়াময় নীল চোখের বাচ্চার হ্যাজেল্ড আই মনস্টারে পরিবর্তিত হওয়ার কাহিনি। নীল চোখের এই বাচ্চা এমন শত্রুতার মধ্যে চম্বলের বেহড়ে আশ্রয় পেল, যে শত্রুতার সঙ্গে তার দূর দূর পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক ছিল না।
খেড়া রাঠোর, যারা তরুণ ভাদুড়ির ‘অভিশপ্ত চম্বল’ বা ‘বেহড়বাগীবন্দুক’ পড়েছেন বা আমার বই ‘আবার চম্বল’, তারা এই গ্রামটির সঙ্গে পরিচিত। চম্বল সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান থাকা যে কোনো মানুষের মনেই এই গ্রামটির নাম গেঁথে রয়েছে। কারণ এই গ্রামটি ছিল চম্বলের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম ডাকাত মানসিং রাঠোর বা দাউ মান সিংয়ের গ্রাম। এই গ্রামেই নিজের বাড়ির পেছনের দরজা খুলে অন্যায়ের প্রতিবাদে তিন ছেলে আর দাদাকে নিয়ে বেহড়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মান সিং। ৩ মার্চ ১৯৩৯। আর ওই খেড়া রাঠোর থেকেই শুরু হয়েছিল আমারও বেহড়ের অভিযান, তারিখটাও সেই ৩ মার্চ ২০১৭। যেদিন বাহ ডিস্ট্রক্টের জৈতপুর কালানের জিপ স্ট্যান্ডে আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল মানসিং-এর নাতি মহাবীর সিং-এর সঙ্গে। যে আমাকে এক রাত আশ্রয় দিয়েছিল নিজের বাড়িতে। আর সেই দিনই মাঝরাতে দেখা দিয়েছিল এক রাতের আতঙ্ক, যার বাইকের শব্দে আমার ঘুম ভেঙেছিল, সেই লাল্লন ছিল এই রূপার নাতি। যে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলতে ফেলতে বলেছিল ‘নয়া পঞ্ছি মালুম হোতা হ্যায়’। এই খেড়া রাঠোর সহ পুরো চম্বলের কাছে মানসিং একজন রবিনহুড, যাকে নিয়ে চারণ কবিদের বাঁধা গান আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। এমনকি রোজ সন্ধ্যায় মানসিং-এর নামে বানানো মন্দিরে মানসিং আর রুক্মিণীদেবীর মূর্তির সামনে বসে এখনও গায় খেড়া রাঠোর গ্রামের বাসিন্দারা।