দুর্ধর্ষ ‘দুশমন’ – ১
চম্বল উপত্যকার নাম উঠতেই মনের মধ্যে সবার আগে যে ছবি আসে, তা হল শোলের গব্বর সিং। কিংবা লম্বা গালপাট্টা, ছয় ফুটের উপর লম্বা বন্দুক কাঁধে এক বেহড় থেকে আরেক বেহড়ে দাপিয়ে বেড়ানো ভয়ঙ্কর সব ডাকাতের ছবি। তাই বছর তিনেক আগে আগে যখন আমাকে বলা হয় চম্বলে যেতে হবে ডাকাতদের নিয়ে কভার স্টোরি করতে। সাংসারিক আমিটার একটু বুক কাঁপলেও, আমার বাউন্ডুলে সত্তাটা নেচে উঠেছিল। তবে ডাকাত শব্দটা দিয়ে চম্বলের ওই ভয়ঙ্কর মানুষগুলোকে ডিফাইন করলে তাদের প্রতি খানিকটা অন্যায়ই করা হবে। ডাকাত আর বাগী দুটোর মধ্যে অর্থগত এবং প্রকৃতিগত অমিল প্রচুর। এরা কেউই স্ব-ইচ্ছায় ডাকাত হয়নি। পরিস্থিতি, সমাজ এবং আইন এই তিনে মিলে এদের সমাজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শত্রু বানিয়ে তুলেছিল। তাই তো আমাকে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় মালখান খেদোক্তি করেছিলেন, ‘বাগী বনতে নেহি সাহাব, বানায়ে যাতে হ্যায়।’
শেওপুর, মুরেনা থেকে শুরু করে ভিন্ড জেলা পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে চম্বল নদীর ধারের অধিকাংশ গ্রাম ক্রমবর্ধমান বেহড়ের কারণে তলিয়ে যাচ্ছে। উর্বর আর বসতিযোগ্য জমি ধারাবাহিকভাবে বালুময় মালভূমি আর পাহাড়ি টিলায় পর্যবসিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধ্য হয়ে নিজের জমি বাড়ি ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান বেহড়ের কারণে বিচ্ছিন্ন এবং তলিয়ে যাওয়া এমন গ্রামগুলিকে স্থানীয়রা বলেন ‘বেচিরাগ গাঁও’। অর্থাৎ, নির্বংশ হয়ে যাওয়া গ্রাম। সরকারি পরিসংখ্যানের হিসেবে গত ৬০ বছরের চম্বল উপত্যকার ৮০০০ হেক্টর জমি এই বালুকাময় বেহড়ে পর্যবসিত হয়ে গিয়েছে। ১৯৫৩ থেকে শুরু করে ১৯৯২-এর মধ্যে এখানে ‘স্টেট সয়েল কনজার্ভেশন’ আর রিভাইন ইরেশন কন্ট্রোল’ এর মতো বেশকিছু বড়ো পরিকল্পনাও এই ক্রমবৃদ্ধিমান বেহড়কে আটকাতে চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি কাজ বলে কথা! অতএব এই পরিকল্পনার ফাইলগুলো, কৃষি, রাজস্ব, আইন আর সামাজিক ন্যায়ের মত রাজ্যের বেশকিছু বিভাগে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে লাল ফিতের ফাঁসে দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছে। একটি দায়িত্বপূর্ণ বিভাগের অভাবে এই পরিকল্পনাগুলোর জবাব ঠিক হয়নি, আর জমির ক্ষয় যেমনকে তেমনই রয়ে গেছে।