চায়ের গল্প, নানা রকমের শ্রম ও জাতিনির্মাণ

সময়ভ্রমণ - ৫৫
আগের পর্বে

১৯৫৬ সালে স্বাধীন ভারতের চা-শিল্পের অবস্থা বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিশন তৈরি করা হয়। কমিশনের রিপোর্টে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে লভ্যাংশের বণ্টন নিয়ে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এবং এই কাজে সরকারের মধ্যস্থতার প্রয়োজনের কথাও জানায় কমিশন। তবে সেইসব কোনোকিছুই পরে মানা হয় না। কেবল কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক প্ল্যান্টারদের নতুন চারাগাছ লাগানোর বিষয়ে কর লাঘব করার বিষয়টি কার্যকর হয়। অর্থাৎ পুরোটাই হয় মালিকশ্রেণীর স্বার্থে। অন্যদিকে কমিশনের রিপোর্টে দেখা যায়, স্বাধীন ভারতেও চা ব্যবসায় বিদেশি কোম্পানিগুলিরই সংখ্যা বেশি। তারা বাগানের পরিকাঠামো এবং মজুরি খাতেও খরচ বেশি করে থাকে।

নেপাল থেকে দার্জিলিং পাহাড়ের চা-বাগিচায় কুলির কাজ করতে আসা লোকজনেরা কে কেমন, জাতগোত্র ধরে তার বিচার করেছেন অনাম্নী প্ল্যান্টার। সায়েবদের মধ্যে অনেকেই পাহাড়ি মানুষদের বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন, যা তথ্য আমাদের জানা তার প্রায় সবটাই সায়েবদের যোগাড় করা। এই সায়েব সে জাতে পড়েন না, তিনি কুলিদের দেখছেন নেহায়েত প্ল্যান্টারের চোখ দিয়ে--কাজে লাগবে, না লাগবে না? জাতগোত্র ব্যাপারটা দার্জিলিংয়ের বাগিচায় বিশেষ প্রাধান্য পাবার কারণ, কুলি যোগাড়ের সর্দারি পদ্ধতি। সর্দার(বা তদনিযুক্ত দফাদার) নিজের লোকজনকেই দার্জিলিংয়ে নিয়ে আসত, বাগিচায় তাদের বসতিও জাতের হিসেবে তৈরি হত। প্ল্যান্টাররা সেকারণে কুলি চিনতেন জাত দিয়ে। যে লেখার কথা হচ্ছে, সেখানে জাত ধরে ধরে কুলির দক্ষতা বিচার করা হয়েছে যেভাবে, তার পুরোটাই তুলে দেওয়া যেতে পারে (বোঝাই যায় মুখের কথা শুনে তালিকা তৈরি হয়েছে, নামগুলো ঠিকভাবে বলা নেই, সম্ভাব্য ঠিক নাম বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া হল) - 

নেপালিদিগের মধ্যে অগুন্তি জাতি হয়---
১/ বাওন(ব্রাহ্মণ), থুগরে(ঠাকুর?)--উচ্চ জাত, প্রধানত ভিখারি, বাগানের কাজে অচল
২/ ছেত্রে(ছেত্রী)--এই লোকগুলিন সচরাচর পরিশ্রম করে না, গরুমহিষাদি পালন করে
৩/ গুরুং, মঙ্গর, ভোটিয়া মুরমি--জাতি বিচারে সমমানের। ইহারা কুলি হিসাবে উত্তম, অধিকাংশ বাগানে ইহারাই কর্ম করে
৪/ নেওয়ার, জারমে(?), হিউ(?), কুমবু(খামবু, জিমদার--রাই নামে অধিক পরিচিত), লুরুং(লোহরঙ--ইয়াখা জাতির শাখা), লিম্বু, সুনওয়ার--নেওয়াররা সাধারণত ব্যবসায়ী অথবা দোকানদার। কুমবু অথবা জেমদার কুলি হিসাবে উত্তম, কতিপয় বাগানে শুধুমাত্র ইহারাই কর্মরত। লুরুংগন উত্তম শ্রমিক, কিন্তু আপন গোত্রে মিলামিশা করে, তদুপরি কলহপ্রিয়, কল্পিত অভিযোগে দলবদ্ধভাবে বাগান ছাড়িয়া চলিয়া যায়। লিম্বুগন লেপচাদিগের সঙ্গে বিবাহাদি করে, খুবই নোংরা করিয়া পাতি তুলে, কিন্তু নিড়ানির কর্ম করিতে সক্ষম। সুনওয়ারগন রত্নকার, উত্তম কুলি, কার্সিয়াঙ অঞ্চলে দেখিতে পাওয়া যায়।
৫/ কারমি(কামি), ধিরজি(দর্জি), সার্কি, গিরটি(?)--ইহারা নীচ জাতিভুক্ত। কারমিগন রত্নকার অথবা কর্মকার, ধিরজিগন পোশাক বানায়। সার্কিরা জুতা তৈয়ার করে, চর্মকার। গিরটি অথবা গুয়েলমা, নেপাল দেশের দাস জাতি, ইহারা কেহই উচ্চ জাতের কুলিদিগের সহিত পানভোজন করিতে পারে না। ভুটিয়াগন সচরাচর বাগানে কর্ম করে না, মাল ও বাক্স ইত্যাদি বহন করিয়া থাকে। 

বর্ষাকালীন শ্রমের জন্য লেপচাগন উপযুক্ত নহে, কিন্তু ইহারা দ্রুত জমি পরিষ্কার করিতে পারে। এই জাতিটি রোগব্যাধি এবং অন্তর্বিবাহ-জনিত কারণে মরিয়া যাইতেছে। বাগানে স্বল্প কয়েকজনকে দেখিতে পাওয়া যায়...

বন্ধনীর ভেতরের নামগুলো খানিক আন্দাজে, খানিক রিসলের বই ঘেঁটে বসানো হল। সে বই ১৮৭২-এর, প্ল্যান্টারের নোটটা ১৮৮০-র। সেই থেকে সময় গিয়েছে চলে শতাব্দী শতাব্দী পার, অন্তত দেড়শো বছর। চাবাগিচার কুলিবাজারের মেছোহাটায়, পুরো দার্জিলিংয়ের পাহাড় জুড়ে শহর বসানোর ধাক্কায়, এখানকার লোক ওখানে এবং ওখানকার লোক এখানে আসতেই থাকায়, পুরোনো জাতিপরিচয় ঘেঁটেঘুটে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, সুতরাং পুরোনো নামগুলো বোঝাও যায় না। নেপাল থেকে দার্জিলিংয়ে এসে এক জাতির লোক হামেশা অন্য জাতি বলে নিজেদের চালিয়ে দিয়েছেন। দিতেই হত, সায়েবরা জাতিবিচার করে লোক নিতেন, মজুরি সে অনুপাতে ধার্য হত। কাদের দিয়ে কী কাজ হয়, মনে মনে সে আঁক কষে রাখতেন নিয়োগকর্তারা, তা তিনি প্ল্যান্টার হোন বা সেনাপতি। নেপালের জাতিব্যবস্থার ভিত বাগিচার পুঁজি তৈরির অর্থনীতিতে অটুট থাকার কথা নয়, থাকেওনি। অথচ, সে অর্থনীতি পাহাড়ে সমতলে আমদানি করলেন যাঁরা, তাঁরা পুরনো জাতিব্যবস্থার দেশজ সংস্কারগুলোকে বিনাবাক্যে মেনে নিলেন, এক সময় অন্য সময়ে বেমালুম মিশে গেল। এর ফলে পাহাড়ে হোক বা সমতলে, নতুন জাতিপরিচয় যেমন তৈরি হতে থাকল, পুরোনো পরিচয়ও ভাঙল। এর সবচাইতে বড় উদাহরণ নিছক সায়েবদের প্রয়োজনে গোর্খা নামের একটা 'বড়ো' জাতিপরিচয় তৈরি হয়ে ওঠা। আজকের সময়ের পাহাড় জুড়ে সে পরিচয় ছোটোবড়ো অসংখ্য নেতার গলায় হুঙ্কার দিচ্ছে। সে হুঙ্কারে গলা মেলাচ্ছেন বাগিচাশ্রমিকরাও। 

আরও পড়ুন
চায়ের গল্প, শ্রম ও প্রকৃতিনির্মাণ (নয়)

ব্রিটিশদের তৈরি গোর্খা সেনাবাহিনীর ইতিহাস, সেই ইতিহাসে প্রোথিত গল্পগাছা স্বচ্ছন্দে ঢেকে দিচ্ছে চাশ্রমিকদের বাগিচাজীবন, সেই জীবনের দুঃখযন্ত্রণা, মালিন্য, ক্লেশ। এই দুই গল্প কি করে মিলছে সেটা জানাবোঝা বিশেষ দরকার।  

আরও পড়ুন
চায়ের গল্প, শ্রম ও প্রকৃতি-নির্মাণ (আট)

যত চেষ্টাই করা হোক, প্ল্যান্টারেরা শেষমেষ অবশ্য সরকারকে(কিম্বা রাষ্ট্ৰ) ঠেকিয়ে রাখতে পারল না। রাষ্ট্ৰ মানে এক্ষেত্রে সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্য রক্ষায় গোর্খা সৈন্যরা যারপরনাই বীরত্ব দেখাচ্ছিল, ১৮৫৭য় সিপাইদের সঙ্গে তারা প্রবল আনুগত্য ও দক্ষতা নিয়ে লড়ে যায়। মিডলটন দেখাচ্ছেন, ব্রিটিশরা গোর্খা রেজিমেন্ট বাড়াতে থাকে, ফলে মধ্য ও পশ্চিম নেপালের যেসব জেলা থেকে সেনাভর্তি করা হত, সেখানে লোক কম পড়তে থাকে। লোক বলতে 'যুদ্ধবাজ'(মার্শাল) জাতিভুক্ত লোক, যথা মাগর(মঙ্গর), গুরুং। সেনার নিয়োগকর্তারা পূর্ব নেপালের দিকে মনোনিবেশ করলেন, যেখানে রাই লিম্বু আদি জনগোষ্ঠীর বাস, তারাও সেনাদলে যোগ দিতে চাইছিল। মুশকিল হল, সম্ভাব্য বাগিচাশ্রমিকদের মূল ডেরাও ছিলো ওই এলাকা। শুধু গোর্খা সেনাবাহিনী নয়, আসাম ও বর্মী পুলিশেও পূর্ব নেপালের লোক ঢুকতে থাকল। 

আরও পড়ুন
চায়ের গল্প, শ্রম ও প্রকৃতিনির্মাণ (সাত)

কাদের দিয়ে কি কাজ ভালো হয়, বা করানো উচিত, সে বিষয়ে ব্রিটিশ সায়েবরা হিন্দু সমাজের জাতিপ্রথা অনুসরণ করত। নেপাল ব্রিটিশ দখলে ছিল না বটে, তথাপি নেপালের পাহাড় উপত্যকা চষে ফেলে সায়েবরা সে দেশের বিশদ জাতিমানচিত্র তৈরি করে ফেলেছিল। কোন পাহাড়ে কোন জাতের বাস, জনসংখ্যা কত, এসব নিয়ে অনুপুঙ্খ তথ্য সায়েবদের কাছে মওজুদ ছিল, তদনুযায়ী সেনাভর্তি চলত। ইডেন ভ্যান্সিটার্ট সায়েব এটা নিয়ে একটা আস্ত বই লিখে ফেলেছিলেন। 

আরও পড়ুন
চায়ের গল্প, শ্রম ও প্রকৃতিনির্মাণ (ছয়)

'দি গুর্খাস' নামের এই বই ভ্যান্সিটার্ট লিখেছিলেন তাঁর নিজেরই লেখা নোটস অন গুর্খাস(১৮৯০) এবং নোটস অন নেপাল(১৮৯৫) অবলম্বনে। ১৯১৫-য় এই বই যখন ছাপা হচ্ছে, ভ্যান্সিটার্ট তখন দশম গুর্খা রাইফলস-এ দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে কর্মরত। চতুর্থ গুর্খা রাইফলস-এর প্রথম ব্যাটেলিয়নের মেজর বি ইউ নিকোলে মূল পাণ্ডুলিপি সংশোধন করেন। বইয়ের প্রচ্ছদপত্রে বলা ছিল যে এই বই সরকারি নির্দেশে সংঙ্কলিত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য তৈরি তথ্যপূর্ণ হ্যান্ডবুক বা পাঠ্যপুস্তক। আঠেরো ও উনিশ শতক ধরে নেপাল সংক্রান্ত যে বইপত্র দস্তাবেজ জমা হয়েছিল, তা ঘেঁটে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া তথ্য এক জায়গায় করে ভ্যান্সিটার্ট এই বই লেখেন। সামরিক প্রয়োজনে লেখা হয়েছিল বটে, তথাপি সাগরপারের সাদাচামড়া ঔপনিবেশিকরা কিভাবে উপনিবেশ অঞ্চলের মানুষজনকে দেখতেন বুঝতেন ব্যবহার করতেন, তা বোঝার জন্য এই বইয়ের শরণাপন্ন হতেই হয়। সায়েবসময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দার্জিলিং পাহাড়ের যে সমাজজীবন, তা বুঝতে গেলেও। 

আরও পড়ুন
চায়ের গল্প, শ্রম ও প্রকৃতিনির্মাণ (পাঁচ)

গুর্খা কারা? কাঠমান্ডু থেকে ৫৫ মাইল(৮৮ কিলোমিটার) দূরে, ত্রিশুলীগঙ্গা ও শ্বেতিগণ্ডকী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের প্রধান শহর গুর্খা। সেই শহর এবং আশপাশের এলাকায় যাঁরা বাস করতেন তাঁদের সবাইকেই 

গুর্খা বলা হত। কথিত আছে, সন্ত গোরখনাথ ওই এলাকায় বাস করতেন, তার নাম থেকে গুর্খা। নেপালে যাঁরা থাকেন, তাঁরা সবাই গুর্খা নন, কস্মিনকালে ছিলেনও না। পূর্ব কুমাউ লাগোয়া যে পশ্চিম নেপাল, তার অধিবাসীদের বলা হত পার্বতীয়া, পূর্ব নেপালে থাকতেন কিরান্তিরা, অর্থাৎ রাই, লিম্বু, ইয়াখারা। ভ্যান্সিটার্ট বলছেন, গুর্খা বলে কোন বিশেষ জনজাতি বা গোত্র ছিলো না, গুর্খা অঞ্চলের যে বাসিন্দারা অনেক যুদ্ধবিগ্রহের পর নেপালের পাঁচটা টুকরোকে এক রাজত্বের মধ্যে আনেন, তাঁরাই কালক্রমে গুর্খা নামে পরিচিত হন। ভ্যান্সিটার্টের কথায়:

গুর্খা শহর এবং জেলার বাসিন্দাগন, অন্ততঃপক্ষে যাহারা যোদ্ধা শ্রেণীভুক্ত, তাহারা প্রায় সকলেই খস, মগর এবং গুরুং জাতির। শাসক ও অভিজাতকূল গুর্খা ঠাকুর জাতির।...সুতরাং গুর্খালি বলা হইবে কাহাদের? শুধুমাত্র ঠাকুর, খস, মগর এবং গুরুঙদের।...অতীতে লিম্বু ও রাইগন অধিক সংখ্যায় আমাদের সমস্ত গুর্খা রেজিমেন্টে কর্ম করিয়াছে…(অদ্যাবধি ৫০০০ জন আসাম এবং বার্মা মিলিটারি পুলিশ ব্যাটালিয়নে কর্মরত)। ভারতে, আফগানিস্থানে, বার্মায় ও চীনে উহারা আমাদের সকল যুদ্ধে অংশ নিয়াছে… উহাদিগকে সকলেই এখন গুর্খা বলিয়া মানিয়া লয়...বাহ্যিক শারীরিক গঠনের কথা আসিলে বলিতে হয়, আমি অন্তত মাগর এবং গুরুংদিগের হইতে লিম্বু, রাই ও সুনওয়ারদিগে পৃথক করিয়া বুঝিতে পারি না...সেকারণে এই পুস্তকে গুর্খা বলিতে আমরা ঠাকুর, মাগর, গুরুং, লিম্বু, রাই ও সুনওযারগনকে বুঝিবো... 

ভ্যান্সিটার্ট গুর্খাদের যেভাবে বুঝেছিলেন, সেই বোঝায় তাঁর সেনাজীবনের অভিজ্ঞতা যেমন ছিল, তেমনই প্রখ্যাত পূর্বসুরীদের ভাবনাও। ব্রায়ান হজসনের কথা এ আখ্যানে অনেকবার এসেছে। সাম্রাজ্যভাবনা কিভাবে সমস্ত সাহেবদের তাড়িত ও উৎসাহিত করতো, তা বোঝা যায় ১৮৩২ সালে করা হজসনের এই মন্তব্যে:

বিনম্র নিবেদন, ইহাদিগকে(গুর্খা) এশিয়ামধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সৈন্য কহা যাইবেক। ইহাদিগকে যদ্যপি আমাদিগের রণযশের অংশ প্রদান করা যায়...উহাদিগের শৌর্য, মধেসিগনের(সমতলবাসী) প্রতি তীব্র ঘৃণা, পরিশুদ্ধ সমরাভ্যাস…বিশ্বস্ততার চিহ্নবিশেষ...ইহাদিগকে উত্তম দক্ষিণা ও অন্য অন্য সুবিধাদি উপযুক্তরূপে প্রদানপূর্বক করিলে জাতীয়তাপন্থার প্রভাব, যাহা আমাদিগের পক্ষে ক্ষতিকর, তাহা প্রতিহত করা সম্ভব…

হজসন এবং ভ্যান্সিটার্ট, দুজনের লেখা একসঙ্গে পড়তে পড়তে মনে হল, সায়েবরা চূড়ান্ত সুযোগসন্ধানী ছিল, আজকের ভাষায় বললে, পাক্কা ধান্দাবাজ। নিজেদের পক্ষে যা সুবিধাজনক, হামেশা সেই কথাটাকেই চালানো হতো। নেপালের যে জাতিব্যবস্থায় ব্রিটিশ রাজপুরুষ ও সেনাকর্তারা দোষ দেখতেন না(হ্যামিলটন-বুকাননের বৃত্তান্ত মনে করুন, এবং এমনকি ক্রীতদাসদের দেখেও  ভ্যান্সিটার্টের মনে হয়েছিল, তারা দিব্যি সুখেশান্তিতে আছে), সেই জাতিব্যবস্থায় ও হিন্দু আচার-বিচারে অভ্যস্ত সমতলবাসী ভারতীয় সিপাইদের দেখে হজসন তীব্র কটাক্ষ করছেন। গুর্খা সেনারা সেনাজীবনে মানিয়ে নেয়, খাওয়াশোয়া মেলামেশা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না, বিপরীতে অ-গুর্খারা দেশজ অভ্যাস ছাড়তে পারে না। ভারতীয় এবং অন্যান্য এশিয়দের বিপরীতে গুর্খা 'যোদ্ধা' জাতকে ছক কষে তৈরি করা হচ্ছে; সে জাতির দীর্ঘ গুণকীর্তনের পর ভ্যান্সিটার্ট বলছেন:

অপরাপর প্রাচ্যবাসীর তুলনায়, গুর্খারা সাহসী, দৃঢ়চেতা, বিশ্বস্ত, অমায়িক, অত্যন্ত স্বাধীনচেতা এবং স্বনির্ভর...উহারা ভারতীয় নেটিভদের ঘৃণা করে এবং য়ুরোপীয়দের সহিত সম্ভ্রমপূর্বক মিলামিশা করে, উন্নততর জ্ঞান, সাহস ও শক্তির কারণে যাহাদের প্রশংসার চক্ষে দেখা হইযা থাকে, এবং পোষাকে ও অভ্যাসে যাহাদের উহারা অনুকরণ করে...কথায় আছে, 'টোপিয়ার কামওয়ার, লুঙ্গিয়ার খানেওয়ার'--অর্থ, যারা টুপি পরে তারা কাজ করে, যারা লুঙ্গি পরে তারা খায়।

Powered by Froala Editor