সময়ভ্রমণ - ২৮
আগের পর্বে
পিনের লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে দার্জিলিং-এর নিসর্গ বদলের দৃশ্যটা বোঝা যায়। পাশাপাশি জানা যায়, এই নিসর্গ বদলের কাজে লয়েডের অপরিসীম ব্যর্থতার কথাও। কোম্পানির ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারলে তিনিই হয়ে উঠতেন দার্জিলিং-এর রূপকার। কিন্তু ইতিহাসে সেই জায়গা নিলেন ক্যাম্পবেল। আর লয়েডের নাম পৌঁছে গেল পাদটীকায়। অবশ্য বেশ কিছু রিপোর্ট থেকে মনে হয়, কোম্পানির কাছ থেকেও উপযুক্ত সাহায্য পাননি লয়েড। অন্তত আর্থিকভাবে তো বটেই। লয়েডের এই পরিণতির অনেকটাই ধরা পড়ে তাঁর শেষ চিঠিতে।
লয়েড-কাহিনি এবার শেষ করা দরকার। দার্জিলিং-এর সরকারি দায়িত্ব থেকে অপসারিত হবার পরেও লয়েড দার্জিলিং ছাড়েননি, তাঁর বিরুদ্ধে খবরের কাগজে ও সাময়িকীতে যে বিষোদগার চলছিলই, সেসবের জবাব দেবার চেষ্টা করেছেন সাধ্যমতো, সেনাবাহিনী ছাড়ার পর ফিরে এসেছেন পাহাড়েই, সেখানেই মাটি নিয়েছেন। ২০১১ সাল নাগাদ দার্জিলিংয়ের কিছু বাসিন্দা লেবং কার্ট রোডের পুরোনো কবরখানায় গিয়ে তাঁকে স্মরণ করেন। সে অনুষ্ঠানের কথা জানা ছিল না, তার পরপরই গিয়ে দেখেছি লয়েডের সমাধিসৌধের গায়ে জড়ানো আছে একাধিক সাদা 'খাদা', পাহাড়িরা যে রেশমের কাপড়ের টুকরো দিয়ে অতিথিবরণ করেন, শ্রদ্ধা জানান। আর ছিলো হলুদ-লাল সাইপত্রি, অর্থাৎ গাঁদা ফুলের মালা। মালা শুকিয়ে ঝরে গিয়েছিল কিছুদিন পর। খাদাগুলো থেকে গিয়েছিল বহুদিন। নাকি যাঁরা শ্রদ্ধা জানাতে চাইছিলেন, তাঁরা নতুন খাদা
বেঁধে এসেছিলেন আবার? লয়েডের মৃত্যুর ১৪৬ বছর পর তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন যে স্থানীয়রা, দার্জিলিংয়ের গোলমেলে ঔপনিবেশিক ইতিহাসের ঠিক কোন বিন্দুর সঙ্গে নিজেদের মেলাতে চাইছিলেন তাঁরা? নিতান্তই স্ব-উদ্যোগে সিকিম রাজার কাছ থেকে কূটকৌশলে যিনি বের করে এনেছিলেন দার্জিলিংয়ের প্রথম ভূমিখণ্ড, ঢুকে পড়েছিলেন সিকিম-নেপাল-ভুটান-তিব্বত-চিনের জটিল রাজনৈতিক ইতিহাসের ভিতরে, যাঁর হাত ধরে এই এলাকায় সায়েবশাসনের গোড়াপত্তন ও লেপচা-লিম্বু-ভোটে-মেচ জুমিয়া ও যাযাবর কৌমজীবনের অবসানের সূচনা, তাঁকে কিভাবে দেখছেন আজকের, বিশ্রীভাবে বদলে যাওয়া, বদলাতে থাকা, দার্জিলিং পাহাড়ের বাসিন্দারা?
আজকের, বদলে যাওয়া, বদলাতে থাকা দার্জিলিংয়ের কথা থাক। পুরোনো দার্জিলিংয়ের কথায় ফিরি। গাছ কাটা পড়ছে, বন সাফ হচ্ছে, খালি হয়ে যাচ্ছে একের পর এক পাহাড়। আরো তাড়াতাড়ি গাছ কাটা হোক, বন সাফ হোক, তাড়া আসছে কলকাতা থেকে। বন সভ্যতার শত্রু, বন থাকলে দার্জিলিংয়ে সভ্য সায়েবরা থাকতে পারবেন না, সমতলের দিকে তাকিয়ে মেঘ-রৌদ্রের খেলা দেখতে পারবেন না। লয়েড খুব দ্রুত বন কাটাই করতে পারছেন না, কলকাতার পচা গরমে তামাম কৌন্সিলকর্তা মায় যাবতীয় সায়েবসুবো অস্থির, উইলসনের হোটেল খুলবার দিনক্ষণ ঠিক, লোকে জমিটমি বন্দোবস্ত নিয়ে হাপিত্তেশ করে বসে আছে, কবে কুলি যোগাড় হবে, বন পরিষ্কার করে রাস্তা, বাংলো, বাজার এসব তৈরি হবে, হোম ওয়েদারের নেটিভবিবর্জিত ঠান্ডায় সায়েবদের গ্রীষ্মক্লিষ্ট চামড়া ও প্রাণ জুড়োবে। অপদার্থ লয়েডকে হটিয়ে যোগ্যতর কোনো ব্যক্তিকে দার্জিলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হোক, সিদ্ধান্ত হল। দার্জিলিংয়ের গা ঘেঁষে নেপাল, সেখানে রাজদরবারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে সহ-রেসিডেন্ট ক্যাম্পবেল মওজুদ, সর্বগুণসম্পন্ন, চৌকস। তিনি এ অঞ্চল সম্পর্কে ওয়াকিফহাল, সুতরাং তাঁকে দার্জিলিং পাঠানো হবে, ঠিক হল। কলকাতায় যখন এসব চলছে, লয়েড তিতলিয়া-দার্জিলিং করে যাচ্ছেন, কুলি যোগাড় ও দ্রুত গাছ কাটার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, কলকাতা থেকে অতিথি-অভ্যাগতরা এসে পৌঁছলে তাঁদের প্রাণপণ আপ্যায়ন করছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর স্থির বিশ্বাস ছিলো, পাহাড়প্রমাণ বিঘ্ন-অসুবিধার সামনে দাঁড়িয়ে দার্জিলিংপত্তনের তিনি যা করেছেন, তার চাইতে ভালো কিছু করা সম্ভব ছিল না। ১৮৩৯ সালের ৫ই জুন কোম্পানিকে লয়েড লিখলেন :
১/...একটা গুজব কানে এসেছে...এখান থেকে আমাকে সরিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে আসা হচ্ছে।...এরকম কিছু ঘটলে ধরে নেওয়া হবে সরকারি দায়িত্ব পালনে আমি ব্যর্থ হয়েছি অথবা আমি অকর্মণ্য।...এই পরিপ্রেক্ষিতে দার্জিলিং নিয়ে আমার এতদিনের কাজের বিবরণ সরকার সমক্ষে হাজির করতে চাই, তা বিবেচনা করা হোক, এই আবেদন।
২/মাননীয় কৌন্সিল সভাপতি বাজার তৈরি হয়নি বলে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। আমি আগাগোড়া
বলে আসছি এই কাজের জন্য কোন পদস্থ অফিসারকে পাঠানো হোক। যখন তা হল না, আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম ১৫০০ টাকা অগ্রিম দিলে নেটিভরা বাজার বসাবে, চালাবে। ...কৌন্সিল সভাপতির মত ছিল যে ব্যবসায়ীরা এখানে চলে আসবে...আমি জানতাম যে যতক্ষণ অবধি একটা ভদ্রগোছের রাস্তা না তৈরি হচ্ছে, তা হবার নয়। নিজের পকেট থেকে কিছু টাকা বাজার তৈরি বাবদে আমি অগ্রিম দিই।...সরকারের কাছে যে ৫০০০ টাকা চেয়েছিলাম, অনেক পরে তার এক-তৃতীয়াংশ মঞ্জুর হয়, সেটাও আমার হাতে আসতে আসতে আরো দু মাস চলে গেলো। ততদিনে আমার দেওয়া অগ্রিম টাকায় বাজার তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
দার্জিলিংয়ের ছবি, ছবির দার্জিলিং - দার্জিলিংপত্তন নিয়ে আরও
মালপত্র চালান দেবার জন্য কুলির অভাব এবং হঠাৎই অপ্রত্যাশিতভাবে ক্রেতাদের এসে যাওয়ার ফলে যা মাল জমা হয়েছিল, দ্রুত ফুরিয়ে যায়। প্রচুর পরিশ্রম করে, আরো অগ্রিম দিয়ে আরো মাল আনিয়ে এই অবস্থা সামাল দেওয়া হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কোনরকম আকাল তৈরি হয়নি।
৩/ বাজার নিয়ে অনেকগুলো কথা বলতে হচ্ছে, কেননা আমি এ বিষয়ে সচেতন যে বাজার বিষয়টা বিস্তর হইচই ও কুৎসার কারণ হয়েছে, যারা চেঁচামেচি করছে তারা হয় ব্যাপারটা ওপর ওপর জানে, কিম্বা নিতান্তই তাদের নিজেদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বপালনে ব্যর্থ, সেই ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ লুকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। আমি বলতে চাই, নিচ থেকে হাজার মাল তুলেও তাদের কাজ হত না, কেননা কুলি যোগাড়ে সে সব পদ্ধতি তারা অবলম্বন করছিল তাতে কাজ হতই না।
৪/সংবাদপত্রে আমার বিরুদ্ধে প্রচুর সোরগোল হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আমি মানহানির মামলা করতে চাইছিলাম, কিন্তু সুহৃদবর্গ আমাকে নিরস্ত করে বলেন, এ জাতীয় কুৎসার পক্ষে যে ঘৃণা প্রাপ্য সেই ঘৃণার সঙ্গে এগুলিকে দেখা হোক। এইসব নোংরামিতে সরকার বিচলিত হবেন এটাও আমি ভাবিনি। আমার পদে ঈর্ষিত এমন ব্যক্তিকূল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে আমার ক্ষতি করতে চায় এমন কিছু লোকজনের অপ্রকাশ্য কুৎসার মোকাবিলা করা আরো কঠিন।
আরও পড়ুন
দার্জিলিংপত্তন : লয়েডের বিদায় ও ক্যাম্পবেলের অভ্যুদয়
৫/ ১৮২৯ নাগাদ এই জায়গাটার ভবিষ্যত স্বাস্থ্যনিবাস হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বিষয়ে আমি স্বয়ং বড়লাটের দৃষ্টি আকর্ষণ করি...রাজনৈতিক গুরুত্বের কথাও তুলি। এর ফলে এই অঞ্চলে কিছু করার নানান চেষ্টা বিভিন্ন পদাধিকারীরা চালিয়েছেন, কেউই পায়ের তলায় মাটি পাননি। ১৮৩৩-এ, লার্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক প্রস্তাব দেন যে আমাকে সীমান্তে পাঠানো হোক। স্বল্পকাল পরেই সিকিম রাজার কাছ থেকে উপহারস্বরূপ দার্জিলিং চেয়ে নিতে বলা হয়। বিনিময়ে তাঁকে টাকা কিম্বা সমতল এলাকায় কিছু জায়গা দেবার কথা বলা হয়। রাজার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে ফেলার পর রাজা দার্জিলিং তো দিলেনই, সেই সঙ্গে আরো অনেকটা জায়গা। আজ পর্যন্ত রাজা এই উপহারের বিনিময়ে কিছু ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রথম প্রথম যে সহায়তা তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছিল, পরের দিকে তা না পাবার প্রধান কারণ এটি।
বারো মাসের জন্য সরকার আমাকে এখানে বাস করার নির্দেশ দেয়। তদনুযায়ী, আমি ও ড: চ্যাপম্যান অজস্র অসুবিধা ও ক্লেশ সহ্য করে, বহু ব্যয় করেও এখানে থেকেছি। যে রিপোর্ট আমরা দিই, তা সরকারকে...জনসাধারণের কাছে এখানে থাকার সুযোগ খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
৬/সরকারের ইচ্ছা পূর্ণ করতে গিয়ে যে অপরিমেয় ক্লান্তি, ব্যয়, উদ্বেগ ও কষ্টের মুখোমুখি আমাকে হতে হয়েছে তা...একমাত্র আমিই বুঝি। সবিনয়ে বলতে চাই, শুধুমাত্র রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও, আমার এই পরিশ্রমের ফলে ব্রিটিশ সরকারের বিশেষ লাভ হয়েছে।
আরও পড়ুন
সময়ভ্রমণ ২৫: লয়েড, সিকিমপতি রাজা ও কোম্পানির দার্জিলিংলাভ (দুই)
পাহাড়ের অন্তঃস্থলে যে পথ নির্মিত হয়েছে তা প্রতিবেশী পাহাড়ি রাজ্যগুলির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বের দাবি রাখে। নেপালে ঢোকার বিভিন্ন গিরিপথের ওপর আমাদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে...যার গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। সরকার আমার সম্পর্কে যা-ই স্থির করুন না কেন, আমাকে অন্তত এইটুকু ভাববার সুযোগ দেওয়া হোক যে, ঈর্ষাপরায়ণরা যে যাই বলুক, আমার কাজে সরকারের বিশেষ সুবিধা হয়েছে, সমতলবাসী যুরোপীয়দেরও একটা স্থায়ী উপকার হয়েছে।
৭/ছোটখাটো কিছু ব্যবস্থা আমাকে নিতে হয়েছে, যেমন কুলি-মজুর যোগাড় করা। এটা না হলে এই ঋতুতে কোনরকম রাস্তা বানানো সম্ভব হত না।...গোপন কোন ষড়যন্ত্রের জন্য যাতে আমাকে সরিয়ে দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যা বলা যায়, আমি বললাম। যদি কোন (ষড়যন্ত্র) থেকে থাকে, তা খণ্ডন করার সুযোগ যেন আমাকে দেওয়া হয়।
...মাননীয় প্রভুদের কর্মে আমার চৌতিরিশ বছর গিয়েছে। সাধ্যমত, উৎসাহ ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাঁদের সেবা করার চেষ্টা করেছি। কাজ থেকে যেন সম্মানের সঙ্গে ছুটি নিতে পারি, এই আশা করি।
আরও পড়ুন
লয়েড, সিকিমপতি রাজা ও কোম্পানির দার্জিলিংলাভ – ১
দার্জিলিং, ৫ই জুন, ১৮৩৯
আপনার বিনত ভৃত্য হবার সম্মান লাভ করেছে যে
জি ডব্লিউ এ লয়েড, লেফটেন্যান্ট কর্নেল,
উত্তর-পূর্ব সীমার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত
যেমন আগেই বলা হয়েছে, কলকাতার সরকার মনস্থির করে ফেলেছিল। লয়েড কী বলছেন তা শোনার ইচ্ছা বা ধৈর্য, কোনোটাই কর্তাদের ছিল না, ফলে, বয়েই গেলো, ব্যাটা বিস্তর জ্বালিয়েছে, এখন বাড়ি যা। ৫ই জুন লয়েড চিঠি লিখছেন, লয়েডকে অপসারণ করার উদ্দেশ্যে কৌন্সিলের সিদ্ধান্তও তৈরি হচ্ছে। যে বয়ানটি তৈরি হল, তাতে ঘুরিয়ে কথা বলার সহজাত ব্রিটিশ নৈপুণ্যের ছাপ ছিল :
“সিকিম যথা একটি এলেবেলে(পেটি) রাজ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল লয়েডের ন্যায় পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন অফিসারকে নিযুক্ত রাখিবার আর কোনপ্রকার প্রয়োজন নাই। আদেশ দেওয়া যাইতেছে যে অতঃপর লেফটেন্যান্ট কর্নেল লয়েডকে কোথায় নিযুক্ত করা হইবে তাহা সামরিক বিভাগের প্রধান কম্যান্ডার স্থির করিবেন। কর্নেল লয়েডকে সামরিক পর্ষদ মারফত যে যে তহবিল অগ্রিম দেওয়া হইয়াছিলো তাহার হিসাবপত্র বুঝাইয়া দিতে বলা হউক। দার্জিলিংয়ের নাগরিক অংশের শাসনভার লয়েড যেন ড: ক্যাম্পবেলকে বুঝাইয়া দেন…”
লয়েডকে বরখাস্ত করা হল নেহাৎই যেমনতেমন করে। পিনের কথায়, 'কোন জল ঘোলা হলো না, কারো পালকটি এলোমেলো হল না।' কলকাতার লোকে জানলই না। ধরে নেওয়া যায়, সরকার এতদ্বারা বিশেষ উদারতা ও দয়াশীলতার পরিচয় দিল, ব্যঙ্গ করে বলছেন পিন।
লয়েডবিদায় ও দার্জিলিংপত্তনের আদি পর্বের যে সময়ের কথা আমরা বলছিলাম, তার পর থেকে প্রায় দুশো বছর কেটে গেলো। সায়েবি আমলের কথা থাক। হালের সরকারি বয়ানেও লয়েডের উল্লেখ যৎসামান্য। অথচ একটু ভাবলেই বোঝা যায়, লয়েড না থাকলে দার্জিলিং ঘটে উঠতো না। টানা পাঁচ বছর ধরে পথহীন আদিম বনপাহাড়ে লয়েড ঘুরে বেড়িয়েছেন, সরকারি গিনিপিগ হয়ে দার্জিলিংয়ের পাহাড়চূড়ায় থাকা যায় কিনা তার পরীক্ষা দিয়েছেন, সিকিম-নেপালের ঝগড়ায় সিকিমের পক্ষ নিয়েছেন, অথচ কোম্পানিসরকারের প্রতিনিধি হয়ে প্রায় আধখানা দার্জিলিং জেলা রাজার কাছ থেকে বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি দার্জিলিংয়ের আবহাওয়ায় চায়ের চাষ যে ভালো হতে পারে সে কথা সরকারের গোচরে প্রথম আনেনও লয়েড। অপরিসীম পরিশ্রম ও আনুগত্যের কোন স্বীকৃতি বা প্রতিদান তিনি পাননি, উল্টে তাঁকে মোটামুটি ভুলে যাওয়া হয়েছে।
১৮৩৯-এর কুড়ি জুন লয়েড ক্যাম্পবেলকে তাঁর দপ্তরের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এর পর থেকে সরকারি নথিপত্রে লয়েডের নামগন্ধ ছিল না। ক্যাম্পবেলের আমলে সরকারি দলিল দস্তাবেজে লয়েডের নাম না করে বলা হতো 'আপনার পূর্বসূরী' বা 'ড: ক্যাম্পবেলের পূর্বসূরী'। দার্জিলিংয়ের আখ্যানে ক্যাম্পবেল প্রধান চরিত্র, লয়েড নিতান্তই আব্বুলিশ। এমনই হয়ে থাকে হয়তো।
Powered by Froala Editor