এখানে তোমাকে মানায় না শঙ্কর

শঙ্কর সরণি - ৯
আগের পর্বে

আনা পাভলভের দলের সঙ্গে নিউ-ইয়র্কে ঘোরার সময়েই উদয়শঙ্করের আলাপ হল আনন্দ কেন্টিস কুমারস্বামীর সঙ্গে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কুমারস্বামী লন্ডনে বড়ো হলেও ভারতীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ। তিনিই উদয়কে উপহার দিলেন নন্দিকেশ্বরের ‘অভিনয় দর্পণ’ বইটির অনুবাদ। ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রের আদিকালের চিন্তাভাবনা মুগ্ধ করল উদয়কে। অন্যদিকে আনার দলে পাশ্চাত্য নৃত্যের আসরের সময় কাজ থাকত না উদয়ের। তিনি পাশ্চাত্য নৃত্য শিখতে চাইলে আনা ভর্ৎসনা করলেন। বললেন, তাঁকে ভারতের শিল্পকলাকেই আরও গভীরভাবে জানতে হবে, শিখতে হবে। পরে সবাইকে তাই শেখাতে হবে।

আনা পাভলোভার সান্নিধ্যে শিল্পের বৈভবকে দেখলেন উদয়শঙ্কর। একদিকে শিল্পকে অনিঃশেষ করে পেতে চাওয়ার শিল্পীর অত্যুগ্র বাসনা, অন্যদিকে প্রতিভাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ভাবাবেগ। শিল্পের রসগ্রহণে তাদের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা। গভীর ঔৎসুক্যে খেয়াল করলেন, আনার দলের সমস্ত খুঁটিনাটি। তাদের নিজস্বতা, ক্ষণ-মুহূর্তের হিসেব-নিকেশ, পরিমিতিবোধ, পেশাদারিত্ব। শুধু স্টেজ নয়, স্টেজের অন্তরালবর্তী যা-কিছু, যা দর্শকের সামনে মঞ্চকে করে তোলে অ-লৌকিক, দেখলেন তাও। তিনি বুঝলেন নৃত্যের সঙ্গে দলের সম্পর্কটা ওতপ্রোত।

অনুক্ষণ শিল্পের চারণভূমিতে বিচরণ, এ যেন সাক্ষাৎ দেবলোক। অনুশীলন-সাজসজ্জা-সুর-তাল-ছন্দ-লয়। কিন্তু ছন্দপতন হল। উদয়ের সঙ্গে আনার চুক্তি ছিল ন’ মাসের। চুক্তি অতিক্রান্ত হতে, তাঁর মনে হল, যেন স্বপ্নভঙ্গ হল। যেন ঘুম ভেঙে জেগে উঠলেন তিনি। পা দিলেন বাস্তবের জমিতে। লন্ডনকে এবার শূন্য মনে হল তাঁর। দল নেই, কাজ নেই কী ভীষণ নিঃসঙ্গ চারপাশ। শ্যামশঙ্করও তখন সেখানে নেই। গ্রাসাচ্ছাদন আর অন্নসংস্থানের মতো সংকটগুলি এই প্রথম ভাবিয়ে তুলল তাঁকে। শ্যামশঙ্করের মতো না-হলেও তাঁরও জীবন খানিক খানিক অতিবাহিত হয়েছে রাজাদের বিলাস-ব্যসনের চৌহদ্দিতে। ফলে শৌখিনতাকে আদ্যন্ত নিষ্প্রয়োজন কখনও ভাবতে পারেনি তাঁরও রুচি।

প্রবল এই দুঃসময়ে পরিচিত কেউ কেউ হয়ে উঠল দূরের। হতাশ করল ভেরা, ফিরিয়ে দিলেন রানী মৃণালিনী।  ফিরে এল শকি আর অ্যাডলেড। এই দুই সহৃদয় নৃত্যপটিয়সী কন্যাদের নিয়ে উদয়শঙ্কর খুলতে চাইলেন তাঁর নাচের দল। কিন্তু যে প্রয়োজন অব্যবহিত, তা হল স্থায়ী উপার্জনের সত্বর বন্দোবস্ত। যশ আর অর্থ  সর্বক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গি নয়, এ অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে আকস্মিক ঠেকল। তিনি ঘর ভাড়া নিলেন বেলসাইজ পার্কে। সঞ্চিত অর্থ ধীরে ধীরে ফুরিয়ে নামল তলানিতে।  শ্যামশঙ্করের প্রাজ্ঞতার সংস্পর্শে কাটছিল তাঁর দিন। মহারাজের জীবনের অন্তঃপুরের ঐশ্বর্যে কাটছিল তাঁর দিন। কৃতবিদ্য রটেনস্টাইনের ঔদার্যের ছত্রছায়ায় বিকশিত হয়ে উঠছিল তাঁর স্মৃতি-সত্তা। আনার সঙ্গে শিল্পের প্রদক্ষিণ জাগ্রত করে তুলেছিল তাঁর সৃষ্টিলোক।  তিনি অনুভব করছেন, কী মহাসমারোহে নৃত্য এসে পৌঁছেছে তাঁর কাছে। তখনই কী অদ্ভুত নির্মমতার চৌকাঠে এসে দাঁড়াল জীবন। অ্যাডলেডই নিয়ে এল খোঁজ। পিকাডেলিতে রয়েছে এক বিখ্যাত হোটেল। তারা ক্যাবারেতে লোক চায়। পারিশ্রমিক এক পাউন্ড। উদয়শঙ্কর গেলেন।

যা ক্লিন্ন, আপাত-কুৎসিত, আর্টিস্টের অভিরুচি তার মধ্যেও খুঁজে নেয় রসদ। ক্যাবারের জন্য বিষয় ভাবতে গিয়ে তাঁর স্মৃতির মধ্যে জাগরুক হয়ে উঠল বেনারসের একটি দৃশ্য। কাঁধে ঝোলানো কঞ্চি। তাতে বাঁধা দুই পিতলের কলসি কলকল করে উঠছে ভরা জলে। ললিত ছন্দে গঙ্গা থেকে সিঁড়ি ভাঙছে তারা। উপচীয়মান জল আঁক কেটে যাচ্ছে পথে। পুজোর জন্য মন্দিরের পবিত্র জল নিয়ে চলেছে বাহক। স্নিগ্ধ এক ভক্তির আভা ফুটে বের হত তাদের শরীরী ভঙ্গিমায়। খাটো ধুতি, দেউল গা। কঞ্চিও নেই, কলসিও। ক্যাবারেতে তাঁর দেহপটে চিত্রিত হয়ে উঠল কাশীর ঘাটের সেই লহমা। পানরসিক দর্শক প্রথমে হতভম্ব হয়ে রইল খানিক। তাদের প্রত্যাশিত আমোদের বাইরে অনভ্যস্ত তারা। তবু কী হল, থির-মগ্নতায় বিভোর রইল তারা। প্রবল করতালিতে বিস্ময়ের ঘোর লেগে গেল সকলের। তবে হোটেলের ম্যানেজার বৈষয়িক মানুষ। সে জানে লঘু-চটুল নৃত্য দীর্ঘায়িত করে অতিথির পানাসক্তিকে। তার ধূমায়িত মায়াজালের রণে ভঙ্গ দেবে উদয়শঙ্করের নাচ। তাঁকে বিদায় নিতে হল সেইদিনই।

আরও পড়ুন
উদয় নিজেও দাঁড়ালেন দর্পণের সামনে

শকি আর অ্যাডলেডকে নিয়ে উদয়শঙ্কর দল তৈরি করলেন, ট্রায়ো। দিনভর হন্যে হয়ে ঘুরতেন চাকরির জন্য।  ক্লান্ত অবসন্ন ফিরতেন ঘরে। তাঁর হতাশা লক্ষ করতেন তাঁর ল্যান্ডলেডি। বাড়ি ভাড়া জমা পড়েনি, জমা পড়বে এমন সম্ভাবনাও দুরাশা তবু উদয়ের জন্য সকালের খাবার আগলে বসে থাকতেন তিনি। শকি আর অ্যাডলেড গেল প্যারিস। নৃত্যসংক্রান্ত কোনো সম্ভাবনা যদি বাস্তবায়িত হয়। তাদের চিঠি এসে পৌঁছল, উদয়ও তাঁর ভাগ্যান্বেষণে রওনা দিলেন প্যারিস। তাঁর যাত্রার যাবতীয় দায়িত্ব নিলেন এই দুই কন্যার হিতৈষী পিতা, ল্যানফ্রাঙ্কি। লন্ডন ছেড়ে যাবার দিন রিক্ত, নিরুপায়, লজ্জিত উদয়শঙ্কর দাঁড়ালেন তাঁর ল্যান্ডলেডির কাছে। তিনি হাসলেন। ক্ষণিক, স্বল্পদিনের পূর্বাপরহীন এক সম্পর্ক। স্নেহময়ী এই বিদেশিনি সেদিন বলেছিলেন, তিনি শুধু কামনা করেন তাঁর আদ্যন্ত কল্যাণ, এর বেশি কিছু নয়।

১৯২৪ সাল, উদয় পৌঁছলেন প্যারিস। রটেনস্টাইনের ছাত্র তিনি, তবু চিত্রকরদের স্বভূমি-কলাতীর্থ, লুঁভের বা গিমে মিউজিয়ম তাঁর প্রথম গন্তব্য নয়। এখানেও বাধ্যত তাঁকে যোগ দিতে হল আরেক ক্যাবারেতেই। যৌবনকে উদযাপন এখানকার জনজীবনেরই ধারা। যৌনতাকে ঘিরে অযুত জিজ্ঞাসাকে তারা আবডালের বেড়া দিয়ে রাখেনি। যৌবনের প্রকাশ আর প্রশ্রয়ে সমাজ ছিল আগলহীন। ক্যাবারেতে তার বহিঃপ্রকাশে কখনও কখনও পেরিয়ে যেত তার লক্ষ্মণরেখা। জলবহনকারী আর অসি নৃত্য এই দুটি বিষয়কেই এখানেও উপস্থাপন করতেন উদয়। পরিস্থিতির সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন, নৃত্যের সঙ্গে নয়। শিল্পের পাদপীঠে চাপল্যের ভোগবিলাস পীড়া দিত তাঁকে, বিষণ্ণ থাকতেন তিনি। একদিন এক নর্তকী, লাস্যের সম্ভার তাঁর শরীরে-মুদ্রায়, এসেছিলেন উদয়ের কাছে। ক্যাবারের কোলাহল, উচ্ছ্বাস-মুখরতা থেকে সরে আসা এক নির্জনতায় তিনি বলেছিলেন, এখানে তোমাকে মানায় না শঙ্কর।

নৈশ ক্লাব, ক্যাবারে কত কত অভিজ্ঞতা উপলব্যথিত স্রোতের মতো বয়ে নিয়ে চলেছিল তাঁর জীবন। রুচির আঘাত তাঁকে সইতে হত, কিন্তু নৃত্যকে নিয়ে তাঁর সৌন্দর্যমণ্ডিত ভাবনা তাঁকে বিচ্যুত হতে দেয়নি তাঁর জীবনবোধ থেকে। নৈশ ক্লাবগুলিতে মানুষ যে শুধু আমোদ-প্রমোদের জন্যই আসতেন, তেমনটা সবসময় নয়। অনেকসময় কর্মক্লান্ত, পানসে জীবনের বিপ্রতীপে কিছু খুঁজত তাঁদের মন। তেমন বিশেষ, বিশিষ্টজনদেরও দেখা মিলত কখনও-সখনও। উদয়ের জন্য তাঁরাও নিলেন অযাচিত উদ্যোগ। ধীরে ধীরে নৃত্য-সংগীত কেন্দ্রগুলিতে যোগাযোগ হল ট্রায়ো-র। ক্যাবারের জীবন থেকে শাপমুক্তি ঘটল তাঁর। নতুন উদ্যমে নব নব ভাবনায়  চলতে থাকল নির্মাণ। ট্রায়ো চলল ইতালি, হল্যান্ড, বেলজিয়ম। আর এই সময়েই উদয়কে ঘিরে ধরল এক অসন্তোষ। প্রত্যেক দেশের মানুষের আবেগের সাধারণ প্রতিক্রিয়াগুলি এক হলেও দেহভাষায় সেগুলি সূক্ষ্মত, স্বভাবত স্বতন্ত্র। ফলত ভারতীয় প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্রে রেখে গড়ে উঠছিল যে বিষয়ভাবনা, বিদেশীয় দেহভাষা কখনও কখনও তাতে ঠেকছিল বিসদৃশ হয়ে। অ্যাডলেডের দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত, কিন্তু ভারতীয়ত্বের অভিব্যক্তির অপূর্ণতা তার প্রচেষ্টাকে করে তুলছিল অসফল।

আরও পড়ুন
দেখা করতে চাইলেন খোদ আনা পাভলোভা

হল্যান্ড, বেলজিয়ম হয়ে ট্রায়ো চলল বার্লিনে। আর সেখানেই উদয়ের দেখা হয়ে গেল তাঁর পুরোনো বন্ধুর। প্রখ্যাত গুজরাতি শিল্পপতি মতিলাল ওয়াডিলাল শা-র পুত্র, বোম্বাইয়ের আর্টস স্কুলের সঙ্গী শান্তিলালের সঙ্গে। বাণিজ্য-সূত্রে শান্তিলাল আস্তানা গড়েছে জার্মানিতে। তিনজনের বন্ধুত্ব এখন দাঁড়াল চারজনের। তারপর বিশেষভাবে দুজনের। হাসিখুশি, গুণী অ্যাডলেডকে ভালো লাগল শান্তিলালের। আর আধুনিক, মিশুকে, উদ্যোগী শান্তিলালকে অ্যাডলেডেরও। দ্রুত স্থির হয়ে গেল তাঁদের বিবাহের দিনক্ষণ। শকিও রয়ে গেল জার্মানিতেই। ট্রায়ো ভেঙে গেল। কিন্তু স্বদেশে আর বিদেশে লাভ করা এই দুই অমায়িক, পরম-‘আত্মীয়’-কে এবং শকিকেও অমলিন ভালোবাসা জানিয়ে উদয় ফিরে এলেন প্যারিসে।

এবার তাঁকে যুক্ত হতে হল এক অন্যরকম কাজে। হ্যাঁ নৃত্যশিল্পীরই কাজ। তবু ভারি কিম্ভুত ছিল সেই কাজের প্রকৃতি। প্যারিসে তখন চলছে আর্ট ডেকরেটিভ নামে বিরাট এক প্রদর্শনী। চলবে প্রায় ছয়-সাত মাস। বহু মানুষ, বহুল ব্যবস্থাপনা। রয়েছে আমোদ-প্রমোদের বন্দোবস্তও। একপ্রান্তে একখানা নৃত্যমঞ্চ। সক্কাল-সক্কাল  খুলত এই প্রদর্শনী। গড়াত দিন ফুরিয়ে রাত নামিয়ে। ফলত নির্দিষ্ট নৃত্যের দলগুলিকে বা কখনও এককভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্পীদের ঘুরে ঘুরে নাচতে হত অনিঃশেষ পুনরাবৃত্তিতে। দিনের পারিশ্রমিক ছিল এক হাজার ফ্রাঙ্ক। অমানুষিক ছিল পরিশ্রম। যেন নাচ-শ্রমিকের চাকরি। মানুষ ঘুরছে-ফিরছে। জিনিস দেখছে পরখ করছে। চলছে বেসাতি। তার ফাঁকে ফাঁকে কেউ তাকায় নৃত্যমঞ্চে তো কেউ অনির্দিষ্ট দৃষ্টি হেঁকে পেরিয়ে যায়। কী অস্থি-সার শিল্পচর্চা। তবু স্টেজকে আদি-অনন্ত ঈশ্বরই জেনেছিলেন শঙ্কর।

একদিন ধুম জ্বর নিয়ে উঠলেন মঞ্চে। সর্দি-কাশিতে ঝিম ধরা শরীর, বুকের ভেতর ঘনিয়ে আছে অল্পবিস্তর ব্যথা। সেদিন গুম হয়ে আছে আকাশও। নাচের সময় খেয়াল করলেন, গায়ের ওপর এসে পড়ছে, ঝির-ঝিরে শীতের দেশের বৃষ্টি। নাচের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা আর যত্নের তিলপরিমাণ তফাত সেইদিনও চোখে পড়েনি কারোর। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি অনুভব করলেন ওই জনসমুদ্র, ওই ব্যস্ত চলাচল, ওই ব্যাপৃত বাণিজ্যবিস্তার তবু বহু স্বনামধন্য মানুষের নজর এড়িয়ে যায়নি শিল্প পরিবেশনে তাঁর বিশেষত্ব। ধনকুবের ব্যারন দ্য রথচাইল্ডের প্রাসাদ থেকে এল আমন্ত্রণ।

আরও পড়ুন
সাজলেন শিব, খালি গা, নকশা-তোলা আভূষণ

এতদিন অসি-নৃত্য, জলবহনকারী এইসব নৃত্যেকেই মূলত মঞ্চস্থ করেছেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় নৃত্যশাস্ত্র-সম্পর্কিত যাবতীয় তত্ত্ব-তলাশে অভিনিবিষ্ট ছিল তাঁর মন। পড়ছিলেন নৃত্যভিত্তিক বিচিত্র সব গ্রন্থ। একদিন একটি  তথ্যে বিস্মিত হলেন প্রগাঢ়। গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, প্রশিক্ষণে নর্তক পেশিকে স্বেচ্ছায় সঞ্চালিত করতে পারেন এমনভাবে, যাতে মনে হবে, তাঁর সমস্ত দেহজুড়ে অবিরল বয়ে চলেছে এক স্রোত, এক নিরবিচ্ছিন্ন তরঙ্গ। সুকঠিন, দুরূহ তায় অ-দৃষ্ট একটি ভঙ্গিমা। নিজে-নিজে একা-একা চলল তার কসরত। ধীরে ধীরে, তা উঠে এল তাঁর শরীরে। পাঠকমাত্রই জানেন, উদয়শঙ্কর ঘরানার অমোঘ দ্যুতি ছড়ানো সেই তাঁর স্বাক্ষর-চিহ্নিত, ভুবন-বিদিত মুদ্রার কথা।

রথচাইল্ডের প্রাসাদ বুঝি বিদেশি রূপকথার চেয়েও অপরূপময়, বিলাসবন্দিত। শৈল্পিক স্থাপত্য, সম্ভ্রান্ত-পরিশীলিত অভিরুচি। অভিজাত মানুষগুলোর স্বভাবেও তার নিঃশব্দ প্রতিচ্ছবি। স্বর্গের অধিরাজ ইন্দ্র, এবার তাঁর নৃত্যের বিষয়। বজ্রের দেবতা তিনি, বিদ্যুৎ-বর্ষণ ঘনিয়ে ওঠে তাঁর ইশারায়। সদ্য আয়ত্ত- করা মুদ্রাটিকে তিনি আরোপ করলেন, এই রূপকল্পনায়। সংগীত বলতে সঙ্গে শুধু একখানা পিয়ানো। রাজাধিরাজের মুকুট তাঁর মাথায়। পায়ে ঘুঙুর। কড়-কড়-কড়াৎ শব্দ উঠল দিগ্বিদিকে। মেঘরাজ দেবেন্দ্রর শৌর্য আর দিগন্তবিস্তৃত বিদ্যুতের লহরী একই সঙ্গে স্বর্গীয় মহিমায় বেজে উঠল তাঁর কায়াশরীরে। সশ্রদ্ধচিত্তে অভিনন্দিত করলেন অতিথিরা। গভীর আন্তরিকতায় স্রষ্টাকে সংবর্ধিত করলেন রথচাইল্ড। সাম্মানিক পেলেন পাঁচ হাজার ফ্রাঙ্কেন। নিজের অর্জনে  নিজের নামে উদয়শঙ্কর খুললেন তাঁর প্রথম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।

Powered by Froala Editor