‘কল্পনা’ স্বপ্ন দেখতে চায় একথা ঠিক। কিন্তু ঠিক এটাও যে, ‘কল্পনা’ জানে, সেই আশা অলীক। পরিণতির ব্যর্থতাই বুঝি এ স্বপ্নের অব্যর্থ ভবিতব্য। এ সিনেমা যখন রিলিজ করে উদয়শঙ্করের বয়স তখন সাতচল্লিশ পূর্ণ করেছে। নিজের যৌবনে চূড়ান্ত সব আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ হতে দেখেছেন তিনি, সমানতালে সম্মিলিতভাবে বহু পরিকল্পনাকে চুরমার হতেও দেখেছেন নিজের প্রৌঢ়ত্বে। এ সিনেমার গল্প বলার প্যার্টানটি তাই ভারি অদ্ভুত। গল্পে উদয়ন যুবক, জীবনকে ঘিরে তার হরেক কিসিমের তীব্র বাসনাকে সত্যি করে তোলে সে। তবে উদয়নের চরিত্রটিকে কেন্দ্রে রেখে চিত্রনাট্য বানিয়ে যিনি পৌঁছেছেন প্রযোজকের কাছে, যাঁকে তাঁর সেই চিত্রনাট্য নিয়ে হতাশ-নিষ্ফল হয়ে বেরিয়ে আসতে হয় তীব্র অসম্মানিত হয়ে খেয়াল করব সেই চিত্রনাট্যকার একজন প্রৌঢ়। কলাকেন্দ্রের পত্তন আর কলাকেন্দ্রের পতন যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছনোর এ অভিঘাতটুকু লুকিয়ে থাকে ছবির অন্দরে।
এ ছবিতে উদয়শঙ্করের মতোই যুবক উদয়নেরও যাত্রা শুরু হয় বেনারস থেকেই। পুরো ছবিতে ওখানেই ব্যবহৃত হয় একটা সম্পূর্ণ বাংলা গান। নিজ-ভূমে স্বীয়-ভাষার চিহ্নটিকে উদয় গেঁথে দেন ঈশ্বরের ভোগ বয়ে-নিয়ে-যাওয়া পূজারিদের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যে। নসরতপুরের মাটির দাওয়ায় অম্ত্যজ মাতাদিনের ভুবনমাতানো নাচ একদিন দোলা দিয়েছিল উদয়শঙ্করের মর্মে। সেই প্রান্তিক নৃত্যশৈলী দুর্মর ভাবিয়েছিল তাঁকে। ছবিতে গ্রামের মানুষের নৃত্যে মেতে থাকার দৃশ্যে উদয়ন কামিনীকে বোঝাতে চায় ভারতবর্ষে গ্রামীণতার মূল্য। গঁওয়ার ভারতবর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আকারা সত্য স্বদেশ। বিরক্ত কামিনী সেই স্বদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে বিছানায়। বিদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত উদয়শঙ্কর বুঝেছিলেন দেশকে ধারণ করতে হয় তার স্বকীয়তায়। ধারণ করতে হয় শেকড়ের সন্ধানে ফেরার অবিরত ইচ্ছায়। অথচ উদয়ন দেখল, তার দেশ চলেছে বৈদেশিক আবর্জনা-অনুকরণের গড্ডলিকাতেই। দেখতে পেল তার চেনা দেশের মধ্যে এক অপরিচিত ভারতবর্ষকে। নাগরিক ধনী দেশবাসীর পাশ্চাত্যানুকরণে বিমুখ উদয়ন এবার হয়ে শুয়ে থাকে বিছানায়। উদয়ন আর কামিনীর দেশকে সন্ধানের এই বৈপরীত্যই প্রতিষ্ঠা করে এ কাহিনির অভিমুখ।
উদয়শঙ্করের জীবনে কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা এক পরম পরিপূর্ণতায় ধারণ করে তাঁর জীবনকে। কলাকেন্দ্র হলেও জীবনবিচ্ছিন্ন, স্বদেশ ও সমকাল বিচ্ছিন্ন কলাচর্চার কেন্দ্র তা নয়। তাই প্রতিষ্ঠাতার জীবনে সে যেন তাঁর নবজন্ম। সিনেমায় কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠার খবরটি প্রকাশ পায় সংবাদপত্রে। খেয়াল করলে দেখব, সংবাদপত্রে উল্লিখিত তারিখটি, ৮ ডিসেম্বর। যা উদয়শঙ্করেরই জন্মতারিখ। বিদেশে কত জরুরি আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও উদয়শঙ্কর কখনো কখনো নির্দ্বিধায় পৌঁছতেন দেশীয় পোশাকে। এ আবেগকে গুরুত্ব দিতে চেয়ে তিনি ধিক্কৃত হয়েছিলেন কতবার, সেকথা জানিয়েছিলেন রবিশঙ্কর। ছবিতে দেখব, বসন্ত-উৎসবে প্রবেশাধিকারের দৃশ্যে উদয়শঙ্কর প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় বেশভূষার মর্যাদাকে। নৃত্যকে ভোগ আর লালসাময় হীনদৃষ্টির লুব্ধতা থেকে বের করে আনার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন উদয়শঙ্কর। জীবনে তাঁর দুই নৃত্যসঙ্গিনী শকি আর অ্যাডলেডের অসম্মানে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নিঃস্বার্থভাবে। ছবিতে থিয়েটারের ম্যানেজারের সেই লোলুপ দৃষ্টি থেকে উদয়নও সরিয়ে দেয় মহড়ায় ব্যস্ত মেয়েদের। আর সেই সুবাদে পরে নারী-স্বাধীনতার অঙ্গ হিসেবে নিজের দেহকে নির্দ্বিধায় উদযাপনের বিষয়টিকেও, কী আশ্চর্য, উদয়শঙ্কর বলে নেবেন সেই উনিশশো আটচল্লিশেই।
আরও পড়ুন
কল্পনা: উদয়শঙ্করের ভারতজিজ্ঞাসা
এই ছবিকে চারটি মুখ্য ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাক্-কলাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, কলাকেন্দ্রের শিল্পলোক ও মানবিক অন্তর্ঘাত, বসন্ত-উৎসব এবং উদয়নের স্বপ্নদৃশ্য। কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠার সূচনাতেই থাকে অসমান্য এক পুতুলনাচের আঙ্গিক। অবাক হতে হয় তার চিত্রায়নে। চিরদিন মঞ্চের আধারেই উদয়শঙ্কর সাজিয়েছেন তাঁর নৃত্যভাবনাকে। অথচ ছবিতে কী বিচিত্রতায় নানান তল আর বহু পার্সপেক্টটিভ তৈরি করে এ অংশে তিনি তাক লাগিয়ে দেন দর্শকদের। সারি সারি শিল্পী নেচে চলেছেন কাঠপুতুলের মতো, সদিয়ো কি বেহোঁশি মে হম নাচ রহে হ্যায় কাঠপুতল সে। বহু শতাব্দীর অজ্ঞানতা, অভ্যাসের দাসত্বে বাঁধা-পড়ে-থাকা ভারতবাসী, যেন প্রাচীনতার ঘেরাটোপে বোধবুদ্ধিহীন কাঠের পুতুল। জাতপাত, ধর্মান্ধতা, অর্থহীন সংস্কারের সেই প্রাচীনত্বই হয়ে উঠছে তাদের অস্তিত্বের নিয়ন্ত্রক।
আরও পড়ুন
শুরু হল ‘কল্পনা’র প্রস্তুতি
আরও পড়ুন
আমিই সব, এ দুর্বলতা ছিল উদয়শঙ্করের
এই ক্রমে ছবিতে আসে শিক্ষা আর জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গও। মানুষের চিন্তার মুক্তিই তার যথার্থ শিক্ষা, সর্বাঙ্গীণ বিকাশই যে তার সত্য জ্ঞানলাভ, এ কথা কবে বুঝবে ভারতবর্ষ! ভারতের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের শিক্ষার্জন সংলগ্ন হয়ে থাকে তার অর্থনৈতিক কৌলীন্য বা বৈবাহিক কৌলীন্যের ভাবনায়। আবার কখনো পণলাভের হীনতর লুব্ধতায়। ‘কল্পনা’য় সমাবর্তনের পোশাক-পরিহিত সেই অভিনব নৃত্যপরিকল্পনা বিস্মিত করে আজও। চিন্তামুক্তির বহিঃপ্রকাশে উদয়শঙ্করের মুদ্রার উদ্ভাবন এক অপূর্ব প্রয়াস। উদয়শঙ্করের নৃত্যধারার বিশেষত্ব এবং তাঁর মুদ্রা-নির্মাণ বিষয়ে সুনিশ্চিত শুরু হওয়া প্রয়োজন পরিশ্রমী গবেষণা।
আরও পড়ুন
অসম্মানিত অমলা ছেড়ে দিতে চাইলেন নাচ
প্রসঙ্গত এই চলনেই ছবিতে এসে পৌঁছয় ফ্যাশনসর্বস্ব জাতীয়তাবাদের বিষয়টিও। স্থানিক আর আঞ্চলিক সত্তার আত্মম্ভরিতায় ভারতবাসী একীকরণে উত্তীর্ণ না হয়ে নিজেকে দেখতে চেয়েছে খণ্ড-খণ্ড চেহারায়। বোধের মুক্তি ব্যতিরেকে রাষ্ট্রনির্মাণের স্বপ্ন সুদূর পরাহত। জাতীয় ভাবনায় অধরা থেকে যায় মহাজাতিক বৃহত্তর ক্ষেত্রটির সংগঠন। কাঠপুতুল, ডিগ্রিধারী ছাত্র, ছদ্ম-জাতীয়তাবোধের মতো বিষয়গুলো তৈরি করে একটি কাহিনি-শৃঙ্খল। সাংস্কৃতিক প্রকৌশলে ভারতবাসীর বোধে-বুদ্ধিতে যা জন্ম দিতে চায় এক অখণ্ড ভারতবোধকে।
ছবিতে কলাকেন্দ্রের আর্থিক উন্নতির পরিকল্পনায় আয়োজন করা হয় একটি বসন্ত-উৎসবের। সেখানে উপস্থিত হন দেশের তাবৎ রাজা-মহারাজাও। সুদীর্ঘ সেই বসন্ত-উৎসবই যেন উদয়ের ভারতসন্ধানের রূপক। ‘বসন্ত’ শব্দটাকে এখানে খেয়াল করতে হয় খুব সাবধানে। উদয়শঙ্করের ভিতর রবীন্দ্রনাথের সশব্দ এবং নিঃশব্দ প্রভাবটি টের পাওয়া যায় সুন্দরভাবে। বসন্ত এখানে শুধু ঋতু নয় বরং যৌবন, শক্তি, প্রেম, উৎপাদন, উচ্ছ্বাস, নতুনের আহ্বায়ক-- আরো কত কী। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে টের পাওয়া যায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি দৃশ্যে উৎসব আয়োজনের পূর্বে উদয়ন বসে থাকে আর তার সামনে পরিবেশিত হয় দেশের অজস্র মূলস্রোতের নৃত্যের সঙ্গেই বিবিধ প্রান্তিক নৃত্যরূপ। এই সমস্ত নৃত্যশৈলীর সমন্বয়েই যেন উদয়ন নির্মাণ করতে চায় ভারতে বসন্তের তাৎপর্য। বোঝা যায়, এই সূত্রেই এক জাতীয় নৃত্যশৈলীর ভাষাসন্ধান করছিল উদয়শঙ্করের চেতনা। আক্ষেপ হয়, যদি লিখে যেতেন কোনো তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ, শঙ্কর-খোঁজের পথটা মজবুত হত আরো একটু।
বসন্তোৎসবের অংশে রয়েছে চলচ্চিত্র-শিল্পেরও নিজস্ব মজা। উদয়শঙ্কর এখানে ব্যবহার করলেন যেন সাই-ফাইয়ের মতো এক উপাদান। বসন্তোৎসবের মতো বিষয় কীভাবে অনুভূত হবে দর্শকাসনে আসীন রাজা-মহারাজাদের রুচিতে? নৃত্যের সেই বৃহত্তর সৌন্দর্যপ্রতিমা কেমনভাবে গ্রহণ করবে তাদের অভিরুচি? তা জানতে চেয়ে কলাকেন্দ্রেরই এক সদস্য তৈরি করে এক ভাবপরিমাপক যন্ত্র বা ইমোশনাল গ্রাফ। মঞ্চের ওপরে নৃত্যদর্শনে রাজা-রাজরাদের মনে জাগছে কী প্রকার ভাব, যন্ত্র তৎক্ষণাৎ নির্দেশ করবে তা। আছে মোট ন’টি ভাব। একেবারে নীচে শূন্য। তারপর ধীরে-ধীরে উঠে গেছে Boring, So-So, Interesting, Thrilling, Sex Appeal, Exciting, Maddening, Ecstasy -লেখা পারদের গ্রাফ।
উচ্চবর্গীয়, ধনী মানুষ শিল্পকে দেখতে চায় আমোদ আর বিনোদনের আধারে। তাই কৃষি, কৃষকের সংকটের কথায় নামতে থাকে রাজারাজরাদের উৎসাহের পারদ। নিস্তেজ হয়ে আসে তাদের আগ্রহ। লক্ষ করব, পারদ নেমে আসে অস্ত্রপূজা নৃত্যেও। So-So থেকে তা পর্যবসিত হয় Boring-এ। মনে রাখতে হয়, এইসব রাজা তো আর দোর্দণ্ডপ্রতাপ যোদ্ধা নন। ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি জন্ম দিয়েছে ভোগসর্বস্ব রাজার উত্তরাধিকার। তাই বসন্তে যৌবন-শক্তির জয়জয়কার ক্লান্ত করে তোলে তাদের। এইসব রাজাগজাদের সামনে এরপর উদয়ন পরিবেশন করেন একটা দুর্ধর্ষ পরিকল্পনা। উদয়ন হাজির করে নগরপল্লীর খ্যামটা-আড়-খ্যামটা ধরনের অশ্লীল নাচ। সেই নৃত্যে ঘাগরা উড়ে প্রকট হয়ে ওঠে উন্মুক্ত উরু। ইমোশন্যাল গ্রাফে দেখা যায়, পারদ পৌঁছেছে সেক্স অ্যাপিল-এ। ঠিক তখনই সরে যায় ঘোমটা, দেখা যায় উন্মুক্ত উরু আসলে কোনো নর্তকীর নয়, বরং পুরুষের। অপ্রতিভ রাজারাজরারা হেসে ওঠেন তুমুল হুল্লোড়ে। বোঝা যায়, নৃত্য তাদের কাছে বিলাসকলামাত্র। নারীদেহের বিভঙ্গ অবলোকনের দর্শকাম। উদয়শঙ্কর প্রকাশ করেন নিজের শিল্পীসত্তার যন্ত্রণাকে। কিন্তু তার সমাধানে প্রকাশ পায় উদয়শঙ্করের সামঞ্জস্যময় আধুনিকতার ধারণাটি। পুরুষতন্ত্র মেয়েদের শরীরে আবডালও তৈরি করেছে আর হেনেছে লোলুপ দৃষ্টিও। কিন্তু ওই রাজরাজরার সামনেও উদয়ন স্বীকার করেনি শরীর আচ্ছাদনের শর্তটিতে। বরং ওই রাজাদের সামনেই শরীর-আঁকড়ে থাকা পোষাকে মেয়েরা হেঁটে যায় দৃপ্ত ভঙ্গিতে। নারীর ক্ষমতায়নে নিজের শরীরকে নিয়ে অনর্থক সংকোচের বেড়ি ভেঙে ফেলার পাঠটিও উদয়শঙ্কর দিতে পেরেছিলেন কী দুঃসাহসিকভাবে!
যন্ত্রণার একটি অন্যরকম চেহারায় শেষ হয়ে আসে উদয়নের গল্প। নারী স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটেও ভোগলোলুপ রাজারা লুব্ধদৃষ্টিতে চেয়ে দেখে নারী-শরীর। আনন্দে-উত্তেজনায় অনুদানের অর্থবন্যায় ভাসিয়ে দেয় কলাকেন্দ্রের অর্থভাণ্ডার। মহারাজদের অনুগ্রহ এল সেই লোলুপদৃষ্টির বিনিময়মূল্য হিসেবে। এই বহুস্তরিক পাঠটিও স্পর্শ করে দর্শকের জিজ্ঞাসাকে। এই অর্থলাভে কলাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা উদয়ন আনন্দিত হয়, কিন্তু যে উদয়ন শিল্পী? তার কাছে তা যে তার শিল্পের অবমাননা। সেই অবসাদেই বুঝি অসমাপ্ত থেকে যায় তার বসন্ত-উৎসব। এক সুউচ্চ প্রতিষ্ঠার শিখর থেকে যেন অধঃপতিত হয় সে। বাইরের এই হতাশার ভিতরে উদয়ন দেখে এক স্বপ্ন--- ছবির স্বপ্নদৃশ্য রূপে যা এই ছবির উপসংহার রচনা করে। সেখানে ভারতীয় দর্শনে পুরুষ-প্রকৃতির মিলনে অর্ধনারীশ্বররূপে সৃজনের যে অধ্যাত্মচিত্র, তার সঙ্গে সংযুক্ত হয় উদয়নের সৃজনকল্পনা। বিশ্বলোক থেকে আশাহত, হতাশ উদয়ন তার সৃষ্টিলোককে নিয়ে হয়ে ওঠে ব্যক্তিক। তীব্র এক প্রেমের ভূমিতেই সে খুঁজতে চেয়েছে শিল্পের পবিত্র অনুপ্রেরণা।
Powered by Froala Editor