বিবাহের পর উদয়ের অন্তরঙ্গ জীবনের ধ্রুবতারা হয়ে উঠলেন অমলা, সেকথা ঠিক। কিন্তু বাইরে তাঁর কাজের জগতে দলপতির স্ত্রীর কর্তৃত্ব, অধিকার থেকে নিজেকে রাখলেন শত হস্ত দূরে। সেখানে রইলেন সেই পূর্বের অমলা হয়েই। তাও, উদয়ের অতীত এসে দাঁড়াল তাঁর সৌভাগ্যের বেড়া ডিঙিয়ে। সেইসঙ্গেই আলমোড়ার উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচার সেন্টারের বিবিধ সমস্যা আছড়ে পড়ল তাঁদের সদ্য বিবাহিত জীবনে। সেন্টার ভেঙে যাওয়ার নানাবিধ কারণগুলি ক্রমে হয়ে উঠল প্রকট।
আলমোড়ায় সেন্টার প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত উদয়শঙ্করের নৃত্যসঙ্গিনী হিসেবে সিমোন বারবিয়ে পেয়েছিলেন একচ্ছত্র অধিকার। উদয়শঙ্কর তাঁকে নাম দিয়েছিলেন, সিমকি। যেন সদ্য উঠে এলেন বিদেশি রূপকথার ভেতর থেকে, এমনই ছিল তাঁর রূপ। তেমনই প্রখর ছিল তাঁর শিল্পবোধ। পিয়ানোয় তাঁর হাতে সুর উঠত অনৈসর্গিক হয়ে। স্বয়ং রবিশঙ্করও সে বিষয়ে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর আশ্চর্যবোধ। সিমকি নাচ শিখেছিলেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ইসাডোরা ডানকানের ছাত্রী জঁ রনসের কাছে। তারপর উদয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। উদয়ের কাছেই শিক্ষা আর সেই থেকেই দীর্ঘ কুড়ি বছর অপৃথক এক জীবনাচরণ। নৃত্যে তাঁর প্রকাশ ছিল অনন্য বিভাময়। আলোকবিচ্ছুরিত এক বৃত্ত যেন নির্মিত হয়ে উঠত তাঁর মুদ্রায়। আর তাঁর অভিব্যক্তি, সে বুঝি অবাঙমনসগোচর। কিন্তু যা সবচেয়ে বিস্ময়কর, তা হল তাঁর নৃত্যপ্রকৃতি। ফ্রেঞ্চ সিমকির নাচ প্রসঙ্গে অমলাশঙ্কর জানিয়েছিলেন, এত গ্রেসফুল, এত লাবণ্যময় ছিল সেই নৃত্য, যেন মনে হত, তা বহু ভারতীয়দের চেয়েও বেশি ভারতীয়।
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে এক ভাঙা সংসারে কেটেছিল সিমকির ছোটোবেলা। মা আর মেয়ের সংসারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে ছিল প্রবল অর্থাভাব। বিধ্বংসী যুদ্ধের আগ্রাসনকে দেখতে-দেখতে বড়ো হয়েছিলেন সিমকি। তারপর কাজ-খ্যাতি-স্বচ্ছলতা। সমস্ত মসৃণতায় যখন এসে দাঁড়াল জীবন, দেখলেন তখনও দাঁড়িয়ে আছেন আরো এক আসন্ন ভয়াবহ যুদ্ধের সামনে। সেই সময়ে উদয়কে লেখা তাঁর চিঠিপত্রের আনাচে-কানাচে মেঘ ঘনিয়ে রইল সেই দুর্দিনের। মানবত্বে আগুন-লাগা সেইসব দিনরাত্রির প্রত্যক্ষ হদিশ রইল তাঁর লেখায়। উদয়শঙ্করের জীবনে এক সংকটকালে সিমকি এসেছিলেন মাহেন্দ্রক্ষণে। সিমকি তখন মাত্র ষোলো, উদয়শঙ্কর ছাব্বিশ। তখন তাঁরা শুধু দুজন। তখনই ধীরে ধীরে তৈরি হয়ে উঠছে উদয়শঙ্করের নৃত্যরীতি। ধীরে ধীরে দেশ-দেশান্তরে তাঁদের শিল্পযাত্রায় দর্শকের স্তুতি--- নির্মাণ করেছে তাঁর দল গড়ার অভিলাষ। তার কত পরে তৈরি হয়েছে উদয়ের দল। তারও কত পরে উদয়শঙ্করের এই কালচারাল সেন্টার। শুধু তাঁদের দুজনের শিল্পভ্রমণ থেকে দল বাড়তে-বাড়তে উদয়ের জীবন দাঁড়িয়েছে লোক-লোকারণ্যের রাজকীয় মহিমায়। উদয়ের সেই নতুনতর অধিষ্ঠানে নিজের অস্তিত্বের বেদিটির সন্ধানে যেন দিশেহারা রইলেন সিমকি।
আরও পড়ুন
বিয়ের আড়াই ঘন্টা আগেও উদয় চিঠি লিখলেন অমলাকে
যখন আলমোড়া গঠনের প্রস্তুতি চলছে, অসুস্থতার কারণে, সিমকি তখন রয়েছেন নিজের শহর প্যারিসে। দীর্ঘ অসুস্থতা, তবু সিমকির মন পড়ে আছে ভারতে। উদয়ের নৃত্যজগতে ফিরতে চেয়ে ব্যাকুল তিনি। ১৪ জুলাই ১৯৩৮-এর এক চিঠিতে উদয়কে লিখলেন সিমকি, ‘Please don’t let me get too old in Paris! I am dying to begin work again in India’। আর এর পরবর্তী একটি চিঠিতে ধরা পড়ল, ক্ষয়িষ্ণু দেশ আর বিপন্ন এক সময়ের কথা। ২৮ অগস্ট ১৯৩৮-এর চিঠিতে লিখলেন তিনি, ‘…আমি (স্পেনের) উত্তর তটবর্তী এলাকায় ছিলাম— জায়গাটি অপূর্ব এবং একেবারে অকৃত্রিম। কিন্তু শহরগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল!... আর ওখানকার মেয়েদের করুণ মুখগুলি! বেচারা! উদয়, পৃথিবীটা পাগল হয়ে গেছে। প্রত্যেকে তার প্রতিবেশীকে কী অসম্ভব ঘৃণা করে… ইয়োরোপের কী হবে বলো তো? দেখো--- শীতের পরে আমাদের অবস্থাও স্পেনের মতো হবে…’। ১৯৩৬ সালে স্পেনের নির্বাচনে সাফল্য লাভ করল গণতন্ত্রপ্রিয় বামপন্থী দলগুলি। সেইসময় সেখানকার দক্ষিণপন্থী নেতা ফ্র্যাঙ্কোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাঁকে সন্দিগ্ধ করে তুলে পাশে দাঁড়ালেন ইতালির মুসোলিনি আর জার্মান হিটলার। অন্যদিকে গণতন্ত্রীদের পক্ষে যোগ দিল সোভিয়েত রাশিয়া। ফলত স্পেনের অভ্যন্তরীণ বিবাদজনিত গৃহযুদ্ধ পেল আন্তর্জাতিক মাত্রা। রক্তক্ষয়ী সেই গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারালেন সাড়ে সাত লক্ষ সাধারণ মানুষ। ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল দৈনন্দিন জীবন। স্পেনের বাস্ক নগরী গের্নিকাকে ধ্বংস করল জার্মান শক্তি। যার প্রতিবাদে পাবলো পিকাসো আঁকলেন তাঁর বিখ্যাত চিত্র গের্নিকা। যুদ্ধের একটা অতীত আর যুদ্ধের একটা সমকাল, এক ভয়াবহ ক্ষয়ের রিক্ততা, বোধ করি রয়ে গেল সিমকির অবচেতনে।
আরও পড়ুন
অমলার অনুভূতিলোকে সেদিন নামল প্রথম আষাঢ়
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীশঙ্করের গান শুনে ঘুমিয়ে পড়লেন নেহরু
১৯৩৭-এ সিমকির জীবনে এল প্রেম। প্রেমিক এডিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আসতে চাইলেন আলমোড়ায়। কিন্তু তাঁকে কাজে যুক্ত করার ব্যাপারে উদয়শঙ্কর রইলেন নিস্পৃহ। সিমকির লেখা চিঠি থেকেই হদিশ মেলে, এডি উদয়ের পূর্বপরিচিত। ১৯৩৬ সালেই এডি সাহায্য করেন উদয়ের কোনো প্রকল্পে। তা সত্ত্বেও উদয়শঙ্কর এডির আলমোড়ায় আসার ব্যাপারে জারি রাখলেন নিষেধাজ্ঞা। ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮-এ ক্রুদ্ধ সিমকি পত্রাঘাত করলেন উদয়কে। চিঠিতে জানতে চাইলেন, ১৯৩৬-এ যদি উদয়কে সাহায্য করে থাকতে পারেন এডি, তবে কোন যুক্তিতে সে এখন অক্ষম? দ্বিতীয়ত, উদয়ের ভরসাতেই তিনি সব কিছু ছেড়ে প্রতীক্ষা করেছেন এতদিন। অথচ কর্মহীন, অর্থহীন এডির দায়িত্ব নিতে কেন অস্বীকার করলেন উদয়? শেষে কাতর সিমকি উদয়ের কাছে জানালেন তাঁর প্রার্থনা। তিনি যদি এডির সঙ্গে থাকেন তবে তীব্র অভাববোধ করবেন নাচের। আবার যদি আলমোড়ায় যান তাহলে এডির বিচ্ছেদ তাঁর কাছে হয়ে উঠবে অসহনীয়। ব্যক্তিগত সংকটের সূত্রেই তিনি জানালেন দেশীয় পরিস্থিতির কথাও। লিখলেন, ‘তুমি ভাবতেও পারবে না ইয়োরোপে এখন আমরা কী দুঃস্বপ্নের ভেতরে সময় কাটাচ্ছি। যদি ওই উন্মত্ত দানবটার জন্য যুদ্ধ বাধে তাহলে হয়তো আমি ফ্রান্স ছেড়ে যেতে পারব না। ভূমধ্যসাগরের পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। উদয়, বিংশ শতকে ইয়োরোপীয় হয়ে জন্ম নেওয়া খুব সুখকর নয়! যেন সব পাগল হয়ে যাচ্ছি। … সবাই এই নরক থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।’ তবু হাজারো বিঘ্ন পেরিয়েই মা-কে ছেড়ে ভারতবর্ষেই এলেন সিমকি। এলেন আলমোড়ায়।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীশঙ্কর: মায়ের আড়ালে গান শেখালেন নিজেকে
অমলাকে সিমকি দেখেছিলেন সেই প্যারিসেই, অমলা তখন নেহাতই ছোটো। আলমোড়ায় দুই সহকর্মীর সহাবস্থান ছিল সহজ। চলত চিঠিপত্রের আদানপ্রদান। কিন্তু উদয়ের সঙ্গে অমলার বিয়ের পর বদলে গেল সম্পর্কের আদল। নিজের একাধিপত্যের বাসনায় কখনও জোহরাকে কখনও বা অমলাকে দেখতে শুরু করলেন ঈর্ষার শ্যেন-শঙ্খিল দৃষ্টিতে। পরিস্থিতি হয়ে উঠল জটিল। এডির নেশাসক্তির কারণে সম্পর্ক ভেঙে গেলে, উদয়-অমলার বিয়ের অল্পদিন পরেই, সিমকি বিয়ে করলেন সেন্টারের প্রভাত গাঙ্গুলিকে। তবু তাঁর প্রকৃতি তাঁকে করে তুলল ক্ষুব্ধ, এলোমেলো।
‘ইন্টারনাল মেলোডি’ নামে উদয় তৈরি করেছিলেন একটা নৃত্যভাবনা। সেই ভাবনায়, ব্রহ্মা আদিতে সৃষ্টি করলেন পুরুষ। কিন্তু সেই মানব তাঁর কাছে গিয়ে নালিশ জানালে তার একাকিত্ব নিয়ে। ব্রহ্মা তখন সৃষ্টি করলেন নারী। মানবীকে পেয়ে সন্তুষ্ট মানব ফিরে গেল তার কাজে। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল ভারি বিপত্তি। নারী তাকে বাধা দেয় সমস্ত কাজে, এইরকম নয়, ওইরকম। ওইরকম নয়, এইরকম। বিরক্ত পুরুষ বাধ্যত ফিরিয়ে দিয়ে এল তাকে। কিন্তু এবার ঘটল এক আশ্চর্য কাণ্ড। ফিরে এসে সেই উপদ্রবহীন কর্মজগৎকেই এবার তার মনে হল বিস্বাদ। বিষাদময় সেই মানব কিছুতেই মন দিতে পারল না তার কাজে। এই নাচে উদয় পার্টনার করলেন অমলাকে। জোহরাকে পার্টনার করলেন তাঁর ‘বিলাস’ নামক নাচটিতে। আর ‘রিদম অব লাইফ’-এ সিমকির জন্য রাখলেন সুন্দর এক স্বপ্নের সিকোয়েন্স। কিন্তু সিমকি তুষ্ট হতেন না কোনোকিছুতেই। যেকোনো তুচ্ছ বিষয়কেও করে তুলতেন অপ্রীতিকর।
হয়তো উদয়শঙ্করের ছবি তুলছেন কেউ, সেই সঙ্গে ছবি তুললেন অমলারও। আগে হলে এ বিষয়ে ভ্রূক্ষেপও করতেন না সিমকি। কিন্তু উদয়-অমলার বিয়ের পর এইসব সামান্য ঘটনাই রূপান্তরিত হত রাগারাগি আর রেষারেষির পর্যায়ে। অমলার বিয়ের আগে অমলার ভাইবোনেরা এলে সিমকির সঙ্গে চলত বিস্তর হই-হই। কিন্তু পরে এর বদল ঘটল। সিমকির একটা ঘোড়া ছিল, অমলার ভাই সেটায় চড়তেন। কোনো কারণে ফিরতে দেরি হলে আর রক্ষে থাকত না। ক্রোধ, বিরক্তি, অসন্তোষ, বাঁকা কথা, চিৎকার-চেঁচামিচি--– সব উপসর্গ তৈরি হল উদয়ের বিবাহের পরেই।
একদিন প্রতিবাদ করলেন অমলা। চিরদিনের শান্ত, সহনশীল অমলা শুধু বললেন, I pity you সিমকি। আকস্মিক এই প্রতিরোধে দিগবিদিকশূন্য হয়ে, উদয়শঙ্কর আর প্রভাত গাঙ্গুলির সামনেই, সিমকি হাত তুললেন অমলার গায়ে। চড় মারলেন অমলাকে। হতচকিত হয়ে উঠলেন সকলে। মানবিক সম্পর্কের এই সূক্ষ্ম, রূঢ় পালাবদলকেও উদয় দেখেছিলেন শিল্পের দৃষ্টিতে। তাঁর ‘কল্পনা’ ছবিতে এই দৃশ্যকে তিনি গড়ে তুললেন পুনরায়। তবে জীবনকে দেখতে চাওয়া বড়ো সহজ কথা নয়। সিমকির জীবনকাহিনিকেও যদি মিলিয়ে দেখা সম্ভব হত, তাঁর বিধ্বস্ত শৈশব, দুটো বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর দেশ, এক বিভ্রান্ত প্রণয়, এক বিগত প্রেমিক না জানি আরো কত কী, সেই গভীরতায় দেখা সম্ভব হলে, হয়তো ততটা রুক্ষ লাগত না সিমকিকে।
উদয়শঙ্কর সিমকিকে কখনও ডাকতেন ‘বামবুশ’, কখনও ‘সিম’, কখনও বা ‘সিমুশ’। ৩১ জানুয়ারি ১৯৪২-এ একটি চিঠিতে তাঁর সিমুশ লিখেছিল উদয়কে, ‘আমার ভাবতেও কষ্ট হয় যে তুমি আমার প্রতি প্রায় সমস্ত বন্ধুত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছ’। কী জানি কোন ব্যথা ঠাঁই নিয়েছিল তাঁর অন্তর্লোকে? নারী মন কোন অজ্ঞাত নির্জনতায় নিজেকে নির্বাক করে রাখে, গহিন সে অরণ্যপথ।
আলমোড়ার সেন্টারে একসময় ইস্তফা দিয়ে সিমকি আর প্রভাত চলে এলেন বম্বেতে। একটি বিশেষ ভূমিকায় সিমকি কাজ করলেন রাজ কাপুরের বিখ্যাত ছবি ‘আওয়ারা’-তে (১৯৫১)। ছবির সেই দুরন্ত জনপ্রিয় হওয়া, রাজ কাপুর-নার্গিসের দীর্ঘ ড্রিম-সিকোয়েন্সটির কোরিওগ্রাফ করলেন মাদাম সিমকি। ১৯৫৩-তে নৃত্য নির্দেশকের দায়িত্ব নিলেন ‘ঝাঁসি কি রানি’ ছবিতেও। এর আগে নৃত্য নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন জোহরা ‘নীচা নগর’ (১৯৪৬) ছবিতে। ১৯৪৭-এ ‘ভক্ত তুলসীদাস’, ১৯৫২-তে ‘আঁধিয়া’ ছবিতে নৃত্য নির্দেশকের ভূমিকায় ছিলেন লক্ষ্মীশঙ্কর। কী অদ্ভুতভাবে উদয়শঙ্করের হাতে- তৈরি সিমকি, জোহরা, রাজেন্দ্রশঙ্কর, লক্ষ্মীশঙ্কর, শচীনশঙ্কর, শান্তি বর্ধন, সুন্দরী শ্রীধরণী, প্রভাত গাঙ্গুলি, নরেন্দ্র শর্মা প্রমুখ প্রত্যেকে পরিচিত হলেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তথা শিল্পমহলের নানা প্রান্তরে। উদয়শঙ্করের আধুনিক নৃত্যঘরানা বিচিত্র মাত্রায় মিশে রইল এমনকি মেইন স্ট্রিম জনপ্রিয় হিন্দি চলচ্চিত্রেও। তবু তত স্পষ্টত শোনা গেল না সেই ঋণস্বীকার। ছায়ানৃত্য, মঞ্চভাবনা, অশ্রুত সব ভারতীয় যন্ত্রের ব্যবহার, ধ্বনিসংযোগ, মুখোশ নির্মাণ, পোশাক, সাজসজ্জা, অলংকার আরো কত কী। অস্বীকৃত রইল ভারতীয় সংস্কৃতির বহুধামাত্রায় উদয়শঙ্করের অতিসূক্ষ্ম গভীর সব অবদানের কথা। ভাবনায় চির-আন্তর্জাতিক মানুষটি ক্রমে যেন বাঁধা পড়লেন আঞ্চলিক গুণগাথায়। বিদেশ তাঁকে নিয়ে যতটা আগ্রহী হল, দেশ বুঝি ততটা নয়, সে ভারি বেদনার কথা। আগামী দিনে সুনিশ্চিত কেউ এসে এইসব অনুপুঙ্খ-সন্ধানী গবেষণায় ঋদ্ধ করবেন আমাদের।
এক সময় ভেঙে গেল প্রভাত গাঙ্গুলির সঙ্গে সিমকির বিবাহসম্বন্ধ। সব ছেড়ে সিমকি ফিরে গেলেন নিজের দেশে। আরো একবার বিবাহ করলেন। একটিমাত্র কন্যাসন্তান তাঁর, মিনি। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়েছিল তাঁর খ্যাতি। নৃত্য তাঁর কাছে কোনো শিল্পপ্রক্রিয়া নয়, তাঁর অন্যতর সত্তা। তবু ছেড়ে দিলেন সব। স---ব। জোহরা আর রবিশঙ্কর চেয়েছিলেন যোগাযোগ করতে, কিন্তু পিছন ফিরে আর কখনও তাকাননি তিনি।
Powered by Froala Editor