শঙ্কর সরণি - ৪৫
আগের পর্বে
ছোট থেকেই নৃত্যের তালিম নিয়েছিলেন লক্ষ্মীশঙ্কর। কিন্তু হঠাৎই প্লুরিসি ধরা পড়ে তাঁর। আর কোনোদিন মঞ্চে নৃত্য করতে পারবেন না। সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল শৈশব থেকেই। এবার তাকেই আঁকড়ে ধরা। রবিশঙ্করের পরিবর্তে উদয়শঙ্করের দলের সঙ্গীতের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। তাঁর লোরি শুনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন খোদ জওহরলাল নেহরু। জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে মিলে রবিশঙ্কর তৈরি করেছিলেন এক ঐতিহাসিক অ্যালবাম। সেখানেও গান গেয়েছেন লক্ষ্মীশঙ্কর। আবার এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়েছে নির্মলা দেবীর সঙ্গে মিলিত অ্যালবাম। জীবনে বারবার দুর্ভাগ্য ছায়া ঘনিয়েছে। রাজেন্দ্রশঙ্কর থেকে শুরু করে দুই ছেলে-মেয়ের অকাল মৃত্যু ব্যথিত করেছে তাঁকে। এসবের মধ্যেও কখনও সুরের থেকে দূরে সরে যাননি তিনি।
আলমোড়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে কিন্তু অমলা তখনও কলকাতায়। অক্ষয়কুমার নন্দীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয় নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র সংগীতবিদ দিলীপকুমারের। একদিন অমলাকে জানালেন দিলীপকুমার, স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু দেখতে চান তাঁর নৃত্য। দিলীপকুমার আর সুভাষচন্দ্র ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অমলা এখন বড়ো হয়েছেন। নাচের জন্য সদাপ্রস্তুত। সুভাষচন্দ্র দেখবেন তাঁর নাচ, যৎসামান্য প্রস্তুতি সেরে নিলেন তিনি। কিনলেন খদ্দরের একটা শাড়ি আর লম্বা চুল তাঁর, তাই বিনুনিতে লাগানোর জন্য ফুল। ব্যস, এইটুকুই। এলগিন রোড থেকে গাড়ি তুলল অমলাকে। সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আছেন জ্ঞান মজুমদার। পেছনে সুভাষচন্দ্র আর অমলা। সুভাষচন্দ্র যাবেন মহাজাতি সদনে, একটা কাজ রয়েছে তাঁর। তারপর যাবেন শ্রীরামপুর। দেশের স্বাধীনতায় তাঁর সাংগঠনিক বুদ্ধি, ত্যাগ আর সাহসের কদর করেছে শুধু দেশবাসীই নয়, সারা পৃথিবী। আবেগের সঙ্গেই, দেশকে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন যৌক্তিক বিবেচনাতেও। দেশকে বুঝতে চেয়েই চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন দেশের সমস্যার মূলকে। পথে যেতে-যেতে সুভাষ বলছেন কত কথা। মুগ্ধতায় হতবাক অমলা। চিরদিনের জন্য সেসব কথার ছাপ রয়ে গেল তাঁর মনে। সুভাষচন্দ্র বললেন, দেশ স্বাধীন হলে তিনি রদ করতে চান দুটি প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতা। এক শ্রাদ্ধ, দ্বিতীয় অন্নপ্রাশন। যাঁর শ্রাদ্ধ তিনি তো চলেই গিয়েছেন, আর যার অন্নপ্রাশন তার তো বোধোদয়ই হয়নি। যে দেশে খাদ্যের এত অভাব, এইসব উপলক্ষ্যে তার অপচয় অসমীচীন।
সেদিন ছিল দিলীপকুমারের বোনের বিয়ে। শ্রীরামপুরের সুরেন ব্যানার্জির পুত্রের সঙ্গে। অনুষ্ঠান সেরে ফেরার সময় গাড়িতে উঠছেন তখন সুভাষচন্দ্র, অক্ষয় নন্দীকে বললেন, উদয়শঙ্কর আলমোড়াতে এক শিল্পকেন্দ্র গড়েছেন, অমলাকে সেখানে পাঠাবেন। অক্ষয়-সুভাষচন্দ্রও পূর্ব পরিচিত। অক্ষয় ততদিনে অমলার উচ্চশিক্ষা, বিবাহ ইত্যাদি নিয়ে ভাবিত, তাই বিনীত হয়েই বললেন, নাচ তো অনেক হল। সুভাষচন্দ্র সম্ভবত বুঝলেন, অক্ষয়ের মনোভাব। বললেন, তাঁকে কথা দিতে, অমলাকে কখনও তিনি বিচ্ছিন্ন করবেন না নাচ থেকে। একথাও বললেন, অমলার উপযুক্ত ক্ষেত্র আলমোড়া-ই। অক্ষয় বুঝলেন, এ নিয়ে আর ওজর-আপত্তির অবকাশ রইল না। ১৯৩৯-এর মার্চ-এপ্রিল নাগাদ অমলা পৌঁছলেন ‘উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার’-এ। যদিও উদয়শঙ্করের জীবনীকার সুধীরঞ্জন জানিয়েছিলেন, উদয়ের কর্মবৃত্তান্ত শুনে গুণমুগ্ধ ছিলেন সুভাষচন্দ্র কিন্তু তাঁদের প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ হয়নি কখনও।
আলমোড়ায় এলেন অমলা। এলেন তবে বি-এ পরীক্ষার জন্য চলল যাতায়াত। বার দুই ফিরলেন কলকাতায়। এতদিন অমলার কাছে উদয়শঙ্কর ছিলেন ‘দাদা’, নেতৃত্ব দেওয়া এক বিচক্ষণ দলপতি। আর উদয়ের কাছে অমলা ছিলেন উনিশ বছরের ছোটো বালিকামাত্র। কিন্তু আলমোড়ায় পদার্পণ করলেন যে-অমলা, তিনি এলেন নূতন বেশে। সেযুগের পক্ষে, উনিশ-কুড়ির পূর্ণ যুবতী। শিক্ষিতা, নৃত্যপটিয়সী। সুন্দরী, আন্তরিক। হাসিখুশি, মিশুকে এই কন্যেকে এবার নতুন করে চেয়ে দেখলেন উদয়।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীশঙ্করের গান শুনে ঘুমিয়ে পড়লেন নেহরু
দলে বেশিরভাগ সকলেই যেহেতু তাঁকে ‘দাদা’ ডাকতেন, বিয়াত্রিচেও কখন-কখনও সেই নামেই ডেকেছেন উদয়কে। বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষকে, স্বাভাবিক বাঙালি দস্তুরে, ‘দাদা’ ডাকার রীতি, সিমকিকেও তাই শিখিয়েছিলেন উদয়। অমলার ক্ষেত্রটা তো বলাই বাহুল্য। কখনও কখনও কোনো বিশেষ সম্পর্কের মেঘ-রৌদ্র বুঝতে হলে দস্তুরের দেখা থেকে সরে দাঁড়াতে হয় আমাদের। ‘দাদা’ এঁরা ডাকতেন সকলেই, কিন্তু সম্পর্কের পালাবদলে ‘দাদা’ শব্দটি কালক্রমে হয়ে উঠেছিল একটি নামপদ। সে কারণেই উদয়-অমলা বিবাহের পরেও প্রেম-মাধুর্যের বাতাবরণেও শব্দটি থেকে গিয়েছিল অক্ষত। নিরুপদ্রব।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীশঙ্কর: মায়ের আড়ালে গান শেখালেন নিজেকে
যেদিন উদয়শঙ্করের ‘কার্তিকেয়’ নৃত্যটি প্রথম মঞ্চে দেখেছিলেন অমলা, সেদিন উদয়শঙ্করের নৃত্যগুণ বিমোহিত করেছিল তাঁকে। সেকথা ঠিক, আর সেইদিনই তাঁর অনুভূতিলোক জুড়ে নামল প্রথম আষাঢ়। তিনি দেখলেন এক পুরুষকেও। তাঁর শৌর্যকে। তীব্র সুদর্শন তিনি। সমস্ত শরীর জুড়ে যেন কীসের বিভা। দ্যুতিময় তাঁর চেয়ে দেখা। কিন্তু দেখলেন অনন্ত দূরত্বে দাঁড়িয়ে। যেভাবে কাব্য-উপন্যাসে, নাটক-নভেলে পৌরুষের বিচ্ছুরণকে দেখে সাধারণ মানুষ, সেইভাবে। কারণ এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবার অবকাশ আর কারণ কিছুই তো ছিল না কখনও।
আরও পড়ুন
মিছরি জ্যয়সি আওয়াজ থি উনকি
১৯৩৯ সালে সকলে মাদ্রাজ গেলেন, ট্যুরে। ৮ ডিসেম্বর উদয়শঙ্করের জন্মদিন। সেদিন ছিল ৭ তারিখ। শীতের রাত, অনুষ্ঠান ফুরোলেও, এতটুকু ক্লান্ত নয় কেউ। দলের সকলের সেদিন আলাদা উচ্ছ্বাস। হোটেলে ফিরে খাওয়া-দাওয়া, হই-হুল্লোড়, চলছে নাচ-গান আর শুভেচ্ছা জানানোর পালা। সেদিন এই আনন্দ-উৎসবে যোগ দিলেন হোটেল কর্তৃপক্ষ আর স্থানীয় কিছু বাসিন্দাও। শুভেচ্ছা জানিয়ে একে একে যখন বিদায় নিল সকলে, তখন রাত বারোটা। উদয়শঙ্কর এলেন অমলার ঘরে। চারিদিক শান্ত এখন। স্থির হয়ে বসলেন তিনি। অমলা ঈষৎ বিস্মিত, কিছু বলবেন উদয়শঙ্কর, তিনি অপেক্ষা করছেন ধীর। খানিক সময় নিয়ে কথা বললেন উদয়শঙ্কর, আমি ঠিক করেছি বিয়ে করব। অমলা দলের একজন কনিষ্ঠ সদস্য। দলপতি নিজে এসে জানাচ্ছেন তাঁর জীবনের জরুরি একটি কথা, কী বলবেন তিনি! বললেন, ভালো কথা। উদয় তাকালেন। জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি জানতে চাও না অমলা, আমি কাকে বিয়ে করব? ‘সম্ভ্রম’ শব্দটাই এখনও বিরাজিত অমলার প্রান্তে। অমলা বললেন, হ্যাঁ বলুন। ঠোঁটের কোণে মৃদু সুখের আভা, উদয়শঙ্কর বললেন, যাকে আমি বিয়ে করব, তার নাম অমলা। মনের মাঝে কোন অজ্ঞাতলোকে ছিল অনুরাগ, কে জানে! কোথায় বাজল সুর, কী প্রলয় হৃদয় জুড়ে! অমলার চোখ থেকে নেমে এল অঝোরধারা। মাথা নিচু, স্থির দাঁড়িয়ে অমলা, বয়ে যায় অশ্রুধারা।
আরও পড়ুন
অন্নপূর্ণা: শঙ্করদের গল্পে চির উপেক্ষিত
পরদিন সকালবেলায় উদয়ের জন্মদিনে অমলা তাঁকে দিলেন উপহার। চন্দন কাঠে গড়া ছোট্টো এক বিষ্ণুমূর্তি। ভেতরে একখানা কাগজ। তাতে লেখা, নবীন করিয়া লও মোরে তব নবজীবনের মাঝে।
বিবাহ বিষয়টিকে নিয়ে বিন্দুবৎ আগ্রহ নেই উদয়শঙ্করের, সেকথা জানতেন সকলেই। মেয়েদের প্রতি তাঁর আকর্ষণকে সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিকতায় দেখেননি উদয়শঙ্কর, দেখতে চেয়েছেন মানবিক পারস্পরিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রণয়াকাঙ্ক্ষায়। পরিণতির বাধ্যতায় হরণ করেননি প্রণয়ের নিজস্ব স্বাধীনতা। দুটি পক্ষের ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান ছিল দৃঢ়, দরাজ। স্বচ্ছ এবং শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু অস্থির বদলে চলাই তো সবচেয়ে স্থির এ অস্তিত্বলোকে। অমলার আলমোড়ায় আবির্ভাব বদলে দিল উদয়শঙ্করকে। এক উজাড় পরিবর্তন যেন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল তাঁকে। অমলার কাছে যে উদয় দাঁড়ালেন, তিনি চাইলেন প্রেম, বিবাহ, সন্তান এবং একনিষ্ঠ পূর্ণ গার্হস্থ্য।
আলমোড়ায় থাকতে থাকতেই অমলা টের পেলেন উদয়ের প্রতি তাঁর প্রেমানুভূতি। সেইসঙ্গেই খেয়াল করলেন অমলার প্রতি জন্ম লাভ করা উদয়ের সূক্ষ্ম মধুর প্রেমসংস্কার। তবুও অনুভূতির দেউড়ি পেরোতেন না, ভয় পেতেন, জানতেন ঘর বাঁধবার মানুষ নন উদয়। কিন্তু আদ্যন্ত রোম্যান্টিক এই মানুষটি কিছুদিনের মধ্যেই জয় করে নিল তাঁকে। হয়তো সকলে বসে কথা বলছেন, উদয় এসে বসলেন ঠিক অমলার পাশটিতেই। একাজ-ওকাজ কারণে-অকারণে উদয় খুঁজছেন অমলাকেই। একদিন গাড়ি চালাচ্ছেন, পাশে বসা ভদ্রলোকটির সঙ্গে অনর্গল বলে চলেছেন কাজের কথা। পিছনে একা অমলা বসে আছেন চুপচাপ। গাড়ি চালাতে-চালাতে ওই কাজের কথার মাঝেই আয়নাটুকু ঘুরিয়ে তার ভেতর দিয়ে চেয়ে দেখলেন অমলাকে। অমলা অনুভব করলেন বাঁধা পড়তে চেয়েই এ মানুষ ধরা দিয়েছে তাঁর কাছে। মনে মনে ঘর বাঁধলেন অমলা।
সেন্টারের শৃঙ্খলা এবং নানাবিধ সঙ্গত কারণেই নিজেদের সম্পর্কের কথা উদয় জানাতে চাইলেন না প্রকাশ্যে। ইতিমধ্যে বি-এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মেয়েকে ডেকে পাঠালেন অক্ষয় নন্দী। ১৯৪০-এ কলকাতায় চলে এলেন অমলা। পরীক্ষা দিলেন ১৯৪১-এ। অমলা তখন বাইশ-তেইশ বছরের, বিয়ের জন্য বাবা মা শুরু করলেন পাত্রের খোঁজ, অমলা পড়লেন মহাবিপদে। কিছুদিনের জন্য আবার গেলেন আলমোড়া। সেন্টারে ছুটি শুরু হলে অন্যান্যরা পৌঁছে গেলেন যে যার গন্তব্যে, অমলা রয়ে গেলেন আলমোড়াতেই। রুষ্ট হলেন অক্ষয় নন্দী। ঋজু, স্পষ্ট কথার মানুষ তিনি। এ আচরণ অনুচিত বোধ করলেন তিনি। অমলা বাধ্য হয়ে, বাবাকে জানালেন সমস্ত কথা। আজ থেকে বহুদিন আগে বিদেশ-বিভুঁইয়ে অক্ষয় অমলাকে রেখে এসেছিলেন হেমাঙ্গিনীর হেফাজতে। নিশ্চিন্তে, পূর্ণ স্বাধীনতায়। নির্দ্বিধায় যেখানে রেখে এসেছিলেন অমলাকে, তা ছিল উদয়শঙ্করেরই গৃহ। কিন্তু সেদিন আর আজ, তফাত বিস্তর। অমলা বড়ো হয়েছেন। ইতিমধ্যে উদয়ের জীবনযাপনকে দীর্ঘ সময় ধরে জানবার সুযোগ হয়েছে অক্ষয়ের। প্রগতিশীল মুক্তচিন্তার মানুষ তিনি। কিন্তু ভারতীয় সম্বন্ধের সংস্কারে উদয়শঙ্করের মুক্তসম্পর্কের বিশ্বাসধারাকে গ্রহণ করতে পারেনি তাঁর মন। ফলত, প্রবল অপ্রত্যাশিত এমন একটা সংবাদে অসন্তুষ্ট হলেন অক্ষয়। হলেন চিন্তিতও।
উদয় নিজেদের সম্পর্কের কথা সেন্টারে জানাতে চান না, তার রয়েছে নিজস্ব যুক্তি। কিন্তু অক্ষয়ের কাছে বিষয়টির স্বীকৃতি নিয়েও তাঁর তরফ থেকে দেখা দিল দীর্ঘসূত্রিতা। গভীর সংকটে পড়লেন অমলা। ঠিক সেই সময়ই উদয়ের পাঠানো একটি চিঠির বক্তব্যে প্রবল মর্মাহত হলেন অমলা। আনুষঙ্গিক নানা কথার পর উদয় লিখেছেন, অমলার বিয়েতে গয়না, কাপড়, খাওয়া-দাওয়া এবং পণবাবদ ঠিক কতটা ব্যয় সম্ভব তাঁর বাবার পক্ষে সেকথা তাঁকে জানাতে। যদিও একথা জানিয়েও নিশ্চিন্ত করেছেন, বিয়ের জন্য তিনি গ্রহণ করবেন না কোনো অর্থ। তবু এসব কথা জানার প্রয়োজন আছে তাঁর। মানুষের অস্তিত্বে অমোঘ ধূসরতাই সবচেয়ে রিয়েল, সর্বার্থে খাঁটি। সাদা আর কালোর অনতিগভীরতায় জীবন ঠুনকো। জীবন যেখানে নির্ভার মেলেছে নিজের যাপন সেই তাঁর নির্ভেজাল মানবজমিন। জীবনের তল্লাশে পাড়ি দিচ্ছেন যাঁরা ঘন নির্জন পথ, সেই-ই তো তাঁদের আঁধারমণি।
'শঙ্করনামা'-য় এর মীমাংসার দিকটি অগোছালো। কিন্তু অন্য একটি পত্রের সাপেক্ষে জানা যায়, উদয় লিখলেন, ‘তুমি ব্যাপারটা আদৌ বুঝতে পারোনি আর সমস্ত কিছু গণ্ডগোল পাকিয়ে বসে আছো’। সম্ভবত সেন্টারের অর্থে তিনি বিবাহের ব্যয় নির্বাহ করতে চাননি, সম্ভব এও, বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষ বিচারে তিনি হতে চাইছিলেন সঞ্চয়ী। নিশ্চয়ই সদর্থক চিন্তাই তাড়িত করেছিল তাঁকে, নইলে নিজের সমস্ত দুর্ভাবনা এমন বিপুল ভাসিয়ে অমলা কেমন করে পৌঁছবেন তাঁর কাছে? উদয়শঙ্করের লেখা ওই প্রথমোক্ত চিঠিটার উল্লিখিত অংশগুলি এমন মূর্তিভাঙার উৎকণ্ঠা তৈরি করে যে, শেষ প্রান্তে এসে তাঁর কথাগুলি থেকে যায় আড়ালে। ওই চিঠির শেষকথায় লিখলেন তিনি, তিনি যা চেয়েছেন অমলা ঠিক তেমনই। তাঁকে পেয়ে গর্বিত তিনি। তারপর লিখলেন, ‘দেখা যাক আমি তোমার উপযুক্ত স্বামী হতে পারি কি না, কারণ তুমি তো জানোই এ ব্যাপারে আমি কত অনভিজ্ঞ। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে সব দিক থেকে ভালো স্বামী হতে সাহায্য করবে।’ দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত উৎকেন্দ্রিকতাকে পরিহার করে তিনি ফিরতে চান নীড়ে। প্রেম হোক তার সহায়ক, এই চান তিনি। এমন আকুল প্রেমিককে আবিষ্কারও করেছিলেন অমলা, পেয়েওছিলেন অমলাই।
Powered by Froala Editor