শঙ্কর সরণি - ৪৩
আগের পর্বে
অন্নপূর্ণাকে গুরুর শিক্ষা দিতে রাজি হলেন বাবা আলাউদ্দিন। কিন্তু এর জন্য সেতার ছাড়তে হল তাঁকে। আলাউদ্দিন সতর্ক করে দিয়েছিলেন, সেতার আমজনতা থেকে গুণীজন সবার জন্যই। কিন্তু সুরবাহার শুধু সঙ্গীতের বিদগ্ধ মানুষদের জন্যই। তাই সাধারণের মধ্যে সেই বাদ্য পরিবেশন করলে প্রশংসা নাও জুটতে পারে। বাবার আদেশ মেনে নিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা। পরেও খুব বেশি অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি তাঁকে। তবে বেশ কয়েকজন গুণী শিষ্য পেয়েছিলেন তিনি। রবিশঙ্করের সঙ্গে তাঁর বিবাহও হয়েছিল আলাউদ্দিনের ইচ্ছাতেই। অবশ্য তার আগেই রবিশঙ্করকে ভালোবেসেছিলেন তিনি। সেই সম্পর্কও স্থায়ী হয়নি। তবে বিচ্ছেদের পরেও দুজন দুজনের প্রতিভায় মুগ্ধ ছিলেন চিরকাল।
শঙ্করদের গল্পে প্রায় অশ্রুত আরেকটি নাম, লক্ষ্মীশঙ্কর (১৯২৬—২০১৩)। রাজেন্দ্রশঙ্করের স্ত্রী। অতুলনীয় এক কণ্ঠ নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। নৃত্যেও ছিল ধ্রুপদি তালিম। অভিনয়, নৃত্যপরিচালনা এবং সংগীত পরিচালনাতেও স্বচ্ছন্দ চলাচল ছিল এই গুণবতী শঙ্কর-বধূর। লক্ষ্মী প্রতিভাবান ছিলেন সে কথা ঠিক, কিন্তু তাঁর প্রতিভার উন্মেষে যাঁর ত্যাগ ছিল অবিচল, তিনি রাজেন্দ্রশঙ্কর। ভাবতে ভালো লাগে একথাও, তাঁর প্রতিভাকে বৃহত্তর শ্রোতার সামনে প্রথম হাজির করেছিলেন স্বয়ং রবিশঙ্কর। তাঁর গুণের যথার্থ কদর করেছিলেন উদয়শঙ্করও। তবুও শঙ্করদের আখ্যানে তাঁর খোঁজ মেলা ভার। উদয় আর রবি এই দুজনের কাছেই যথাক্রমে তিনি পেয়েছিলেন নৃত্য আর সুরের তালিম। সেইদিক থেকে তাঁর ভাসুর এবং দেওর দুজনেই তাঁর গুরুও বটে। শ্যামশঙ্কর আর হেমাঙ্গিনীর ভাঙা-দাম্পত্যের ছায়া এসে পড়েছিল উদয় আর রবির জীবনে। কিন্তু সে পরম্পরার উল্টোদিকে রাজেন্দ্র আর লক্ষ্মীর দাম্পত্য হেঁটেছে নিরুপম এক ছন্দোময়তায়।
লক্ষ্মীর বাবা ছিলেন আর. বৈদ্যনাথ শাস্ত্রী আর মা বিশালাক্ষী শাস্ত্রী। আইন নিয়ে পড়াশোনা করলেও গান্ধীর ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বৈদ্যনাথ যুক্ত হন স্বদেশী আন্দোলনে। গান্ধীর স্নেহভাজন ছিলেন তিনি। ছোটোবেলায় নিজের বাড়িতে লক্ষ্মী দেখেওছেন এই মনীষীকে। জাতির জনককে তিনি দেখেছিলেন ঘরোয়া বাতাবরণে। মুক্তমনা, সহজ এক মানুষ হিসেবে। বাবার সূত্রেই তিনি জেনেছিলেন, ভারতের অম্তিম গভর্নর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীকে (রাজাজি), প্রখ্যাত তামিল সাহিত্যিক কালকি কৃষ্ণমূর্তিকেও।
মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছিলেন বিশালাক্ষীও। তাঁর পরনে সদাসর্বদা থাকত শ্বেতশুভ্র খাদি। সেযুগে এয়ো স্ত্রীর পক্ষে শুধু সাদা পরাটা ছিল রীতিমতো বৈপ্লবিক। ছোটোবেলা থেকেই লক্ষ্মীর টান সুরের প্রতি, কিন্তু বিশালাক্ষী চাইতেন মেয়ে শিখুক নাচ। ভরতনাট্যমের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল খুব। দক্ষিণ ভারতীয় তামিল ব্রাহ্মণদের নৃত্যবিষয়ে তখনও সমাজে ছিল প্রবল রক্ষণশীলতা। তা সত্ত্বেও বিশালাক্ষী কন্যাকে নিয়ে গেলেন গুরু কণ্ডাপ্পা পিল্লাইয়ের কাছে। শুরু হল ভরতনাট্যমের তালিম। কিন্তু তবু সুরের দিকে মন পড়ে থাকত লক্ষ্মীর। তাঁর প্রতিবেশী-বন্ধু ছিলেন পুষ্পা আয়েঙ্গার, কর্ণাটকি সংগীত শিখতেন তিনি। পুষ্পার গুরু আসার আগে তিনি পৌঁছে যেতেন সেখানে। পুষ্পা শিখতেন আর লক্ষ্মী শুনতেন পাশে বসে। মায়ের আড়ালে নিজেকে গান শিখিয়েছিলেন এই কৌশলে। তবে জীবনের নানা বিপর্যয় পেরিয়ে লক্ষ্মীকে ফিরতে হয়েছিল সেই গানের কাছেই।
আরও পড়ুন
মিছরি জ্যয়সি আওয়াজ থি উনকি
মা আর বোন কমলার সঙ্গেই লক্ষ্মী এসেছিলেন আলমোড়ায়। তাঁর গুরু কণ্ডাপ্পা পিল্লাইও তখন যোগ দিয়েছেন উদয়শঙ্করের সেন্টারে। প্রথম-প্রথম এই পরিবেশে তাঁকে বেগ পেতে হয়েছে খুব। ভাষা, উত্তর ভারতীয় খাবার, পাহাড়ি জলহাওয়া তদুপরি উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় যন্ত্র এবং সংগীত সমস্তটা অপরিচিত ছিল তাঁর কাছে। এমনকি উদয়শঙ্করের নৃত্যরীতিও। তবু ধীরে ধীরে তিনি ভালোবেসেছিলেন আলমোড়াকে। অন্যান্য গুরুদের কাছে যেমন নাচ শিখলেন, তালিম পেলেন উদয়ের কাছেও। আলমোড়ায় আসার আগেই তিনি দক্ষ ছিলেন নৃত্যকলায়, ফলে, উদয় তাঁকে যুক্ত করে নিলেন ট্রুপের সদস্য হিসেবেও। ছেলেদের মধ্যে তখন রয়েছেন উদয়ের খুড়তুতো ভাই শচীনশঙ্কর, শান্তি বর্ধন, শেখর পানিক্কর, আনন্দ শিবরাম। আর অমলা, সিমকি, জোহরা, উজরার সঙ্গে রইলেন লক্ষ্মী। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৩-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদয়ের প্রায় সমস্ত নৃত্যানুষ্ঠানের অংশীদার ছিলেন তিনি। উদয়শঙ্করের নৃত্য প্রসঙ্গে লক্ষ্মীর স্মৃতিতেও ভেসে উঠেছিল সেই অনন্য মুগ্ধতা। ‘Poignant Song’ নামে নিজের জীবনীতে জানিয়েছিলেন তিনি, ‘That was the first time I went to see any dance performance [other than Bharatnatyam]… First he [Udayshankar] came as Indra in a three-minute dance. He looked just like Indra.’
আরও পড়ুন
অন্নপূর্ণা: শঙ্করদের গল্পে চির উপেক্ষিত
লক্ষ্মীর মতে, ‘রিদম অফ ব্যালে’ এই সময়ে উদয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৃত্যপরিবেশন। আধুনিক নৃত্য ঐতিহ্যে এক দিগদর্শী পদক্ষেপ। এর আগে তিনি মূলত গ্রহণ করতেন পুরাণাশ্রয়ী বিষয়। আঙ্গিক হিসেবে আমল দিতেন কথাকলিকে। কিন্তু এই ব্যালের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, ভারতীয় নৃত্যের উদ্ভব ও বিকাশকে মাথায় রেখে। আধুনিক শৈলিতে বাঁধা হয়েছিল এর নৃত্যপ্রকরণ। পৌরাণিক শিবের নৃত্য, তাণ্ডব থেকে এই কলাক্ষেত্রে মানুষের অনুপ্রবেশের আখ্যানকে নিয়েই তৈরি হয়েছিল এই ব্যালে। এতে লক্ষ্মী সাজতেন স্বর্গের অপ্সরা। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা কী দানবীয় চেহারায় গ্রাস করছে মনুষ্যত্বকে সেই নিয়ে উদয় তৈরি করেছিলেন ‘লেবার অ্যান্ড মেশিনারি’, পরে যার কিয়দংশ যুক্ত হয়েছিল ‘কল্পনা’-তেও। লক্ষ্মী জানিয়েছিলেন, ‘Dada loved Labour and machinery and it was the biggest success for him’। জানিয়েছিলেন এই নাচের জন্য তাঁদের প্রস্তুত হতে হয়েছিল বিশেষভাবে। সাধারণত নৃত্যের ক্ষেত্রে যে নমনীয়ত্ব আর কমনীয়ত্বকে অর্জন করতে হয় বহু সাধনায়, এক্ষেত্রে করতে হয়েছিল ঠিক তার বিপরীত। কঠিন পরিশ্রমে আয়ত্ত করতে হয়েছিল যান্ত্রিক হাঁটা-চলা আর কেঠো হাবভাব।
আরও পড়ুন
ভারত-শিল্পের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে রইল আলমোড়া
আরও পড়ুন
দেহ পট সনে নট সকলি হারায়
ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে পড়ুয়া ছিলেন রাজেন্দ্র। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষায় একমাত্র তিনিই লাভ করেছিলেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পদার্থবিদ্যা আর রসায়ন দুটো বিষয়েই এম. এ করেছিলেন তিনি। ইংরেজি ভাষায় তাঁর ছিল বিশেষ দখল। লেখার হাত ছিল চমৎকার। আলমোড়ায় রাজেন্দ্র দেখাশোনা করতেন দলের লেখালিখি এবং বিপননের দিকগুলি। দলে যুক্ত হওয়ার বছর দুই পরে একদিন হঠাৎ একটা কথা ঘুরতে-ঘুরতে, এসে পৌঁছল লক্ষ্মী শাস্ত্রীর কানে। রাজেন্দ্রশঙ্কর জোহরাকে জানিয়েছেন তিনি বিবাহ করতে চান, লক্ষ্মীকে। জোহরা সেকথা জানিয়েছেন বিশালাক্ষীকে। তারপর জেনেছেন স্বয়ং কনে। এ বিবাহ নিয়ে চুড়ান্ত দ্বিধায় ছিলেন বিশালাক্ষী এবং লক্ষ্মী উভয়েই। কারণ রাজেন্দ্র আর লক্ষ্মীর বয়সের তফাত ছিল একুশ। কিন্তু তা
সত্ত্বেও এ প্রস্তাবে খুশি হলেন সকলে। এক নান্দনিক জীবনে সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে লক্ষ্মীর মন, গড়ে উঠছে তাঁর সত্তা। কোনো সাধারণ রক্ষণশীল পরিবারে বিবাহ হলে হয়তো এর সূক্ষ্ম দিকগুলি গুরুত্বই পাবে না তাঁর জীবনে। বিয়ের কথা পাকা হল। পরবর্তী ট্যুরে রওনা হওয়ার আগেই যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে সব, সেই পরিকল্পনা মতো ঠিক করা হল বিয়ের দিন।
বিয়ের প্রস্তাব আর বিয়ের দিনের মধ্যবর্তী ছ-মাস ছিল তাঁদের কোর্টশিপ। একবার ছুটিতে সকলে বেড়াতে গিয়েছিলেন নৈনিতাল। সেই প্রথম তাঁরা একে অপরকে দিলেন উপহার। সেইদিনের কথা নিজের জীবনীতে জানিয়েছিলেন লক্ষ্মী নিজেই। লক্ষ্মী রাজেন্দ্রকে দিলেন একজোড়া সুন্দর জুতো। রাজেন্দ্রর কাছ থেকে তিনি পেলেন একটা পাহাড়ি ছাতা। উপহার বিনিময়ের পর, উপহার নির্বাচনের ধরন দেখে মুচকি হাসলেন রাজেন্দ্র। হবু স্ত্রীকে ছদ্ম-অনুযোগে বলেছিলেন তিনি, আমি তোমায় কোথায় রেখেছি দ্যাখো, আর তুমি আমাকে কোথায়?
২০ নভেম্বর ১৯৪১। ট্যুরে যাওয়ার ঠিক একদিন আগে হল তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠান। রবিশঙ্করের মতো তাঁদেরও বিয়ে হল আলমোড়াতেই। আয়োজনশূন্য এক বিবাহ হয়েছিল লক্ষ্মী আর রাজেন্দ্রর। লক্ষ্মী জানিয়েছিলেন, ন্যূনতম খরচে হয়েছিল তাঁর বিবাহ। তাঁদের ট্যুরের বহর দেখে অনেকেই কল্পনা করে নিতেন তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু অসচ্ছলতা ছিল সকলেরই। তার ওপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বন্ধ হয়ে গেল সমস্ত বিদেশি অনুদান। অনটনের সঙ্গে সই-পাতানো জীবন, তবু উপচীয়মান ছিল আনন্দ। বিয়ের দিন পরবার জন্য মা তাঁকে কিনে দিয়েছিলেন বারো টাকা দামের একটা সিল্কের শাড়ি। আর রাজেন্দ্রর জন্য কিনেছিলেন খাদির পাঞ্জাবি আর পায়জামা। আর ছিল দুটো ফুলের মালা। সকালে ব্রিটিশ রেজিস্ট্রারের অফিসের সামনে হয়েছিল সই-সাবুদ আর বাকি বিধি। রেজিস্ট্রারকে তাঁর প্রাপ্য মূল্য দেওয়া হয়েছিল এক টাকা পঁচিশ পয়সা। রাত্রে রাজেন্দ্র সকলকে খাইয়েছিলেন দলের মেস-এ। লক্ষ্মীশঙ্কর জানিয়েছিলেন, বাহুল্যহীন ছিল এই বিবাহ অনুষ্ঠান কিন্তু এর রাজসিক প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত হয়েছিল পর্বত-অধিরাজ হিমালয়। এই এক কথায় কত কথাই না বললেন লক্ষ্মী। নিরাভরণ নিসর্গ-সৌন্দর্যের ছাদনাতলায় অনুরাগের সত্য আয়োজনে সেদিন বাঁধা পড়েছিল দুই মানব-মানবী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বন্ধ হয়ে গেল ‘উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার’। তার আঁচ এসে পড়ল রাজেন্দ্র আর লক্ষ্মীর জীবনে। ১৯৪৪-এ ভাগ্যান্বেষণে তাঁরা এলেন আহমদাবাদে। তারপর কলকাতায়, লক্ষ্মীর বাপের বাড়ির সকলে তখন সেইখানেই। ১৮ জুলাই ১৯৪৪-এ জন্ম নিল তাঁদের প্রথম সন্তান, কুমারশঙ্কর। লক্ষ্মী আর রাজেন্দ্র কাজের খোঁজে পৌঁছলেন বোম্বাই। কিছুটা সময় গেল কিন্তু বম্বে টকিজ-এ রাজেন্দ্র পেলেন চিত্রনাট্যকারের সম্মানজনক পদ।
এই সময়েই রবিশঙ্কর এলেন বোম্বাইতে। শান্তি বর্ধনের সঙ্গে সেসময় আবার যোগাযোগ হল নতুন করে। শান্তি বর্ধন দক্ষ ছিলেন ‘টিপরা’ নাচে। ‘টিপরা’ ত্রিপুরার একটি আংশিক আঞ্চলিক নৃত্যধারা। শিল্পীরা নাচেন খড়ম পরে। ত্রিপুরায় গিয়ে সে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন শান্তি। পরে উদয়শঙ্করের সেন্টারেও ছিলেন বছর দেড়-দুই। তিনি তখন রয়েছেন আই. পি. টি. এ- এর কালচারাল স্কোয়াডে। ‘স্পিরিট অব ইন্ডিয়া’ নামে প্রস্তুত করছেন এক ব্যালে। সংগীতের দায়িত্বে ছিলেন অবনী দাশগুপ্ত। অবনীও কিছুদিন ছিলেন উদয়শঙ্করের সেন্টারে। ওঁদের অনুরোধে ১৯৪৫- এর গোড়াতেই রবিশঙ্কর যুক্ত হলেন আই.পি.টি.এ. তে। এই সংগঠনে যুক্ত হয়ে তাঁর উদ্যোগে তৈরি হল ব্যালে ‘ইন্ডিয়া ইমর্টাল’। নৃত্যের মধ্যে দিয়ে ওই ব্যালেতে পরিবেশিত হত ভারতীয় সভ্যতার ক্রমবিকাশ। রবিশঙ্কর দায়িত্ব নিলেন চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনারও। কে. এ. আব্বাসের ‘ধরতি কে লাল’ (১৯৪৬) এবং চেতন আনন্দের ‘নীচা নগর’ (১৯৪৬) ছবিতে কাজ করলেন তিনি। সিনেমার ইতিহাসে তখনও আসেনি ‘পথের পাঁচালী’। তার আগেই মূলত পৌরাণিক আখ্যানের আদল ভেঙে এ ছবিতে দেখা দিল সমকালীন বাস্তবতা। দুটি ছবিতেই রবিশঙ্কর প্রয়োগ করলেন লক্ষ্মীশঙ্করের গান। ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি এই ছবি, কিন্তু লাভ করেছিল মননশীল দর্শক-সমালোচকের মনোযোগ।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল লক্ষ্মীর। বি. এস. রঙ্গা পরিচালিত ‘ভক্ত তুলসীদাস’ (১৯৪৭) চলচ্চিত্রে লক্ষ্মী পেলেন বহু দায়িত্ব। এই ছবিতে তিনি অভিনয় করলেন, গান গাইলেন, নাচলেন এবং কাজ করলেন নৃত্যপরিচালক হিসেবেও। ছবি জুড়ে ধরা ছিল তাঁর বহুমুখী প্রতিভার অংশবিশেষ।এ ছবিও গুরুত্ব পায়নি জনমানসে।
অভিনয় নয়, তবে তাঁর কণ্ঠ আর নৃত্যকলা তাঁকে নিয়ে গেল পরিচিতির শিখরে। তারপর আকস্মিক একদিন দেখলেন, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বিমূঢ় এক শোকের সামনে। শোক জয় করে ফিরলেন লক্ষ্মী। দিগ্বিজয়ীর মতো। কিন্তু তাঁর জীবনে শোকের প্রস্থান নেই। ফিরল শোকও।
Powered by Froala Editor