আলাউদ্দিন: যে-পথ দিয়ে যাবেন রাজা, সে-পথেই বাজবে সুর

শঙ্কর সরণি - ৩৫
আগের পর্বে

বিবাহের রাতেই বউয়ের গয়না নিয়ে পালিয়েছিলেন আলাউদ্দিন খান। সেই অর্থে সুরসাধনা করবেন, এই ছিল লক্ষ্য। গুরু আহমেদ আলির সঙ্গে গেলেন পাটনায়। সেখানে নবাব মজলিস ভরিয়ে তুললেন সুরের মুর্ছনায়। এরপর আহমেদ আলির মায়ের পরামর্শেই চললেন নতুন গুরু খুঁজতে। রামপুরের নবাবের দরবারে আছেন উজির খান। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়া তো সহজ নয়। বহু চেষ্টায় ফল না হওয়ায় আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন আলাউদ্দিন। কিন্তু মৌলভি তাঁকে আটকান। এরপর নানা চেষ্টায় উজির খানের সঙ্গে দেখা করা গেল। নবাবের চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আলাউদ্দিন জানালেন তিনি শুধুই সুরের শিক্ষা করবেন। একদিন সেই শিক্ষাও সমাপ্ত হল। গুরুর পরামর্শে আলাউদ্দিন বেরোলেন দেশভ্রমণে। কিন্তু কলকাতায় এসে বিভ্রান্ত হলেন তিনি। এখানে ওস্তাদ নেই, আছে শুধু ওস্তাদি।

একদিন কলকাতায় নিমন্ত্রণ পেলেন আলাউদ্দিন। ভবানীপুরের এক সংগীত সম্মেলনে। অনুষ্ঠানে ছিলেন বীণকার লছমীপ্রসাদ, কেরামৎউল্লা, এমদাদ খাঁ, বিশ্বনাথ রাও, ধামার-গাইয়ে দানীবাবু, রাধিকা গোঁসাই। বড়ো বড়ো ওস্তাদ সব। খুব বাহারি ব্যাপার-স্যাপার, জাঁক-জমক চারদিকে। পটের মতো সাজপোষাক, গিলে করা পাঞ্জাবি। আলাউদ্দিনের বাইরের চেহারায় সেই আয়োজন কই? ধুতি নেই, পায়ে রামপুরি পায়জামা। এক গাল দাড়ি। তখন ফৌজি কোট দেখেছেন নতুন। খুব শখ, তাই-ই পরেছেন। হতদরিদ্র বেশভূষা। এমন গেঁয়ো ছাপোষা সাজে কে পুছবে তাঁকে। তাঁর অন্তরে যে বিরাজমান সুন্দর, অধিষ্ঠিত ঐশ্বর্য তাকে জানার ফুরসত নেই কারো। এর কাছে যান একবার, ওর কাছে, কেউই দাঁড়ায় না দুদণ্ড। শোনে না তাঁর কথা। তাবড় সব রাজার দরবারকে মাতিয়ে এসেছেন আলাউদ্দিন। পেয়েছেন দুর্লভ সব ঘরানার মহাজ্ঞান। আশ্চর্য এক প্রতিভা, অগণিত যন্ত্র যাঁর করায়ত্ত। সুর যাঁর অবিচ্ছেদ্য সত্তা, ভারতীয় সুর-বৈভবের সেই মহীরূহ, সেই দরদী, দেশ তাঁকেও চিনতে চেয়েছে তাঁর চেহারায়।

শেষে ডাক পড়ল তাঁর। তিনি বসলেন সুর পরিবেশনে। তারপর তানপুরা বেঁধে যখন মারলেন তান, স্তব্ধ হয়ে গেল সব, যেন থমকে রইল ব্রহ্মাণ্ড। তিনঘণ্টা হয়ে গেল, মগ্ন আলাউদ্দিন বাজিয়ে চলেছেন। আত্মস্থ। দর্শন সিং ছিলেন তবলচিদের যম। তাঁরও দম ফুরোয়, পাল্লা দেবেন কি আলাউদ্দিনের সঙ্গে। বসানো হল নতুন তবলচি। সেদিন চারঘণ্টা বাজালেন আলাউদ্দিন। এক মহাজাগতিক নৈঃশব্দ্যে ভেসে রইল শুধু আলাউদ্দিনের সুর।  

ওস্তাদ লছমীপ্রসাদ আশ্চর্য হয়ে রইলেন, এ তো বীণকারের তালিম। দুর্লভ এ বিদ্যা। দেশে প্রচার করো এ জ্ঞান। সে উপায় নেই আলাউদ্দিনের। গুরু দেশভ্রমণের আদেশ করেছেন। শেখাবার আদেশ নেই, সাধনা এখনও বাকি। কিন্তু প্রমাদ গুনলেন শ্যামলাল ক্ষেত্রী। রত্ন পরখের দৃষ্টি তাঁর। আশা ছাড়লেন না। মাইহারের মহারাজের সংগীতাচার্য হিসেবে যোগদানের অনুরোধ নিয়ে, তিনি এলেন আলাউদ্দিনের কাছে। গুরু আদেশ দিলেন। আলাউদ্দিন গেলেন মাইহার।

মাইহারের রাজা ব্রীজনাথ সিং

 তখন দুর্গাপুজোর সময়। সপ্তমীর দিন। রাজা ব্রীজনাথ সিংয়ের কাছ থেকে লোক এল, ইয়াদ ফরমাতা। আলাউদ্দিন এলেন দরবারে। রাজমহলে চল্লিশ-পঞ্চাশ সর্দার ঘুরছে তলোয়ার হাতে। অথচ যন্ত্র বাঁধছেন, তানপুরা ছাড়ে কেউ নেই। মথুরার ঘোররে মহারাজ ছিলেন, অবস্থা বুঝে তিনি বললেন, আমি দিচ্ছি সুর। মহারাজার পণ, যিনি সব রকম বাজনা আর সংগীত জানবেন, তিনি গুরু মানবেন তাঁকে। রাজা নিবেদন জানালেন, কিছু বাজাতে। তখন বিকেল পাঁচটা, আলাউদ্দিন ধরলেন শ্রীরাগ। তাঁর বড়ো প্রিয় রাগ। এ রাগ নিয়ে বড়ো গুমর তাঁর। কিন্তু কী কাণ্ড। কেয়া বেরসিক। হায় খোদা। রাগ বাজছে, অথচ রাজা অস্থির। একবার এদিকে তাকান, আবার ওদিক। পাঁচ মিনিট হয়েছে কি, রাজা বললেন, আরাম কিজিয়ে। আলাউদ্দিন ভাবেন, হায়, কোথায় এলাম, আরাম কী করব? মন একেবারে দুখি, নমাজের সময় ভগবানকে বললেন, কৌন বেয়োকুফের কাছে ফেললে এনে?

আরও পড়ুন
আলাউদ্দিন বললেন, সুরের বোমা মারতে পারি


মদনমঞ্জরী (মদিনা বেগম)

 আবার ডাক পড়ল। তুরন্ত। তখন সন্ধে আটটা। গিয়ে দেখেন সুবিস্তৃত এক রাজকীয় কক্ষ। হেন যন্ত্র বুঝি নেই, যা সেথায় নেই। ঘোররে মহারাজ ছিলেন। তিনি অনুরোধ করলেন, আপনি প্রত্যেক যন্ত্র অল্প করে বাজান। মহারাজ শুনবেন। কিন্তু রাজা কই? ঘোররে মহারাজ বললেন, রাজা আছেন টেলিফোনে। টেলিফোনেই শুনবেন তিনি, যা বলার ওখানেই জানাবেন। হা খোদা। এসব কী হচ্ছে। বহুত দর্দ এ দস্তানে। কী করেন? বাজালেন আলাউদ্দিন। একটু বাজান, রাজা বলেন, ব্লড হর্ন বন্ধ করো। Bass বন্ধ করো, বন্ধ করো। এসরাজ, বন্ধ করো। পঞ্চাশ রকম যন্ত্র বাজালেন আলাউদ্দিন। দু ঘণ্টা সময় ধরে। তবু রাজার সেই এক কথা। শেষে রাজার কাছ থেকে এল গানের ফরমায়েস। গানাও হল। তখন রাজা বললেন, আমার কাছে আসুন।

আরও পড়ুন
যন্ত্র বেঁধে যেই না ছাড়লেন সুর, শিউরে উঠলেন আলাউদ্দিন


মাইহার ব্যান্ড

 আলাউদ্দিন ক্ষিপ্ত। কে যাবে তাঁর কাছে? সুরের কদর নেই। না-সমঝ, বে-রসিক। তবু গেলেন। নিরাশ, বিরক্ত। কাছে গেলেন যখন, ধরলেন সুর। দেখলেন, রাজা অনড়। ঠায় শুনলেন। স্থির চিত্তে। বহুক্ষণ। তারপর খুব মৃদু কণ্ঠে, বিনীত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি নারাজ নন তো? আলাউদ্দিনকে জানালেন রাজা, সন্ধের সময় যখন প্রথম রাগ বাজালেন, রোমাঞ্চ হল শরীরে। যেন সহ্য হয় না কিছুতেই। তাই থামাতে বললাম সব।

আরও পড়ুন
আপ্লুত উদয়শঙ্কর জাপটে ধরলেন তাকে

আসার সময় রাজা দিলেন জড়োয়া পাগড়ি। পরদিন দরবারে মহারাজ তাঁকে বরণ করে নিলেন গুরুপদে। বললেন, মাইহারও যেন তাঁকে গ্রহণ করে গুরু হিসেবেই। আলাউদ্দিনের মুখে তাঁর জীবনকথা জানতে পাঠকের ভারি অনুশোচনা। অথচ তাঁর জীবনের গোড়ার দিকটি জানতে গেলে তাঁর আত্মকথা ভিন্ন উপায়ান্তরও নেই। কারণ তাঁর মতো বিনীত, সাধক, উদাসীন মানুষ যে, আত্মকথাতে অণুক্ষণ বাদ দিয়েছেন নিজের অসীম শক্তি আর অর্জনের কথাগুলোই। সে অনুতাপ পাঠকের প্রতি পদে-পদে। রাজার গল্পে সে শোকের সীমা থাকে না। বোঝা যায়, অমন স্বর্গীয় সুর রাজা শোনেননি এর আগে। রাজা তিনি, খাস দরবারেই অতিবাহিত হয়েছে তাঁর শাহি জীবন। তবুও। আলাউদ্দিনের সুর বিস্তৃত, মহাজাগতিক বিরাট। অসীম ব্যাপ্ত। যেন অন্তরিক্ষে লগ্ন হয়ে আছে মহাসামুদ্রিক গাম্ভীর্যে। সংগীতপিপাসু বলেই রাজা চিনেছিলেন তার জাত। শ্রুতির সরহদ্দ ভেঙে রাগ আবিষ্ট করেছিল তাঁর সংগুপ্ত অস্তিত্বলোক। সুরের আনন্দও যে অজ্ঞাত গভীর আর মর্মবিদারী হয়ে, হতে পারে অসহনীয় রাজা টের পেলেন সেইদিন। পরদিন প্রজাদের সম্মুখে, দরবারে বললেন মহারাজ, গুরু চেয়েছিলাম, যা চেয়েছি, পেয়েছি তার বেশি।

রামকিঙ্কর ও তাঁর তৈরি আলাউদ্দিনের ভাস্কর্য

 সংগীতজ্ঞ  অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় আলাউদ্দিন খানের ‘আমার জিবনী’ বইয়ের সম্পাদনা সূত্রে জানিয়েছিলেন একটি দরকারি প্রসঙ্গ। কেন সকলেই আলাউদ্দিনকে ডাকেন, ‘বাবা’, এ বিষয়ে রয়েছে দুটি মত। প্রথমত, মহারাজ তাঁকে ডাকতেন ‘বাবা’। সেইসূত্রেই  গোটা মাইহার তাঁকে ডাকতে শুরু করে ওই সম্বোধনে। দ্বিতীয়ত, তাঁর পুত্র ও জামাতা, যাঁরা তাঁর শিষ্যও, প্রখ্যাত আলি আকবর খান ও রবিশঙ্কর, তাঁরাও বিশ্বের সমস্ত প্রান্তেই তাঁকে সম্বোধনে নামের আগে ডাকতেন ‘বাবা’। আলাউদ্দিন খান শুধু নিজেই আশ্চর্য কলাকার ছিলেন, তাই নয়। তাঁর আশ্রয়ে ভারতীয় সংগীত পরম্পরা লাভ করেছে অগণিত শিল্পী, ওস্তাদ আর সমঝদার। ভারতীয় সংগীতের সেই অতুলনীয় মাইহার ঘরানার জনক ‘বাবা’ নামে সম্বোধিত হবেন, এ যেন ঈশ্বরেরই এক অপরূপ অভিপ্রায়।

আরও পড়ুন
দল ভেঙে দিলেন উদয়শঙ্কর

ফিরি মহারাজের গল্পে। বিদ্যাদানের সময় মহারাজ পড়লেন মহাচিন্তায়। গুরু বললেন, বিদ্যা দান করবেন, কিন্তু গ্রহণ করবেন না একটি কড়িও। বিদ্যার্জনে চিরদিন তাঁকে পেরোতে হয়েছে সুকঠিন, দুর্গম পথ। বিদ্যাদানে শিষ্যের জন্য তিনি চান না তার অনুরূপ পুনরাবৃত্তি। সংগীত তাঁর ইবাদত। তিনি পালন করবেন গুরুর ধর্ম। কিন্তু রাজা তিনি, পালন আর আশ্রয় যে, তাঁরও স্বধর্ম। রাজা কৌশল করলেন। গুরুকে দিলেন দেবত্র সম্পত্তির গুরুভার। প্রকারান্তরে গুরুর অন্নভারের দায়িত্ব শিষ্য নিলেন গুরুর মর্যাদা লঙ্ঘন না করে।

শিক্ষা শুরু হল মহারাজের। গুরু আজ্ঞা দিলেন, একটা গান শোনাতে। রাজা গাইলেন। আলাউদ্দিন তো থ হয়ে রইলেন। এ তো পুরো ভঁইসের আওয়াজ। সুর কই? শুধু গুণী বলে নন, অতীতকালের এই সহনশীলতা আর অপার তিতিক্ষা যেন রয়ে যায় মানব-ইতিহাসের গুপ্তধন হয়ে। আলাউদ্দিন শুধু রূপকার নন, ধর্মান্ধতার ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন সুরসাধক। সুর তাঁর জীবনচর্যা। সংগীতসাধনা আর জীবনরচনা অভিন্নার্থক তাঁর চেতনায়। অন্যদিকে দেশীয় রাজগাথায় রাজা আর বিলাসও তো সমার্থক। তবু রাজাকে বললেন তিনি, সংগীতের সাধনায় জীবনযাপনেও প্রয়োজন সংযম। প্রয়োজন একাগ্রতা। রাজা বিনীত সম্মতি প্রকাশ করলেন। গুরু বললেন, শরাব ছাড়তে হবে। রাজা ঘাড় নাড়লেন। রানি ভিন্ন অন্যাসক্তি পরিহার করতে হবে। রাজা সম্মতি জানালেন। গুরু বললেন, মানতে হবে ব্রহ্মচর্য। রাজা থমকালেন। রাজা সত্যভাষী। গুরুর কাছে কপটতা গুনাহ্। রাজা স্বীকার করলেন, এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে, কিন্তু সাধ্যমতো সংযত হবেন তিনি। রাজকীয় খানাপিনা ছেড়ে রাজা ধরলেন ফলাহার, দেড় বছরের মধ্যে সুর জাঁকিয়ে বসল তাঁর গলায়।

রাজার ইচ্ছা হল, দেশের ছেলেপিলেরা গাইবে গান। এমন রাজস্বপ্নকে জানাতে হয় সেলাম। মাইহার ভারি ছোট্ট এক এস্টেট। রাজার বিশালত্ব যে শুধু তাঁর প্রতাপ আর বিত্তে নয়, ব্রীজনাথ সিং সত্যিকারের নবাবি খেয়ালে, গড়েছিলেন তার নজির। ঢেঁড়া পেটানো হল। ডাক পড়ল যত অনাথ হতদরিদ্র, ছেলেপুলেদের। জোগাড় হল একশো- দেড়শো মানুষজন। আলাউদ্দিনের আশ্রয়ই হল তাদের সুরখচিত আবাস। শুরু হল মাইহার ব্যান্ড। রাজা বললেন, আমার রাজ্যে যে পথ দিয়ে যাব, যেন সুর শুনতে পাই, বেসুর না বাজে কোথাও।

কিন্তু আলাউদ্দিনের মধ্যে ফের বেজে ওঠে করুণসুর।  দিবারাত্র তিনি পালন করেন গুরুর কর্তব্য। তাঁর ভেতরে ব্যাকুল হয়ে ওঠে ক্ষুধিত ওই সংগীতপিপাসু সত্তা, তাঁর অন্তরগত ‘আমি’। বক্ষ জুড়ে তাঁর সংগীতের পিপাসা। সুর আরো সুর। প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে তাঁর চিত্ত খোঁজে অনন্ত সুর। রাজা সুচিন্তক, বিবেচক। তিনি বুঝলেন, নিদেন গার্হস্থ্য স্বস্তিটুকু তাঁর প্রয়োজন। মদিনাবেগম এলেন, এতদিন পর, স্বামীর সংসারে। কয়েকমাসের আলি আকবরকে নিয়ে। গুরুমা হয়ে রাজার তদ্বিরে।  

বছর ঘুরল। একদিন বাজার গেছেন আলাউদ্দিন। খবর এল অকস্মাৎ মৃত্যু হয়েছে ওস্তাদ উজির খান সাহেবের জ্যেষ্ঠ পুত্রের। বাজার থেকেই গেলেন রামপুরে। শোকের পাহাড়ে লীন হয়ে রয়েছেন গুরু। বললেন, অগ্রজকে দিয়েছিলেন যত গুপ্ত মহাজ্ঞান। বঞ্চিত করেছিলেন আলাউদ্দিনকে। চলে গেল তাঁর ঘরানার ধারক। এ অতুল সুরবৈভব কে সংরক্ষিত করবে? অপার্থিব এ সম্পদ। পরম্পরার উত্তরাধিকার। এ যে অর্জনের উত্তরাধিকার। আলাউদ্দিনকে দান করেননি সমস্ত বিদ্যা, সে অনুতাপে তিনি বেদনাবিদ্ধ আজ। শোক থেকে উঠে দাঁড়াবার জন্য সময় চেয়ে নিলেন গুরু। তারপর নিজেকে দিলেন উজাড় করে। 

আলাউদ্দিনের ভাই আয়াত আলি খান যুক্ত ছিলেন বিশ্বভারতীর সংগীতভবনে। ১৯৩৫-এ রবীন্দ্রনাথ আহ্বান জানালেন আলাউদ্দিনকে। শান্তিনিকেতনে তিনি আলি আকবর-সহ রইলেন, অর্ধ মাস। রবীন্দ্রজীবনীকার জানিয়েছেন, তখন চলছে বর্ষামঙ্গলের উৎসব। কবি ভারি অসুস্থ। তবু অনুষ্ঠানের দিন আকস্মিক উপস্থিত হয়ে বিস্মিত করে দিলেন সকলকে। কারণ সেদিন ছিল আলাউদ্দিনের বাজনা। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলাউদ্দিনের জবানিতে রয়েছে একটা গল্প। আলাউদ্দিনকে দেখিয়ে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুকে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, আলাউদ্দিনের মাথাটা রেখে দাও। কবির কথামতো রূপদক্ষ ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ গড়ে দিয়েছিলেন তাঁর আকণ্ঠ এক অপরূপ মূর্তি। রবীন্দ্রনাথ তিনি, তাঁর চেয়ে বড়ো জহুরি ভূ-ভারতে কই? 

Powered by Froala Editor