শঙ্কর সরণি - ৩৩
আগের পর্বে
দল ভেঙে দিয়ে ভারতে ফিরে এলেন উদয়শঙ্কর। কিন্তু থেমে থাকলেন না। নতুন করে শুরু হল প্রস্তুতি। তিমিরবরণের জায়গায় সুরের যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন বিষ্ণুদাস শিরালী। রবিশঙ্করও তখন নাচ শিখছেন। এই সময় বালা সরস্বতী এবং জোহরা ও উজড়া বেগম যোগ দিলেন উদয়ের দলে। প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। এইসব পরিবর্তনের মধ্যেই কলকাতায় উদয়ের বাড়ি এলেন শঙ্করণ নাম্বুদ্রি। গুরুর সান্নিধ্যে নতুন করে কাজ শুরু করলেন উদয়। গড়ে তুললেন তাঁর নতুন নৃত্য ‘কার্ত্তিকেয়’। নাম্বুদ্রির কাছে নাচ শিখতে শুরু করলেন রবিশঙ্করও। এর মধ্যে উদয় গেলেন নসরতপুরে, মাতাদিনের খোঁজে। জমিদার নিজে এসেছেন তাঁদের পাড়ায়, হইহই পড়ে গেল চারিদিকে। বৃদ্ধ মাতাদিনকে জড়িয়ে ধরলেন উদয়।
তিমিরবরণ হাজির হলেন তাঁর গুরু বাবা আলাউদ্দিন খাঁর শরণে। উদয়শঙ্করের দলে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে যদি কোনোক্রমে মেলে তাঁর সম্মতি। সে কথায় যাব আমরা, তার আগে একবার যাব সুরের মহাসিন্ধু, অমিত প্রতিভাধর, ক্ষণজন্মা আলাউদ্দিনের জীবনী প্রসঙ্গে। তাঁকে না-জানলে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের ঐতিহ্যের মহাতীর্থটি থেকে যায় অজ্ঞাত। তাঁর মুখে বলা জীবনকথা থেকে অনুলিখনের মাধ্যমে অসামান্য একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থপ্রকাশ করেছিলেন সুলেখক শুভময় ঘোষ। আরো একটি চমৎকার বই সম্পাদনা করে পাঠকের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন সংগীতজ্ঞ অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। পারিবারিক প্রচেষ্টা আর সম্পাদকের কর্মকুশলতায় প্রকাশ পেয়েছে স্বয়ং গুরু আলাউদ্দিনের খাঁর লেখা জীবনী। বানান-ভঙ্গি-প্রকাশকে অপরিবর্তিত রেখে গড়ে উঠেছে সেই দুর্লভ গ্রন্থ।
আলাউদ্দিনের পূর্বপুরুষ দীননাথ দেবশর্মা ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ। ছিলেন জ্ঞানী, তান্ত্রিক সাধক। স্ত্রীর মৃত্যু হলে পুত্রকে নিয়ে ঘর ছাড়লেন তিনি। তারপর বন-পাহাড়ই হল তাঁর আস্তানা। ত্রিপুরার পাহাড়ে-পাহাড়ে তখন আদিম জনজাতির বাস। দীননাথ নিমজ্জিত থাকতেন পূজাপাঠে। কিন্তু কালেভদ্রে পাহাড়ি আদিম জনজাতিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর পুত্র হয়ে উঠল দুর্ধর্ষ ডাকাত। দিনে দিনে তারা যোগ দিলে দেবী চৌধুরানি আর ভবানী পাঠকের দলে। বাদশা-নবাব, কৃপণ-অত্যাচারী জমিদার আর ইংরেজের খাজনা লুঠ করে তারা দরাজ বিলিয়ে দিত গরিবদের। ক্লাইভ আসার পর এদের নামে জারি হল শমন। এদের সন্ধানে ঘোষিত হল বহু টাকার ইনাম। দীননাথের পুত্র সিরাজু ডাকাত আত্মরক্ষার্থে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম নিলেন সামস্ ফকির। তারপর এক সময় ছেড়ে দিলেন সব। ত্রিপুরায় জমি খরিদ করলেন, পুকুর কাটলেন, শাদি করে আওলাদ নিয়ে পেতে বসলেন সংসার। তাঁরই উত্তরপুরুষ আলাউদ্দিন। ডাক নাম আলম।
ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্রমাণিক্যের দরবারে তখন সব গুণী মানুষের সমাহার। রবাব ও সুরশৃঙ্গারের কাশিম আলি খান। প্রখ্যাত গায়ক যদু ভট্ট। দিলরুবা বাদক হায়দার খাঁ। রাজা নিজেও ছিলেন উচ্চাঙ্গের গায়ক। রচনা করেছেন খেয়াল, টপ্পা এমনকি বৈষ্ণব পদও। আলাউদ্দিনের পিতা সাধু খান সম্ভবত পরিবারে প্রথম, যিনি মজলেন সুরে। কাশিম আলি খান এর কাছে তিনি নিলেন সেতারের তালিম। সেই ধারাই বয়ে এসে জন্ম নিল এক আশ্চর্য ঘরানার। ত্রিপুরার শিবপুরে ছিল জাগ্রত এক শিবের মন্দির। নানা জায়গা থেকে বড়ো বড়ো সাধু-সন্ন্যাসী এসে জড়ো হতেন এই চত্বরে। সন্ন্যাসীদের ভজন-পুজনে জুড়ে থাকত সংগীত। কী সহজাত, স্বতঃস্ফূর্ত সেই সাধন, সেই সাংগীতিক উপাসনা। সন্ন্যাসীরা সেতারের ঝঙ্কারে অনাবিল ভক্তির ওম ছড়িয়ে রাখতেন মন্দির প্রাঙ্গণে। আলাউদ্দিনের স্কুলের পথেই এই মন্দির। স্কুল আর যাওয়া হত না। সময় বয়ে যেত এইখানেই। মা টের পেলে রক্ষে থাকত না। চলত উত্তম-মধ্যম। কিন্তু কে জানে কেন, সুর তাঁকে আকুল করত অমন করে। দূর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা যে-কোনো সুর যেন মাতিয়ে তুলত তাঁর গহিন অন্তর্লোক। আলোড়িত করে তুলত তাঁর অন্তর্লীন চৈতন্যকে। দিবারাত্র, অষ্টপ্রহর সুরের মউজ উঠত, নাড়া দিত হৃদকমলে। জন্ম ইস্তক সুরকেই খোদা মেনেছেন তিনি। একদিন রাত্রে মা তখন ঘুমে। মায়ের আঁচল থেকে চাবি নিয়ে খুললেন তোরঙ্গ। দশ-বারো টাকা, যা পেলেন নিলেন। তারপর মাকে একখানা প্রণাম করে, পালালেন বাড়ি থেকে। আট বছর তখন বয়স, সেই শুরু সুরের খোঁজে তাঁর ছুটে চলা।
এলেন নারায়ণগঞ্জ হয়ে একেবারে শিয়ালদহ। শুনেছেন এখানে কত বড়ো বড়ো ওস্তাদ। তাঁদের শাগরেদ হয়ে কাটাবেন জীবন, এই ইচ্ছা। গঙ্গার ঘাটে শুয়েছিলেন রাত্রে, চুরি গেল বোঁচকা। একবেলা জুটত আহার, আতুর কাঙালিদের পঙক্তি ভোজনে। শালপাতায় ধরা মোটা চালের ভাত, শাক, ডাল। আর একবেলা শুধু গঙ্গাজল। একদিন ঘটল যোগাযোগ। একজন তাঁকে নিয়ে গেলেন গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের কাছে। নুলো গোপাল বলেই যিনি বেশি পরিচিত। প্রখ্যাত গাইয়ে। ধ্রুপদ, খেয়াল আর টপ্পা গাইতেন। গাইতেন পাথুরিয়াঘাটার মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের দরবারে। সুর সাধনায় আলাউদ্দিনের প্রসন্নতায় গুরু মুগ্ধ হলেন। গুরু মিলল। একবেলা গঙ্গাজলই ভোজন শুনে, রাজবাটিতে গুরুই করে দিলেন আহারের সমস্ত বন্দোবস্ত।
আরও পড়ুন
আপ্লুত উদয়শঙ্কর জাপটে ধরলেন তাকে
বছর সাতেক শিখলেন এখানে। তারপর একদিন খোঁজ পেয়ে দাদা আফতাবউদ্দিন এসে ধরে নিয়ে গেলেন তাঁকে। গ্রামে গিয়ে শুনলেন তাঁর বিয়ে। মদনমঞ্জরীর (মদিনা বেগম) সঙ্গে। হতবাক আলাউদ্দিন! বিয়ে ঠিক হল কবে! আলাউদ্দিন তখন সাত, যখন মদনমঞ্জরী জন্মালেন, পাকাকথা হয়েছিল তখন। বিবাহ সম্পন্ন হল। বিবাহের পরের দিনই তাঁদের ফুলসজ্জা। রাত্রে তাঁকে ঘরে ঢুকতে দেখে বউদিরা সব পালালেন তড়িঘড়ি। ঘরে গিয়ে দেখলেন, আট বছরের বালিকাবধূ এক গা গয়না পরে, ক্লান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে অকাতরে। ঘুমন্ত নববধূর কাছে গিয়ে খুব সন্তর্পণে দাঁড়ালেন আলাউদ্দিন। তারপর ধীরে-ধীরে গলার হার, বাজুবন্ধ খুলে নিলেন সমস্ত গহনা। তারপর ফের ছুট। সুর ছাড়া আর কোনো খোয়াইশ যে তাঁর ছিল না কখনও।
আরও পড়ুন
দল ভেঙে দিলেন উদয়শঙ্কর
কলকাতা ফিরে আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। শুনলেন গুরু মারা গেছেন প্লেগে। একজন খোঁজ দিলেন, বিবেকানন্দের জ্ঞাতিভাই হাবু দত্তের। উত্তর কলকাতায় সিমলায় তাঁদের বাড়ি। বিবেকানন্দ নিজেও তো গাইতেন অসাধারণ। আর হাবু দত্ত (অমৃতলাল দত্ত) কনসার্ট তৈরি করতেন ন্যাশনাল থিয়েটারে। তিনি যন্ত্র বাজাতেন নানা ধরনের। বউ-এর গহনা আর উপহার বাবদ পাওয়া টাকাকড়ি যা এনেছিলেন আলাউদ্দিন, তা দিয়ে খরিদ হল বেহালা আর কর্নেট। গুরুদক্ষিণা, নিজের ব্যয়ভার, বাদ্য ক্রয় সব ওই সামান্য কড়ি ফেলেই জোগাড়যন্ত্র করতে হয় তাঁকে। হাবু দত্তের কাছে শুরু হল তাঁর শিক্ষা।
আরও পড়ুন
উদয়শঙ্করের নাচ, ঢিলে কাঁচুলিতে ষোড়শী, বললেন ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ
কিন্তু আলাউদ্দিনের খিদে মেটে কই। যন্ত্র, সুর তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। কে জানে কে, সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে তাঁর প্রাণে। সবখানে দাউ-দাউ তার রেশ। সবখানে। একদিন গেলেন গোয়ানিজ লোবো সাহেবের কাছে। সাহেব বাজাতেন ভায়োলিন, মেমসাহেব পিয়ানো। জাদু ছিল দুজনের হাতে। একসঙ্গে যখন বাজাতেন, সেই সুর পাগল করে দিত আলাউদ্দিনকে। নিজেকে ধরে রাখা দায় হল তাঁর। রোজ তাঁদের বাড়ির বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ঠায়। একদিন সাহেবকে ধরে পড়লেন। সাহেব, আমাকে শেখাও। সাহেব তো রেগে কাঁই। তৎক্ষণাৎ গেট আউট করলেন তাঁকে। তিনি শেখাবেন ব্লাডি নিগারকে? মেমসাহেব ছিলেন অন্য মানুষ। বাতলে দিলেন উপায়। সাহেব যে-সময় অফিসে যান, আলাউদ্দিন আসবেন তখন। তাঁকে শেখালেন মেমসাহেব। আরেকজন বাঙালি ক্ল্যারিওনেট বাদকের কাছে শিখলেন ইংরেজি মিউজিক। মেছোবাজারে থাকতেন হাজারী ওস্তাদ। তাঁর কাছে শিখলেন সানাই, নাকাড়া, টিকারা। ধীরে-ধীরে বেহালা, কর্নেট, ক্ল্যারিওনেট, বাঁশি, তবলা, মৃদঙ্গ, ঢোলক সব শিখলেন তিনি।
আরও পড়ুন
অহঙ্কারের ইনজেকশন চলেচে, বললেন রবীন্দ্রনাথ
হাবু দত্ত তখন একটা চাকরির বন্দোবস্ত করে দিলেন আলাউদ্দিনকে। গিরিশ ঘোষের কাছে, মিনার্ভায়। মাইনে এক টাকা। দানীবাবু চুনীবাবু, নৃপেন বসু সব দিগগজ। সরাবে চুর হয়ে থাকতেন নটশেখর গিরিশ ঘোষ। নাটকের মহড়া চলছে সর্বক্ষণ। কী সব গান, ‘বাজে কাজে মিনসেকে আর যেতে দেব না’। অথবা, ‘লেও সাকি দাও ভর প্যালা’। একদিন তবলা বাজাচ্ছিলেন আলাউদ্দিন। নজরে পড়লেন গিরিশচন্দ্রের। বললেন, এ তো বেশ বাজায়। পিঠে থাবড়া দিয়ে স্নেহ ভরে বললেন, নেড়ে, তোর নাম দিলাম প্রসন্ন বিশ্বাস। মত্ত অবস্থায় দিলেও নামটা বোধহয় এক্কেবারে না-ভেবে দেননি বাংলা নাট্যজগতের কিংবদন্তি। আশ্চর্য, অপার্থিব এক প্রসন্নতাই তো তাঁর ধাতু, মজ্জা, তাঁর বিশ্বাস।
কিন্তু এবার এক কাণ্ড হল। তিনি সুরকে ধরলেন আর তাঁকে ধরল অহং। থিয়েটারের হাবভাব বুঝি চেপে বসল তাঁর নিষ্কলুষ স্বভাবে। একদিন গেলেন মুক্তাগাছার জমিদার জগৎকিশোর আচার্যের প্রাসাদে। দানবীর ছিলেন তিনি, সংগীতানুরাগীও। তাঁর দরবারে ছিলেন তাবড় তাবড় সব ওস্তাদ। তখন সন্ধেবেলা বাগানে বেড়াচ্ছেন রাজা, জিজ্ঞেস করলেন, কী চাও? আলাউদ্দিন বললেন, সুর সেধেছি সাত বছর। এত বিদ্যা শিখেছি, শুধু বাংলায় নয়, আমার মতো ওস্তাদ, দেশেও আর একটা পাওয়া যাবে না। রাজা মুচকি হাসলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, কী বাজাও? আলাউদ্দিন উত্তর দিলেন, পৃথিবীর সব যন্ত্র। রাজা বললেন, কাল সকাল আটটায় আসবে। পরদিন আলাউদ্দিন পৌঁছলেন সকাল সাতটায়।
দেখলেন দরবার ভরে আছে। একজন সরোদের সুর মেলাচ্ছেন। অন্য একজন তানপুরা ছাড়ছেন। ওস্তাদ সরোদে টৌড়ির সুর বাঁধছেন, যন্ত্রটা বেঁধে যেই না সুর ছাড়লেন, শিউরে উঠলেন আলাউদ্দিন। এ রাগ তিনি আগে শোনেননি তখনও। এ সুরের আবির্ভাব কী আকস্মিক, কী মহনীয় হয়ে এল তাঁর জীবনে। ওস্তাদ যখন আলাপ আরম্ভ করলেন, আলাউদ্দিন দেখলেন বুকের ভেতরখানা মুচড়ে-মুচড়ে উঠছে কেমনধারা। চোখ ছাপিয়ে বইছে অশ্রুপ্লাবন। অবিশ্রান্ত, অবিরাম। এ বুঝি আর থামে না। ভাসিয়ে নিয়ে গেল সব। এমন সুরের কাছে অনায়াসে চুরমার হয়ে গেল অহংবোধ। বাজনা শেষ হলে আলাউদ্দিন জড়িয়ে ধরলেন ওস্তাদ আহমেদ আলির দুটি চরণ। আমাকে আপনার শিষ্য করে নিন হুজুর। গুরুর চরণ ধুয়ে যায় অবোধ এই অশ্রুধারায়। গুরু বললেন, রো মৎ। সাগরেদ হলেন সেইদিনই।
আহমেদ আলির বাড়িতেই শুরু হল আলাউদ্দিনের প্রথম সরোদের তালিম। গুরুর বাড়িতে সব কাজ করতে হত। রান্না-বান্না, ঘর ঝাঁট, কলঘর পরিষ্কার, বাজার করা, তামাক সাজা মায় পা দাবানো। গুরু প্রচুর মুজরা করতেন। শাগরেদ আলাউদ্দিন বাজাতেন কত সব বাজনা। শ্রোতাদের তারিফ মিলত খুব। গুরু রোজ গওহরজানের কাছে যেতেন। আল্লা জানে মোহব্বত ছিল হয়তো।
গুরু শেখালেন গৎকারি, বিলম্বিত গৎ, দ্রুত গৎ, লরি, লরগুথাও প্রভৃতি। একা একা বাজান যখন ভেতর থেকে যেন উথলে ওঠে আনন্দ, কী অনন্ত জাগে। কী অপার মহাসমুদ্র আছড়ে পড়ে বুকের ভেতরপানে। খুদার দরবারে অশেষ দুয়া মেঙ্গে কান্না করেন, আরো সুর, আরো সুর। পিতা-মাতা-স্ত্রী সকলকে যন্ত্রণা দিয়েছি, সব অপরাধ ক্ষমা করে, দুয়া করো, সুর দাও খুদা। আরো আরো সুর। আরো আরো।
গুরু যখন একা বাজান, কান পেতে শোনেন আলাউদ্দিন। চুরি করে শুনে সে সব অভ্যাস করেন লুকিয়ে-লুকিয়ে। রসুইয়ে রান্না চড়িয়ে সময় করে বসতে হয় রেওয়াজে। সকালের চা খেয়ে বেরিয়ে যেতেন আহমেদ আলি। একদিন আলাউদ্দিন বাজাচ্ছেন টৌড়ি। ওস্তাদ এখনও তাঁকে শেখাননি সে রাগ। ওস্তাদ যে নিয়মে বাজান আলাউদ্দিন বাজাচ্ছেন সেই নিয়মে। গুরু ফিরে এলেন আচম্বিত। বাইরে দাঁড়িয়ে ঠায় একঘণ্টা শুনলেন সেই বাজনা। বাজনা শেষে আলাউদ্দিন দেখলেন ক্রোধে রক্তবর্ণ গুরু দাঁড়িয়ে আছেন সামনে। শিষ্যের উদ্দেশে বললেন, ইয়ে ক্যায়সে শিখা? শিষ্য বলল, হুজুর আপনার কাছে। এ রাগ বাজিয়ে আপনি আমার অহং ভেঙে দিয়েছিলেন। এ রাগ জন্নতের। এ রাগ বেহস্তের। ওস্তাদ বললেন, তুম চোর হ্যায়। নিজের জীবনের এ গল্পে আলাউদ্দিন টীকা দিতেন, ডাকাতের বংশধর আমি, বিদ্যা চুরি করব না?
Powered by Froala Editor