নৃত্য সেদিন পেরিয়ে গেল মঞ্চের সীমা

শঙ্কর সরণি - ১৯
আগের পর্বে

উদয়শঙ্করের কাকা কেদারশঙ্কর। তাঁর মেয়ে কনকলতা। দাদার নানা কথা শুনলেও চোখের সামনে প্রথম দেখায় অস্বস্তি কাজ করছিল। উদয় এবং অ্যালিসের ব্যবহারে সেই অস্বস্তি ক্রমশ দূরে সরে যায়। এদিকে উদয় আবার প্যারিসে ফেরার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তৈরি হল তাঁর দল। অ্যালিস বোনার এবং তিমিরবরণ তো থাকলেনই। সঙ্গে নিলেন মা হেমাঙ্গিনী, তিন ভাই, কনকলতা, মামা, কাকা সবাইকেই। দশ বছর পর আবার বিদেশযাত্রা। তবে এবারে তাঁর দায়িত্ব অনেক। জাহাজের ডেকেই দলের প্রস্তুতি চলল। শুরু হল কনকলতার তালিমও। আর তিমিরবরণের সরোদের মূর্ছনায় নীল সমুদ্রের বুকে যেন স্বর্গ নেমে এল।

প্যারিসে এসে পৌঁছল উদয়ের দল। তখন শীতকাল। রু দ্য পারি নামের এক মনোরম বাড়িতে উঠলেন তাঁরা। বিরাট বড়ো বাড়ি। সামনে নয়নলোভন ছড়ানো বাগান। অনেকখানি জায়গা জুড়ে এলিয়ে থাকত। ফুলে ফুলে ঢলে উঠত মৃদু বায়। সবুজ গালচে ঘাস। মিহি করে ছাঁটা। অপরিচয়ের বাহারি ঢঙে ছেয়ে আছে চতুর্দিক। পরিপাটি, যেন এইমাত্র ধুইয়ে-নিকিয়ে রাখা সবখান। রবিশঙ্করকে নিয়ে হেমাঙ্গিনী থাকতেন দোতলার একটি ঘরে। অতো বড়ো বাড়ি, বাকিরাও নিজেদের মেলে-ছড়িয়ে নিলেন সুবিধামতো।

একতলায় ছিল মস্ত একখানা হলঘর। সেখানে রিহার্সাল হত। প্রকৃতি বাধ-না-সাধলে কখনও-সখনও রিহার্সাল হত বাইরের বাগানেও। হলঘরে মেলে রাখা হল ভারত থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া যত বাদ্যযন্ত্র। কস্টিউম তৈরির জন্য এল তিনটে মেশিন। থাকত কস্টিউম রাখার বাক্স। বেনারস থেকে কিছু দামি সিল্কের থান-কাপড় আর বেনারসিও কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন উদয়শঙ্কর, কস্টিউমে নতুনত্ব আনার ব্যাপারটাকে মাথায় রেখে। শুরু হল নতুন-নতুন নাচের পরিকল্পনা-প্রস্তুতি। গজাসুর বধ আর রাসলীলা। পাতলা লোহার তার পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে প্রথম গজাসুরের ধাঁচা বা মুখোশ তৈরি হল। তারপর সাজানো হল প্রয়োজনীয় কাপড় দিয়ে। এতে মুখোশ শক্ত-পোক্তও হত আবার হালকাও হত। নাচের সময় অসুবিধা ঘটাত না। কস্টিউম তৈরির গোড়ার দিকে সব নিজে হাতে করতেন উদয়শঙ্কর, মাপজোখ সব নিজে বোঝাতেন বিদেশি দর্জিদের। এমনকি কত কতবার নিজেই বসে সেলাইও করে নিয়েছেন সবটুকু।

একদিকে নতুন পরিবেশনের প্রস্তুতি শুরু হল, অন্যদিকে পুরোনো নাচগুলিকে তিমিরবরণের সুর-সহযোগে দেওয়া হল এক্কেবারে আনকোরা একটা চেহারা। যেমন ‘ইন্দ্র’, ‘গন্ধর্ব’, ‘ব্যাধ’ – বিষয়ক নৃত্যগুলিকে সাজানো হল ভারতীয় যন্ত্র এবং ভারতীয় সুর ও আবহের প্রেক্ষিতে। মূলত এরপর থেকে উদয়শঙ্কর আজীবন ভারতীয় যন্ত্র ছাড়া কোনো প্রকারের বিদেশি সুর বা যন্ত্রকে প্রবেশাধিকার দেননি তাঁর কলাক্ষেত্রে।

এতদিন উদয়ের প্রতীক্ষায় ছিলেন সিমকি, উদয়ের জীবনের সূচনাপর্বের সমস্ত চড়াই-উৎরাইয়ের সঙ্গী ছিলেন যিনি। উদয় ফিরেছে, ফিরেছে জীবন্ত এক টুকরো ভারতবর্ষকে নিয়ে। ফিরেছে তাঁর নিজের মধ্যেও, এক চিরজাগ্রত ভারতবর্ষকে সঙ্গে নিয়ে। গভীর আনন্দবোধ করলেন সিমকি। দলে যুক্ত হলেন তিনি। প্রতীক্ষা আরো একজনের। সে স্বপ্নও সত্যি হল। একমাসের মধ্যে লন্ডন থেকে চলে এলেন বিষ্ণুদাস শিরালী। দল চেয়েছিলেন উদয়শঙ্কর, রত্নমণির সমাহারে সেজে উঠল উদয়শঙ্করের দল।

আরও পড়ুন
উদয় প্যারিসে ফিরছেন তাঁর নিজের তৈরি দল নিয়ে

মাঝখানে সেতার হাতে ছোট্টো রবিশঙ্কর আর তবলায় বিষ্ণুদাস শিরালি ও সরোদে তিমিরবরণ।

 

আরও পড়ুন
মাইহারে অসম্পূর্ণ রইল তিমিরবরণের শিক্ষা

এতগুলি মানুষ সারাদিন মেতে আছে, মজেও আছে কাজে। বিরাম নেই এতটুকু। গুণী মানুষজন একে অপরের সঙ্গ পেয়ে যেন স্বর্গ পেল হাতে। নিজ-নিজ ক্ষেত্রে দিকপাল সব, তবু একে অন্যকে দেখলেন অপার বিস্ময়ে। এঁদের খাবার-দাবার সুখ-সুবিধা যত্ন-আত্তির দায়িত্ব হেমাঙ্গিনী তুলে নিলেন নিজ হাতে। তখনও প্যারিসে তেমন সহজলভ্য ছিল না ভারতীয় রান্না-বান্নার জিনিসপত্র । তবে যেটুকু যা পাওয়া যেত, তা দিয়েই ব্যবস্থা করতেন সুন্দর। বিদেশে মা হেমাঙ্গিনীর রান্না প্রসঙ্গে রবিশঙ্কর জানিয়েছিলেন এক মজার খবর। বলেছিলেন, ‘দেশে বসে ডাল ভাত খাচ্ছি— তাতে কিছু মনে হত না। কিন্তু ওখানে, ওই সুগন্ধ, পুলে আর পোয়াসঁর মাঝে, মা যখন ডালে ফোড়ন দিতেন সারা বাড়ি একেবারে আমোদিত হয়ে উঠত। সবাই ভুলে যেত কী বাজাচ্ছে, কী গাইছে।’

আরও পড়ুন
সুরের ঝরনাধারার নির্জনে ছিল এঁদের বাস

সংগীতের বিষয়টি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিলেন তিমিরবরণ। তিনি বাজাবেন সরোদ। বিষ্ণুদাস শিরালি সেতার, তবে অবস্থাবিশেষে তিনি ধরবেন জলতরঙ্গ, কখনও বা তবলাতরঙ্গ। কেদারশঙ্কর বাজাবেন খোল খমক আর গুপীযন্ত্র বা আনন্দলহরী। ব্রজবিহারী দায়িত্ব পেলেন ঢাকের। অন্যদিকে বাঁশি আর ঢাক দুয়েরই ভার পড়ল অন্নদাচরণ আর রাজেন্দ্রশঙ্করের ওপর। সময় অনুযায়ী বাজাবেন তাঁরা। এইসব সাজিয়ে-গুছিয়ে নেবার পরও তিমিরবরণের মনে হল, সেতারে  আরো শিল্পী হলে সুবিধা হত তাঁর। চারিদিকে এই মহড়ার ডামাডোলের মধ্যেও একটা বিষয় চোখে পড়ত তিমিরবরণের। তা হল, বাদ্যযন্ত্রের প্রতি বালক রবিশঙ্করের অপ্রতিরোধ্য এক ঝোঁক। এসব দেখেশুনে এটা-ওটা সে নিজেই বাজাতে থাকত সারাদিন। ফলে তিমিরবরণ আর বিষ্ণুদাস শিরালির মতো শাস্ত্রীয় সংগীতের উচ্চমার্গের তাবড় শিল্পীদের সঙ্গে যুক্ত হলেন দশ বছরের বালক রবিশঙ্করও। ইতিহাসের এই মৃদু কৌতুকটি কী অপূর্ব হয়েই না ধরা দেয় ভারতীয় সুরের ললাট-লিখনে।

আরও পড়ুন
তাঁর জীবনে দেশ এল, বিদ্বেষের ধারাটি সঙ্গে নিয়ে

গজাসুর বধ, নৃত্যাভিনয়।

 

এইবারের অনুষ্ঠান ঠিক হল আড়াই ঘন্টার। পৌরাণিক কাহিনি গজাসুর বধ, মূল ভাবনা। ধ্যানস্থ শিবকে পূজা করছেন পার্বতী। সেইসময় গজাসুর এসে বলপ্রয়োগে হরণ করতে চায় তাঁকে। অসহায় পার্বতী প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে শরণ নেন শিবের। ধ্যানভঙ্গ হতে প্রকাশ পায় শিবের রুদ্র মূর্তি। প্রবল রণ অতিক্রান্তে শিব বধ করলেন গজাসুরকে। আর পুনরায় ফিরে গেলেন তাঁর শান্ত রূপে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে থাকবে তিমিরবরণের আর বিষ্ণুদাস শিরালির বাজনা। দেবশঙ্কর করবেন ব্যাধ-নৃত্য। বলা বাহুল্য শিব-পার্বতী উদয়শঙ্কর আর সিমকি। গজাসুর সাজবেন দেবেন্দ্রশঙ্কর। ধ্যানমগ্ন শিবের পূজায়  পার্বতীর সঙ্গে থাকবেন কনকলতা। তিনি করবেন আরতি। এইটুকু আখ্যান, কিন্তু এতটুকুর মধ্যেই ভরপুর নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাত। মুহূর্তে-মুহূর্তে রূপ-রস-অভিব্যক্তির নিযুত লীলা। তিমিরবরণের শিক্ষায় একদিকে বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের ধ্রুপদি ঘরানা আর অন্যদিকে তখন কলকাতার তাবৎ মানুষদের কাছ থেকে শোনার অভিজ্ঞতা। সঙ্গে তাঁর অর্কেস্ট্রার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ। উদয়শঙ্কর বুঝলেন, তিমিরবরণের নিজেকে উজাড় করে প্রকাশ করবার পূর্ণ পরিসরটি রয়েছে এই ভাবনায়। অনুভব করলেন, সুরের পশ্চাৎপটটি সুসূক্ষ্মভাবে নির্মিত হলে তাতে তীক্ষ্ণভাবে কুঁদে তোলা সম্ভব নৃত্যের মহিমা।   

এই সময় আরো দুটি অভিনব বিষয়কে উদয়শঙ্কর যুক্ত করলেন তাঁর ভাবনায়। প্রথমত, এতদিন নৃত্যানুষ্ঠানে যন্ত্রশিল্পী বা সংগীতশিল্পীরা থাকতেন নেপথ্যে। উদয়শঙ্কর সকলকে রাখলেন মঞ্চেই। সেইসূত্রেই অনুষ্ঠানের ভাবানুযায়ী তৈরি হল তাঁদেরও কস্টিউম। দ্বিতীয় ব্যাপারটি আমাদের অবহিত করেছিলেন স্বয়ং রবিশঙ্কর। তাঁর ‘স্মৃতি’ গ্রন্থে বলেছিলেন, এই সময় ‘লোকসংগীতের বিচিত্র বাদ্যযন্ত্রগুলি অপ্রচলিত ভঙ্গিতে ব্যবহার করে উদয়শঙ্কর একটি নতুন ফর্ম আবিষ্কার করতে লাগলেন।’ উদয়শঙ্করের জীবনে খুব স্বাভাবিকভাবেই নৃত্যপ্রসঙ্গটি সিংহভাগ আধিপত্য লাভ করায় চিরদিন উপেক্ষিত থেকেছে চিত্রকলায় তাঁর অকল্পনীয় অধিকার আর সুরকে নিয়ে বিবিধ নিরীক্ষার মতো বিষয়গুলি।

শিব-পার্বতী: উদয়শঙ্কর ও সিমকি।

 

১৯৩১ সালের ৩ মার্চ, প্যারিসের সাঁজলিজে থিয়েটারে উদয়শঙ্করের নৃত্যানুষ্ঠান। ঘোষিত হবার সঙ্গে সঙ্গে, বুঝি পলক ফেলার বিলম্ব, উঠে গেল সমস্ত টিকিট। হইহই কাণ্ড বাধল অনুষ্ঠানের আগে। থিয়েটারের বাইরে মেলা মানুষ। উপচে পড়ছে টিকিট কাউন্টার। টিকিট শেষ হয়ে গেছে শোনামাত্র অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে মানুষ। একটি টিকিটও অবশিষ্ট নেই তাঁদের হাতে, প্রাণপণ বোঝানোর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দর্শক নাছোড়। তাঁরা ফিরে যেতে চান না। প্যারিসের মানুষ বরাবরই শৌখিন, সৌন্দর্যপ্রিয়। বিশেষত, মেয়েদের সাজসজ্জা, রুচিমানতা আগাগোড়া গুরুত্ব পেয়েছে সে দেশে। সুশোভিত গাউন, ফুলেল রেশমের সুন্দর ড্রেস টানাটানি-ধাক্কাধাক্কিতে শতছিন্ন হবার জোগাড়। সে সব ঠেকায় কে? বাধ্যত, অবস্থা সঙ্গিন বুঝে নামতে হল পুলিশকে। ভেতরে প্রবেশ করে ঘটনার সত্যতা জানাল পুলিশ। না, কর্তৃপক্ষ মিথ্যা বলেনি, সমস্ত আসন পূর্ণ। মানুষ সেদিন ফিরে গেল। মানুষ ফিরে গেল বটে, কিন্তু ব্যর্থমনোরথ ওই মানুষগুলো উদয়শঙ্করের জীবনে, একটি বিশেষ পর্বের শুভারম্ভে রেখে গেল আসন্ন সময়ের ইঙ্গিতটি।

শুরু হল অনুষ্ঠান। মঞ্চে পড়ল প্রথম আলো। সরোদে মন্দ্র সুর ছাড়লেন তিমিরবরণ। তাঁকে অনুগমন করলেন বিষ্ণুদাস শিরালি এবং অন্যান্যরা। পরিবেশিত হল উদয়শঙ্করের ইন্দ্র, গন্ধর্ব নৃত্য। তারপর সিমকির সঙ্গে অসি ও রাধাকৃষ্ণ নৃত্য। ভীল নৃত্য। তিমিরবরণ সরোদ বাজালেন দুবার। প্রথমবার শুধু সরোদ, পরের বার তবলার সঙ্গতে। বিষ্ণুদাস শিরালির তবলাতরঙ্গ সম্পন্ন হল। তারপর দেবেন্দ্রশঙ্করের ব্যাধ নৃত্য। অনুষ্ঠান শুরু হওয়া মাত্রই শিল্পী আর কলাকুশলীরা অনুভব করলেন এক শিহরণ। এতদিন প্রস্তুতির সময় তাঁদের ঘিরে ছিল আনন্দ, পরিতৃপ্তি। তাঁরা টের পাচ্ছিলেন সমস্ত আধারটি ধারণ করেছে নিখুঁত বুনোট। কিন্তু মঞ্চ? তার জাদু? যেন ধরায় নেমে এল অমরাবতীর আলোক বিচ্ছুরণ, ছড়িয়ে রয়েছে সুরপুরের অমোঘ মায়াপাশ। ওই আবর্তে শব্দের অনুরণন যেন সমুদ্রগর্ভলোক নিষ্পন্ন। ওই আনন্দলোকে নিজেদের সমর্পণ করলেন  গুণীরা।

গজাসুর বধ, নৃত্যাভিনয়। মঞ্চের পিছনে বিশেষ পোশাকে বাদ্যযন্ত্রীর দল।

 

এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গজাসুর বধ। মঞ্চে ধ্যানস্থ শিব, তাঁকে আরাধনা করছেন পার্বতী। নৃত্যেরই তালে তালে  চলছে আরতি। মন্দ-মধুর ধ্বনি, ঘন্টা। তারপরই আকস্মিক আবির্ভাব গজাসুরের। রুদ্ধশ্বাসে বেজে উঠল ঢাক, গম্ভীর নিনাদে। পার্বতীকে হরণের অভিব্যক্তিতে তার  শক্তিপ্রদর্শন, দম্ভ, লুব্ধতা, স্পর্ধা। আর একদিকে পার্বতীর ভীতি, ক্রোধ, নিরুপায়ত্ব। মঞ্চ জুড়ে বাজছে খমক, ষোলো মাত্রার তালে তাসা। তারপর গমকে বেজে উঠল খোল। সেও ষোলো মাত্রায়। অনন্যোপায় পার্বতী শরণ নিচ্ছেন শিবের। কিন্তু তিনি যে ধ্যানমগ্ন। শ্বাসরোধ করে রেখেছে তাঁর অসহায়তা, উৎকণ্ঠা। সারেঙ্গি ধরেছে ভৈরবী। শিবের ধ্যানভঙ্গ হবে, এবারও বাজল ঢাক, অন্যতর তার চলন। বিশ্বাস-আশ্বাসে জেগেছেন দেবতা। সেই সংবেদে বেজে উঠল পাখোয়াজ। প্রবল দ্বন্দ্ব যুদ্ধ। অট্টনাদ করে উঠছে অজস্র ঢাক। কিন্তু দেবতার মারে দুষ্টের দমন, অবিচলিত এই ভক্তির কলনাদকে ধরে রইল সরোদ। যা অসুর তার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী ঈশ্বরের হাতে। সেই শান্তিপর্বের রেশ ধরল সেতার এবং সরোদ।

দর্শক নিথর হয়ে রইল। মুহূর্ত যায়। আরো একটা, তারপর আরো একটা। অতঃপর প্রবল হর্ষধ্বনি ছেয়ে গেল সবখানে। ছেয়ে গেল যতিচিহ্নশূন্য হর্ষধ্বনিতে।

মঞ্চে উপনীত হয়েই নৃত্য সেইদিন পেরিয়ে গেল মঞ্চের সীমা। শিল্পকে গভীর নিরাসক্তির আনন্দে স্পর্শ করা, নন্দনঘন তুঙ্গ সেই আনন্দলোকটিকে পলকের জন্যে ধারণ করতে পারা সে তো অনন্তকে লাভ করা। বিশ্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকা, মানুষের অস্তিত্বের গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই আদি অনন্ত ছন্দ, নৃত্যরত ভৈরবমূর্তিকে অনুভব করা। মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, জন্ম-মৃত্যু, হাসি-কান্না-হিরা-পান্নায় জুড়ে থাকা সেই বিরাট ছন্দের তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ থৈ। দিবারাত্র, মুক্তি-বন্ধনে যে নিরন্তর বেজে চলেছে তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ থৈ।  

Powered by Froala Editor