এক যে ছিল ছেলে। একটু এলেবেলে। তাকে বিশ্বাস করা যেত, ভরসা নয়। এই পর্বে ছেলেটার চরিত্রে স্বয়ং লেখক― প্রসেনজিৎ দত্ত। সে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে জয়পুরিয়া কলেজের রাস্তাটায় এসে পৌঁছেছে। সেখানে আসবে শুভ্রাংশুদা। এক ‘আন্তর্জাতিক’ মানুষের সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দেবে। দাদা আসতেই রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিট ধরে সোজা হাঁটা। শোভাবাজার রাজবাড়ি ছাড়িয়ে আরো ভিতরে ঢুকতে হবে। রাস্তাটা বাঁ-দিকে বাঁক নিতে একটা খেলার মাঠ। তার পাশ ধরে একটু এগিয়ে ডানদিকে গলির ধারে একটা বাড়ি। ডাকঘণ্টা বাজাতেই বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধ। “ওই গেহট এস দির?” দাদাকে দেখেই ওই বৃদ্ধের উবাচ। আমি হতবাক। চাইলাম দাদার দিকেই। সেও হতচেতন। কি আর করা, উত্তরে একগাল হাসি হেসে মেকআপ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তা বাইরের বসার ঘরে ঢোকার পর তিনি নিজেই কৌতূহল ভাঙলেন। জানালেন, ওটা জার্মান ভাষা। অর্থ, কেমন আছ? আমরা একটু হাসতেই বেশ রাশভারী গলায় বললেন, ‘‘কেমন আছ?” হাহাহা... আমরাও সহজ হয়ে উত্তর দিলাম। মানুষটির পরিচয় দিই এবার। তিনি জি সি দাস। প্রখ্যাত সাংবাদিক। অনেক ভাষায় অনর্গল কথা বলে যেতে পারেন। বিস্তর অভিজ্ঞতা। কভার করেছেন একাধিক ফুটবল বিশ্বকাপ, অলিম্পিক-সহ বহু আন্তর্জাতিক ইভেন্ট। এমন এক মানুষের কাছে শুভ্রাংশুদার সঙ্গে গিয়েছিলাম বিশেষ এক কাজে। আমার একটা প্রকাশনা ছিল। ওখান থেকে জি সি দাসের বই প্রকাশ করার কথা তাঁকে বলব। যদিও সে-বইয়ের কাজ কিছুটা এগিয়ে থমকে যায় আমারই অপেশাদারিত্বর কারণে। কিন্তু তারজন্য মানুষটার সঙ্গে, বলা ভালো লেজেন্ডারি মানুষটার কাছে যেটুকু পাঠ পেয়েছি, তা কখনোই ভোলার নয়। তখন ভরসা জোগাতে পারিনি তাঁকে। কিন্তু যে ছেলেটা তখন তৈরি হচ্ছিল, সে এখন যেটুকু, তা দাসদা না থাকলে হয়তো অসম্ভবই ছিল। নাহ, এখন প্রকাশনা জগতে নেই। তবে, যে পেশায় আছি, সেখানে দাসদার মতো মানুষ অনুপ্রেরণা। হ্যাঁ, তাঁকে ‘দাসদা’ বলেই সেদিন সম্বোধন করেছিল শুভ্রাংশুদা। সেদিন থেকেই তিনি আমারও দাসদা। পরিচিত মহলে তিনি এই সম্বোধনেই সম্বোধিত।
বইয়ের কথাটা পাড়ার পর তিনি কিঞ্চিৎ সময় চেয়েছিলেন। তবে, ওই সময় আমাদের একটা পত্রিকাও ছিল। আমি আর দাদা ওই সময় বাংলার ফুটবল নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছি। সঙ্গে বন্ধু অনিন্দ্যও ছিল। তাই দাসদার লেখা চাই বলে আবদার করতেই তিনি বললেন, “তোমাদের পত্রিকায় আমি ছোনে মজুমদারকে নিয়ে লিখব।” জানলাম যে, প্রথম বুটপরা ভারতীয় ফুটবলার এই সন্তোষ (ছোনে) মজুমদার। আর তাঁকে তৈরির পিছনে রয়েছেন যে মানুষটা, তিনি তাঁর কাকা দুখিরাম মজুমদার। তাঁর লেখা থেকে ধার করে বলব, “ভোরে উঠে শ্যামপুকুর আর শিকদার বাগানের স্টপেজ থেকে ট্রামে (তখন দু’মুখো ট্রাম ছিল) বসতেন স্যার। ফাঁকা রাস্তায় ট্রাম ঝড়ের গতিতে ছুটে চলত। আর ট্রামের পিছনে ছুটে চলতেন আমাদের সবার প্রিয় ছোনেদা। ট্রাম থামত ধর্মতলায়। তারপর স্যার দুখিরাম (উমেশ) মজুমদারের সঙ্গে সঙ্গে ছুটতে ছুটতে ছোনেদা এরিয়ান টেন্টে পৌঁছত। এটা ছিল রোজকার ব্যাপার। সাহেবদের সঙ্গে একটা ম্যাচে ছোনেদা সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন স্যার আর কিছু বলেননি। পরের দিন ভোরবেলা গ্যাস লাইট পোস্টে বেঁধে শিষ্যকে ভারী মিলিটারি বুট পরে স্যার লাথির পর লাথি মারতে থাকলেন ভাইপোর পায়ে। আর বলতে থাকলেন, ‘আর কখনো ভয় পাবি?’—‘নাহ’। এরপর ছোনেদাকেই সাহেবরা ভয় পেত। তিনি শুধু ভারতীয় ফুটবলারদের নয়, সাহেবদেরও সমীহ আদায় করতেন।” শান্তিনিকেতনের গণিত শিক্ষক ছিলেন জগদানন্দ রায়। তাঁকে রীতিমতো সমীহ করে চলতেন খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সমীহ আমরাও দাসদার জ্ঞানকে করে চলেছি প্রতি মুহূর্তে। জেনেছি ‘For a player, boots must be a part of himself...’ একথা তাঁকে বারবার বোঝাতেন স্যার। আরো জেনেছি যে, 'বড়লাটে'র মতো ছোনে মজুমদারকে বলা হত 'ছুনুয়ালাট'। ১৯৭৭-৭৮ মরশুমে বিশ্ববরেণ্য ফুটবলার ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি তখন সঁতেতিয়ানে খেলতেন। ফ্রি-কিক মাস্টার জেনারেল প্লাতিনি গোলে ৩-৪টি রাবারের ডামি আর সামনে গার্ড দেবার জন্য ৬-৭টি রাবারের ডামি রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করতেন। আমি আর অশোকদা (অশোক ঘোষ, এআইএফএফ-এর পূর্বতন জেনারেল সেক্রেটারি) দেখতে দেখতে অবাক হয়ে যেতাম। তখন অশোকদাকে দাসদা বলেছিলেন, ‘‘অশোকদা আমি ছোনেদার মুখে শুনেছিলাম যে, স্যার বাঁশির খুঁটি পুঁতে ছাত্রদের ড্রিবলিং, ফ্রি-কিক, মুভমেন্ট ইত্যাদি প্র্যাকটিস করাতেন।’’ অশোকদাও বলেছিলেন যে, তিনিও এই ঘটনা জানেন। ভাবুন একবার, কতদিন আগে কতটা আধুনিক মানুষ ছিলেন তিনি। আর আমার আপশোস, সযত্নে রাখা এই লেখা এখনো প্রকাশ করতে পারিনি ফান্ডিং জোগাড় না হওয়ায়। বাংলার ফুটবল নিয়ে এই সংখ্যা আমার আর দাদার স্বপ্নের প্রকল্প। এখন প্রকাশক খুঁজছি। যদি পাই, পত্রিকা নয়, বই হয়ে বেরোবে সেই সংখ্যা। অনেকবার দাসদার বাড়িতে গেছি। বেশ কিছু বিষয় উনি লেখা দিতে দিতে আলোচনা করেছেন। বেশ তন্ময় হয়ে শুনেছি। দাসদার পেশাদার ফুটবল সাংবাদিক জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা। এখনো মনে আছে মারাদোনা যেদিন নাপোলিতে সই করলেন, সেদিন জি সি দাসের সেখানে উপস্থিত থাকার অভিজ্ঞতার কথা। আমার সামনেই ফোন করেছিলেন অমল দত্তকে। তবে একটা বিষয় অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যখন শুভ্রাংশুদা বলেছিল, দাসদা ইউনিভার্সিটি জীবনে ওয়াটার পোলো খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারিনি তাঁকে। দাসদা নিজে বলেনওনি। তাই এই বিষয়টি আমি আর নিজে থেকে নিশ্চিত হয়ে 'লক্ কিয়া জ্যায়ে' বলতে পারিনি কখনোই।
এবার বলব ক্রীড়া সাংবাদিক হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কথা। তিনি প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদও। তাঁর নামটার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম অনেকদিন আগেই। টিভিতে যখন ফুটবল ম্যাচ চলত, ধারাভাষ্যকাররা প্রায়ই তাঁর নাম নিতেন। কারণ ধারাভাষ্যের মাঝে বেশকিছু দুষ্প্রাপ্য তথ্যের ইনপুট দিতে হত। সেই দুষ্প্রাপ্য সমস্ত তথ্য দিতেন হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে মনে হত, মানুষটা ক্রীড়া দুনিয়ার এনসাইক্লোপিডিয়া। যাই হোক, ফুটবল সংখ্যা করার কথা যখন ভাবছি, প্রবল ইচ্ছা ছিল এই মানুষটাকে আমাদের পত্রিকায় লেখার আমন্ত্রণ জানানোর। তেমন ইচ্ছা নিয়েই ফোন করেছিলাম হরিদাকে। ফোনে পরিচয়পর্ব সেরে লেখার কথা বলতেই সাগ্রহে রাজি হলেন। কী বিষয় নিয়ে লিখবেন, জানতে চাইতেই ফোনে একটি গল্প শোনালেন। গল্পের প্রধান চরিত্র কমল ভট্টাচার্য। কমল ভট্টাচার্য মানে জনপ্রিয় সেই ধারাভাষ্যকার। অজয় বসুর সঙ্গে তাঁর ধারাভাষ্যের মাধুর্য ক্রিকেটকে বাঙালির হেঁশেলে ঢুকে পড়েছিল একটা সময়। হরিদা জানালেন, তিরিশের দশকে এই কমল ভট্টাচার্য ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা স্পিন বোলার। প্রথম বাঙালি হিসেবে রঞ্জি ট্রফিতে সেই সময় শতাধিক উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯৩৮-৩৯ সালে প্রথম রঞ্জি জয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, এমন ক্রিকেটার তো স্বাধীনতার পর জন্মালে জাতীয় দলে খেলতেনই। এই কমল ভট্টাচার্যের উত্থানও কিন্তু দুখিরাম মজুমদারের হাত ধরেই। সেই দুখিরাম মজুমদার, যাঁর কথা খানিক আগেই বলেছি। হরিদা দিন পনেরো সময় চেয়েছিলেন। দশ দিন পর মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ফোন করতেই তিনি জানালেন, “প্রসেনজিৎ 'কমল পর্ব' সমাপ্ত। এরপর লিখব ল্যাংচা মিত্র, বাঘা সোম, বলাইদাস চট্টোপাধ্যায়দের কথা। এই বলাইদাসের হাত ধরেই কিন্তু চুনী গোস্বামীর মতো ফুটবলার উঠে এসেছেন। পিকে ব্যানার্জিকে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন বাঘা সোম। পরিমল দে, সমরেশ চৌধুরীর মতো বহু ফুটবলার তাঁদের হাত ধরেই উঠে এসেছেন।” এরপর বললেন, দুখিরাম মজুমদারের পর কলকাতা ময়দানের 'দ্বিতীয় স্যার' অচ্যুত ব্যানার্জির কথা। যিনি কেবলই কোচ নন, ছিলেন শিক্ষক। ছাত্ররা তাঁকে 'স্যার' ডাকত। শোনা যায়, জুনিয়র বেঙ্গল খেলতে গিয়ে তাঁর এক ছাত্রের সিনবোন ভেঙে দু-টুকরো হয়ে গিয়েছিল। এক বছরের মধ্যে ছেলেটিকে মাঠে ফিরিয়ে এনেছিলেন অচ্যুতবাবু। ’৬৯-এ দীর্ঘ ছ-বছর পর বাংলা আবার সন্তোষ ট্রফি জিতেছিল তাঁর কোচিংয়েই। খিদিরপুর ক্লাবকে ওই সময় ফুটবলার তৈরির কারখানা বলা হত। এর কারিগর ছিলেন তিনি। খুদে ফুটবলারদের জন্য তাঁর দুখিরাম মজুমদার কোচিং ক্যাম্প ছিল। কেবলমাত্র তাঁর অগণিত ছাত্রদের দেখবে কে, এই ভেবে বড় ক্লাবকে কখনো প্রশিক্ষণ দেননি তিনি। এমন মূল্যবোধ কিন্তু এখন দেখা মেলা ভার। তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয়েছে কৃষ্ণ গোপাল চৌধুরী, প্রদীপ ঘোষ, তনুময় বসু, অনুপ সাহা, কৃশানু দে-র মতো ফুটবলাররা। হরিপ্রসাদদার কাছ থেকে এমন সব শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। ফুটবল সংখ্যা প্রকাশ পেলে তা যে জমে যাবে, সে-কথা ভেবে অগ্রিম আনন্দও পাচ্ছিলাম বটে!
হরিদার কাছেই জেনেছি, “আজ অনেকেই অচ্যুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ভুলতে বসেছে। মধ্যমগ্রাম হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক কৃষ্ণপদ গাঙ্গুলির সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা ছিল। কৃষ্ণপদ গাঙ্গুলি নিজে একজন ফুটবল অন্তপ্রাণ কোচ ছিলেন। কৃষ্ণপদবাবুর স্কুলের ছেলেরা অচ্যুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শিখতে যেতেন। এর সুবাদে তারা একসময় সুব্রত কাপে ভীষণ ভালো করে। একটা সময় কিছু খবরের কাগজ মধ্যমগ্রাম হাইস্কুলের বিরোধিতা করে খবর বের করেছিল। তখন তাদের সাফল্যকীর্তি নিয়ে আমি 'খেলার আসর নামে' একটা লেখা লিখেছিলাম। যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিলাম যে, বাংলা ফুটবলে মধ্যমগ্রাম হাইস্কুলের একটা বিশেষ ভূমিকা এবং অবদান আছে। সেই সূত্রে কৃষ্ণপদ গাঙ্গুলি আমার বাড়িতেও আসতেন। অবশ্য কৃষ্ণপদবাবুর অবসরের পর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা চলতে পারেনি। উল্লেখ্য যে, দমদম কুমার আশুতোষ স্কুল থেকেও বহু খেলোয়াড় তখন উঠে এসেছিল। ওই সময়ের আর এক নামজাদা কোচ ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের জ্যোতিষচন্দ্র গুহ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সংযমী একজন মানুষ। শত দুর্যোগও তাঁকে টলাতে পারত না। এরপর ভালো কোচের নাম করতে হলে অরুণ সিনহা, রমণী সরকার, স্বরাজ ঘোষের কথা বলতে হয়। হয়তো তাঁদের নাম বড় আকারে উচ্চারিত হয় না, কিন্তু খেলার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা এবং কোচ হিসেবে ভূমিকা সত্যিই অতুলনীয়। এঁরা বড় ক্লাব ছাড়াও বাংলা দলের কোচ ছিলেন।” বলেছিলেন, বাকিটা লিখে পাঠিয়ে দেবেন। পাঠিয়েও ছিলেন। কিন্তু নিজের ব্যর্থতার কথা বারবার বলতে ইচ্ছা করে না। সেই লেখা এখনো অপ্রকাশিত। সুকাল হয়তো আসবে। তারই অপেক্ষায়।
আরও পড়ুন
ইস্টবেঙ্গল মাঠ এবং নতুন ময়দানকে চেনার সেই দিন
কলকাতায় খেলা দক্ষিণী ফুটবলারদের নিয়ে লিখবেন কে, এমন নাম খুঁজতে খুঁজতে সাংবাদিক নির্মল নাথের কথা বলল শুভ্রাংশুদা। এই নির্মল নাথই 'হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান ফুটবল' (আপটু ২০০৯-১০) গ্রন্থের লেখক। তেরোটি রাজ্য এবং কয়েক ডজন ফুটবলারের প্রোফাইল-সহ একটি অনবদ্য বই এটি। তা এত বড় এক মানুষকে ফোন করতে হবে ভেবে বেশ স্নায়বিক চাপ ছিলই। 'মাঠে নেমে ফুটবল তো তোকেই খেলতে হবে' গোছের মন্ত্র দিয়ে শুভ্রাংশুদা তখন সাইডে। অগত্যা... তবে, শুভ্রাংশুদার কাছ থেকে ওনার ফোন নম্বর পেয়েছি শুনে বেশ অনেকক্ষণই কথা বলেছিলেন তিনি। কলকাতায় খেলা দক্ষিণী ফুটবলারদের নিয়ে লিখতে হবে শুনে বললেন, “আমি বরং রহিম সাহেবের সঙ্গে একটা কাল্পনিক কথোপকথন লিখব।”
আরও পড়ুন
জাতীয়তাবাদের ছুঁতোয় লাল-হলুদকে সমর্থন
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে সৈয়দ আবদুল রহিমের সঙ্গে?”
আরও পড়ুন
মারাদোনা ও মোহনবাগান
—হ্যাঁ। তাঁর সময় তো কলকাতার দলগুলো মোটা টাকা দিয়ে হায়দরাবাদ থেকে ভালো ভালো ছেলেগুলোকে তুলে নিয়ে যেত। শুধু কি হায়দরাবাদ থেকে, মহিশূর থেকেও কতসব ফুটবলারকে নিয়েছে। রামন, আহমেদ খাঁ, বেঙ্কটেশ, সাত্তার...। আর এখন, হায়দরাবাদে ফুটবল বেশি হতে দেখি না। চারিদিকেই ক্রিকেট। মহিশূরে ফুটবলটা আছে?’’
আরও পড়ুন
একটি দীর্ঘশ্বাসের গল্প: মারাদোনা এবং কলকাতায় কিছু ভিজে যাওয়া চোখ
আমি ভাবলাম, যে রহিম সাহেবকে নিয়ে এত কথা হচ্ছে, ভারতীয় ফুটবল নিয়ে যা কিছু গর্ব, সবই তো তাঁরই সময়কে ঘিরেই। যাই হোক, শুভ্রাংশুদার কাছেই শুনেছি, নির্মল নাথের দেখা প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটি ছিল কলকাতায় ইরানের বিরুদ্ধে প্রাক্-অলিম্পিকসের ম্যাচ। নির্মল নাথ তখন বেশ ছোটই ছিলেন। সেদিন ছবির মতো পরিষ্কার ছিল ম্যাচটি। বলেছিলেন, “ম্যাচটা আজও চোখে ভাসে... চুনীদার গোল, রামবাহাদুরের দু’টো শট পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে আসা, থঙ্গরাজদার বাজে গোল খাওয়া।’’ বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কিংবদন্তি ফরওয়ার্ড পঞ্চপাণ্ডবের কথাও। ভেঙ্কটেশ, আপ্পা রাও, ধনরাজ, আহমেদ ও পি বি এ সালেহ। সবাই ছিলেন দক্ষিণী। এই দক্ষিণ থেকেই কানাইয়ান, অরুময়নৈগম, উলগানাথন, মহম্মদ আকবরের মতো প্লেয়াররা ভারতীয় দলকে সমৃদ্ধ করেছেন। 'বড়ে মিয়াঁ' মহম্মদ হাবিব থেকে ব্যাকে শরাফ আলি, ভি পি সত্যেন, তাজ মহম্মদ, রহমতুল্লাহ খাঁ; মিডফিল্ডার কার্লটন চ্যাপম্যান, ভিক্টর অমলরাজ জো পল আনচেরি; ফরোয়ার্ড জ্যাভিয়ের পায়াস, ধনরাজ আই এম বিজয়ন সবাই-ই দক্ষিণের। বলেছিলেন— “রহিম সাহেবের সঙ্গে যে কাল্পনিক কথোপকথন লিখব, তাতে একটা একাদশ গড়ার চেষ্টা করে দেখব।’’ তাঁর অভিনব এই পরিকল্পনা শুনে গাইতে ইচ্ছা করছিল শচীন কর্তার গান, 'শোনো দখিন হাওয়া প্রেম করেছি আমি'।
Powered by Froala Editor