কোর্টে কোর্টে— প্রায় সব কোর্টেই উকিলবাবু ও মুহুরিদের সেরেস্তা, সেরেস্তাঘর প্রায় একই ধরনের। পুলিশ কোর্ত, জাজেস কোর্ট, সেশন কোর্ট— সর্বত্রই এক ছবি। জুনিয়ার উকিলরা আছেন, তাঁদের সিনিয়রদের সঙ্গে। সত্তর দশকে, আশিতেও টাইপরাইটারের প্রভাব কোর্টে, যথেষ্ট। পুরনো দিনের ‘রেমিংটন’ কোম্পানির টাইপরাইটার ছিল বিখ্যাত। ছোটো, বড়ো, তার নানারকম সাইজ। ছোটো রেমিংটন টাইপরাইটার ছিল দেখার মতো। কি তার স্পিড। যেমন ‘সিন্নি’ ফ্যান। ছোটো টেবল ফ্যান সিন্নি, কী তার হাওয়া! একসময়, বাজারে— আমি পঞ্চাশ ও ষাট দশকের কথা বলছি— ‘অসলার’, ‘ক্লাইড’, ‘ইন্ডিয়া’ ফ্যান ছিল বিখ্যাত। ছিল জি ই সি কোম্পানির ফ্যান। ছিল ঊষা ফ্যান। চার ব্লেডঅলা ফ্যান দেখেছি। সব ব্লেডই কাঠের। ডি সি ফ্যান-এর মুণ্ডু— হাঁড়ি বলা হত যাকে, ছিল বেশ বড়ো আর ভারি। ভেতরে আর্মেচার। তামার তার দিয়ে বাঁধা হত। মাঝে মাঝে কার্বন জ্বলে যেত ডি সি তে চলা ফ্যানের। ‘ভারত’ কোম্পানির ফ্যানও ছিল। সব ফ্যানের ব্লেডই ছিল স্টিলের বা লোহার। চলতি ফ্যান— চলমান ফ্যানের ধাক্কায় কত চড়াই পাখিকে যে নিচে— মেঝের ওপর পড়ে ছটফট ছটফট করতে করতে মরে যেতে দেখেছি, তার আর ইয়ত্তা নেই। ‘পোলার’ ফ্যানও দেখেছি একসময়। রেমিংটন টাইপরাইটারের পাশাপাশি ‘গোদরেজ’ কোম্পানির টাইপরাইটার দেখেছি। যথেষ্ট, সেই টাইপরাইটিং মেশিনও যথেষ্ট শক্তপোক্ত মজবুত। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর দশকেও টাইপরাইটার অপারেটর ও স্টেনোগ্রাফারের চাকরি ছিল বেশ অনেকটাই ব্যাপ্ত। স্কুল ফাইনাল, ম্যাট্রিক বা হায়ার সেকেন্ডারি, নয়তো প্রি ইউ— প্রি ইউনিভার্সিটি পাশ করে অনেকেই টাইপরাইটিং ও স্টেনোগ্রাফি শেখার জন্য ভর্তি হতেন বিশেষ কলেজে বা টাইপরাইটিং স্কুলে। সেখানে টাইপরাইটিং ও স্টেনোগ্রাফি শেখানো হত। স্টেনোগ্রাফি শেখার জন্য ‘পিটম্যান’-এর বই ছিল বিখ্যাত। তখন সাইক্লোস্টাইল মেশিনের যুগ। টাইপরাইটিং, স্টেনোগ্রাফির পাশাপাশি ছিল মোম মাখানো কাগজের ওপর লোহার সূচিমুখঅলা কলম দিয়ে লেখা।
বিশিষ্ট বুদ্ধিব্রতী ও লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় সত্তর-আশির দশকেও বাংলা টাইপরাইটারে লিখতেন। নিজে সমস্ত লেখা, গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি করতেন অন্নদাশঙ্কর টাইপরাইটারে। ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য স্টেটসম্যান’ ও ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’-র সাংবাদিকরা ব্যবহার করতেন টাইপরাইটার। বাংলা দৈনিকে টাইপরাইটার অনেক পরে কেন, আসেনি কোনোদিনও। একজন মিনিটে কত অক্ষর টাইপ করতে পারছেন নির্ভুলভাবে, তাতেই শব্দের স্পিড— মানে শব্দ টাইপ করার স্পিড কত সত্তর আশি একশো— তখন একেবারে টাইপ করার চেষ্টা করা হয়, তখন এই ব্যাপারটা খুবই কেজো চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে— ঠিক কত শব্দ টাইপ করতে পারে এক মিনিটে বা ঘণ্টায় তারই একটা মক টেস্ট মাঝে মাঝেই— পনেরো দিনে একবার তো হয়েই থাকে। সেই সময় ক্লার্কের চাকরি পেতে গেলে টাইপের ভালো স্পিড তোলা জরুরি। টাইপস্কুল, স্টেনোগ্রাফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব ধীরে ধীড়ে কালের নিয়মে উঠে গেল। যেমন পোস্ট অফিস থেকে করা টেলিগ্রাম, পোস্টকার্ড তাও তো প্রায় বিলুপ্তির পথে। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর আর কালীঘাটের প্রায় সীমান্তরেখা, একদা চালু ‘পূর্ণ’ সিনেমা, তার পেছন দিকে, ‘মুক্তদল’ নামের দুর্গাপুজোর জায়গাটি একটি ছাড়ালেই ভবানীপুর থেকে হাজরা আসার পথে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের ওপর ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, তার আশপাশেই বি-ই-শা-ল টাইপরাইটিং শেখার স্কুল। এরকম স্কুল তখন বহু জায়গাতেই। টাইপরাইটিং ও স্টেনোগ্রাফি শেখা চাকরি পাওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয়। একটা সময় ছিল পঞ্চাশ ষাট দশকেই অ্যাংলো ইনডিয়ান মেয়েরা খুব বেশি টাইপিস্ট কাম স্টেনোগ্রাফার হতেন। ‘বস’— বড়োসাহেবের পিএ, বড়োসাহেবের সঙ্গে ট্যুরে যাচ্ছেন তাঁর পিএ। এমন ছবিও ছিল তখনকার গল্প-উপন্যাসে। স্কার্ট, স্টিলেটো হিলের জুতো, হাফ কোট ধরনের টপ পরে এইসব পিএ, স্টেনোগ্রাফার কাম টাইপিস্টরা পিএর চাকরি— বসের সেক্রেটরির কাজ খুবই যোগ্যতার সঙ্গে করতেন। সাউথ ইন্ডিয়ান— দক্ষিণ ভারতীয় মেয়েরা অতি দ্রুত এত চমৎকার টাইপ করতে যে বলার নয়। বহু দক্ষিণ ভারতীয় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী নারী যুক্ত ছিলেন টাইপরাইটিং প্রফেশনে— টাইপিস্ট হিসাবে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে। স্টেনোগ্রাফার হয়ে বস-এর ডিকটেশন নোট করে, তারপর তা টাইপ করে ফেলা— ঝটঝট ঝটঝট। টাইপরাইটারে ঝড় তোলা যেন। টাইপিং বা টাইপ করাকে কোনো কোনো সরকারি অফিসে ‘বাক্স বাজানো’ বলা হত। এই কথাটি খুবই প্রচলিত ছিল কলকাতার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো— পি আই বি-তে। কে বলতেন, কারা বলতেন, কাকে বলতেন— সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। উকিলবাবুদের সেরেস্তাঘরে তখন টাইপরাইটার। আদালত, অফিস— সবেতে টাইপরাইটার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজেও। এছাড়া সবই হাতে লেখা আর কার্বনকপি। ফোটো কপি বা জেরক্সের অ্যাত বোলবোলাও তখন হয়নি। কার্বন কালো আর নীল কার্বন পেপার তখন খুবই প্রচলিত একটি বস্তু। কমনামি লেখকরা অনেকেই তাঁদের লেখার কার্বন কপি রেখে অরিজিন্যাল জমা দেন। সেইসময়ে ষাট সত্তরে কপিং পেনসিল খুব চলে। কপিং পেনসিলে জিভ ঠেকালেই তার নীলত্ব— মানে নীলচে রংটুকু আরও, আরও অনেক গভীর হয়ে যায়। অফিসে অফিসে পেনসিল— হার্দ ও সফট পেন্সিল, কপিং পেনসিল খুব চলে। এইচবি ছিল সফট পেনসিল। থ্রি এইচ ছিল হার্ড পেনসিল। হার্ড পেনসিলের লেখা সফট পেনসিলের লেখা যেমন গভীর, তেমন নয় মোটেই একেবারেই। ছিল বড়ো বড়ো রিল, কার্বনের। সাদা বা টাইনটানা কাগজে লেখা লিখতে লিখতে তার নিচে কার্বন দিয়ে লেখার প্রতিলিপি তৈরি, এত আমরা দেখেছি হামেশাই। অফিসের সমস্ত রকম কাজে, আদালতের কাজে কার্বন কপি, কার্বন পেপার। মোমদার সেই কার্বন পেপার কোর্স-কেও আর ই এস— এমনই বানান সম্ভবত তার, সেই কার্বন পেপার খুব চলে। যেহেতু মোম, তাই কার্বন পেপারে আগুন লাগলেই ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ দাউ দাউ…। ধু ধু করে জ্বলে ওঠে আগুন, অতি দ্রুত— কার্বন পেপারে দেশলাই ছোঁয়ালেই।
উকিলবাবু, মুহুরিবাবু সেরেস্তা ঘরে তাই ঠকাঠক ঠকাঠক টাইপরাইটার, যেন ডাকছে যান্ত্রিক কাঠঠোকরা। ঠকাঠক ঠকাঠক… খট খট খট খট। সেই সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর কার্বন কপি।
কেউ কেউ অফিস থেকে ব্যবহার করা কার্বন, যা লাগানো ছিল টাইপরাইটারে, তা বাড়িতে নিয়ে এলে, সেইসব কার্বন পেপারদের অনায়াসে ঘুটে কয়লার আগুনে আঁচ দেওয়ার কাজে লাগানো হত। এছাড়াও বাবার আনা অফিসের কার্বন পেপার খাতায় অ্যাং-ব্যাং-চ্যাং আঁকার সাহস দেখায়। কার্বনের নিচে সাদা কাগজ। তার গায়ে ফুটে উঠছে, কালো বা নীল কার্বন অক্ষরমালা। টাইপরাইটারের কালি হালকা হয়ে যাওয়া কালি ফুরনো, কালি ফুরিয়ে গিয়ে অক্ষর ঝাপসা থেকে ক্রমশ ঝাপসাতর হয়ে আসা— এসব তো যাঁরা টাইপিস্ট ছিলেন, তাঁদের কাছে প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। কোনো কোনো বাড়িতে বাবা ওকালতি করতেন আদালতে, সেই আদালত স্মৃতি টাইপরাইটার থেকে গেছে। অনেক অনেক পরে, তা হয়তো কাবারিঅলাদের কাছে, পুরনো— ভাঙাচোরা বিক্রেতারা ওটা নিয়ে গিয়ে, বাতিল লোহার দরে…
আরও পড়ুন
মুহুরি, সেরেস্তাঘর ও আরও কিছু
রাখাই থাকে না কোনো স্মৃতি, তায় বাবার টাইপরাইটার, ধুস। এখন তো সবই কম্পিউটারাইজড। সবই পি সি— পার্সোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ। ফলে টাইপরাইটাররা নেহাতই নিরুদ্দেশের খাতায়। যেমন টেলিফ্রাফ অফিসের টরেটক্কা টরেটক্কা শব্দ, মর্স কোড। টেলিগ্রাম। স্টেশনে স্টেশনে, রেলের চলাচল যোগাযোগে সব সময়ই টেলিগ্রাফ।
আরও পড়ুন
হাসান আজিজুল হক, খালাম্মা, পাখি শিকারের বন্দুক
টেলিগ্রাফের তারে ল্যাজ ঝোলা পাখি, এ তো বহু সিনেমা শটে— বাংলা ও হিন্দি সিনেমায়। টেলিগ্রাফ মেশিন, টরেটক্কা নিয়ে অপরেশ লাহিড়ীর একটি বিখ্যাত গান ছিল—
আরও পড়ুন
হাসান আজিজুল হক, গান ও গানের বাগান
‘খবর এসেছে ঘর ভেঙেছে দারুণ ঝড়ে
তারের ভাষায় সংকেতে টক্কা টক্কা টরে
টক্কাটরে…’
আরও পড়ুন
নুসকা-টোটকা-মুষ্টিযোগ
‘মাটির মানুষ চাঁদেতে দেয় হানা…’। ইত্যাদি প্রভৃতি।
এই তথ্য তো সবাই জানেন মুম্বাই ও বোম্বাই সিনেমাজগতের অতি বিখ্যাত সুরকার ও গাইয়ে বাপ্পি লাহিড়ী বা বাপি লাহিড়ো অপ্রেশ লাহিড়ী ও বাঁশরী লাহিড়ীর পুত্র। যদিও কথা বলে না— ‘গুরু গুড় হি রহে গ্যয়া/ চেলা বন গয়া শক্কর’। অর্থাৎ গুরুদেব গুরুই থেকে গেল। চেলা হয়ে গেল চিনি। এই কথাটি উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদে খুব শুনেছ গুরু গুড় ইত্যাদি…। অপরেশ লাহিড়ীর কণ্ঠবাহার খুব যে ভালো ছিল এমন তো নয়। তাঁর একটি বিখ্যাত গান—
‘লাইন লাগাও, লাইন লাগাও
লাইন লাগাও, লাইন লাগাও’
‘হাটবাজারে শ্মশান ঘাটে’… ইত্যাদি। গানটি এক সময় খুব বাজত ‘আকাশবাণী’ থেকে। এখন তো প্রায় শুনিই না। যেমন শেষ থেকে শুরু সিনেমায় কিশোরকুমারের গাওয়া—
‘বল হরি হরিবোল
বল হরি হরিবোল
মরে গিয়ে বেঁচে গেছে
যমদূত নিয়ে গেছে
নেচে নেচে খাটে তোল…
বল হরি হরি বোল
ঐ চোখে আর দুনিয়াটাকে দেখতে হবে না
সোজা পথে চলতে গিয়ে বাঁকতে হবে না
মালিকরা তো ওর কপালে হাতুড়ি আর ঠুকবে না
রাজনীতিতে ধরলে গলা ওর কানে আর ঢুকবে না
বল হরি হরিবোল…’
শেষ থেকে শুরু ছিল শ্মশানে মৃতদেহের ছবি তোলা একজন একক মানুষ আর তাঁর স্টুডিও গল্প। বিষয় বৈচিত্রে নতুন।
তবে ‘শেষ থেকে শুরু’ সিনেমা হিসাবে তেমন বড়ো কিছু নয়, একেবারেই। কিন্তু বিষয়ে নতুনত্ব সেটাই দেখার। যেমন অরবিন্দ মুখার্জি— ঢুলুবাবুর পরিচালনায় সেই ছবি। ফিল্মের একজন নায়ক হতে চাওয়া একস্ট্রাকে নিয়ে। সেই ছবিতে গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গান গেয়েছেন। উত্তমকুমারও আছেন সম্ভবত। ছবির নাম ‘নকল সোনা’। তো সে যাই হোক— উকিলবাবু-মুহুরিদের সেরেস্তাতেও এই রকম গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স আছে। জামিনের জন্য সওয়াল করতে কখনও কখনও মোটা টাকার বিনিময়ে এক দিন, দুদিনের জন্য আসেন নামকরা আইনজীবী। তিনি তাঁর ধারে ও ভারে সওয়ালে, স্টেট ভার্সাস কেসের প্রতিপক্ষের মুখ বন্ধ করে দেন। মামলা বের করে আনেন। অতি নামজাদা সরকারি কৌঁসুলিকে তিনি একেবারে নাস্তানাবুদ করে দেন অকাট্য যুক্তিজালে। ভেঙে দেন সাক্ষীদের। দুঁদে আইনজীবী— কৌঁসুলিরা এরকমই হন।
ইলাহাবাদ হাইকোর্ট আমার বড়ো মাসি রেণু মাসি আর মেসোমশাই আশুতোষ ভট্টাচার্যর বাড়ি। ৮৫৩/৭৩২ পুরানা কাটরা। অনেকটাই পাথরের তৈরি আর তার ওপর চব্বিশ ইঞ্চি বা তিরিশ ইঞ্চি মাটি-সুরকির দেওয়াল। চুন-মাটি-সুরকি। যে দেওয়ালে খুব দিমক-উইয়ের উপদ্রব হয়ে থাকে। দেওয়াল ফুঁড়ে উই বা উলি পোকা বা দিমক বেরিয়ে আসে। আর সব কেটে, কুটে, খেয়ে, ফুটো করে ছারখার করে। ‘উই আর ইঁদুরের দেখ ব্যবহার/ যাহা পায় তাহা কেটে করে ছারখার/ কাঠ কাটে বস্ত্র কাটে কাটে সমুদয়’— এ তো প্রচলিত কবিতা, বহু বছর আগের। কোর্ট নিয়ে কথা হচ্ছিল, ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেই হাইকোর্টের সেরেস্তাঘর প্রায় একই রকম। এই এলাহাবাদ হাইকোর্টেই ইন্দিরা গান্ধী পরাজিত হন, কোর্টের রায়— ঐতিহাসিক রায়ে রাজনারায়ণ জয়ী হন। ইন্দিরা গান্ধী হেরে যান। কিন্তু তিনি মহামান্য আদালতের রায় মানেননি। সেই ইতিহাসে আর যাচ্ছি না বিস্তারে। বড়ো মাসি— রেণু মাসির পুরানা কাটরার বাড়ির থেকে দশ মিনিটের পর ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেখানে নানা ধরনের মামলা করেন ভকিল— উকিল সাব। সেখানে সেরেস্তাঘর। টাইপরাইটারের শব্দ। সবই সেই ষাট-সত্তরের দশকে। ঘোড়ার গাড়ি, মোটরে তখন আসেন ভকিলসাহাবরা— যাঁরা পেশায় যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত। আছে খাবারের দোকান। বাংলার কোর্টে রসগোল্লা বিখ্যাত— বড়ো বড়ো রসফোল্লা, মাঝারি, ছোটো রসগোল্লা। দাম আলাদা আলাদা। প্রতিটি আদালতের সঙ্গেই প্রায় বট বা অশ্বত্থ গাছ থাকে। তার নিচেও উকিলরা বসেন। সেইসব আইনজীবীদের তেমন পশার নেই। তাঁদেরই হয়তো ‘বটতলার উকিল’ বলা হয়। ‘বটতলার বই’ আর বটতলার উকিল প্রায় সমগোত্রীয়— এমনটি বলা হয়ে থাকে আমাদের চারপাশে। ফলে মান্যবর উকিল মহোদয়দের সঙ্গে বটতলার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সেই কোন কাল থেকে। কত কত যুগ আগে যেন ‘বটতলার উকিলবাবুরা’ শামলা গায়ে কখনও চোখা চাপকান পরে মামলার প্রত্যাশায়, মকেলের খোঁজে। সে যাক গে, যাক সে সব কথা। বটতলার উকিলরা— ভকিলসাবরা আছেন সর্বত্র। যেমন থাকেন, জামিন করানো, শক্ত শক্ত মামলায় তাঁদের ডাক না পড়লেও পাঁচ আইন ইত্যাদি ব্যাপারে। ‘আওয়ারা কেস’-এ যে কেসে— যে মামলায় শুধুমাত্র রেশন কার্ডটি দেখালেই জামিন পাওয়া যায়, সেইসব মামলায় এঁরা অ্যাপিয়ার হন। দাঁড়ান। তারপর ক্লায়েন্টদের থেকে টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নতুন মক্কেলের খোঁজে।
Powered by Froala Editor