বিশ্ব ইজতেমা, তবলিগ জামাত, আরও কিছু

মুছে যায়? — ৫৩
আগের পর্বে

ষাট সত্তরের দশকেও, দুর্গাপুজোর অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে মোষ বলির প্রথা প্রচলিত ছিল কালীঘাটে। বলির আগে সেই মোষের গলায় ঘি মাখানো হত ঘাড় নরম করার জন্য। চিলকাগড়ে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোতেও মোষ বলি হত। নেপালে আজও চল রয়েছে এই প্রথার। মোষ বলির কাতান বা খড়্গ অনেকটাই আলাদা ছাগবলির থেকে। ঈদ কুরবানিতে মোষ, গরু, ছাগল, দুম্বা, ষাঁড়, বলদ, উট— সবই বলি হয়। সুরা আওড়াতে আওড়াতে আড়াই প্যাঁচে কুরবানি করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা। তাঁরা অনেকেই দেড় দু’বছর ধরে বাড়িতে পুষতেন কুরবানির পশু। সেই চলও বিলুপ্ত আজকে। তারপর…

আসলে যেটুকু কথা শুরু হয়েছিল বাহিন, শিবাদাদু, সেই নাগ সমন্বিত বৃক্ষ এবং সাপেরা সকলেই অতি বিষাক্ত, তখন বাহিনের পাশাপাশি সিংহবাহিনী দেবী, তাঁর সামান্য মন্দির, নদীস্রোত— সবই ভেসে এল স্মৃতিস্রোতে, একটু একটু করে শিবাদাদু দিনাজপুরের বাহিনের সেই রোমাঞ্চকর যাত্রার বিবরণ দিয়েছেন আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ-একান্ন বছর আগে। সেই কথামালা রূপকথা-সম ভেসে ভেসে আসে আমার সামনে আজও। সর্পমণ্ডিত সেই কুহকি বৃক্ষের কথা আমাকে বার বার বলতেন শিবাদাদু। তখন যেন এক ঘোরের বিকেল বা সকাল। বালকের সামনে শোনার পর পর কল্পনায় ভাসা এক অন্যরকম গাছ, কুহকিভূমির ওপরই কুহকময় বৃক্ষ যেন, তার গায়ে দিনে সূর্যের আলো, রাতে চাঁদের। 

শিবাদাদুর কাছে তন্ত্র শিখতে আসা লাল কাপড় পরা ‘সাধুর’ কথা বলেছি আগেই, এই ‘মুছে যায়?’ নামে লেখা কলমেই। ‘সাধু’-কে ‘সাধু’, ‘ভিরিঙ্গী’, কানা-ভিরিঙ্গী— এইসব নামে সম্বোধনের ঢেউ বহে যেত বালি গোস্বামী পাড়ায় শ্যাম পিসিমার বাড়ি। ‘সাধু’ বা ‘ভিরিঙ্গী’ থাকত বারো মাস, শিবাদাদুর সঙ্গে। কাজে অকাজে, ‘অনুষ্ঠান’-এ, শিবাভোগে। পাঁঠা একবার দেখেই বলি দেওয়ার পর তার থেকে ঠিক কতখানি মাংস হবে বা হতে পারে, বলে দিতে পারতেন বালির শিবঠাকুর। মোটামুটিভাবে সেই হিসাব মিলে যেত। তারপর সেই বলিদানের পাঁঠার কোমরের কাছে সাধারণভাবে ডান হাতের পাঁচ আঙুল দিয়ে খামচে খানিকটা তুলে নিয়ে বলার ব্যাপারটা তো ছিলই। আর সেই হিসাব প্রায় নিখুঁত, ঠিক কতটা মাংস হবে এর থেকে।

মাংসের দোকানে, কসাইয়ের ছুরিতে গলাকাটা খাসির গা থেকে চামড়া ছাড়ানোর পর তার ত্বক অল্প অল্প কাঁপে, এটা লক্ষ্য করেছি অনেক ছোটবয়স থেকে। সদ্য সদ্য কাটা এমন চর্বিমোড়া ত্বক নাচানো খাসিকে জলে ডুবিয়ে দিতে পারলেই ব্যস— ধাক ধাক করে ওজন বেড়ে যাবে।

বেশ খানিকটা জল ঢুকে পড়বে তার শরীরের ভেতর। এটা খাসির মাংস বিক্রেতার লাভ। ওজন বেড়ে গেল। আবার জল ছাড়া খাসির শুকনো মাংস, তাও ছিল গোপাল পাঁঠার দোকানে, উত্তর কলকাতার বউবাজারে। সেই মাংসে কোনো জলের বালাই নেই।

আরও পড়ুন
বলি, কুরবানি— মাংস

ষাটের দশকেও খাসির মাংসর দোকান থেকে মাংস কিনলে বেশ খানিকটা লালচে মেটে ফ্রি অথবা ফাউ পাওয়া যেত। শালপাতায় মোড়া খাসির মাংসের সঙ্গে চর্বি আর মেটে বিনাপয়সায়।

আরও পড়ুন
শাঁকনি সাপের মালা, কালিকানন্দ অবধূত

শালপাতায় মোড়া খাসির মাংসে হামেশাই ছোঁ মারত চিল। আকাশ থেকে ফাইটার প্লেন— যুদ্ধ বিমানের ঢঙে আলগা করে রাখা খাসির মাংসের শালপাতা মোড়ক মুহূর্তে চিলের থাবা জড়ানো নখে। পায়ে করে সেই টুকরো করা লোভনীয় মাংস তুলে নিয়ে গিয়ে অনায়াসে বাজার লাগোয়া কোনো নিম গাছে বসত সেই চিল। তারপর তারিয়ে তারিয়ে বেশ উপভোগ করে করে, ধারালো, শক্ত, চঞ্চুতে অনায়াসে মাংসভক্ষণ আর নিচে বাজার সারা গেরস্থের হায় হায়।

আরও পড়ুন
শিবাভোগ ও সাদা শেয়াল

মাংস নখে বিঁধিয়ে ওড়া ডানা মেলা চিলের পেছনে চিলো, চিলো, চিলো করে হেঁকে হেঁকে কখনও কখনও মাংস হারানো গেরস্থর ধুতি খোলা দশা। প্রায় মুক্ত কচ্ছ হয়ে তার দৌড় দৌড় আর দৌড়। ছুট ছুট ছুট আর ছুট। এই দৃশ্য বড়োই চেনা ছিল কলকাতা নামের শহরে। কলকাতার প্রায় সব নামি বাজারের পাশেই তখন ঝাঁকড়া পাতাময়, ডাল সমৃদ্ধ গাছেরা। পোক্ত আর পলকা— দুরকমেরই তরুশাখা। অশ্বত্থ, বট, পাকুড়, নিম— এইসব গাছের ডালে ডালে পাখিরা, পাখিদের নীড়। কাক, চিলেদের বাসাও। সেই বাসার ভেতর মাংসখোর, অতি শক্তপোক্ত পাখিটি। কলকাতার আকাশে তখন বাজ, শকুনও অনেক। খাসি-পাঁঠার মাংস দোকানের সামনে রাস্তার কুকুর, চিল, কাক ইত্যাদির ভিড় সর্বক্ষণ ছাঁট মাংস ও চর্বির লোভে। পাঁঠা-খাসি কাটার পর তা থেকে যে সব ছাঁট বা ছাঁটসাল বেরোয়, তা কিনে নিয়ে গিয়ে কলকেতার বাবুরা তাঁদের পোষ্য বিলিতি চারপেয়েটিকে খাওয়ান, নুন ছাড়া শুধুমাত্র হলুদ দিয়ে ফোটানো ছাঁট-প্রিপারেশনে। আমাদের প্রাত্যহিকতায় নানাধরনের ছাঁট— ছাঁট কাগজ, ছাঁট কাপড়, সবই কাজে লেগে যায়। বরো ম্যাগাজিন হাউজের ছাঁট কাগজ দিয়ে ছোট ম্যাগাজিন— বাই প্রোডাক্ট— সবই এসেছে আমাদের সামনে। সেই কথায় আর বিস্তারিত যাচ্ছি না। ছাঁট কাপড় থেকেও নানা ধরনের জিনিস তৈরি হতে দেখেছি, কাঁধ-ঝোলা, নামাজপাটি, বসার আসন— সবই। কলকাতার মেটেবুরুজ বা কোনো কোনো দর্জিপাড়ায় যেখানে যেখানে ইসলাম ধর্মের মানুষ ওস্তাগার বা কারিগর বেশি, সেসব জায়গায় এই নামাজপাটি তৈরির ব্যাপারটা অতি মশহুর— প্রসিদ্ধ।

আরও পড়ুন
শিবাদাদু, শান্তি-স্বস্ত্যয়ন, বাহিন

বিশ্ব ইজয়েমায় গিয়ে দেখেছি কীভাবে বি-ই-শা-ল চট ও ছিট কাপড় এনে পেতে দেওয়া হয় সেই ইসতেমা বা ইজতেমা যেখানে হচ্ছে, সেখানে। সাধারণত এসতেমা, ইজতেমা বা ইসতেমা হয় খোলা মাঠে। সেখানেই পৃথিবীর নানা কোণ থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা আসেন অংশ নিতে। তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে মাঠের ভেতর বড়ো করে চট ও কাপড় পাতা। এক পাশে রান্নার আয়োজন, মাঠের ভেতরে। খাওয়ার ব্যবস্থা। খাওয়ার জল, হাত ধোয়ার জলের জায়গা। সে এক তিন দিন তিন রাতের মহা অনুষ্ঠান। আমি নিজে হাওড়াতে বিশ্ব এসতেমা, ইজতেমা বা ইসতেমায় গেছি আমার ইসলাম ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের সজ্ঞে। তা নিয়ে আমার আখ্যানে অনুপুঙ্খ বিবরণ আছে।

প্লাস্টিকের গ্লাস, প্লাস্টিকের তৈরি জলের বদনা, থার্মোকোলের থালা, প্লাস্টিকের থালা— সবই আছে। এত বৃহৎ একটি ধর্মীয় সমাবেশ কিন্তু কোথাও এতটুকু বিশৃঙ্খলা নেই। ইজতেমা বা ইসতেমা শেষ করে অনেকেই বেরিয়ে পড়বেন চিল্লায়। এক চিল্লা মানে চল্লিশ দিন। এই চিল্লায় যাওয়া তবলিগ জামাতের সঙ্গে। জামাতের প্রধানকে বলা হয় আমির সাহেব। তিনিই পরিচালনা করেন তাঁর এলাকার জামাতিদের। মসজিদে মসজিদে, মার্কাসে মার্কাসে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা। মূলত ইসলাম ধর্মের প্রচারে আসেন তাঁরা। এক চিল্লা, দুই চিল্লা, তিন চিল্লা— এভাবে মাসের পর মাস বাইরে— বাড়ির বাইরে থাকেন তাঁরা, ঘর-সংসার-পরিবার, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছেড়ে।

সাধারণভাবে কোনো মসজিদে থাকলে পরে তবলিগ জমাতের সদস্য এবং আমির সাহেব সন্ধ্যার পর বেরিয়ে স্থানীয় চায়ের দোকান বা অন্য কোথাও, যেখানে যুব জমায়ত হচ্ছে, কমবয়সীরা বসে আছেন, আড্ডা-গল্প, পান-বিড়ি-খৈনি-গুটকা-পানপরাগ-সিগারেট চলছে, এলাকাটি অবশ্যই ইসলাম ধর্মাবলম্বী প্রধান, তো সন্ধ্যার আধো আঁধারি অথবা উজ্জ্বল আলোর ভেতর পাড়ার মসজিদে আসা আমির সাহেব সেই চা-দোকান বা তেলেভাজার দোকানে এসে বেঞ্চে বসে তেলেভাজা— আলুর চপ, বেগুনি, ফুলুরি, পেঁয়াজি, কুমড়ি, আলুবড়ার রসগ্রহিতাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজের দু হাত দিয়ে কোনো একজনের এক হাতের পাতার ওপর নিজের দু হাতের পাতা ডুবিয়ে দিয়ে বললেন, ভাই সাহেব মুসলমানের ছেলে তো, মসজিদে আসা হয় না, নাকি হয়? 

অনেকেই— এই চা দোকানে বসা তেলেভাজাসেবী— তেলেভাজার গ্রাহকদের অনেকেরই নিয়মিত যাওয়া হয় না মসজিদে— ফজর, আশর, মাগরিব, এশা, জোহর সহ রোজকার পাঁচওয়াক্ত নামাজ আর ঈদের আগে রমজান বা রমযান মাসে— মাহে রমযানে কেউ কেউ তারাবির নামাজও পড়েন, মোমিন মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত মহম্মদ-র মুলাল্লাহাসলাম বারো মাস তারাবির নামাজ আদায় করতেন, বারো মাস, শুধুমাত্র রমজান বা রমযান মাসে নয়। ফজর, মাগরিব, জোহর, আশর, এশা— পাঁচ ওয়াক্ত অনেকেই পড়তে পারেন না, নানা কারণে। তো সে যাই হোক, সেই সব ইসলাম ধর্মাবলম্বী যুবজনেদের ভাইসাহেব বলে সম্বোধন— আহ্বান তারপর তাঁকে বলা, মসজিদে আসুন না ভাই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন। দ্বীনের কাজ করুন। আখেরিয়াতের কাজ করুন। দু দিনের, কেবল দু দিনের মাটি-ময়লার জিন্দগি। আসুন না ভাই, আসুন মসজিদে। নামাজ আদায় করুন, তারপর অনেক ভালো ভালো, শিক্ষিত বক্তা এসেছেন, তাঁদের কথা শুনুন। তাঁরা দ্বীনের কাজ করা বিষয়ে, আখেরিয়াতের কাজ বিষয়ে কী কী বলেন, শুনুন। 

মসজিদে মসজিদে মার্কাসে মার্কাসে তবলিগ জামাতের লোকজন আসেন সেই জামাতের আমিরসাহেব থাকেন, নেতৃত্বে। একই থালায় বসে তাঁরা আহার সারেন। তবলিগ জামাতে থাকেন দেশবিদেশের মানুষ, কখনও কখনও। তাঁরা ইসলাম ধর্মের প্রচারক। যতদূর জানি, সুন্নি মুসলমানদেরই তবলিগ জামাত হয়, মূলত। বাংলাদেশে শুনেছি মেয়েদের তবলিগ জামাত হয়। ভারতবর্ষে হয় না। বিশ্ব ইজতেমা বা ইসতেমা— বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। হাওড়ায় দেখেছি ইজতেমার মাঠের বাইরে দাঁড়ানো মাথায় মুসলমানী কায়দায় ঘোমটা দেওয়া মহিলারা এই ময়দানের সীমানার বাইরে যে ঘরবারি, সেখানে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের হাত ধরে অতি কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে। ইজতেমাস্থলে ঢোকার কোনো অনুমতি নেই তাঁদের— মেয়েদের।

বাংলাদেশে প্রায়ই বিশ্ব ইসতেমা বা ইজতেমা হওয়ার খবর পাই, বাংলাদেশের বন্ধু-বান্ধবরা বলেন। তাঁরা কেউ যে খুব তথাকথিত মোমিন মুসলমান নন। তাঁরা অনেকেই নাস্তিক।

তাঁরা আরও যা বলেন, তা হল— বাঙালি হিন্দুরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভিটে, জমি, ঘটি-বাটি, গৃহদেবতা— সব ছেড়ে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নিরামিষ রন্ধনের যে দীর্ঘ গৌরবময় ট্র্যাডিশন, তা শেষ হয়ে যায় প্রায়। বাংলাদেশে বহুবছর সেই নিরামিষ রান্নার পাট— সৌন্দর্যই উঠে গেছে। যে রান্না— নানা ধরনের শাকপাতা, ডুমুর, ধোঁকা, মোচা, ঘণ্ট, চচ্চড়ি, শুকতো, পোড়ে, সব উঠে গেল। বাংলাদেশের ভর্তা একটি অতি উত্তম পদ— সেই রান্নার পদটি নবীন বাংলাদেশের, শুঁটকি মাছ, কাঁচকলা, সবই ভর্তার উপাদান। স্বাদে অপূর্ব। আর একটা কথা জানিয়েছেন আমাদের বাংলাদেশের কেউ কেউ। রোজার মাস— রমজান মাসে যেহেতু ভোরের সেহরি গ্রহণ করা থেকে সধ্যার ইফতার পর্যন্ত সবটাই নির্জলা উপবাস, কেউ কেউ বলেন ফাস্টিং, তখন— মানে মাহে রমযান বা রমজানের এই সময়টায় খাওয়ার দোকান— হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শরবতের দোকান— সব বন্ধ। রেস্তোরাঁ, ইটিং আউটলেট, কফিখানা, চায়ের দোকান, কফি হাউস— সব— সব বন্ধ।

সন্ধ্যার নামাজ— এশার নামাজান্তে তবলিগ জামাতের আমিরসাহেব ধর্মীয় বক্তব্য পেশ করেন মসজিদের ভেতর। সেখানে মুসলিম জাহান তৈরির স্বপ্ন থাকে কখনও কখনও।

সৌদি আরবের সক্রিয় সমর্থন থাকে এই তবলিগ জামাতের পেছনে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অর্থও আসে। আরবের শেখেরা পেট্রোডলারের মদত নেন, এরকম কথাও বলেন কেউ কেউ। এই বয়ানের সত্যমিথা আমার জানা নেই। সুন্নি মজহবের যাঁরা আছেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ভেতর, তবলিগ জামাত তাঁদেরই। আমার ‘ছায়াতরু’ নামের আখ্যানে আছে এর বিশদ বিবরণ। যেমন ‘নিরপেক্ষ’ নামের আখ্যানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ— আর এস এস-এর ক্যাম্প সমাচার। কীভাবে কীভাবে যে এই সব খবর সংগ্রহ করেছি, এখন ভাবি। যাক সে সব কথা।

যাঁরা তবলিগ জামাত বিরোধী, যাঁরা পিরের মুরিদান— শিষ্য, যেমন ফুরফুরা শরিফ, ঘুটিয়ারি শরিফ, সেখানকার ‘হুজুর’, পিরসাবেদের  মুরিদান— শিষ্যরা বলেন, মসজিদ আল্লাপাকের ঘর। সেখানে এসে খাওয়া-দাওয়া, বিড়ি-সিগারেট ফোঁকা, এটা কোন তরিকা! পিরের মুরিদানরা তাঁদের হুজুরদের উরস মানান। ফুরফুরা শরিফ, ঘুটিয়ারি শরিফ, সর্বত্র উরস বা উরশ।

একসময়, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগণা— সর্বত্র পিরতন্ত্র ও পিরবাবাদের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। পিরসাহেবদের মুরিদান— হিন্দু, মুসলমান— সবাই ছিলেন, আছেনও। আমজির শরিফ অতি বিখ্যাত পিরস্থান। যেখানে হিন্দু-মুসলমান সবাই যান। নিজের নিজের মনের বাসনা নিয়ে। এছাড়া ফতেপুর সিক্রিতে সাদা রঙের মকবরা— সমাধিভূমি সেলিম চিশতির। সেলিম চিশতি গুরু ছিলেন আকবরের। তাঁরই আশীর্বাদে নাকি আকবরের আদরের ‘শেখুবাবা’-র জন্ম। সেলিম নামও জাহাঙ্গীরের দিলেন জালানুদ্দিন আকবার। 

সেলিম চিশতি খুব বড়ো সাধক। তবলিগ জামাত বা তবলিগ জমাতের চাপে ক্রমশ ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমবাংলার পিরের মুরিদানরা শুধু নন, আসামে যাঁরা ছিলেন পিরের মুরিদান, তাঁরাও কম সংখ্যার দিকে চলে যাচ্ছেন একেবারে। ক্রমশ ক্রমশ প্রভাববাড়ছে তবলিশ জামাতের। এই বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দেখে থাকেন অনেকেই। প্যান ইসলামিক পলিটিক্স। এর পেছনেও কী সত্যমিথ্যা আছে, আমি বলতে পারব না।

ফলে বিশ্ব ইসতেমা বা বিশ্ব ইজতেমা, তবলিগ জমাত— সকলের ভেতরেই চেষ্টা করেছে ঢোকার, নিজের— নিজস্ব অনুসন্ধিৎসা থেকে। জিজ্ঞাসা, জিজ্ঞাসা, প্রবল জিজ্ঞাসা। সেই জিজ্ঞাসার ভেতর দিয়েই বলা যেতে পারে ক্রমযাত্রা, ক্রমাগত যাওয়া।

Powered by Froala Editor

Latest News See More