মুছে যায়?— ৫১
আগের পর্বে
ঘোর অমানিশার প্রায় শেষ যামে শিবাভোগ দিতেন শিবাদাদু। কালী আরাধনা শেষ হলে নতুন কাঁসারের বাসনে করে দেওয়া হত শিবাভোগ। ভাত, খিচুড়ি, শুক্তো, পাঁচ রকম ভাজা, শোল মাছ, ব্যঞ্জন হিসাবে বোয়াল মাছ এবং বলি দেওয়া ছাগমুণ্ডটি রান্না করে দেওয়া হত আলাদা আলাদা কাঁসারের বাটিতে। সঙ্গে থাকত কারণ জল। শেষ যামে গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যদের জঙ্গলে সেই ভোগদান করতেন শিবাদাদু। তাঁর ডাক শুনে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসত দু'জোড়া শ্বেত শৃগাল। সেই বন কেটে বাড়ি হয়ে যেতে বন্ধ হয়ে যায় শিবাদাদুর শিবাভোগ দেওয়ার রীতিও। তারপর...
শিবাদাদু— শিবঠাকুর দাবি করতেন তাঁর তান্ত্রিক সংগ্রহে শাকনি বা শাঁকনি সাপের মালা আছে। শাকনি সাপের মালা মানে শাকনি বা শাঁকনি সাপের হাড়ের মালা। এই মালা তান্ত্রিক ক্রিয়ায় লাগে। তাছাড়া শাকনি বা শাঁকনি সাপের মালা পরে থাকলে নাকি সাপ আসে না, এমন বিশ্বাস।
কেন সাপ আসে না? না, দুমুখো শাকনি সাপ নাকি সাপ খায়। তার গায়ে সোনালী কালো চক্র। দু মুখো সাপ প্রকৃতি আমাদের দেয়নি। পরে নানা বিষয়ে নানা লেখা পড়তে পড়তে বুঝেছি এই সত্যটুকু।
শাকনি বা শাঁকনি সাপকে নাকি শঙ্খিনী সাপও বলা হয়। কোচবিহার জেলায় দোলন নদীর পাড়ে স্যাঁতস্যাঁতে জলা, ঝোপ জঙ্গলের ভেতর শঙ্খিনী সাপ। হিলহিলে, ক্ষিপ্র, চতুর। শিবাদাদু এই সর্পমালিকাটি নিয়ে আসেন পূর্ববঙ্গ থেকে। তাঁর কাছে নরাস্থির মালা— মানুষের হাড়ের মালা। পাঁচটি মাথার খুলি— নরমুণ্ড— নর করোটি ছিল তাঁর কাছে। সেইসঙ্গে কামরূপ কামাখ্যার থেকে অম্বুবাচির সময়কালে নিয়ে আসা কাপড়ের টুকরো। শিবাদাদু বাহিনের কথা, সেই অতিকায় বৃক্ষ, তার ডালে-পাতায় সাপ আর সাপ, যে কথা আগে লিখেছি, সেই সর্পবৃক্ষের কথা বলেছেন বহুবার।
তারাপীঠেও একসময় প্রচুর সাপ। সাপ আর সাপ। ষাট দশকে দ্বারকা নদীর ওপর ব্রিজ হয়নি। তারাপীঠ মানে বামদেব, নগেন কাকা। বি-ই-শা-ল দাহভূমি— শ্মশান। আছে নানা কুহক ও রহস্য। আশির দশকে সেখানে বাকসিদ্ধ শঙ্করবাবাবকে দেখি। তেমন লম্বা নন, গালে দাড়ি, মৌনই থাকতেন তিনি। মাঝে মাঝেই নেমে যেতেন নদীতে, ছুটে গিয়ে। কলকাতা থেকে যাওয়া বাঙালি, মারোয়াড়িরাও অনায়াসে তাঁর কাছে সাট্টা বা হাঁড়ি খেলার লাকি নম্বর, যে নম্বর ধরলে টাকা উঠবে, সেই নম্বর বলিয়ে নিতে চাইতেন। হাঁড়ি খেলা হত কলকাতার বড়বাজারের মধ্যে। তাকে হান্ডিখেলাও বলতেন কেউ কেউ। তো সেই শঙ্করবাবা কিছুমিছু একটা নম্বর বলে দিলেই নাকি একদম জয়জয়াকার। সেই নম্বর সাট্টার নম্বর— পাত্তি সে পাত্তি, পাত্তি সে ফিগার, জুড়ি ইত্যাদি প্রভৃতি মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আর মিলে গেলেই রাশি রাশি টাকা, টাকা যেন আকাশে ওড়ে, তাদের ধরে নিতে পারলেই হল।
আরও পড়ুন
শিবাভোগ ও সাদা শেয়াল
শঙ্করবাবার গায়ে ঘোর শীতে কোনো মারোয়াড়ি ভক্ত দামি শাল চাপিয়ে দিলে, তিনি মুহূর্তের মধ্যে সেই শালটি নিয়ে দিয়ে দেবেন অন্য কারওকে। অবলীলায়। কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না রেখে। খর্বকায়, মানে তেমন লম্বা নন একাব্রেই, গালে দাড়ি, সামান্য ইন্দ্রলুপ্তি— টাক, মাথার সামনের দিকে। পুরো ছবিটা ভাসতে থাকে চোখের সামনে। যখন তখন দুদ্দাড় করে নেমে যান, দ্বারকায় বসে থাকেন। তারাপীঠে জীবৎকুণ্ড আরও একটি অলৌকিক মিথ-সমেত জলাশয়। জীবৎকুণ্ডের কথা আপাতত তোলা থাক।
আরও পড়ুন
শিবাদাদু, শান্তি-স্বস্ত্যয়ন, বাহিন
শিবাদাদুর শাকনি বা শাঁকনি সাপের মালা আমি দেখেছি। তিনি দেখিয়েছেন আমায় তাঁর স্নেহধন্য ‘ছেমরি’-র সন্তান হিসাবে। শাকনি সাপের সেই মালা, মানে শাকনি সাপের হাড়ের সেই মালা, খানিকটা যেন অফ হোয়াইট কালারের।
আরও পড়ুন
অম্বুবাচী, অমাবতী, আমাবতী
শিবাদাদু বা শিবঠাকুর যে খড়্গে পাঁঠার শিরোচ্ছেদ করতেন, সেই বলির অস্ত্রটি ১৯৭০ সালের আগেই বালি থানা থেকে নোটিশ দিয়ে সিজ করা হয়। পুলিশ নিয়ে গেল খড়্গ। তার সঙ্গে সঙ্গে নোটিশ দিয়ে, লোক পাঠিয়ে যাদের যাদের বাড়ি সিঙ্গল ব্যারেল, ডাবল ব্যারেল গান— একতলা ও দোতলা বন্দুক, সেইসঙ্গে রাইফেল, এয়ারগান, রিপিটার আর লাইসসেন্স করানো বড়ো সোর্ডও।
আরও পড়ুন
ষাইট ষষ্ঠী ষাইট…
কারণ হিসাবে বালি থানা জানাল চারপাশে নকশালপন্থীরা বাড়ির বন্দুক ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে গণমুক্তি ফৌজের হাতে তুলে দেবে বলে, কারণ চারু মজুমদার স্বপ্ন দেখিয়েছেন গণমুক্তি ফৌজের— পিএলএ-র। সত্তরটি রাইফেল আর দুশোটি পাইপগান নিয়ে তৈরি হবে সেই পিপলস লিবারেশন আর্মি। বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে পাঁচিলে পাঁচিলে লেখা হচ্ছে সেই বার্তা, লাল রঙে, কালো আলকাতরা— কোলতার আর শিরিষের আঠা ফুটিয়ে নিয়ে তারপর তার সঙ্গে ‘রবিন ব্লু’ মিশিয়ে। সাদা কলি চুন দিয়ে চুনকাম করে তার ওপর ওপর বিপ্লবের অক্ষরনামা।
বালিতে— হাওড়া জেলার বালিতে, যাকে ঠাট্টা করে ‘গাঁ’, ‘বালিগ্রাম’ বলতেন কেউ কেউ সেখানে পাশ্চাত্য বৈদিক পরিবারে পরিবারে বলির খড়্গ ছিল বহু বাড়িতেই। খড়্গের গায়ে চোখ আঁকার কথা তো আগেই বলেছি। সেই সঙ্গে নির্মাতার নাম।
শিবাদাদুর বাড়ির যে খড়্গ যা ঝুলত তাঁর পুজোর ঘরের দেওয়ালে, তেমনই গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যদের বাড়িতে ছিল বলির খড়্গ এক সময়। এছাড়াও ফেলু ভট্টাচার্য, দুলাল ভট্টাচার্যদের বাড়িতে ছিল বলিদানের খড়্গ।
কালীঘাটের কালীমন্দিরে বলি করাতেন রবি— তাঁর বাবাও ছিলেন ঘাতক। রবির বাবা খুব কালো, মাথাভর্তি কাঁচাপাকা কোঁচকানো চুল। উল্টো করে আঁচড়ানো। চওড়া কপাল। রবির বাবা বেশ রোগা, ছেঁটো ধুতির ওপর গামছা জড়ানো। সেই গামছায় রক্তের দাগ— ছাদ রক্ত।
রোগা শরীরের সেই মানুষটি ছাগল বলিতে— বলিদানে সিদ্ধহস্ত। রবির চেহারাটি তাঁর বাবার একেবারে বিপরীত। বলিদানের সময় টেনে বাঁধা ধুতি, বেশি নীল দিয়ে কাচা। ওপরে একটি স্যান্ডো গেঞ্জি। সেটিও কাচা অতিরিক্ত ‘রবিন ব্লু’ বা দানাদার নীল দিয়ে।
রবি কালীপুজোর রাতে লম্বা টিনের বাক্স নিয়ে শ্যামা কালীপুজোর রাতে কালীঘাটের কালীমন্দিরে বলিদান কর্মের জন্য আসত। এই সব রামদা— রামদা বা বগি দাওয়ের গায়ে চোখ আঁকা, ভুরু সমেত। রবি বা রবির বাবা— এঁরা কেউই ইস্পাতের খড়্গ দিয়ে বলি দান করতেন না, কালীমূর্তির সামনে, কালীঘাটের কালী মন্দিরে। শ্যামাপূজার রাতে কালীঘাটের কালীমন্দিরে উৎসর্গ করা পাঁঠার বলিকর্ম করবেন বইলে সকারণটর। সেই কারণ সেবার গন্ধ ক্রমবিস্তৃত বাতাসে। তখনও কুণ্ড পুকুরের তথাকথিত সংস্কার হয়নি কালীঘাটের। মন্দির সংলগ্ন সেই মন্দিরেই নাকি পড়েছিল দেবী অঙ্গ। হস্তাঙ্গুলি। যা এখন প্রস্তরীভূত। তাঁর মহাস্নান করানো হয় নাকি দুচোখে সাতফেত্তা কাপড় বেঁধে। মানে যিনি স্নান করান সেই দেবী অঙ্গকে, তাঁর দুচোখেই এই বাঁধন।
রবিরা বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষ। কালীঘাটের কালীমন্দিরের কাছেই অতি বিখ্যাত বাগদি পাড়া। সেখানে নেশার আয়োজন অবারিত। হতদরিদ্র মানুষজন। কালী বাড়ির বলি হওয়া বড়োগলা সন্থ, ছাল ছাড়ানো পাঁঠার মুড়ো, চামড়া তুলে নেওয়া পা— টেংরি। যার জুস খুবই উপকারি বলে খেতেন ক্ষয়রোগী, সূতিকা রোগ আক্রান্ত নারী, সম্পন্নরা তাঁদের পরিবারের পোয়াতি খালাস হওয়া নারীদের দিতেন এই টেংরির জুস। সামান্য নুন হলুদ ও সামর্থ থাকলে সামান্য মাখন দিয়ে। না হলে সর্ষের তেল। খেলোয়াড়, ব্যায়ামবিদ বা ব্যায়ামবীররা খেতেন টেংরির জুস। এই বাগদি পাড়াতেই বিক্রি হত খোলোমাজা করা মাংস। যিনি তাঁর মানতের পাঁঠাটিকে বলি করালেন, তাঁর মুণ্ডহীন উৎসর্গীকৃত ছাগলের— পাঁঠার ছাল ছাড়িয়ে মাংস বার করার সময় পাঁচ ছ সের মাংস দেওয়া পাঁঠাটির থেকে অনায়াসে আধসের মাংস ‘খোলো মাজা’ পদ্ধতিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হত পাঁঠার মলভাণ্ডে। তারপর পাঁঠার নাড়িভুঁড়ি, গুয়ের নাড়ি— নাদির নাড়ি, পায়ের টুকরো— অসব নিয়ে নিতেন তাঁরা। বলির সলিড মাংস চলে আসত। কালীঘাটে এই খোলোমজা আকরে বলির মাংস তুলে নেওয়া একটি অতি প্রাচীন পদ্ধতি। ১৯৬০-৬১ সালে একটি কালো, নিখুঁত অজের দাম আশি থেকে একশো টাকা। যার থেকে পাঁচ ছসের মাংস হবে। কালীঘাট মন্দিরের গায়েই ছাগলহাটা। সেখানে গিয়ে সুবিধা, পছন্দ ও ট্যাঁকের জোর অনুযায়ী বলিদানের ছাগল কেনার ব্যবস্থা।
বলিদান কর্মের সময় ঢাকি, ঘাতক, যিনি ছাগকে টেনে ধরে যূপকাষ্ঠে, সকলের আলাদা আলাদা পয়সা। আগে থেকে কুপন কাটাতে হয় সেদিন পালাদারের কাছ থেকে, অন্তত কালীপুজোর রাতে। মাথিমাশুলের হিসেব আছে একটা। গলাসমেত মুণ্ডটি পান পালাদার বা যিনি পালা কিনেছেন। কালীঘাট কালীমন্দিরের মূল পালাফার হালদাররা। আর তাঁদের দৌহিত্র বংশ মুখোপাধ্যায় বা মুখার্জিরা। অমিয় হালদার, গুরুপদ হালদার ছিলেন হালদার বংশের নাম করা মানুষ। অমিয় হালদার যতদিন বেঁচে ছিলেন, মানে যতদিন চলাফেরা করতে পারতেন ঠিক করে, ততদিন টাটকা রসগোল্লা এনে খাওয়াতেন কালীমূর্তিকে। গুরুপদ হালদার গ্রন্থপ্রণেতা। নিন্দুকে বলে, তিনি নাকি ঘোস্ট রাইটার বা পণ্ডিতদের অর্থের বিনিময়ে রেখে বই লেখাতেন। সত্য, মিথ্যা বলতে পারব না।
নিন্দুকরা এও বলে, কালীঘাটের কালীমূর্তি আসলে কালো গাই। কালো গরু দুইলে মিষ্টি দুধ। আর কালী দুইলে ঝন-ঝনাৎ পয়সা, টাকা, সোনা-রুপো, হিরের গয়না। যার যেমন মানত আর কি! দামি দামি বেনারসি, সিল্ক ও অন্যান্য শাড়ি। সঙ্গে পাশাপাশি লালপাড়, কোরা, অর্ডিনারি শাড়ি এবং শাঁখা-নোয়া বা কোরা শাঁখা আছে।
এইসব ‘প্রসাদী’ শাড়ি আবার বিক্রি হয়। কেনেন হিন্দু গৃহস্থ। বিক্রি করেন সেদিনের পালাদার। মুখার্জি বা মুখোপাধ্যায়রা, যাঁরা হালদারদের দৌহিত্র বংশ, তাঁদের মধ্যে অলক মুখোপাধ্যায় ছিলেন খুবই রসস্থ মানুষ। তিনি প্রখ্যাত লেখক ও কালীসাধক কালিকানন্দ অবধূতের খুব ঘনিষ্ঠ জন ছিলেন। কালিকানন্দ অবধূত— যিনি মরুতীর্থ হিংলাজ, হিংলাজের পরে, ফক্কড় তন্ত্রম, উদ্ধারণপুরের ঘাট, নীলকণ্ঠ হিমালয়, দুরিবৌদি, উত্তরণপুরের ঘাট-সহ বহু গ্রন্থের লেখক, খুব বিক্রি হত বই তাঁর একসময়ে। আমাকে মিত্র ও ঘোষ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গজেন্দ্রকুমার মিত্র বেশ কয়েকবার বলেছেন, কী তোরা ‘বেস্টসেলার, বেস্টসেলার’ বলিস! অবধূতের নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে, এটা একটা কাপড়ে লিখে কলেজস্ট্রিটের মিত্র ও ঘোষ কাউন্টারে টাঙিয়ে দিলেই ব্যাস, লোকের— মানে অবধূতের বই ক্রেতাদের দীর্ঘ দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। ভিড়। বাইন্ডিংখানা ঝাঁকামুটের মাথায় দিয়ে দিয়ে বই দিতে দিতে ক্লান্ত। সেটা হয়ত ষাটের দশক। বহ্নিবন্যা, পাঞ্চজন্য, কলকাতার কাছেই, আয়নার দাঁত, পৌষ-ফাগুনের পালা, সাধুসঙ্গ প্রভৃতি বহুগ্রন্থের জনক গজেন্দ্রকুমার মিত্র, মিত্র ও ঘোষের মিত্র ও ঘোষের দফতরে ইজিচেয়ারে আধশোয়া হয় এইসব কথা বলতেন।
অলক মুখার্জি মাঝে মাঝে কালীঘাটের ১৫ বি ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিট মাতৃকাশ্রম প্রণবসংঘে আসতেন। এই আশ্রম প্রণবানন্দ পিতাজি মহারাজ ও সন্ন্যাসী সাহিত্যিক তারাপ্রণব ব্রহ্মচারীজিদের। ব্রহ্মতন্ত্র ঘরানার এই আশ্রম। বশিষ্ঠানন্দ, ব্রহ্মানন্দ, সচ্চিদানন্দ পরমহংস, প্রণবানন্দ পিতাজি মহারাজ, তারাপ্রণব ব্রহ্মচারীজি।
অলক মুখার্জি বলেছিলেন কালিকানন্দ অবধূতের স্কচ হুইস্কির বোতল মুখে ঠেকিয়ে চক চক চক চক করে পানের কথা, কালীঘাটের কুণ্ডপুকুরের ধারে। একবিন্দু জল, সোডা ওয়াটার বা পাতিলেবুর রস নেই। একেবারে র।
হুগলীর চুঁচুড়ায় গঙ্গার পাড়ে কালিকানন্দ অবধূতের বাড়ি। একেবারে বাড়ির গায়েই গঙ্গা। অবধূত তখন নেই— চলে গেছেন কয়ক বছর। এই বাড়িতে তাঁর পুত্র অমলবাবু, অমলবাবুর স্ত্রী, তাঁদের সন্তান আছেন। আমাকে কালিকানন্দ অবধূতের বাড়ি নিয়ে গেছিলেন ‘সংকেত’ পত্রিকার সম্পাদক ও গল্পকার প্রবীর রায়চৌধুরী। প্রবীর ‘সংকেত’ পত্রিকার বেশ কয়েকটি পরিশ্রমী ‘কাজ’ প্রকাশ করেছিলেন। তার মধ্যে একটি কবি রমেন্দ্র কুমার আচার্য চৌধুরী সংখ্যা ও গদ্যকার কার্তিক লাহিড়ী সংখ্যা।
অবধূত চুঁচুড়ার যে বাড়িতে ভৈরবীকে নিয়ে থাকতেন, সে বাড়িতেই হত তাঁর অতি বিখ্যাত কালীপূজা। কথাকার গজেন্দ্রকুমার মিত্র গেছেন সেই কালী আরাধনা উৎসবে। দীপান্বিতা কালীপুজো, কার্তিকী অমাবশ্যায়।
শোনা যায় অবধূত প্রথম জীবনে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। পরে ব্রিটিশ গোয়েন্দা ও পুলিশের চোখ এড়াতেই তিনি সন্ন্যাস নেন, তন্ত্রপথে। বাংলা সাহিত্যে অলৌকিকের সঙ্গে বীভৎস রসেরও প্রবক্তা তিনি, বাংলা সাহিত্যে। হিমালয়ের কোণে কোণে, অতি দুর্গম হিংলাজে পৌঁছে গেছেন তিনি।
চুঁচুড়ায় সেই গঙ্গারঘাটে অনেক অনেক দেশী সারমেয়। অনেকেই মনে করেন এইসব সরমা-সন্তানরা অনেকেই হয়তো অবধূত পোথিতদের বংশধারা। সত্যি, মিথ্যা বলতে পারব না। তবে কালিকানন্দ অবধূত ও ভৈরবী অনেক অনেক কুকুর পুষতেন। আর কি আশ্চর্য, তারা তো বেশিরভাগই কৃষ্ণবর্ণের।
কালিকানন্দ অবধূত ও তাঁর তান্ত্রিক পূজা-আরাধনা বিষয়ে ছড়িয়ে আছে নানা কাহিনী। সেইসব বিবরণে নয় পরে কখনও আসা যাবে। আপাতত এটুকু বলেই শেষ করব, পাঁঠা বলি দিতে গেলে যদি বলির ছাগল— পাঁঠা বেধে যায়, তাহলে সেই অজ শরীর ১০২৮ টুকরো করে তারপর সেই মাংস দিয়ে হোম করা হয়। যজমান বা গৃহস্থর মঙ্গল করার জন্য। কারণ বলি আটকে যাওয়া বা বেধে যাওয়া নাকি অতি অমঙ্গলকর।
বলি দেওয়া পাঁঠার ছালটি ঘাতকের প্রাপ্য থাকে। সেটিও বিক্রি হয় ঢাক, ঢোলের ছাউনি তৈরিতে বা অন্য কোনো কাজে। কাঁচা চামড়া পাকা করতে লাগে নানা রাসায়নিক। এই গোট স্কিনে জুতোও বেশ ভালো হয়। কোথাকার চামড়া যে কোথাও যায়?
ঈদ উজ্জোহার— কোরবানি বা কুরবানি ঈদের চামড়া— ‘খাল’ ব্যাচা টাকা আগে আগে ফেতরা বা ফিতরায় যেত। গত ২৫-৩০ বছরে এই কুরবানির খাল-চামড়া— ছাগল, খাসি, গরু, উট ইত্যাদি প্রভৃতির চামড়া বিক্রি করা টাকা মাদ্রাসার— তা খারিজি হতে পারে, সরকারি হতে পারে, সেখানে দান বা ফিতরা অথবা ফেতরা হিসাবে দান করা হয়। আর এই দানকে নেকি বা পুণ্য বলে মানেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটা অংশ— যাঁরা তবলিগ জামাত করেন।
Powered by Froala Editor