মুছে যায়? – ৫
আগের পর্বে
কলকাতা আর তার আশেপাশের মফস্বলে ল্যাম্পপোস্ট বা দেয়ালে সাঁটা থাকে নানান পোস্টার। সে-সময়ও থাকত। ছিল ‘ঋতুবন্ধে অশোকা’, তিল তেল, ‘হাতকাটা তেল’, ‘জালিম লোশন’, ‘সজনী ফার্মাসি’-র নানান বিজ্ঞাপন। আলো-আঁধারে ছিল রজঃদর্শন, ঋতুকাল, ঋতু নিবৃত্তি। ঋতুদর্শন বা ‘মাসিক’-কে বলা হয় ‘নোংরা হওয়া’। নিষেধতন্ত্র অশুচি দেগে দিত মহিলাদের। সেই ষাট বা সত্তরের দশকে তখনও আসেনি স্যানিটারি ন্যাপকিন। ফলে থাকত সংক্রমণের সম্ভাবনাও। বারবার ফিরে আসত ‘ঋতুবন্ধে অশোকা’ সেই হ্যান্ডবিলটি। প্রশ্ন, ঋতুবন্ধ কেন? সেটি কি গর্ভপাতের কোনো ওষুধ? গর্ভ হলে তো ঋতুবন্ধ স্বাভাবিকই।
রাস্তার ধারে, সে বড় রাস্তা হতে পারে, কিংবা গলিপথের মুখ, সেখানে একটু যেন টং চেহারার পান-বিড়ির গুমটি। 'গঙ্গাজল' মার্কা বা অন্য কোনো ব্র্যান্ডের কোলতার-কালো আলকাতরা মাখানো, অথবা ব্ল্যাক জাপান রঞ্জিত টিন দিয়ে ঘেরা তিনদিক। সামনেটা খোলা। সেখানে, সেই মাচা সদৃশ উঁচু, সরু টংঘর যেন অনেকটা, তেমন চেহারার গুমটি ঘরে একজন।
ষাট, সত্তর, এমন কি আশিতেও তাঁর পরনে ধুতি, কখনও ছেঁড়াফাটা গেঞ্জি, সেই গেঞ্জির বুক খদির রস-গোলা খয়েরের দাগে ছাপময়। দোকানে সাজানো - প্যাকেটে প্যাকেটে 'চারমিনার', 'পাসিং-শো', 'নম্বর টেন', 'সিজার্স-কাঁচি', 'পানামা'। সেই সঙ্গে দোকান বা গুমটিটি যদি আর একটু সমৃদ্ধতর হয়, তাহলে 'উইলস', 'উইলস নেভিকাট', 'ক্যাভেন্ডার', 'লেক্স', 'মেপল', 'রেড অ্যান্ড হোয়াইট', 'ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট'।
হায়দ্রাবাদের অতিবিখ্যাত চারমিনার গেটের ছবি হলদের ওপর ছাপা 'চার মিনার' প্যাকেট। ভেতর রাংতা নেই। কড়া। দুটো পাঁচ নয়া পয়সা। প্যাকেট- যাতে দশটা থাকে, ধূম্রকাঠি, তার দাম তিরিশ নয়া পয়সা। এটা ষাট দশকের হিসেব।
এই সব পান বিড়ির গুমটিতে 'রয়্যাল', 'কুল', 'পালমল', 'বেনসন অ্যান্ড হেজেস', 'মার্লবরো' বা 'ম্যাক্রোপোলো' থাকে না। থাকার প্রশ্নই নেই। 'ক্যামেল', 'বাম', 'উইন্ডসর' এর প্যাকেট দেখি আরও অনেক পাবে। সেই সঙ্গে 'জেনারেল', ব্লু বার্ড আর চার্লস - সবই আশি-নব্বইয়ের দশকে। 'চার্মস'-এর প্যাকেট খুব স্মার্ট। এটাও উজির সুলতান কোম্পানির, যারা 'চারমিনার' বানাত, প্যাকেট জিনস প্যান্টের এফেক্ট।
আরও পড়ুন
ঋতু, ঋতুবন্ধ – ঋতুসংহার
৭০-৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ, তারপর স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ তৈরি হলে 'মুক্তি' সিগারেটের প্যাকেট, সেই সঙ্গে 'কেয়া' সাবান। পরে ঢাকায় গিয়ে দেখেছি, দামি 'হালাল' সাবানের রমরমা। তবে 'কেয়া'-ও আছে।
সত্তর দশকের গোড়াতেই শুনি ইউরোপ, আমেরিকায় নাকি পাওয়া যায় 'লেডিজ সিগারেট' - মেয়েদের জন্য৷
আরও পড়ুন
শুকুত – জিহ্বান্তরে আড়-বেগুন
বলিউডি সিনেমায় মেয়েরা ধূমপান করেন, প্রায়শই। ব্যক্তিজীবনেও। ষাট-সত্তরে তার ছায়াবাণী রূপ দেখেছি। তখনও সিগারেটের প্যাকেট বা খোলের ওপর বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ 'ইনজুরিয়াস টু হেলথ'- এই বাক্যবন্ধ ছাপার বাধ্য-বাধকতা স্বপ্নেরও বাইরে।
সিগারেট ঠোঁটে ঝুলিয়ে সামান্য চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা একটা শিল্প তখন,হলিউড বহু আগেই তা বিশেষ করে রপ্ত করে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের। হামফ্রে বোগার্ট, মারলন ব্র্যা ন্ডো, মার্সেল্লো মাস্ত্রিয়ানি, গ্রেগরি পেক, শন কনোরি - কত নাম আর বলা যায়।
আরও পড়ুন
বর্মা বার্মা বার্মিজ
এই কায়দাটি বঙ্গ ছবিতে চূড়ান্ত রপ্ত করেন উত্তমকুমার। ষাট-সত্তর-আশিতে সিগারেট-মুখে-ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট বাঙালি তথা ভারতীয় মেয়েদের অনেকেরই খুব পছন্দ। বিশেষ করে ধোঁয়া ভেতরে টেনে এনে নাক দিয়ে বার করার কৌশল আর রিং ছাড়া। বাংলা সিনেমায় সিগারাটের ধোঁয়ার রিং হাওয়ায় ভাসান উত্তমকুমারকে আমরা বহুবার দেখেছি, বিশেষ করে সত্যজিৎ রায়ের 'নায়ক' ছবিতে - উত্তমবাবু যখন অরিন্দম।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায় তাঁদেরও সিনেমা শটে বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া বৃত্ত ভাসাতে দেখেছি। সিগারেটের সঙ্গে সিগারেট হোল্ডার - অতি মহার্ঘ, হাতির দাঁত নয়ত মোষের শিঙে তৈরি।
আরও পড়ুন
কাতান ব্লেড হয়ে গেলে
সিগারেট হোল্ডার মনে পড়লেই, সামনে ভেসে আসে হোল্ডারে ধোঁয়া ওগরানো সিগারেট, ড্রেসিং গাউন পরা উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেনের লিপে গীতা দত্তর দত্তর গাওয়া 'তুমি যে আমার' শুনছেন। ছবির নাম 'হারান সুর'। সিগারেট কেস - অতি বাহারি, রূপো, জার্মান সিলভার, এমনকি সোনারও, রাখা থাকত বহু স্বচ্ছল পরিবারে।
চুরুট বা চুরোট পাওয়া যেত না এইসব পান-বিড়ির গুমটিতে।
বার্মা চুরুট আর কিউবান হাভানা চুরুট। চুরুট বারবার নেভে। বহু বাংলা সিনেমায় কমল মিত্র চুরুট এবং পাইপ - দুই খেতেন। তিনি তখন সর্বগ্রাসী পিতৃদেব, হয় উত্তমকুমার নয় সুচিত্রা সেনের। পাহাড়ী সান্যালও খেতেন পাইপ, চুরোট - সিনেমার পর্দাতে। পাইপ খেতেন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, পূর্ণেন্দু পত্রী, দেবেশ রায়। জাঁ পল সার্ত্র ছিলেন পাইপ ও চুরুট অভিলাষী, যেমন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। যোসেফ স্তালিন, উইনস্টন চার্চিল, সকলেরই টোব্যাকো প্রিয়। চে গেভেরা, ফিদেল কাস্ত্রো, তাঁরাও অতি অভ্যস্ত পাইপ, সিগারেট ও সিগার। প্রমোদ দাশগুপ্ত, যতীন চক্রবর্তীদের সিগার বা চুরুট খাওয়ার কথা জানা আছে অনেকেরই।
পাইপের তামাক বলতে 'ভ্যানগগ', 'ফ্লাইং ডাচম্যান', 'প্রিন্স হেনরি', 'উইলস', 'ক্যাপসটেন'। এদের কাউকে কাউকে - মানে তামাকদের সিগারেটের কাগজে ফেলে মুড়ে, থুথু দিয়ে জিভের লালায় কাগজের আঠাটাকে সিগারেট করে, টানতেন অনেকে। তাঁদের যুক্তি ছিল - পাকিয়ে খেলে কম খাওয়া হয়। এই যুক্তির সত্যতা কতটা জানি না। সুন্দর করে পাকানোর জন্য এক ধরণের ছোট, পকেট যন্ত্র পাওয়া যেত এক সময়।
মাঝে - আশির দশকে কাচের 'হুকাম পাইপ' এসেছিল বাজারে। কাচের তৈরি হুঁকো চেহারার এই ধূম্রপান যন্ত্রটিকে ব্যবহার করতে দেখেছি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে। সুভাষদা হুকাম পাইপ টানতেন। এই বস্তুটির পেটের ভেতরে রাখা জলে নাকি তামাক - ধোঁয়ার নিকোটিন দোষ অনেকটাই মেরে ফেলে, এমন দাবি ছিল নির্মাতা ও বিক্রেতাদের। সুভাষদা বিড়িও খেতেন খুব, চেন স্মোকার যাকে বলে।
ষাট-সত্তর দশকেও সিগারেটের টিন ছিল অ্যারিস্ট্রোক্রেসির টুকরো। 'উইলস'-এর টিন ছিল। ছিল টিন বোঝাই 'ক্যাভেন্ডার্স'। 'গোল্ড ফ্লেক'। প্যাকেটের 'উইলস' গাঢ় রূপোলি, তার ওপর তারা ছাপ, ষাটের দশকে মনে পড়ে।
আশির দশকে একটু মহার্ঘ সিগারেটের ভেতর দেখি 'ক্ল্যাসিক', 'ইন্ডিয়ান কিংস'। বিলিতি - বিদেশি সিগারেটের প্রতি আগ্রহ ধূমপায়ীদের যথেষ্ট৷ যেমন 'মার্লবরো', 'বেনসন অ্যান্ড হেজেস', 'রথম্যান', 'ফাইভ ফিফটি ফাইভ' ও ছিল কেতাদারির প্রতীক। রাশিয়ান -মেড ইন সোভিয়েত ইউনিয়ন সিগারেট প্রথম দেখি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি, তার ফিলটারের রঙ শাদা। খেতে-টানতে কুচ্ছিত।
'চারমিনার' সিগারেটকে 'চারুবাবু' বলতেন কেউ কেউ৷ হয়ত বা চেন স্মোকার চারু মজুমদারকে স্মরণ করেই এই উচ্চারণ। নানা ধরণের - বিভিন্ন ছবি ছাপা সিগারেটের ফেলে দেওয়া খালি প্যাকেট কুড়নোর জন্য আমার ছোট মাসির বাড়ি শ্যামপুকুর তেলিপাড়া লেন থেকে হাঁটতে হাঁটতে, হাঁটতে হাঁটতে, খালি সিগারেটের প্যাকেটের সন্ধানে 'দর্পণা', 'রূপবাণী', 'মিনার', 'টকি শো হাউস' হয়ে একেবারে 'গ্রেস' পর্যন্ত।
একটা 'ম্যাক্রোপোলো' সিগারেটের দাম ষাট দশকের শেষে ছিল ষোল নয়া পয়সা। কালো সিগারেট। ধরিয়ে টানলে ভুরভুর করে চকোলেটের গন্ধ৷ তেমনই ছিল 'রয়্যাল'- রয়্যালের দাম কম, ম্যাক্রোপোলোর তুলনায়- একটা পাঁচ নয়া পয়সা। 'কুল' সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ইনহেল করলেই গলার ভেতর ঠান্ডা আবেশ। মেনথল স্পর্শ।
সিগারেটের পাশাপাশি ছিল 'জোড়া বন্দুক' মার্কা বিড়ি, বাবা নাসিরুদ্দিনের বিড়ি, 'বড়দার বিড়ি'। এখন যেমন 'ডানলপ', 'পতাকা' ইত্যাদি। ষাট দশকের প্রায় শেষেও একটা বিড়ি এক নয়া পয়সা। শাদা সুতো, লাল সুতো, কালো সুতো এরকম নানা স্বাদের বিড়ি তখন বাজারে।
সত্তর দশকে বার বার জেলে যাওয়া ও থাকার অভিজ্ঞতাতে দেখেছি জেলখানায় বিড়ি হল ডলার বা পাউন্ডের থেকেও দামি। তখনও ইউরো বাজারে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।
ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর সমরেশদা - সমরেশ বসুকে বিড়ি খেতে দেখেছি। ব্রিফকেসে রুদ্রাক্ষের মালা, বিড়ির বাতিল দেশলাই। ধারণা, বিড়িতে নিকোটিন কম থাকে। অ্যাটাকের আগে দিনে আশিটা সিগারেট খেতেন সমরেশ।
কথা শুরু হয়েছিল পান-বিড়ির গুমটি নিয়ে। সেই পুরনো সুতোর টানেই আবার ফিরি।
গুমটির ভেতর বাইরে একপা ঝুলিয়ে বসা মানুষটির সামনে অবধারিত ব্যাটারি-রেডিও -- ট্রানজিস্টার। তাতে কলকাতা বা গানে বিবিধভারতীর পঞ্চরঙ্গী প্রোগ্রাম। 'জয়মালা', 'বিশেষ জয়মালা', 'মন চাহে গীত', 'ভুলে বিখরে গীত', বাজছে - বাজছেই। ক্লান্তিহীন রেডিও সম্প্রচারে - মহম্মদ রফি, হেমন্তকুমার, মান্না দে, মুকেশ, তালাত মামুদ, জগমোহন(জগন্ময় মিত্র), শ্যাম, সুরাইয়া, শামসাদ বেগল, কে এল সায়গল, পঙ্কজকুমার মল্লিক, গীতা দত্ত, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর, কমল বারোদ, সুমন কল্যাণপুর, সুবীর সেন, উষা মঙ্গেশকর, সারদা। পাশাপাশি রেডিও সিলোন, 'বিনাকা গীতামালা', 'আমিন শাহানি' পেশ কর রহ্যে হ্যায়। 'বিনাকন' টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন। পরে যা 'সিবাকা' হয়ে যায়। এ ছবি ষাটের দশকের, তখনও কিশোর কুমার সেভাবে উঠে আসেননি।
দেবানন্দের লিপে দু একটা বড় জোর গাইছেন কিশোর। আর নিজের লিপে। দেবাবন্দ তখন হেমন্ত কুমার, তালাদ মামুদ(তপন কুমার), মহম্মদ রফি - সকলের গলাতেই লিপ মেলান। কিশোরও আছেন।
কিশোরকুমারের নতুন করে প্রত্যাবর্তন তো 'আরাধনা'-র পর থেকে, রাজেশ খান্নার ওষ্ঠ সঞ্চালনে।
সিগারেটকে 'বার্ডসাই' বলত বাঙালি মধ্যবিত্ত এক সময়। তার সাক্ষী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ও অন্য কারও কারও লেখালিখি৷ পরে সিগারেটের কোড নাম হয় সাদাকাঠি। আরও পরে 'ফোঁকা', 'টানা' সিগারেটকে চাইতেন এই বলে কেউ কেউ 'কাউন্টারটা দিস'।
বড় রাস্তার ধারে বা গলির মুখে যে গুমটির কথা বলেছি, সেখানে বায়রনের সোডা। 'লেমোনেড', 'ভিমটো' ষাটের দশকে৷ 'কোকাকোলা'-ও কখনও কখনও বরফের বাক্সে। ভিমটো ছ’আনা - সাঁইত্রিশ নয়া পয়সা। কোকাকোলা চার আনা পঁচিশ নয়া পয়সা। বায়রনের সোডার বোতলের ভেতর কাচের গুলি। চোঁয়া ঢেকুর আটকাতে, গ্যাস মারতে - মেরে দিতে, সোডা খায়। আবার এই সোডার বোতলই পাড়া ঝাড়পিটে কাজে লাগে। পুলিশের দিকেও দোকান থেকে তুলে এনে ঝাঁকিয়ে - চার্জ। সঙ্গে হাতবোমা, সাইকেলের চেন। চার্জের পর ভেঙে যাওয়া সোডার বোতলের কাচ যেন বুলেট। এইসব গুমটিতে কখনও কখনও শুঁটকো ডাবও। সোডা মিশিয়ে 'অ্যারিস্ট্রোক্রেট' বাঙালি মদ খেতেন। কান্ট্রি লিকার নয়, স্কচ-হুইস্কি-শেরি-শ্যাম্পেন।
পান-বিড়ি-সিগারেটের গুমটিতে লাল চামড়ায়, কখনও কখনও কালো লেদার কেসে মোড়া ব্যাটারি রেডিও - ট্রানজিস্টারের কথা আগেই বলেছি। 'ফিলিপস', 'মারফি', 'নেলকো সোনা'। 'এইচ এম ভি', 'জি ই সি', 'সন্তোষ' আরও অনেক পরে। এল আর বাজার দখল করল সন্তোষ।
গুমটির বাইরের দেওয়ালে নারকেল ছোবড়ায় তৈরি মোটা দড়ির মুখে আগুন। তা থেকেই সিগারেট-বিড়ি ধরানোর আয়োজন। কোনো কোনো গুমটিতে কেরোসিন চিমনির পাশে সরু সরু করে কাটা সিগারেটের খালি প্যাকেট। তা দিয়েই সিগারেটের মুখাগ্নি। তখন চিনা লাইটার পাওয়া যায় 'মেট্রো' গলিতে দাম দশ টাকা। গ্যাস লাইটার নয়, পেট্রোল লাইটার। লাইটারের গায়ে অ্যাঞ্জেল ফিশ, প্রজাপতি, উঁচু উঁচু ঘরবাড়ি। ছবি তো সিনেমায় দেখেছি নায়ক 'জনসন' লাইটারে সিগারেট ধরাচ্ছে দেবানন্দ, নন্দা, সাধনার 'হাম দোনোতে' একটি মিউজিক মাখান লাইটার ধ্বনি, মনে আছে। দেশলাই বলতে তখন 'টেক্কা', 'ব্যাগ', 'হর্সহেড', 'পান'। টেক্কা মার্কা দেশলাইয়ের দাম তিন নয়া পয়সা। এই গুমটি দোকানে পানের মশলা - কিমাম, ছোট এলাচ, বড় এলাচ, লবঙ্গ, পিপারমেন্ট, মৌরি, ভাজামৌরি, চমনবাহার। সিগারেট কিনে মৌরি চান খরিদ্দার কখনও কখনও। একটা সাজা পান তিন নয়া পয়সা। ঝাল পাতা হলে এই দাম। মিঠা পাতা হলে একটু বেশি। গুমটি দোকানে নানা রকম জর্দা - শাহী জর্দা, 'দিলীপের জর্দা' ইত্যাদি। যিনি জর্দা পান খাবেন, তার জন্যে। দুটো বড়, মাজা ভরণের পেটমোটা ঘটিতে ক্কত্থা, খয়ের, খদির গোলা। আর চুন। চুন, খয়ের লাগানোর ডাঁটি পাশেই।
অলংকরণ - প্রণবশ্রী হাজরা
Powered by Froala Editor