নুন ছাল ওঠা/ আলগা ছাল উঠে যাওয়া, ছড়ে যাওয়া/ পশ্চিমবঙ্গ
নুনছাল/ আলগা ছাল/ পশ্চিমবঙ্গ
নুনু-ছাল/ নুনুর ছাল-চামড়া/ পশ্চিমবঙ্গ
উপরি বাদুড়ি যক্ষা
তিন হলে নাই রক্ষা/ প্রচলিত ছিকুলি/ পশ্চিমবঙ্গ
ঘুসকি/ হেফগেরস্থ, ঘরোয়া বেশ্যা, গৃহস্থ গণিকা/ পশ্চিমবঙ্গ
এইসব বাক্যাবলী, যা মটেই তথাকথিত ভদ্রলোকের শালীন উচ্চারণ নয়, জিভ-রাব বা রসনা-স্রাব মাত্র, তার বাইরে একটু বেরিয়ে আসি। খবরের কাগজ— বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র ও তার ভাষা নিয়ে কিছু লেখা, কিছু কথা এইবার। আমি ‘দৈনিক বসুমতী’, ‘যুগান্তর’ নিয়ে বাংলা দৈনিকের অন্দরমহল জানি খুব ভালো করে। আমি মোনোটাইপ, লাইনো টাইপ— সবইদেখেছি ‘দৈনিক বসুমতী’-র প্রেসে— ছাপাখানায়। হট মেটালে কীভাবে কাজ হয়। কীভাবে গরম সিসে— সীসে— লেড দিয়ে তৈরি হয় অক্ষর— অক্ষরমালা— লাইন। হট মেটাল— লাইনো মেশিন, প্রেস ঘরে প্রায়ই ময়লা ডুম, বর্ষাকালে অন্ধকার আরও ঘন। ‘দৈনিক বসুমতী’-র প্রেস সুপারভাইজার জিতেনবাবু, তুলসীবাবু, তুলসীবাবু এসে সম্পাদক প্রশান্ত সরকারের ঘরে ঢুকে বলতেন, কাপি নাই। কাপি নাই। কাপি অর্থে কপি, ছাপার উপযোগী নিউজ বা পোস্ট এডিটোরিয়াল, ‘দৈনিক বসুমতী’ সাময়িকীর গল্প, প্রবন্ধ। ওভার নাইট কপি বলে একটা ব্যাপার ছিল। আগের রাতে সেই কপি বা ছাপার উপাদান দিয়ে দেওয়া হত। প্রতিটি কপির সঙ্গে থাকত কর্নার মার্ক। যাতে কপির— ছাপতে পাঠানো— কম্পোজে পাঠানো ম্যাটার গুলিয়ে না যায়। ধরা যাক কোনো একটা খবরের হেডিং হয়েছে— ‘বন্যায় দুর্গতি চরমে’। কর্নার মার্ক হল ‘চরমে’। কারণে বন্যা বা দুর্গতি দিয়ে অন্য অন্য কর্নার মার্কও হতে পারে এই বন্যাবেলায়— ফ্লাড সময়ে। তাই ‘চরমে’-ই কর্নার মার্ক। সাধারণভাবে নিউজ প্রিন্টের ছোটো, বড়ো প্যাডে খবর লেখা হত, হাতে। ডটপেন দিয়ে লালচে নিউজ প্রিন্টে। ওভার নাইট কপি দেওয়ার জন্য প্রশান্তদা— ‘দৈনিক বসুমতী’ সম্পাদক প্রশান্ত সরকার বারবার বলতেন। কিন্তু বাস্তবে তা প্রায় দিনই হত না। ফলে তুলসীবাবুর দ্বিপ্রাহরিক আর্তনাদ— কাপি নাই। কাপি নাই। তুলসীবাবুর সাদা চুল, মাথা ভর্তি, ছোটো করে ছাঁটা। খাদির মোটা পাঞ্জাবি এলা রঙের। ঢিলে হাতা, হাতা সামান্য গোটানো। খাপি মিলের ধুতি। পায়ে সস্তার চামড়ার চটি। দাড়ি-গোঁফ কামানো নিপাট মুখ। জিতেনবাবুর মাথায় কোঁকড়ানো চুল, পাতলা হয়ে এসেছে, প্রচুর তেল দেওয়া। দাঁত সবই প্রায় ক্ষয়া। প্রেস সুপারভাইজার তিনি। ১৬৬ নম্বর বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ‘দৈনিক বসুমতী’-র প্রেসে তিনি কাঠের চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘন ঘন বিড়ি। গায়ে হাতঅলা গেঞ্জি এবং রঙিন লুঙ্গি। অনবরত কাশি তাঁর— স্মোকিং কাফ। হাঁ করে কাশতেন। ‘যুগান্তর’— অমৃতবাজারে ছিলেন মাধববাবু। আদ্দির পাঞ্জাবি, বাংলা শার্ট, ধুতি, নাকের নিচে গোঁফ। এআইজেইইউ— অমৃতবাজার যুগান্তর এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নটি বামপন্থীদের, মূলত সিপিআই(এম)-এর। বিপরীতে সমিতি জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির পক্ষে। তখন সাংবাদিক-অসাংবাদিক খবরের কাগজের ফোটোগ্রাফারদের দুটি সংগঠন— আইজেএ— ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। আইজেএ বহুদিনের সর্বভারতীয় সংগঠন। মূলত বামপন্থীরা আইজেএ-তে। আইজেএ-র পাল্টা এনইউজেএ। ইন্দিরা গান্ধীপন্থী, শাসক দল জাতীয় কংগ্রেসের পাখার নিচে বেড়ে ওঠে এনইউজেএ। মাধববাবু, সুবোধ বসু, সুশীল রায়, দেবাশিস— সবাই যুগান্তর-অমৃতবাজার এমপ্লয়িজ ইউনিয়নে। জেএইইউ। মাধববাবু ছিলেন যুগান্তর-অমৃতবাজার-এর প্রেস সুপারভাইজার। আর ছিলেন অনিলবাবু। সামান্য ভুঁড়ি, ছিটের— সাদাই মূলত, বাংলা কাটিং শার্ট, ফুলহাতা। রোজ বিকেলে বাগবাজারের অতিবিখ্যাত ও কুখ্যাত তেলেভাজা। বিখ্যাত বললাম এই জন্য, যে তা রসনা-রস উদ্রেককারী বলে। কুখ্যাত বললাম, এর ফলাফল অর্থাৎ নিয়মিত তেলেভাজা গ্রহণ— বেগুনি, ফুলুরি, আলুর চপ, কুমড়ি, পেঁয়াজি, ডালবড়া গ্রহণ মানেই নিত্য-অ্যাসিডিটি, রোজকার ‘গ্যাস’-অম্বল, পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক আলসার। ডিওডোনাল অথবা পেপটিক। অনিলবাবুও এরকম একটা জটিল পেটের রোগে পড়লেন। ভর্তি হলেন আরজি কর-এ। তারপর অপরেশন। দীর্ঘদিনের ছুটি। অনিলবাবু যখন ফিরলেন, তখন তাঁর মেয়াপাতিটি কিঞ্চিৎ চুপসেছে। কিন্তু মাথার সাদা চুল, বেশ ঘন, আর তা উল্টে কমিকস-এর জাদুকর ম্যানড্রেক, গোয়েন্দা রিপ কার্বির স্টাইলে উল্টে আঁচড়ানো। পাট পাট করে বসানো একাবারে, মাথার খুলির সঙ্গে। সেইসঙ্গে ফুলহাত বাংলা কাটিং শার্ট, যা সিনেমায় অভিনীত চরিত্রে উত্তমকুমার, অনিল চ্যাটার্জিরাও পরতেন, অনুপকুমারও। তবে বিশ্বজিৎ বা বসন্তদা— বসন্ত চৌধুরী নন। সৌমিত্রদা— সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে ‘অপুর সংসার’, ‘চারুলতা’ অন্য কয়েকটি ছবিতেও ছিটের ফুলহাতা বাংলা শার্ট। বুক পকেটে একটা, চারটে বোতাম। অনিলবাবু তো পুরনো মফেলের ওয়েস্ট এন্ড ওয়াচ পরতেন, বাঁ হাতে। জেনটেক্স কোম্পানির স্টিলের ব্যান্ড, দশটাকা দামের। আমি ১৯৮৩-৮৪ সালের কথা বলছি। অথবা বিরাশির। বাগবাজারে বিখ্যাত সব চপের দোকান— তেলেভাজার দোকান। আলুর চপ পাঁচ পয়সা। ছয় নয়া পয়সা, পরে বেড়ে। বেগুনি, ফুলুরি এক আনা, মানে চার নয়া পয়সা। আলুরি, কুমড়িও তাই। পেঁয়াজি পাঁচ বা ছয় নয়া পয়সা। ফুলুরি বেসনের, খেসারির ডাল তখন তেলেভাজার দোকানে ফুলুরি বানাতে খুব চলে। এখন— বহু বছরই খেসারির ডাল নিষিদ্ধ। কিন্তু ব্যবহার তো হয় সস্তার হোটেলে, তেলেভাজায়, রেডিমেড বড়িতেও— মুদির দোকান থেকে যে বড়ি আমরা কিনে আনি, প্লাস্টিকের প্যাকেটে বন্দি করে বা লুজ— ডালের বড়ি।
উত্তর কলকাতার অভ্যস্ত বাঙালি মধ্যবিত্ত ঠোঁটে শ্রীতুষারকান্তি ঘোষ সম্পতাদিত ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকাই ‘অমেত্তবাজার’ বা ‘অমত্তবাজার’। অনিলবাবু ‘যুগান্তর’-‘অমৃতবাজার’-এর প্রেস সুপারভাইজার, মাধববাবু আর অনিলবাবু। ছিলেন আরও দু-একজন। ‘দৈনিক বসুমতী’-তে যেমন জিতেনবাবু, তুলসীবাবু ছিলেন প্রেস সুপারভাইজার, সম্ভবত তাঁর পদবী তুলসী দত্ত। প্রশান্তদা— ‘দৈনিক বসুমতী’ সম্পাদক প্রশান্ত সরকার তাঁকে প্রায়সময়ই ‘তুল অ সীবাবু’ বলে সম্বোধন করতেন আর প্রেসে ‘হাত’ মানে কম্পোজিটাররা যাতে চালু রাখতে পারেন, সমস্ত কম্পোজিং সিস্টেম সচল রাখতে পারে, তার জন্যই এই আয়োজন, ব্যবস্থা। জিতেনবাবু, তুলসীবাবুর কথা বলেছি আগেই। জিতেনবাবুর অ্যাসিডক্ষয়া দাঁতের কথাও বলেছি আগে। খুব অ্যাসিডে ভুগতেন, প্রায় সময় জেলুসিল লিকুইড, জেলুসিল বড়ি। চেয়ারে— প্রেস-ঘরে কম্পোজিং সেকশনে সাবেকি, ভারি কাঠের চেয়ারা তিনি নিজের দু পা— দু পা না বলে তাকে ঠ্যাং বলাই ভালো, সুতির লুঙ্গি শোভিত সেই সরু ঠ্যাং, পায়ের গোছ, অথচ ঘোর বিড়িখোর জিতেনবাবু কিন্তু ঘোর শৌখিন। ‘দৈনিক বসুমতী’-র প্রেস সুপারভাইজার হিসাবে তিনি ১৬৬ নম্বর বিপিনিবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে যখন চোকেন, বসুমতী দপ্তরের সহস্র পুরনো কাঠের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে যখন তিনি দোতলায় উঠে আসেন তখন ডান দিকে উপেনবাবুর বড়ো অয়েল পেইন্টংটি শব্দ না করে হাসে। শ্রীরামকৃষ্ণ নাকি বলেছিলেন, গিরীশ থ্যাটার করবে, উপেন কাগজ করবে। উপেনবাবু— উপেন মুখোপাধ্যায়ের ‘দৈনিক বসুমতী’। তার ‘বাঘা’ সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ। যিনি অবলীলায় তাঁর নামটি উচ্চারণ করতেন— হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘষ বলে। ঘোষকে ‘ঘষ’। কলকাতার আর একটি পরমবৈষ্ণব খবরের কাগজের বাড়ির মালিকদের ‘কেস্ট-বিষ্টু’-দের এক জনের নাকি গোমাংসের ব্যবসা ছিল। সেই পরমবৈষ্ণবের কাছ থেকে হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ নাকি ‘খবর ফাঁস করে দেব’— এই ভয় দেখিয়ে ‘মাসোহারা’ টাকা নিতেন। এই খবরের উৎস বাবু কল্যাণাক্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি ‘দৈনিক বসুমতী’-র রবিবাসরীয় দেখতেন। এই খবরের সত্যি-মিথ্যে বলতে পারব না। ১৬৬ নম্বর বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে বসুমতী সাহিত্য মন্দির-এর সামনেটুকু লাল রঙের মন্দির ডিজাইনেই। সেই মন্দির-এর নানা তলায় প্রায় সর্বত্র শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথি, শ্রীরামকৃষ্ণ সম্ভবত এসেছিলেন ১৬৬ নম্বর বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে, সেই দিনটিকেও পালন করা হত আশির দশক, নব্বই দশকের গোড়াতে দেখেছি খুব ধুমধামের সঙ্গে পালিত হত। ধুমধাম মানে ১৬৬ নম্বরের বাইরে চিড়িকপিড়িক রঙিন টুনি বাল্ব, এই বাড়ির পাশেই অতিবিখ্যাত, প্রাচীন স্বর্ণালয়— বি. সরকার। বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটেই এমন গাদা গাদা স্বর্ণালয়— সোনার দোকান— স্যাকরার দোকান— গয়নার দোকান। নামী, কমনামী, ছোটো, বড়ো, মাঝারি। উপেন মুখোপাধ্যায়ের ছবি পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে এলে দোতলা। বাইরে সার্কুলেশন, ক্যাশ ডিপার্টমেন্ট। ক্যাশ ডিপার্টমেন্টের মাথার ওপর অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট— সেখানে যতীনবাবু, যিনি বিবাহের আগে ধুতির ওপর ছিটের বাংলা কাটিং ফুলশার্ট হাত গুটিয়ে পরতেন, তিনি এবং অন্যান্য কয়েকজন, মানে অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের কেরানিকুল। যাঁদের অনেকেই লেখকদের ভাউচার সাম্মানিক— পঁচিশ, ছাব্বিশ টাকার ভাউচার পাশ করাতে ঢোঁক চিপে চিপে একেবারে হদ্দমুদ্দ হয়ে যেতেন। টাকার ভাউচার তাঁরা বসে আছেন। তাঁরা মনে করতেন ‘বাবুর টাকা’— বাবুর অ্যাত অ্যাত টাকা কেন নিয়ে যাবেন লেখক, কবিরা? পঁচিশ, তিরিশ, বড়োজোর পঞ্চাশ টাকার পাশ করা ভাউচারে সই করে টাকা নিয়ে যাবেন? ‘বাবুর টাকা’? বাবুর টাকা বলতে এখানে অশোক সেন। প্রখ্যাত ব্যারিস্টার অশোক সেন যিনি ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে বসুমতীর— ‘দৈনিক বসুমতী’-র মালিক অশোক সেন। লন্ডনে যাঁর বেশ কয়েকটি নিজের বাড়ি। অতিবিখ্যাত আইনজীবী তিনি। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ছিলেন, কংগ্রেস মন্ত্রিসভায়। তিনি ও সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় বিড়লাবাড়ির মামলা করতেন। মানে বিড়লাদের হয়ে মামলা করা। আবার বাবু বলতে এক সময় ‘ঘটকবাবু’রা। লেখক-সাংবাদিক-সম্পাদক অকালপ্রয়াত প্রাণতোষ ঘটক ও তাঁর পরিবার। প্রাণতোষবাবুর সময় ‘সাপ্তাহিক বসুমতী’ ও ‘মাসিক মসুমতী´সম্পাদক জয়শ্রী সেন। সম্ভবত তিনি প্রখ্যাত সারস্বত ব্যক্তিত্ব ত্রিপুরা শঙ্কর সেনশাস্ত্রীর কন্যা অভিনেতা— অভিনেত্রী জয়শ্রী সেন নন। প্রাবন্ধিক, বুদ্ধিমতী, ধর্মবেত্তা ত্রিপুরাশঙ্কর সেনশসাস্ত্রীর কথা এখন কজনই বা মনে রেখেছেন। আর একই সঙ্গে প্রাবন্ধিক জাহ্নবী চক্রবর্তীর কথা স্মরণে আছে কার কার? কলকাতার দক্ষিণে গড়িয়ায় জাহ্নবীবাবুদের ‘পূর্ণিমা সম্মিলনী’। তাঁদের দেওয়া একটি পুরস্কার— ‘পূর্ণিমা পুরস্কার’ পেয়েছিলেন অনেক বছর আগে। বসুমতীর— বসুমতী কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের প্রেস সুপারভাইজার জিতেনবাবুর সাদা রঙের ছিটের ফুল হাতা ডাবল কাফ শার্ট, প্রায়ই। আবার এমনিও। তাঁর ডাবল ঘর শার্টে তখন ঝকঝকে, সোনা রঙ বোতাম। চেন গোল্ডেন, তা সোনার কিনা বলতে পারব না। জিতেনবাবুর সোনালী বোতামে মিনা করা বোতাম। সেসব সোনার না গিলটি করা, নাকি রোল্ড গোল্ড জানা নেই। কিন্তু বোতামের চেন সবসময়ই খুব চকচকে। ঝকমকে। জিতেনবাবুর চামড়ার ফোলিওব্যাগ, পায়ে ঝকঝকে কালো পাম্প শ্যু। হাতে ঘড়ি। শার্টের হাতা গুটোনো। বসুমতীর ক্যাশ ডিপার্টমেন্টে ছিলেন বিষ্টুবাবু। অসামান্য ভদ্র মানুষ, কখনও প্রাপ্য সাম্মানিকের জন্য ঘোরাতেন না কাউকে। অতি সজ্জন বিষ্টুবাবুর মাথাভর্তি কোঁকড়ানো কালো চুল। পেছনে টেনে আঁচড়ানো। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। আদ্দির ফুও শার্ট হাতা গুটিয়ে পরা। ধুতি। পরিষ্কার, নিখুঁত কামানো গাল। কথার টানে খানিকটা যেন হুগলি-বাঁকড়ো— বাঁকুড়াও হতে পারে। পাশের চেয়ারে বিলাসবাবু। খুব টিপটাপ। খাদি, অথবা হ্যান্ডলুমের এক রঙা, রঙিন পুরোহাতা পাঞ্জাবি। মাড় দেওয়া, কাচানো ধুতি। পায়ে কালি করা, পরিষ্কার স্যান্ডেল। দাড়ি-গোঁফ কামানো গোল মুখ। চুল না-পাতলা, না ঘন। টেনে টেনে পেছনে আঁচড়ানো। বিষ্টুবাবু কনুই পর্যন্ত হাতা গুটিয়ে নেন তাঁর আদ্দির শার্টের। বিলাসবাবু হ্যান্ডলুম পাঞ্জাবি থ্রি কোয়ার্টার পর্যন্ত গোটানো। প্রায়, প্রতিদিনই পাট ভাঙা পাঞ্জাবি, ধুতি। বিষ্টুবাবুর পায়ে কালো পাম্প শ্যু। কালিদার, ঝকঝকে। দৈনিক বসুমতী প্রেসের আর একজন প্রেস সুপারভাইজার যতীনবাবু। যতীনবাবু বেশ গরিলাবদন। মানে স্টাউট, পেটানো চেহারা। ফুলহাতা রঙিন হ্যান্ডলুম পাঞ্জাবি। বিড়ি। দিনরাত বিড়ি। সবসময়। মাথার পাকা খাড়া খাড়া গজানো চুলে নারকেল তেল। সেই শক্ত চুল টেনে আঁচড়ানো পেছনের দিকে। মাথায় বেশ ঘন চুল। কিন্তু চুলে কোনো বাহার নেই। ধুতি পরেন যতীনবাবু। মিলের ধুতি। বসুমতী প্রেসে তিনি লুঙ্গি-গেঞ্জি, গরমে। জিতেনবাবুর সঙ্গে তাঁর ভয়ানক খটাখটি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ধ্যাড়াঙ্গা থেকে লেহঙ্গা