ভাষা বাঁচাতে সুদূর মানভূম থেকে হেঁটে কলকাতায় এলেন বাঙালিরা, নেতৃত্বে বাসন্তী রায়ও

ধূলায় ধূলায় ঘাসে ঘাসে – ৫

আগের পর্বে

একসঙ্গেই প্র্যাকটিস করতেন শিশিরদা, শুভেন্দুদা, ভারতীদি, জয়ন্তীদি। চন্দননগরের বাসিন্দা শুভেন্দুদা ছিলেন ফিজিক্সে ডক্টরেট। একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন চন্দননগরের এলাকার নাম-ধাম কলকাতার মত কেন? জ্যেঠু সংযত উত্তর দিয়েছিলেন, ক্লাইভ আগে না দুপ্লে? যাই হোক ১৯৭৬ সালে ক্লাবে প্রথম তিনটি বিদেশি ফাইভারের ধনুক আসে। ১৯৭৭ সালে আরও দুটি। সেসময় ক্লাবেরই এক জাতীয় তীরন্দাজ জ্যেঠুর কাছে বেশ হামবড়াই করে বলেছিলেন, বুট থাকলেই সবাই ফুটবলার হয় না। সেই কথাই সত্যি প্রমাণ করেছিলেন জ্যেঠু। কল্যাণীতে আয়োজিত রাজ্য প্রতিযোগিতায় জ্যেঠুই বাঁশের তীর-ধনুক নিয়েই প্রতিপক্ষ হলেন সেই দাদার। বলাই বাহুল্য, বেশিরভাগ তীরই সেদিন বাইরে মেরেছিল সেই দাদা।

গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী, লোকসেবক সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অকৃতদার বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত ছিলেন প্রথম (১৯৬৭) ও দ্বিতীয় (১৯৬৯) যুক্তফ্রন্ট সরকারে পঞ্চায়েত ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। ব্রিটিশ রাজের শেষদিকে গয়া জেলে বন্দি থাকাকালীন তাঁর স্মৃতিকথা ‘সেই মহাবরষার রাঙাজল’ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক অসামান্য আখ্যান। সাহিত্যগুণেও সে-বই বাংলাভাষা ও বাঙালির সম্পদ৷
আজকের কথা অবশ্য তাঁকে নিয়ে নয়। তাঁর ছোট বোন বাসন্তী রায় - আমার বাসু পিসিমাকে নিয়ে। তবে বাসু পিসিমার কথা বলতে হলে পরিচয় করতে হবে তাঁর হাতে তৈরি নিমডির লোকসেবায়তন আশ্রমের সঙ্গে। তাঁকে সেখানেই প্রথম দেখি।
নিমডি রেলস্টেশান একটি টিলার ঠিক পাশ ঘেঁষে। আমরা মানভূমে বলি ডুংরি৷ লাইনটা পেরিয়ে এলেই পশ্চিমমুখো সরু এক পথ ঢুকেছে সোজা আশ্রমের দিকে। বাঁহাতে রেললাইন রেখে ঐ পথ ধরে হাঁটতে থাকলে ডানহাতে প্রথমে ক্ষেত আর আমবাগান। সেসব শেষ হলেই এক বিরাট ইঁদারা – ডানদিকে। আর তার ঠিক বিপরীতে রাস্তার অন্যপারে মাঠের মধ্যিখানে এক বিশাল বটগাছ। চারিদিকে ঝুলছে তার অসংখ্য ঝুরি। ঐ মাঠকেই গোল করে বেড় দিয়ে রেললাইন দলমা গিরিমালা চিরে চলে গেছে টাটানগরের দিকে। মাঠের একদিকে ছোট্ট একতলা হাসপাতাল। আরও এগোলে ডানদিকে লাইব্রেরির গা দিয়ে রাস্তা উত্তরমুখো চলে গেছে। লাইব্রেরির পাশেই মন্দির - সরস্বতীর। সে পথে না গিয়ে পশ্চিমমুখো সোজা গেলে বাঁদিকে আরো ছোটো একটি ডুংরি, আশ্রমের চৌহদ্দির মধ্যেই। প্রচুর ঝোপঝাড়ে এখন ঢেকে গেছে তাতে চড়ার পথ।
হাঁটতে থাকলে বাঁহাতে সরমাপিসিদের ঘর আর তারপরের বাড়িটাই বাসুপিসিমার। সেই বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগান। আর মুখোমুখি উল্টোদিকে রাস্তার ধারে শাল-পলাশে ভর্তি আশ্রমের একমাত্র ইউক্যালিপ্টাস গাছটি। সে প্রায় আমাদেরই বয়সি৷ ছোট্ট সে গাছ আজ আকাশ ছুঁয়েছে। দেখা হলেই পুরনো সব কথা মনে করে দেয়। আর আমিও প্রতিবার তার আলাপ করিয়ে দিই, নতুনদের সঙ্গে। 

আশ্রমের কোথাও কোনো পাঁচিল নেই, নেই বেড়া। দু’দিকে রেললাইন, একদিকে নদী আর একদিকে টাটা পুরুলিয়া রোড ও স্টেশন ঘিরে রেখেছে তাকে। আরো এক অবাক করা বিষয়, এই আশ্রমে একটিও পাকা ছাদ নেই। সব ঘর বা বাড়িই ইট ও মাটির দেওয়ালের উপর খাপড়া অথবা খড় ঢাকা।
ইউক্যালিপ্টাসটির গা দিয়ে ডানদিকে গেলেই বাঁহাতে এবং ডানহাতে দুটি লম্বা বাড়ি যার দু’দিকে দুটি দীর্ঘ বারান্দা, মাঝে ঘর। খাপড়া চাপা। বাঁদিকের বাড়িটিতে পানুপিসিরা থাকতেন প্রথম ঘরটিতে। বাকি পুরোটাই টানা হল। সেখানে একসময় 'শিশুভবন' এর পড়াশোনা হত। আর ডানদিকের বাড়িটিতে হাতে চালানো তাঁতে খদ্দর, তসর, বাপ্তা ও কেটের কাপড় বোনা হত। তার আগে সেই কাপড়ের জন্য তৈরি হতো সুতো, সুতি হলে চরকায় আর রেশম হলে হাতে ঘোরানো তক্‌লিতে।
এই তক্‌লি হাতে নিয়েই গোটা আশ্রম ঘুরে ঘুরে অন্য কাজ দেখাশোনা করতেন এবং নিজেরাও কাজ করতেন সরমাপিসি, সেবাপিসি, পুষ্পপিসি ও শৈলপিসিরা।
শিলাশ্রমের দিকে যেতে গেলে রাস্তার দু’পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো এগিয়ে দিত পিসেমশাইয়ের ঘর অব্দি৷ সেই বাড়ির উঠোনে ছিল প্রায় ৭-৮ ফুট গভীর সিমেন্ট-বাঁধানো এক গোল চৌবাচ্চা। তাতে পদ্ম ফুল ফুটত। পিসেমশাইয়ের বারান্দায় তাঁর ইজিচেয়ারের পাশে মাটিলেপা দেওয়ালে টাঙানো থাকত একটি ভারতবর্ষের মানচিত্র। ওনার নিজের হাতে আঁকা। মানচিত্রের এক কোণে আঁকা গান্ধীজির মুখ তাকিয়ে থাকত ভারতের দিকে। আমাদের মনে হতো তিনি তাকিয়ে আছেন আমাদের মুখের দিকে।
 

বাসন্তী রায়

 

এইঘরটিও ছাড়িয়ে সোজা এগোলে ঘানিঘর। সেখানে চোখে ঠুলিপরা এক কালো বলদ আশ্রমেরই চাষের সরষে পেষাই করে চলেছে গোল করে ঘুরে ঘুরে। আর সরষের তেল তৈরি হয়ে জমা হচ্ছে একফোঁটা – দু’ফোঁটা। এর পাশেই আরেকটি বড় ঘরে ছাপাখানা। সে ঘরে আশ্রমে তৈরি খদ্দর এবং রেশমের থান, শাড়ি, চাদর ইত্যাদি ছাপা হত। অন্য একটি ঘরে আখের রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হত গুড়। নিতাইদা আর গুরুপদদা এইসবের দায়িত্বে ছিলেন। চাষবাস দেখতেন ওঁরাই।
সেই ইউক্যালিপ্টাসের মোড় থেকে এই পর্যন্ত গোটা পথটারই সমান্তরালে কিছুটা দূর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট পাহাড়ি নদী 'কনেডোবা' - আশ্রমের পশ্চিমপ্রান্ত ধরে। তবে রাস্তা এবং আশ্রম সেই নদী থেকে অনেকটা উঁচুতে। নদীর দিকে রাস্তা থেকে নীচে নেমে রান্নাঘরের লাগোয়া বিরাট খাবার ঘর। সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার, রাতের খাবারের আগে সেখানে ঘণ্টা পড়ে। আশ্রমবাসী ও অতিথিরা সবাই একসঙ্গে লাইন করে বসে খায়৷ খাবার ঘরের পিছনের দরজা দিয়ে বেরোলেই আরও একটা ইঁদারা, তারপর নদী। মুখ, হাত ধুতে কেউ ইঁদারায়, কেউ নদীতে যায়৷
কনেডোবার (অনেকে এ নদীকে 'ঘাঘরাজোড়া'ও বলে) এপারে ধানক্ষেত আর ওপারেই ঘন শালবন। তার মধ্যে দিয়ে এক সরু পায়ে চলা পথ গেছে টাটা - পুরুলিয়া রোডের দিকে। ও পথেই অনেক দূরে নীলরঙের দলমা পাহাড়। 

আরও পড়ুন
বাঁশের তীর-ধনুক নিয়েই নামলেন প্রতিযোগিতায়, হারিয়ে দিলেন ‘আধুনিক’ শিষ্যকে

তা এই হল বাসুপিসিমার আদর্শ, নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর ভালবাসা দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা নিমডি আশ্রম। আর বাসুপিসিমা? তিনি এক অসামান্য নারী৷
তাঁর বাবা শ্রী নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন পুরুলিয়ার জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ১৯২১ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে যান এবং সমগ্র মানভূম জুড়ে সেই আন্দোলনকে দারুণভাবে ছড়িয়ে দেন ও নেতৃত্বও দেন। ফলস্বরূপ তাঁর পরিচিতি হয় মানভূম-গান্ধী নামে৷ মহাত্মা গান্ধীর অত্যন্ত প্রিয়পাত্রও ছিলেন তিনি৷ 

এমন পরিবার ও পরিবেশে বড় হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়তে পিসিমার বেশি সময় লাগেনি।
অমন আপাদমস্তক গান্ধীবাদী মানুষ পিসিমা আমার কমিউনিস্ট পিতৃদেবকে অসম্ভব স্নেহ করতেন। সহোদরের মতোই৷ আমার বাবাও তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, ভালোওবাসতেন খুব। এব্যাপারে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। শুধু পুরুলিয়া নয়, সমগ্র মানভূম অঞ্চলেই ‘কুদরুম’ নামে একটি সব্জির চাষ হয় যার ফলটি গাঢ় লাল রঙের এবং স্বাদে টক। সেই ফলের খুব স্বাদু চাটনি তৈরি করা হয় শীতের সময়। নিমডিতেও চাষের কুদরুম থেকে তৈরি করা হতো আচার৷ কিন্তু পিসিমার কড়া নির্দেশ থাকত ‘শীতের ছুটিতে অমলরা এলে তখনই আমরা ওই আচার খুলব এবং খাব সবাই মিলে। তার আগে নয়।’

আরও পড়ুন
ভারতের তীরন্দাজিকে বদলে দিয়েছিলেন চন্দননগরের যজ্ঞেশ্বর ঘোষ

গরম, পুজো আর শীতের ছুটিতে দেশের বাড়ি বলরামপুর যাওয়া মানে অন্তত একদিনের জন্য হলেও আমরা নিমডি যাবই - এ বিষয় নিশ্চিত ছিল। সক্কালেই পৌঁছে যাওয়া এবং সারাদিন ওখানেই স্নান খাওয়া গল্পগুজব হই-হল্লা করে রাতের ট্রেনে বলরামপুর ফেরা। এই সবকিছু করেও পিসিমার সঙ্গে কথা বলার জন্য পাওয়া যেত অনেকটা সময়৷ আমার প্রচুর প্রশ্ন থাকত তাঁর কাছে৷ তিনিও খুশিমনেই গল্পগুলি বলতেন - ইংরেজদের সঙ্গে প্রতিদিনের সংঘাত, পুলিশের লাঠি খাওয়া, বহুবার জেলে যাওয়া…

জানতে চাওয়ায় মহাত্মা গান্ধীকে তাঁর প্রথমবার দেখার ঘটনাটিও শুনিয়েছিলেন সানন্দে। ওঁর জবানেই বলা যাক সে গল্প। ‘আমাদের রাঁচির বাড়িতে বাবা তখন বিশ্রামেই আছেন, সদ্য অসুখ থেকে সেরে উঠে। উনি বিকেলবেলায় বারান্দায় খাটিয়া পেতে বসে আছেন এবং আমি রান্নাঘরে বাবার জন্য মুড়ি মাখছি। এমন সময় বাবা চেঁচিয়ে বললেন, 'বাসু আরো দু'কাটি মুড়ি মেখে আনো, গান্ধীজি ও সীমান্ত গান্ধীজি এসেছেন আমায় দেখতে।' আমি মুড়ি নিয়ে এসে ওঁদের সবাইকে দিলাম এবং সেই প্রথম গান্ধীজিকে সামনে থেকে দেখলাম - সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফফর খানকেও৷’

আরও পড়ুন
গালের ভিতর চামড়ার পকেট, চড় মারতেই বেরিয়ে এল সোনার চেন

নিমডিতে লোকসেবায়তন আশ্রম 

 

১৯৩৫ সনে নিবারণচন্দ্রের মৃত্যুর পর গান্ধীজি তাঁর স্নেহের বাসুকে সঙ্গে করে নিয়ে যান তাঁর ওয়ার্ধা মহিলা আশ্রমে। এক যুগাধিক কাল সে-আশ্রমে সুপারিন্টেনডেন্ট হিসাবে ছিলেন তিনি। ফিরে আসেন গান্ধীজির মৃত্যুর পর। ততদিনে তিনি বিবাহিত৷ এরপর তাঁর স্বামী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শিল্পী শ্রী সুবোধ রায়কে সঙ্গে নিয়ে নিমডিতে লোকসেবায়তন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেন।

আরও পড়ুন
কলকাতা তাঁকে ডাকে বব্‌, নিগ্রো ইত্যাদি নামে; ভয়ে, ভক্তিতে, কখনও ভালোবাসায়

ওয়ার্ধা আশ্রমেরও একটি অদ্ভুত ঘটনার কথা বলেছিলেন তিনি। সে বার আশ্রমিকরা ঠিক করেছিলেন ২রা অক্টোবর বাপুজির জন্মদিন পালন করবেন এবং ওঁকে কিছু উপহারও দেবেন। বাসুপিসিমারই দায়িত্ব পড়েছিল ওঁকে রাজি করানোর৷ গান্ধীজি শুনে প্রথমে আপত্তি করলেও অনেক পেড়াপিড়ির পর বলেন, ঠিক আছে তাহলে ওই দিনটিতে তোমরা আশ্রমের হরিজনদের সবাইকে ছুটি দাও এবং আশ্রমের সব নর্দমা ও বাথরুম তোমরাই পরিষ্কার করো। তাহলেই আমার জন্মদিনও পালন করা হবে আর ওটাই উপহারও হবে আমার৷ আশ্রমিকরা সানন্দেই তা করেছিলেন এবং বাপুজিও নাকি খুশি হয়েছিলেন খুব। 

১৯৫৬ সালে যখন ভারতবর্ষে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি পুনর্গঠন করা হচ্ছে এবং তাদের সীমানা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে তখন বিহারে কোনো শিল্প নেই - শুধু এই যুক্তিতে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষীর ইচ্ছা, ভালবাসা ও নিরাপত্তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিমডি, চান্ডিল ইত্যাদি স্থানগুলিসহ জামশেদপুর শিল্পাঞ্চলকে বিহারের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়। সে চেষ্টা রোখার জন্য সেই সময়ে মাতৃভাষা বাংলা, কেবল বাংলাভাষার জন্য লোকসেবক সংঘের নেতৃত্বে দূর মানভূম থেকে প্রায় এক হাজার জন মানুষ সাড়ে তিনশো কিলোমিটার পথ একটানা হেঁটে এসেছিলেন কলকাতায়। 'চান্ডিল, পটমদা থানা দিতেই হবেক। চাষ, চন্দনকেয়ারি চাইয়েই চাই' ধ্বনি তুলে। নেতৃত্ব যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন বাসন্তী রায়। বাংলাভাষার জন্য সংগ্রামের যে ইতিহাস তাতে বরাবরই অনুল্লেখিত, অনুচ্চারিত ও অবহেলিতই রয়ে গেছে সে লড়াই। হয়তো সফল হয়নি বলেই!

শেষবার যখন সপরিবারে নিমডি যাই, ফেরার পথে বারান্দায় বসা বাসুপিসিমা জিজ্ঞেস করেছিলেন,
‘আবার কবে আসবে আলো?’
বলেছিলাম ‘পিসিমা আমি তো নিমডিতে আসি না। আমি ফিরি নিমডিতে!’
বিকেল শেষ হয়ে আসছিল। প্রশ্ন করেছিলাম তাঁকে, ‘এই সময়ে কী করেন আপনি?’
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন ‘কী আর করব? এই বসে বসে পাতাঝরা দেখব।’
পিসিমা থাকতে নিমডি আশ্রমে আমার আর ফেরা হয়নি। বাপুজির শেষ জীবিত শিষ্যা আমাদের এবং তাঁর প্রিয় আশ্রমকে ছেড়ে গেছেন অনেকদিন। কিন্তু আজও ভাবতে ভালো লাগে, শীতের বিকেলে বাগানের দিকে মুখ করে নিজের বারান্দায় বসে বাসুপিসিমা পাতাঝরা দেখছেন। আর তাঁর মানসপটে এক এক করে ভেসে আসছে অসহযোগ আন্দোলন, মুঙ্গের জেল, ওয়ার্ধা আশ্রম, ভারত ছাড়ো আন্দোলন, সবরমতী নদী, বাপুজির স্নেহ, হয়তো নিমডিকে বাংলায় রাখতে না পারার দুঃখও!

Powered by Froala Editor