১৯৩৩-৩৬। আগের সময়ের তুলনায় অনেকটাই ভালো আছেন রাজবন্দিরা। তাঁরা খেলাধুলা করছেন, গান-বাজনার চর্চা করছেন, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক পাঠচক্র, মার্কসবাদের চর্চা চলছে জোরকদমে। সমাজতান্ত্রিক আদর্শে দীক্ষিত হচ্ছেন অনেকেই। অনুশীলন, যুগান্তর থেকে শুরু করে নানা বিপ্লবীদের গ্রুপের অনেকেই এখন একটা পতাকার তলায় সংগঠিত হচ্ছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হবেন। সব থেকে বড়ো কথা রাজবন্দিদের মধ্যে এক সুরে কথা বলার, লড়াই করার মতো ঐক্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এত স্বাধীনতার মধ্যেও দেশ, পরিবার থেকে এতো দূরে, দেশে গান্ধীজির আহ্বানে ব্রিটিশ-বিরোধী যে আন্দোলন দানা বাঁধছে তার থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখে এক বিচ্ছিন্নতাবোধের দুঃখ-কষ্টও চেপে বসছে মনে। বারে বারে মন চাইছে দেশে ফিরে যেতে, না হয় সেখানেই জেলের প্রকোষ্ঠে থাকবেন, তবু তো দেশের মাটি, দেশের হাওয়ায় সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তাওয়ায় সেঁকে নিতে পারবেন নিজেদের।
ইতিমধ্যে সবকিছু যে একেবারে ঠিকঠাক চলেছিল, কেউ কোনো ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হননি সে কথা বলা যাবে না, বিভিন্ন অজুহাতে চাবুক মারা হয়েছে চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, প্রবীরকুমার গোস্বামী এবং সুধেন্দ্রচন্দ্র দাম-কে। তাছাড়া সামান্য কারণে রকমারি শিকলের ব্যবহার তো হতই। পোর্ট ব্লেয়ারের সেলুলার জেলে থাকা একজন রাজবন্দিও বোধহয় বলতে পারবেন না যে কোনো ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হননি। তবে এই সময়েই আবার অনেক রাজবন্দিকে অসুস্থতাজনিত কারণে সঠিক চিকিৎসার জন্য দেশের জেলগুলিতে পাঠানো হয়।
১৯৩৫-এ উত্তরপ্রদেশের জেল থেকে বদলি নিয়ে সেলুলার জেলে নতুন সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসাবে এলেন উদ্ধত এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ রোসেয়ার। তিনি এসেই ঘোষণা করলেন, এতদিন যাবৎ রাজবন্দিরা যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিলেন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে, তিনি জানেন এই সব লোকগুলোকে কীভাবে টাইট দিতে হয়। এ যেন ব্যারী সাহেবের ভূত ফিরে এলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে স্বাধীনতা পাওয়া এবং আগের যে কোনো সময়ের থেকে রাজবন্দিরা এখন অনেক বেশি আদর্শগতভাবে শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। রোসেয়ার-এর এই হুমকির প্রতিবাদ হল সংগঠিতভাবেই। রাজবন্দিরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রেখে জেলের সমস্ত নিয়ম-কানুন অমান্য করতে শুরু করলেন এবং তিনদিনের জন্য অনশন আন্দোলনে গেলেন। ১৫-ই সেপ্টেম্বর, ১৯৩৬-এ চিফ কমিশনার মিঃ কসগ্রেভের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করা হল। অনশনের দ্বিতীয় দিনে বরিষ্ঠ মেডিকেল অফিসার ডাঃ ক্যাপ্টেন বি. কে. চৌধুরী অনশনরত বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে এলে তাঁর হাতেও তুলে দেওয়া হল দাবিসনদ। তাঁরা অবশ্য বন্দিদের কথা শুনলেন। খুব তাড়াতাড়ি একটা রফায় আসা হল। রোসেয়ার-এর দম্ভ চুর্ণ হল। তিনি আন্দামান থেকে বিদায় নিলেন। রাজবন্দিরা আবার তাঁদের অর্জিত স্বাধীনতা ও অধিকার ফিরে পেলেন। ১৯৩৬-এ স্বরাষ্ট্র বিভাগের সদস্য, স্যার হেনরি ক্রেক আন্দামান সেলুলার জেল পরিদর্শনে এলে তাঁর কাছেও রাজবন্দিরা ২৮ এপ্রিল, ১৯৩৬-এ দাবিসনদ পেশ করেন। কী ধরনের দুর্দশার মধ্যে দেশ ও পরিবার থেকে এত দূরে কাটাতে হচ্ছে এ সম্পর্কে তাঁর কাছে অভিযোগ করা হয়। এই প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে বেরিয়ে আসার আবেদন জানিয়ে তাঁর কাছে দাবি করা হয় যে রাজনৈতিক কারণে বন্দিদের যথাযথ রাজবন্দিদের মর্যাদা দেওয়া হোক এবং তাদের সম্মানজনক পোশাক এবং পড়াশোনার জন্য বই ও খবরের কাগজ দেওয়া হোক। সবকিছু শুনে সমবেদনা জানিয়ে ফিরে গেলেন স্যার হেনরি ক্রেক।
সিমলায় ফিরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে আন্দামান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললেন যে আন্দামান হল ‘বন্দিদের স্বর্গরাজ্য’। ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ কিন্তু অবিশ্বাস করলেন এই কথা। তারা ভালো ভাবেই জানেন আন্দামান সেলুলারে রাজবন্দিদের ভয়ংকর দুর্দশার কথা। অনেকেই ক্রেকের এই কথার প্রতিবাদ জানালেন। সংসদে এক কংগ্রেস এমএলএ, শ্যাম লাল তো সরকারকে ব্যঙ্গ করে উপদেশই দিয়ে বসলেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে তাদের রাজধানী ওই সদ্য আবিষ্কৃত স্বর্গরাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া। ক্রেকের মন্তব্যে ইতিমধ্যে নানা মহলে বিতর্কের ঝড় উঠল। সরকার বাধ্য হল সেলুলার জেলে প্রকৃত অবস্থার অনুসন্ধানের জন্য দুই সদস্যের একটি দলকে আন্দামানে পাঠাতে। দুজন এম এল এ রায়জাদা হংস রাজ এবং মহম্মদ ইয়ামিন খানকে পাঠানো হল আন্দামানে। তাঁরা রাজবন্দিদের সঙ্গে দেখা করলে রাজবন্দিরা সবাই ক্রেকের কথাকে মিথ্যার বেসাতি বলে নিন্দা করলেন। ১৩-ই অক্টোবর, ১৯৩৬-এ হংস রাজ এবং ইয়ামিন খানের হাতে আবারও একগুচ্ছ দাবিসনদ তুলে দেওয়া হল রাজবন্দিদের তরফ থেকে। এই সনদে সই করেছিলেন ২৩৯ দেশপ্রেমী রাজবন্দি। এরপর আবার ওই রাজ-প্রতিনিধিদের কাছে ১৮ অক্টোবর, ১৯৩৬-এ আরেকটি স্বাক্ষরিত পত্র তুলে দিয়ে ক’দিন আগে ১৩ অক্টোবর ক্রেক ভারতের সংসদে যে বিবৃতি দেন সেটাকে খণ্ডন করে তা অনৃত ভাষণ বলে উল্লেখ করা হল।
আরও পড়ুন
সঞ্চারিত চেতনা এবং ঐক্য – মার্কসবাদ চর্চা কেন্দ্র
শচীন্দ্রনাথ বকশি ছিলেন HSRA-র একজন সদস্য। কাকোরি রেল ডাকাতি মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে তিনি তখন লক্ষ্ণৌ সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র চ্যাটার্জী রাজবন্দিদের মর্যাদার দাবিতে অনশন শুরু করলে তাঁদের সমর্থনে সেলুলার জেলের রাজবন্দিরা ৯ জুলাই, ১৯৩৭-এ সরকারকে চরমপত্র দিলেন। জেল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হল একটি দাবিসনদ। এই দাবিসনদে লেখা হল –
আরও পড়ুন
ক্রান্তিকাল
১. সারা দেশে বিনাবিচারে আটক এবং অন্যান্য রাজবন্দিদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।
২. প্রতিবাদী মানুষকে অন্তরিন রাখা, তার ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া ও নির্বাসিত রাজবন্দি সম্পর্কিত সমস্ত নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে এবং সব ধরনের দমনমূলক আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. রাজবন্দিদের আন্দামানে পাঠানো চিরতরে বন্ধ করতে হবে এবং এখানে আটক সমস্ত রাজবন্দিদের দেশের জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
৪. জেলকোডের আমূল সংস্কার করে সমস্ত রাজবন্দিদের একটি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ন্যূনতম ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত করে তার সুযোগ-সুবিধা সহ বিভিন্ন ধরনের আমোদ-প্রমোদ, পড়াশুনা প্রভৃতির ব্যবস্থার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।
আরও পড়ুন
ভুখা হরতাল – মহাবীর সিং, মোহন কিশোর নমোদাস ও মোহিত মোহন মৈত্র
এরপর ১৮-ই জুলাই সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হল যদি তাঁদের ৯ তারিখে পেশ করা দাবিসমূহ ২৪-এ জুলাইয়ের মধ্যে না মানা হয় তাহলে ওইদিন থেকে তাঁরা অনশনে যেতে বাধ্য হবেন।
আরও পড়ুন
হরতালই হাতিয়ার
এই সময়ে রাজবন্দিরা অনেক বেশি প্রস্তুত। তাঁরা ইতিমধ্যে দেশের জনগণ ও নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন তাঁদের দাবিসনদ ও অনশনের পরিকল্পনার কথা। ২৩-এ জুলাই কর্তৃপক্ষকে আরেকটি পত্র দিয়ে মনে করিয়ে দেওয়া হল যে পরের দিন অর্থাৎ ২৪-এ জুলাই, ১৯৩৭ থেকে তাঁরা তাঁদের পূর্বঘোষিত কর্মসুচি অনুযায়ী অনশন ধর্মঘট শুরু করতে চলেছেন।
সকাল ৯-টার সময় চিফ কমিশনার জেলে এসে রাজবন্দিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পড়ে শোনালেন সরকারি জবাব যাতে বলা হল যে আন্দামানে আটক সমস্ত রাজবন্দিদের মুক্তি বা দেশের জেলে ফেরানোর কথা সরকার ভাবছে না। চিফ কমিশনার, কসগ্রেভ এবার সবাইকে হুমকি দিলেন যে রাজবন্দিরা যদি সত্যিই অনশনে যান তাহলে তাঁরা যেন সব ধরনের শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকেন। অনশনের জন্য প্রস্তুত রাজবন্দিরা তাঁকে জানিয়ে দিলেন যে তাঁরা তাঁদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থেকে সরছেন না।
২৩ জুলাই, ১৯৩৭ শুরু হল ভুখা হরতাল। ১৮৩ জন রাজবন্দি প্রথম দিনই যোগ দিলেন অনশনে। বাকিদের শারীরিক কারণে বারণ করা হল এই ধর্মঘটে যোগ দিতে কিন্তু তাঁরাও জেলে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কাজ বন্ধ করে অনশনকারীদের প্রতি সংহতি জানালেন। জেল কর্তৃপক্ষ এবার অনেক সাবধানী। তাঁরা কোনো ধরনের জোরাজুরি বা শাস্তি প্রদানের দিকে গেলেন না। শুধু সবাইকে যাঁর যাঁর সেলে আবদ্ধ রাখা হল। এখন তাঁরা পাশের সেলে আটক তাঁদের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারেন। ফলে আলাপ-আলোচনা-পরামর্শ-মতের আদান-প্রদান সবই চলতে থাকল। আর প্রতিদিন দিনে বা রাতে নির্দিষ্ট সময়ে সারা জেল চত্ত্বর কেঁপে ওঠে শ্লোগানে শ্লোগানে। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে হতে ছড়িয়ে পড়ত জেলের বাইরে আন্দামানের কলোনিতে কলোনিতে। তারপর একসময় সমস্ত সেলুলার জেল নিস্তব্ধ হয়ে যেত। তখন শুধু শোনা যেত সমুদ্র-তরঙ্গের গর্জন।
ভুখা হরতালের ষষ্ঠ দিনে একজন অনশনকারী জ্ঞান হারালে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। ইতিমধ্যে দলে দলে অন্যান্য রাজবন্দিরা অনশনে অংশ নিতে থাকলেন। ১৯শে আগস্টের মধ্যে জেলের মোট ২৯০-জন রাজবন্দির মধ্যে ২৩০ জন অনশনে যোগ দিয়ে দিয়েছেন। কারও কারও স্বাস্থ্যের অবনতি চিন্তার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ জ্ঞান হারাচ্ছেন। জেল কর্তৃপক্ষ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন। জেল চিকিৎসক ক্যাপ্টেন চৌধুরী রাজবন্দিদের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল। তিনি জোর-জবরদস্তি করে নয় বরং অনেক দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতির সামাল দিচ্ছেন। অনশনকারীদের দিনের বেলা রোদ পোহানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাঁদের স্নান করার জন্য গরম জল এবং অতিরিক্ত কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে।
এল. পি. মাথুর তাঁর Kalapani বইতে লিখছেন, ৩০ জুলাই, ১৯৩৭-এ ভারত সরকার একটি ইস্তেহার জারি করে ভারতবাসীকে রাজবন্দিদের অনশন ধর্মঘটের কথা জানালেন। এই নিয়ে সংসদে ২৪টির মতো ছাঁটাই প্রস্তাব জমা পড়ল। অনেক নির্বাচিত সদস্যরাই চাইলেন সেলুলার জেলে যেতে কিন্তু তাঁদের অনুমতি দেওয়া হল না। গান্ধীজি নিজে বড়োলাটের সঙ্গে এই অনশন ধর্মঘট নিয়ে কথা বললেন। জনপ্রতিনিধি হিসাবে মোহনলাল সাক্সেনা সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়ে বড়োলাটকে চিঠি লিখলেন। আরও অনেক বিশিষ্ট নাগরিক সরকারের দৃষ্টিগোচরে আনলেন আন্দামানের এই অনশনকে। তবে সেলুলার জেলের অনশনরতরা তাঁদের ১৯৩৬-এর সরকার প্রেরিত দুই সাংসদ, রায়জাদা হংস রাজ এবং মহম্মদ ইয়ামিন খানের পরিদর্শনে আসা এবং রাজবন্দিদের সঙ্গে দেখা করে, তাঁদের সমস্ত অভিযোগ শুনে দেশে ফিরে গিয়ে সরকারের মনের মতো রিপোর্ট দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সোজাসুজি জানিয়ে দিলেন যে তাঁরা গান্ধীজি ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। এরপর অনশনকারীদের কাছে তাঁদের দেশের পরিবার থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসা চিঠিপত্রও তুলে দেওয়া হল। কিন্তু কিছুতেই টলানো গেল না অনশনকারীদের। বিজয় কুমার সিংহ-এর লেখা থেকে জানা যায় যে তাঁদের অনশনের খবর শুনে দেশে অনেকেরই মা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। এ-ধরনের খবর পেয়েও আবেগ সামলাতে হয়েছে বিপ্লবীদের। অনেকেই এখানে আসার আগে বাড়িতে ফেলে এসেছেন তাঁদের বৃদ্ধ মা-বাবা, ছোট ছোট ভাই-বোনেদের। কিন্তু সবকিছু জেনেই তো তাঁরা এই কন্টকাকীর্ণ পথ বেছে নিয়েছেন, এখন উপায় কী ফেরার?
Powered by Froala Editor