‘কালাপানি’ আন্দামান – ৪
আগের পর্বে
বিদেশিদের জাহাজ তীরে এসে ঠেকলেই ডোঙা নিয়ে হাজির হত নিকোবরিরা। প্রথমে খাদ্যের বিনিময়ে মাদক কাপড় ছুরির বিনিময়প্রথা চলত। তারপরই নাবিকদের আক্রমণ করত তারা। এই ঘটনার নিষ্পত্তি করতেই ক্যাপ্টেন বেডিংফোল্ড এবং ক্যাপ্টেন এডির নেতৃত্বে দুটি জাহাজ পৌঁছায় নিকোবরে। নিকোবরিদের একের পর এক গ্রাম এবং ডোঙাগুলিতে অগ্নিসংযোগ করে তারা। তবে ছোট একটি শিশুকন্যা ছাড়া বন্দি সকল বিদেশীদেরই প্রাণে মেরে ফেলেছিল নিকোবরিরা। তবে এই লুঠতরাজের পিছনে সবটা দায় ছিল না নিকোবরিদের। নিকোবরি নারীদের অনাবৃত ঊর্দ্ধাংশ দেখে প্রায়শই যৌন ইঙ্গিত দিত নাবিকরা। চলত যৌন হেনস্থাও। সেখান থেকে জেগেছিল তাদের প্রতিশোধস্পৃহা। পরবর্তীতে দিনেমারদের থেকে নিকোবরের ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে চলে এলে, সখ্যতা তৈরি হয় নিকোবরি ও ব্রিটিশদের মধ্যে। দস্যু প্রবণতা ছেড়ে বাণিজ্যে মন দেয় তারা। তারপর...
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অনেক আদিম মানুষের বাস। ইংরেজরা প্রথম যখন এই দ্বীপপুঞ্জগুলিতে আসে তখন ওদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী সমগ্র আন্দামান দ্বীপসমূহে বারোটি উপজাতির বসবাস ছিল। এরা হল – চারিয়ার, কোরা, টোরা, য়েরে, কেদে জিওয়াই, কোজ, বেজিগিয়ার, বী, বালয়া, ওঙ্গি, জারোয়া এবং সেন্টিনেলিজ। এছাড়া নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাস ছিল নিকোবরি ও শোম্পেনদের। আন্দামানের আদিবাসীরা মূলত নেগ্রিটো গোষ্ঠীর এবং নিকোবরি ও নানকৌড়ি দ্বীপসমূহের আদিবাসীরা হল মঙ্গোলয়েড গোষ্ঠীর। এদের মধ্যে অনেকেই সভ্য সমাজের অন্তর্ভুক্ত হলেও জারোয়া, ওঙ্গি এবং সেন্টিনেলিজরা আজও নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। আর এদের মধ্যে ওঙ্গি ও জারোয়ারা আজ সভ্য সমাজের সংস্পর্শে এলেও সেন্টিনেলিজরা সভ্য সমাজ থেকে এখনো বিচ্ছিন্ন। সেন্টিনেলিজদের দ্বীপের কাছে এখনো পর্যন্ত কেউ গেলে তাকে বিষাক্ত তিরের সম্মুখিন হতে হয়। অবশ্য একমাত্র মহিলা নৃতত্ত্ববিদ, ডঃ মধুমালা চট্টোপাধ্যায় ১৯৯১ সালে তাদের সঙ্গে কিছুটা পরিমাণে সখ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে অবশ্য সেন্টিনেলিজদের স্বার্থেই ‘অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ ১৯৯৪ থেকে ওই দ্বীপগুলিতে অভিযান বন্ধ করে দেয়। এই সেন্টিনেলিজরা একেবারেই তথাকথিত সভ্য সমাজ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন।
এই পৃথিবীতে ব্রিটিশরা নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারের লোলুপতায় বারে বারে আদিম জনগোষ্ঠী, যারা নিভৃতে নিজেদের মতো জীবনযাপন করতে চায় তাদের ওপরেও নজর দিয়েছিল। ব্রিটিশরা গ্রেট আন্দামান থেকে আন্দামানিদের হটিয়ে চ্যাথাম ও রসে তদের সাম্রাজ্য বিস্তার করার পর পোর্ট ব্লেয়ার থেকে সমুদ্র পথে ৭০ কিমি দূরে লিটিল আন্দামানে ওঙ্গিদের ওপর দৃষ্টি পড়ে। প্রথমেই অবশ্য ব্রিটিশদের নজর ওঙ্গিদের ওপর পড়েনি। এদিকের সমুদ্র উপকুল বরাবরই অশান্ত, গভীর ও বিক্ষুব্ধ। ফলে লিটিল আন্দামানের কুলে জাহাজ ভিড়ানো ছিল দুঃসাধ্য। তবু ১৮৬৭ সালে ‘আসাম ভ্যালি’ নামে এক ইউরোপীয় জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং সাতজন নাবিক ওই দ্বীপে নেমেছিল, তারা আর ফিরে আসেনি। এরপর ওই দ্বীপে একটা অভিযান করা হলে ওঙ্গিরা তির নিয়ে আক্রমণ করলে সেই জাহাজ ফিরে যায়। এর প্রায় বছর পাঁচেক পরে একটি চিনা নৌযানের পাঁচজন নাবিক জলের খোঁজে ওই দ্বীপে নামলে তাদের হত্যা করা হয়। এরপর ব্রিটিশ শাসকের মনে হয় এইসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়া দরকার। ‘এমএস আনডন্টেড’ জাহাজে করে ব্রিটিশ নৌ-সেনার দল কামান, গোলা-গুলি নিয়ে রওনা হল লিটিল আন্দামানের দিকে। দ্বীপে নেমে তারা হাতের সামনে ওঙ্গিদের যে ক’টি বাড়ি পেল তাতে আগুন ধরিয়ে দিল। ওঙ্গিদের দিক থেকে তির-বর্শার আক্রমণ ধেয়ে আসতে গর্জন করে উঠল ব্রিটিশ কামানের গোলা, সৈন্যদের হাতের রাইফেলের গুলি। ওঙ্গিরা হার মেনে পালিয়ে গেল গভীর জঙ্গলে। এরপরেও বেশকিছু অভিযান হয় এই দ্বীপগুলিতে। হার মানতে বাধ্য হয় ওঙ্গিরা, অনেকেই প্রাণ হারায়। আর যেখানে নারী, সেখানেই পরাক্রমশালী পুরুষের যৌনতার প্রকাশ। ব্রিটিশ সৈন্যরা ওঙ্গি মহিলাদের পেলেই ধর্ষণ করত। ফলে ১৮৯৬ সাল নাগাদ জানা যায় যে ওঙ্গিদের মধ্যেও সিফিলিস রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল।
আন্দামান বলতেই যে আদিম জনগোষ্ঠীর কথা প্রথমেই মনে আসে তারা হল জারোয়া। আদিম জনজাতিগুলোর মধ্যে এখনো পর্যন্ত সেন্টিনেলিজরা ছাড়া একমাত্র জারোয়ারাই তাদের অস্তিত্ব বেশ কিছুটা বজায় রেখেছে। ব্রিটিশরা যখন আন্দামানে চ্যাথাম ও রসে কাজ শুরু করেছিল তখন ব্রিটিশ সৈন্য ও কয়েদিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় উপকুলবর্তী আন্দামানিরা। জারোয়াদের সঙ্গে প্রথম দিকে ব্রিটিশদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। বরং জারোয়ারা ব্রিটিশদের সঙ্গে মিত্রতাসুলভ আচরণ করেছিল। ১৮৭৩-এ ডি. এম. স্টুয়ার্ট যখন আন্দামানের চিফ কমিশনার, তখন কয়েকজন জারোয়াকে ধরা হয়েছিল। কয়েকদিন এদের আটকে রেখে নানাভাবে সন্তুষ্ট করে সভ্য করার চেষ্টা করে বিফল হয়ে কিছু উপঢৌকন দিয়ে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আবার ১৮৭৮-এ একটি অভিযানে দুটি সন্তানসহ এক জারোয়া মহিলা ধরা পড়ে। তখন কিন্তু ওরা দেরি না করে প্রতি আক্রমণ করে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
জারোয়াদের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ ক্রমশ বাড়তে থাকে যখন ইংরেজরা পোর্ট ব্লেয়ার থেকে উত্তরদিকে জারোয়াদের যেখানে বাস, সেই অঞ্চলগুলিতে জঙ্গল সাফ করে রাস্তাঘাট তৈরি ও জনবসতি স্থাপন করতে থাকে। এরপর তারা ওই অঞ্চলে পাহারাদার ও কয়েদি – যারা মূলত ছিল সিপাই বিদ্রোহের অভিঘাতে দ্বীপান্তরিত - চোরাগোপ্তা আক্রমণে তির চালিয়ে মেরে ফেলে। এমনকি ১৯০২ সালে এক ইংরেজ ডেপুটি কমিশনার জারোয়াদের তিরের আঘাতে মারা যায়। এর প্রতিশোধ নিতে ইংরেজরা জারোয়াদের কিছু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। ১৯১৮-তে আবার এক শাস্তিমূলক অভিযান করা হয়। এতে কতজন জারোয়া মারা গিয়েছিল জানা না গেলেও বেশ কয়েকজন আহত হয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ওই অভিযানের সাফল্যে ইংরেজ বাহিনী ওদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে, জারোয়াদের তির-ধনুক, মাছ ধরার জাল সব লুঠ করে সগৌরবে ফিরে এসেছিল। আবার ১৯২৫-এর এক অভিযানে বহু জারোয়া তরুণ ইংরেজদের বন্দুকের গুলিতে মারা যায়। এরপর ইংরেজ প্রশাসন জারোয়াদের স্বাধীন চলাফেরা সীমাবদ্ধ করতে বুশ পুলিশ নিয়োগ করে। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ডিগলিপুর পর্যন্ত আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড যখন তৈরি করা হয় তখনও বুশ পুলিশদের সঙ্গে জারোয়াদের প্রায়ই সংঘর্ষ হত। সেই সময়েও আনেক জারোয়া পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন জাপানিরা আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ অধিগ্রহণ করে তখন বিমান থেকে গভীর জঙ্গলের ওপর বোমাবর্ষণের ফলে অনেক জারোয়া নিহত হয়। এই বনচারী আন্দামানিদের সাথে কামান-রাইফেলে সজ্জিত ব্রিটিশ সৈন্যদের বারবার যুদ্ধ হয়েছে। এই যুদ্ধে সামান্য তির-ধনুক নিয়ে আদিম জনজাতির কত মানুষের যে প্রাণহানি হয়েছিল তার হিসেব রাখেনি ইতিহাস।
দুধনাথ তেওয়ারি ১৪ বেঙ্গল রেজিমেন্টের পদাতিক বাহিনীর সৈনিক ছিলেন। তাঁকে করাচি থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে ৬ এপ্রিল, ১৮৫৮-তে অন্যান্যদের সঙ্গে আন্দামানে নিয়ে আসা হয়। তাঁর কয়েদি নম্বর ছিল ২২৬। ২৩ এপ্রিল, ১৮৫৮ তিনি রস আইল্যান্ড থেকে আরো ৯০ জনের সাথে গাছের ভেলায় চড়ে পালিয়ে যান। এঁদের মধ্যে বেশকিছুজন ওখানকার জারোয়াদের হাতে খুন হন এবং অনেকেই অনাহারে মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে দুধনাথ বেঁচে যান। জারোয়াদের তিরের আঘাতে খুব খারাপভাবে আহত হলে, যে কোনো কারণেই হোক হয়তো বা জারোয়াদের তাঁর প্রতি অনুকম্পা বা দয়ার সঞ্চার হয়েছিল, জারোয়ারা তাঁকে নিয়ে নৌকায় তোলে এবং ক্ষতস্থানে মাটি লেপে দেয়। সে যাত্রায় বেঁচে যান দুধনাথ। জারোয়ারা দুধনাথকে টারমুগলি নামে একটি দ্বীপে নিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে দুধনাথ সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি সেই জারোয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যান, শুরু হয় দুধনাথের আদিম জীবন। জারোয়াদের আচার মেনে এবার তিনি সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় থাকতে শুরু করেন এবং মাথা মুড়িয়ে ফেলেন। তাদের খাদ্যাভাসেও অভ্যস্ত হতে হয় তাঁকে। অবশ্য জারোয়ারা তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখত এবং কখনোই তাঁর হাতে তির-ধনুক তুলে দেয়নি। তাঁকে জারোয়ারা তাঁদের সঙ্গে শিকারে বা অন্য কোনো কাজেও নিত না। তবু কিছুদিনের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এই গোষ্ঠীর কাছে অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। প্রায় চার মাস পরে গোষ্ঠীর একজন বয়স্ক মানুষ, পুতিয়া, তাঁর কুড়ি বছরের কন্যা, লিপার সঙ্গে দুধনাথের বিয়ে দেন। দুধনাথ একইসাথে আরেক আদিবাসী, হীরার ষোলো বছরের মেয়ে, জিগাকেও বিয়ে করেন।
১৮৫৯ সালের এপ্রিল মাসে দুধনাথ লক্ষ করছিলেন যে জারোয়ারা বেশ সন্দেহজনক ভাবে জনা কুড়ির ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে আনাগোনা করছিল। ১৪-ই মে এই প্রস্তুতি চরমে পৌছাল। কয়েকটি অন্য গোষ্ঠী এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিল। তার মধ্যে একটি দলে তারই মতো একজন পলাতক সিপাই বিদ্রোহী ছিলেন। তার নাম ঠিক ভাবে জানা না গেলেও কেউ কেউ তার নাম বলেছেন সাদুল। এবার সাদুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে এরা ইংরেজদের ঘাঁটি আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিকেলের দিকে তারা অ্যাবারডিনের জঙ্গলে এসে ঘাঁটি গাড়ল। ইংরেজরা এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারেই ছিল। কিন্তু দুধনাথের হঠাৎ ইংরেজদের প্রতি প্রেমের উদয় হল।
সাদুলকে রাজি করিয়ে ১৭ মে, ১৮৫৯, ঠিক এক বছর চব্বিশ দিন পরে সেখান থেকে পালিয়ে দুধনাথ ও সাদুল ব্রিটিশদের কাছে ধরা দেন এবং খবর দেন যে আদিবাসীরা ব্রিটিশদের ওপর আক্রমণের ছক কষছে। উপজাতীয়রা প্রচুর পরিমাণে সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ করতে আসছে খবর পেয়েই নৌবাহিনীর জওয়ানদের প্রস্তুত করা হল অ্যাবারডিনের যুদ্ধের জন্য। ‘সারলট’ নামে নৌজাহাজ এসে নোঙর করল রসদ্বীপ আর আটলান্টা পয়েন্টের মাঝামাঝি জায়গায়। লেফট্যানেন্ট ওয়ারডেনের নেতৃত্বে একদল নৌসেনা আগ বাড়িয়ে চললেন অ্যাবারডিন পাহাড়ের মাথায় জংলি আদিবাসীদের আটকানোর জন্য। নিজেদের সুরক্ষার জন্যে পেছনে রাখলেন বন্দিনিবাসের বন্দিদের। কিন্তু সব গুছিয়ে বসার আগেই জারোয়ারা আক্রমণ শুরু করে দিল। জারোয়ারা একই সাথে সাঁড়াশি আক্রমণ করল আটলান্টা পয়েন্ট আর অ্যাবারডিন পাহাড়ের ওপর থেকে। আরো একটা দল তখন এগিয়ে আসছিল সমুদ্রের দিক থেকে। ‘সারলট’ জাহাজ থেকে গোলাবর্ষণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হল। কিন্তু লেফট্যানেন্ট ওয়ারডেন জঙ্গলের ভেতরে প্রচণ্ড হামলার সামনে পড়লেন। কামান দেগে বা বন্দুকের গুলি ছুঁড়েও অবস্থা কিছুতেই সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। পিছু হটে জাহাজে গিয়ে আশ্রয় নিতে হল তাঁকে। সৈন্যরা তো কোনমতে জাহাজে পালিয়ে গিয়ে জান বাঁচাল নিজেদের। আর অসহায় বন্দিদের ছেড়ে আসা হল সমুদ্রের তীরে। এরপর অবশ্য ওই বধ্যভূমিতে অসহায় বন্দিদের দিকে ছুটে আসা জংলিদের দিকে জাহাজ থেকে মুহুর্মুহু কামান দাগা হল। তাতে তাদের ঠেকিয়ে রাখা গেলেও তীরে যে ব্রিটিশ ছাউনি করা হয়েছিল তা বিরুদ্ধপক্ষের দখলে চলে গেল। কিন্তু জারোয়ারা বেশিক্ষণ ছাউনি নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি। নতুন একদল সেনা এবং বন্দিদের নিয়ে লেফট্যানেন্ট হেলার্ড এসে ছাউনি পুনর্দখল করে নিলেন। আক্রমণকারীরা অবশ্য যাবার আগে ছাউনি থেকে যথাসর্বস্ব লুঠ করে নিয়ে গেল। আদিবাসীদের সঙ্গে ব্রিটিশদের এই যুদ্ধ ‘অ্যাবারডিনের যুদ্ধ’ নামে ইতিহাসের পাতায় উল্লিখিত আছে।
আদিবাসীদের সঙ্গে এই বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার দিতে দুধনাথ এবং তার বন্ধুকে দেরি করেনি ব্রিটিশরা। ৫ অক্টোবর, ১৮৬০ সালে দুজনকেই সরকার ক্ষমা প্রদর্শন করে আন্দামানে দ্বীপান্তরের শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়। দুধনাথকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক পরে ১৮৬৬-তে ‘আন্দামান হোম’এর প্রধান, জেরমিয়া হোমফ্রে, দুধনাথকে পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে আসেন। আদিবাসীদের সভ্য করার উদ্দেশ্যে রেভারেন্ড হেনরি ফিশার পোর্টব্লেয়ারে কোরবিন বিচের কাছে গড়ে তুলেছিলেন ‘আন্দামান হোম’। সেখানে তখন কিছু জারোয়াকে এনে রাখা হয়েছিল। দুধনাথকে সেখানে নিয়ে গেলে আদিবাসীরা তাঁকে চিনতে পেরে গালাগালি করতে থাকে এবং দুধনাথ তাঁর স্ত্রী, লিপাকে অন্তঃসত্ত্বা করে যে পালিয়ে যান তাঁর জন্য তাঁকে তীব্র অপমান করা হয়।
Powered by Froala Editor