‘কালাপানি’ আন্দামান - ২২
আগের পর্বে
১৯১৫ সালের পর নতুন করে রাজবন্দীদের ঢল নামল সেলুলারে। বিশেষত, গদর বিপ্লবীরা। রাজবন্দিদের সঙ্গে বিষাক্ত ব্যবহার অব্যাহত রাখলেন ব্যারী সাহেব। তাঁদের শাস্তির জন্য বন্দোবস্ত করা হল পাঠান জমাদার ও পেটি অফিসারদের। একে তো খাবারের অবস্থা তথৈবচ, তার ওপরে নিত্যনতুন শাস্তি আবিষ্কার করতেন জেলাররা। চলত অকথ্য অত্যাচার। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হত না তাঁদের জন্য। সব থেকে মারাত্মক শাস্তি ছিল নির্জন কারাবাস। কখনো আবার ছোট্ট খাঁচায় সারাদিন বন্দি রাখা হত রাজবন্দিদের। সেখানে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জো নেই। দিনের পর দিন এই অত্যাচারে প্রাণ হারালেন অনেকেই। তারপর…
গোলমাল শুরু হল ঝাঁসির পরমানন্দকে নিয়ে। প্রথম দিন থেকেই পরমানন্দ ঝাঁসির সঙ্গে ঝামেলা লেগে গেল কলুতে কাজ করা নিয়ে। পরমানন্দ তেল পেষাইয়ের কাজ করতে অস্বীকার করলেন। এক ট্যান্ডেল তাঁকে জেলার ব্যারী সাহেবের অফিসে ধরে নিয়ে গেল তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে শাস্তির হুকুম আনতে। পরমানন্দ কাজ করতে চাইছেন না শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন ব্যারী, তার মুখ থেকে বাছা বাছা গালি বেরিয়ে এল। পরমানন্দও কম যান না। তিনিও উত্তরে ব্যারী সাহেবের উদ্দেশ্যে এমন চোখা চোখা গালি প্রয়োগ করলেন যা আগে কখনো সাহেব শোনেননি। সাহেব মারাত্মক রেগে গিয়ে ঝাঁসিকে মারার জন্য উদ্যত হতেই বিশালদেহী ঝাঁসি ব্যারীর পেট লক্ষ্য করে এমন লাথি কষালেন যে সাহেব ছিটকে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওখানে উপস্থিত চাটুকার ওয়ার্ডার ও ট্যান্ডেলরা ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝাঁসির ওপর এবং সবাই মিলে তাঁকে পেটাতে শুরু করল যতক্ষণ না পর্যন্ত ঝাঁসির মাথা ফাটে। পরে তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। এরপর ঝাঁসিকে তাঁর কুঠুরিতে আবদ্ধ করা হল। জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট, মেজর মারে ঘটনার তদন্ত করে কুড়ি ঘা চাবুকের শাস্তি বরাদ্দ করল। বেত্রাঘাতের সময়ে ইংরেজ জেলার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে পৈশাচিক উল্লাসে লাফিয়ে লাফিয়ে যে বেত মারছিল তাকে উত্তেজিত করার জন্য “আউর জোরসে মারো, আউর জোরসে” বলে চিৎকার করতে লাগল। বেতের আঘাতে পরমানন্দের শরীরের মাংস টুকরো টুকরো হয়ে উঠে আসল কিন্তু অত যন্ত্রণার মধ্যেও তিনি এতটুকু নত হলেন না। এরপর তাঁকে ছ’মাসের জন্য ডাণ্ডাবেড়িতে আবদ্ধ করে নির্জন কারাবাস ও ‘কঞ্জি’ ভক্ষণের শাস্তি দেওয়া হল। পরমানন্দের এই শাস্তিতে বিদ্রোহের ফুলকি দেখা দিল, ধর্মঘট শুরু হল কিন্তু জেলার সবাইকে বুঝিয়েসুঝিয়ে পরমানন্দের শাস্তি প্রত্যাহার করার আশ্বাস দিয়ে তখনকার মতো ধর্মঘট ভেঙে দিলেন।
পরমানন্দের শাস্তি প্রত্যাহার সম্পর্কে জেলারের আশ্বাস যে ভাঁওতা তা ক’দিনের মধ্যেই বোঝা গেল। পরমানন্দের শাস্তি একইভাবে বহাল রইল। ১৩ জানুয়ারি ১৯১৬, পরমানন্দের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে নতুন করে ধর্মঘট শুরু হল। এবার ধর্মঘটিদেরও পড়তে হল একই ধরনের দণ্ডের সামনে। তাঁদেরও ডাণ্ডাবেড়ি ও দাঁড়াবেড়িসহ ছয়মাসের নির্জন কারাবাসের শাস্তি হল। লায়লপুরের মাস্টার ছত্তর সিং, যিনি খালসা কলেজের এক ব্রিটিশ অধ্যাপককে খুনের চেষ্টার অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে আন্দামানে এসেছিলেন তিনি একদিন জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট মারে সাহেবকে চড় মারলেন। সাহেব চেয়ার থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডার এবং পেটি অফিসাররা ছত্তরকে মারার জন্য ছুটে এল কিন্তু অন্যদিকে রাজবন্দিরাও ছুটে এলেন ছত্তরকে বাঁচাতে। জেলের ভেতরে দুইদলের মধ্যে মারপিট বাঁধে আর কি, ভয়ের চোটে মেজর মারে তার বাহিনীকে আটকালেন। এর পর একটা ছোট লোহার খাঁচায় দু বছরের বেশি তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরে সোহন সিং ভাকনা অনশন ধর্মঘট করে ছত্তর সিংকে খাঁচাবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করেন।
ওইদিকে তখন ধর্মঘট চলছে। ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী লিখেছেন যে তাঁর শরীর খারাপের কারণে বন্ধুরা বারণ করা সত্ত্বেও তিনি ধর্মঘটে যোগ দেন। এবারে কাজ কেউ বন্ধ করলেন না, কিন্তু তাঁরা নিজেদের মতো তা করতে থাকলেন, কেউই কোনো নির্দেশের তোয়াক্কা করলেন না। তাঁরা নিজেদের মধ্যে চিৎকার করে কথাবার্তা বলা ছাড়াও খারাপ ও অপর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার দেবার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকলেন। এর জন্য যথারীতি শাস্তিও পেতে থাকলেন। হাতবেড়ি, ডাণ্ডাবেড়ি, নির্জন কারাবাস, খাবার হিসাবে শুধুমাত্র ‘কঞ্জি’ ভক্ষণ প্রভৃতি শাস্তিও যথাপূর্ব চলতে থাকল। শিখেরা সংখ্যায় অনেক ছিলেন এবং এঁদের সকলেরই তখন বয়স চল্লিশ থেকে ষাটের মধ্যে। তবু তাঁদের ছিল দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাবার অদম্য প্রত্যয়।
গদর বিপ্লবীদের অন্যতম নেতা বাবা ভান সিং। তিনি প্রথম থেকে কোনোদিনই কারা-কর্তৃপক্ষের অপমানকর ব্যবহার মেনে নেননি এবং সবসময়ই অসদব্যবহারের প্রতিবাদ এবং বিরোধিতা করেছেন। সেদিন কাজ শেষের পর তিনি জেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তখন এক ব্রিটিশ কনস্টেবল তাঁকে অপমান করল ও কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করল, ভান সিংও সমানভাবে সেই কনস্টেবলটিকে গালাগালি করলেন। এই অপরাধে তাঁর ছয়মাসের দাঁড়াবেড়ি ও নির্জন কারাবাসের দণ্ড হল। তাঁকে তাঁর কুঠুরিতে দেয়ালের সঙ্গে আঁটা বেড়িতে ঝুলিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হল এবং খাবারের বরাদ্দ পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হল। ভান সিং যদি কখনো বা বসার সুযোগও পান, জেলার ব্যারী সাহেব তাঁর কুঠুরির সামনে এলে তিনি তাকে সম্মান দেখাবার জন্য দাঁড়াতেন না। ব্যারী সাহেবের মাথায় রক্ত চড়ে যায় এবং নানাভাবে তিনি ভান সিংকে অপমান করতে থাকেন, ভান সিং তাকে পাত্তা দিতেন না। জুন ১৯১৭। সেদিন এক সময় ভান সিং একা সেলের মধ্যে প্রবল আবেগের সঙ্গে গান ধরেছেন আর মোটা হাতবেড়ি বাজিয়ে তাল দিচ্ছেন। ব্যারী সাহেব পাশ দিয়ে যেতে যেতে তাঁকে গালাগালি দিলেন। সেদিন ভান সিংও উল্টে তাকে চিৎকার করে গালি দিলেন। সেইসময় ব্যারী সাহেব লক্ষ করলেন যে অনেক বন্দি যে যাঁর সেলে তালাবন্ধ আছেন, চারদিক নিস্তব্ধ। বাবা ভান সিংয়ের গালি তো সবাই শুনতে পাচ্ছেন। ব্যারী সাহেবের অহংয়ে লাগল। তিনি জমাদারদের ডেকে ভান সিংকে মারার নির্দেশ দিলেন। ব্যারীর উপস্থিতিতে জমাদাররা প্রবল উৎসাহে ভান সিংকে মারতে লাগল। তখনও কিন্তু সবাই নিজ নিজ কুঠুরিতে আবদ্ধ হন নি। ভান সিংয়ের চিৎকার শুনে পরমানন্দ ঝাঁসি, ওয়াসাখা সিং এবং আরো কয়েকজন ছুটে এলেন ভান সিংকে রক্ষা করতে। ব্যারী পালালেন। কিন্তু ততক্ষণে ভান সিং মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলেন ভান সিং। এই ঘটনা আবার নতুন করে রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করল। তাঁরা একযোগে ব্যারী সাহেবের বিরুদ্ধে জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট, মারে সাহেবের কাছে নালিশ জানালেন। তাতে কোনো আশানুরূপ সুরাহা তো হলই না, উল্টে যাঁরা নালিশ জানালেন তাঁদের হুমকি দেওয়া হল। শুরু হল নতুন করে ধর্মঘট।
আরও পড়ুন
বীভৎস সেই বর্বরতা
পণ্ডিত রামরাক্ষা ও সর্দার ভান সিংহের মৃত্যু এবং সেলুলারের ধর্মঘটের খবর গোপনে ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছে গেল এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেঙ্গলি’ সংবাদপত্রে তা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হল। সুরেন্দ্রনাথ সেইসময়ে দিল্লির বিধানসভার সদস্য ছিলেন। তিনি এবার সেখানে নানা প্রশ্ন তুলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত ও বিব্রত করে তুললেন।
আরও পড়ুন
আবারও ‘কালাপানি’
বিভিন্ন বিপ্লবীদের মধ্যে সংযোগের সমস্যা ছিল। তাঁরা জেলের সাতটি ব্লকে ছড়ানো। তবু তাঁরা উপায় বের করে ফেললেন, সাধারণ কয়েদি, যাদের যে কোনো ব্লকে যাতায়াতের অনুমতি ছিল, তাদের সাহায্যে অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা গেল। সিদ্ধান্ত হল এভাবে বাবা ভান সিংয়ের মতো যদি সবাইকে মরতেই হয়, তাহলে লড়াই করে মরাই ভালো। সেই সময় রাজনৈতিক বন্দিরা সংখ্যায় ছিলেন প্রায় নব্বইজন, যাঁদের মধ্যে অর্ধেকই পাঞ্জাব থেকে আসা গদর বিপ্লবী। পাঞ্জাবি বিপ্লবীরা ছাড়াও অন্যান্য কয়েকজন (বারীন, উপেন, হেমচন্দ্র ও সাভারকর ভাইরা ছাড়া) এই ধর্মঘটে যোগ দিলেন।
আরও পড়ুন
গদর বিপ্লবের সূচনা
যাঁরা পুরনো রাজবন্দি, তাঁরা কেন ধর্মঘট থেকে বিরত থাকলেন? পরবর্তীকালে বিনায়ক দামোদর সাভারকর তাঁর বইয়ে (The Story of My Transportation for Life) – স্বপক্ষে যুক্তি দিলেন – যদি আমি সরাসরি এই ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিই তাহলে এর আগে আন্দোলন করে আমরা নিজেদের জন্য যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আদায় করেছিলাম তা প্রত্যাহৃত হবে, তা আমরা চাইনি। এখন যদি আমাদের আবার শিকল পরানো হয় এবং নির্জন কারাবাস সহ খারাপ খাবার ও চাবুকের মার খেতে হয় সেটা আমাদের কাছে খুব বেশি আশা করা হবে। এর আগে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে আমরা যদি কোনো ধর্মঘটে যোগ না দিই তাহলে আমাদের শাস্তির মেয়াদ হ্রাসের সুপারিশ করা হবে। তাছাড়া, আমরা বছরে একবার দেশে চিঠি লিখতে পারি, এখন তার সময় হয়ে এসেছে, সে সুযোগ আমি ছাড়তে চাই না। অতএব আমি ধর্মঘটে যোগ দিইনি।
আরও পড়ুন
আবারও ধর্মঘট, দাবিপূরণ ও মূল ভূখণ্ডে রাজবন্দিদের প্রত্যাবর্তন
তাও তো সাভারকর স্বীকার করেছেন, কারণ দর্শেছেন, কেন তাঁরা ধর্মঘটে সামিল হতে পারছেন না। বারীন এবং উপেন তাঁদের আত্মজীবনীতে এই সময়কার ধর্মঘটের কথা উল্লেখ করলেও কোথাও তাঁদের জড়ানোর কথা বলেন নি। ত্রৈলোক্যনাথ মহারাজ, যিনি সেই সময়ে ওই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন এবং শারীরিক কারণে অনেকে ওনাকে বারণ করা সত্ত্বেও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন, তিনি সরাসরি এঁদের বেইমান বলেছেন। সাভারকর তাঁর লেখায় বলছেন যে ওই ধর্মঘটে শুধুমাত্র তরুণ-যুবাদের যোগ দেওয়া উচিত, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে যে অনেক বয়স্ক শিখ বিপ্লবীরা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। ত্রৈলোক্যনাথ Thirty Years in Jail-এ লিখছেন, সাভারকর আমাদের ক'জনকে হরতাল করতে ওসকালো, কিন্তু নিজে টুক করে সরে গেল। বারীন, উপেন এবং হেমচন্দ্র তখন সেলুলার জেলে হাল্কা কাজ করছেন, স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নিজেরা রান্না করে খাচ্ছেন, শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন। এমনকি তাঁরা যদি শর্তাবলি অনু্যায়ী ধর্মঘটে যোগ না দেন, তাহলে আন্দামান থেকে তাঁদের মুক্তির সম্ভাবনাও তৈরি হবে। তাই তাঁরা ধর্মঘট থেকে নিজেদের দুরে সরিয়ে রেখেছেন। পরে কন্সটিট্যুশনাল রিফর্মের মাথায় অনেক রাজবন্দিকে মুচলেকা লিখিয়ে যখন ছেড়ে দেওয়া হবে 'রয়্যাল অ্যামনেস্টি' বলে তখন একই রকম মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাবেন বারীন ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র দাস এবং ভাই পরমানন্দ।
ওইদিকে ধর্মঘট চলতে লাগল। এই ধর্মঘটে কেউ কারও নেতা নন। এখানে যে যাঁর মতো প্রতিবাদে সামিল। ত্রৈলোক্যনাথ দেখেছেন, জেল পরিদর্শনে জেলার এবং চিফ কমিশনার এসেছেন। এমনিতে দস্তুর হল, তাঁরা এলে তাঁদের সম্মান প্রদর্শনে প্রত্যেকটি সেলের বন্দিদের উঠে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু ধর্মঘটিরা তখন এইসব সম্মান প্রদর্শনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। এক শিখ বন্দি তাঁর সেলে দরজার দিকে পিঠ করে বসেছিলেন, তাঁকে উঠে দাঁড়াবার কথা বলতে তিনি পাত্তাই দিলেন না। যেভাবে বসেছিলেন, সেভাবেই বসে রইলেন। আর এক সেলে এক শিখ বন্দি শুয়েছিলেন। তাঁকেও যখন উঠে দাঁড়াবার কথা বলা হল তিনি উত্তর দিলেন যে তিনি এখন বিশ্রাম করছেন, এই সময় তাঁকে বিরক্ত না করাই বিধেয়। এইরকম ব্যবহার প্রায় প্রত্যেকটা ব্লকেই বেশিরভাগ রাজবন্দিদের কাছে পেতে শুরু করেছিলেন জেলার ও চিফ কমিশনার।
এই ধর্মঘটে রাজবন্দিদের আত্মবিশ্বাস এবং লড়াইয়ের উদ্দীপনা ও সাহস কতটা বেড়ে গিয়েছিল আরেকটি ঘটনায় তার প্রমাণ মেলে। একদিন এক শিখ রাজবন্দি, নিধান সিংকে জেলার ব্যারী সাহেব জিজ্ঞাসা করে বসলেন, “ক্যায়সে হ্যায় জী?” এই কথায় অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে নিধান সিং ব্যারী সাহেবকে রাগান্বিত স্বরে উত্তর দিলেন, “তুমি কি তোমার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাও? একা একটা সেলে আবদ্ধ রেখে, ভারী শিকল পরিয়ে, আধপেটা খাইয়ে তুমি এই প্রশ্ন করতে সাহস পাও কী করে? আমার সঙ্গে তামাশা করছ? এখান থেকে চলে যাও শয়তান কোথাকার।” ব্যারী সাহেব মাথা নিচু করে সরে পড়লেন ওই জায়গা থেকে। এত এত শাস্তি – কিছুতেই কোনোভাবেই দমাতে পারল না ধর্মঘটি শিখ গদর বিপ্লবীদের।
Powered by Froala Editor