আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে দ্বিতীয় বন্দি-উপনিবেশ ও কয়েদিদের জীবন

'কালাপানি আন্দামান - ২
আগের পর্বে

সময়টা ১৭৮৯। ব্রিটিশ ভারতের দক্ষিণে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তখন মাঝেমাঝেই এসে ভিড়ত ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ। তবে জলদস্যুদের লুঠপাঠ বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁদের কাছে। লর্ড কর্ণওয়ালিশ সিদ্ধান্ত নিলেন বাণিজ্যপোতগুলির সুরক্ষায় সেখানে তৈরি করবেন বন্দর। বাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণ, জঙ্গল সাফাইয়ের জন্য নিয়ে আসা হল বন্দিদের। তবে বেশিদিন টিকতে পারলেন না ব্রিটিশ আধিকারিকেরা। পরিত্যক্ত হল আন্দামান। এর পর উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আন্দামান অঞ্চলে একের পর এক জাহাজডুবি ও আদিবাসীদের হাতে ব্রিটিশ বণিকদের মৃত্যু উপনিবেশ স্থাপনে বাধ্য করল সরকারকে। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্থলাভিষিক্ত হল আন্দামান। পোর্ট ব্লেয়ারের চারপাশের ছোট দ্বীপগুলিতেই তৈরি হতে লাগল মুক্ত জেলখানা।

সিপাই বিদ্রোহে অংশ নেওয়া বন্দিদের দল পা রাখল আন্দামানে। তাঁদের ভাগ করে চ্যাথাম দ্বীপ, রস আইল্যান্ড, ভাইপার, নর্থ বে, ব্রিজগঞ্জ, ডান্ডাসপয়েন্ট, নেভি বে ও ফিনিক্স বে’তে পাঠিয়ে দেওয়া হল। সেই জায়গাগুলি তখন দুর্ভেদ্য-নিবিড় জঙ্গলাকীর্ণ। সেই দ্বীপগুলিতে বন্দিদের উন্মুক্ত আকাশের তলায় তাঁবুতে রাখা হত। বিষাক্ত বিছে ও জোঁক ছিল তাঁদের নিত্যসঙ্গী। এঁদের দেওয়া হল জঙ্গল পরিষ্কার, বাঁশ ও জঙ্গলের পাতা দিয়ে কুঁড়েঘর এবং রাস্তা তৈরির  কাজ।

এই সিপাই বিদ্রোহ শুধু তো সিপাইদের নিজস্ব বিদ্রোহ ছিল না, এর মধ্যে নিহিত ছিল মহাবিদ্রোহের ব্যাপকতা। এটা দেখে রেভারেন্ড ডাফ বলেছিলেন, “It was not only a military revolt, but a rebellion or revolution”. এই মহাবিদ্রোহই সেই ঐতিহাসিক ঘটনা যা ভারতে ইংরেজ শাসনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটায় –  শাসনভার যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে সরাসরি রানির হাতে। আন্দামানে নিয়ে আসা বিদ্রোহীদের মধ্যে সবাই যে বিদ্রোহী সিপাই ছিলেন তা তো নয়, অনেকেই ছিলেন ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তিকামী সিপাই বিদ্রোহের সমর্থক, পড়াশুনা জানা মানুষ – মৌলভী এবং জমিদার বংশের সন্তান। যাঁরা কোনোদিন গায়ে-গতরে খেটে জীবনযাপন করেনি তাদের পক্ষে এই পরিশ্রম হয়ে দাঁড়াল মারাত্মক।

একদিকে অকথ্য অত্যাচার তার ওপর জীবনধারণের জন্য যতটুকু খাবার দেওয়া হত তা অমানুষিক খাটাখাটনির পর একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে একেবারেই অপ্রতুল। এর সঙ্গে এখানকার অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়া সহ্য না করতে পেরে ভারতের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের বেশিরভাগ স্বাধীনতা সংগ্রামী মৃত্যুর মুখে পতিত হতেন।

আন্দামানে সেলুলার জেলের প্রাক-পর্বেও যে সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ঠাঁই হয়েছিল তাঁদের দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে, পরিবার-পরিজন ছেড়ে অনভ্যস্ত হাড়ভাঙা খাটুনির জীবনযাপন এবং তার ওপর বিভিন্ন ধরনের একটানা অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল। এঁরা ঠিকমতো খেতে পেতেন না, জুটত চাবুকের বাড়ি, কঙ্কালসার দেহগুলিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হত। এই চাবুক মারার ভার ছিল দেশের মূল ভূখণ্ডে খুন-জখম করে আসা, দ্বীপান্তরের শাস্তি হওয়া ভয়ঙ্কর সব দাগী অপরাধীদের ওপর। এখানে রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে যাঁরা ছিলেন সিপাই বিদ্রোহে অংশ নেবার ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত,  তাঁদের ওপর নিষ্ঠুরতার মাত্রা ছিল আরো বেশি।

আরও পড়ুন
চারুলতার খেরোর খাতা

জীবন যে কখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এত কিছুর পরেও ছিল এই সমস্ত অসহায় কয়েদিদের ওপর হঠাৎ হঠাৎ আদিবাসী জারোয়াদের আক্রমণ। ৫ এপ্রিল, ১৮৫৮-এ ২৪৮ জন কয়েদি যখন কূপ খনন, ঘর তৈরি করা ও জঙ্গল পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত ছিল তাদের ওপর প্রায় ২০০ জন মতো জারোয়া হামলা চালায়। এই আক্রমণের ফলে বেশ কিছু বন্দি মারা যান এবং অনেকে মারাত্মকভাবে আহত হন। আবার ১৪ এপ্রিল ৪৪৬ জন কয়েদির (যাদের মধ্যে ১২ জন হাতকড়ি বদ্ধ অবস্থায় ছিলেন)  ওপর হাজার দেড়েক জারোয়ারা কুঠার, ছুরি ও তির-ধনুক সহযোগে হামলা চালালে প্রচুর বন্দি মারা যান। ১৮৫৮-এর শেষে ১৭০ জন কয়েদি জারোয়াদের হাতে মারা যান।

রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে না পেরে চ্যাথাম দ্বীপ থেকে সমুদ্র সাঁতরে পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়ে নারায়ণের ফাঁসি হল এবং রস আইল্যান্ডে নিরঞ্জন সিংহ আত্মহত্যা করলেন। আরো চারজন বন্দি সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের প্রাণ দিয়ে এই অত্যাচার থেকে মুক্তিলাভ করেন। ১৮৫৮ সালের ১৮ ও  ২৩ মার্চ  এবং পুনরায় ১৭ ও ২২ এপ্রিল মোট ২২৮ জন বন্দি সমুদ্রপথে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এঁদের মধ্যে ৮৮ জন ধরা পড়েন। ধৃত বন্দিদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, আর একজনকে ক্ষমা করে দেওয়া হলেও বাকি ৮৬ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বাদবাকি ১৪০ জন ধরা পড়েনি। এটা ধরেই নেওয়া যেতে পারে যে যাঁরা ধরা পড়লেন না তাঁরা হয় জারোয়াদের হাতে নয়তো অনাহারে মারা যান।

আরও পড়ুন
বদলে যাওয়া তরাই বা শিলিগুড়ি-চরিত (২)

১৮৬৩-৬৫ ব্রিটিশরা ওয়াহাবিদের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে এবং ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তার করে। ১৮৬৪-এর আম্বালা বিচার এবং ১৮৬৫-এর পাটনা বিচারে এবং ১৮৯০-এর মালদহ বিচারে আহমদতুল্লা, ইয়াহিয়া আলি, মহম্মদ জাফর, মহম্মদ সাফত, আমিরুদ্দীন এবং অন্যান্যদের  যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। রাজমহল বিচারে (১৮৭০) প্রখ্যাত ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা ইসলামপুরের ইব্রাহিম মণ্ডল যাবজ্জীবনের সাজা পেয়ে আন্দামানে প্রেরিত হন। আরো দুজন নেতা আমির খান ও হাসমৎ খান’এরও একই দশাপ্রাপ্তি হয়। পাবনার বাঙালি ওয়াহাবি, আরিফ আলি এবং তবারক আলি’কেও যেতে হয়েছিল আন্দামানে। এইসময় ওয়াহাবি আন্দোলনের ২২ জন নেতাকে আন্দামানে পাঠানো হয়।

পাঞ্জাবের ভাইনিতে ১৮৫৭ সালে সতগুরু রাম সিং’য়ের নেতৃত্বে শুরু হয় ব্রিটিশ বিরোধী  ‘কুকা’ বা ‘নামধারী’ আন্দোলন। ১৮৭০-৭১ সালে ব্রিটিশরা যখন এঁদের সম্পর্কে অবহিত হয়, ততদিনে পাঞ্জাব ছাড়াও ভারতের অন্যান্য প্রদেশে নামধারী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।  ১৮৭১-এর প্রথম দিকে নামধারী ব্রহম সিং অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ কুকা অনুগামীদের ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের ডাক দেন। ব্রিটিশরা এঁদের অভিপ্রায় আন্দাজ করে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৭১ কনস্টেবল লাল সিং নামধারীর ফাঁসি হয়। এই সময়ে লহনা সিং ও লাহিয়া সিং সহ ১১ জন নামধারীর আন্দামানে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আদেশ হয়।

আরও পড়ুন
কালকূট খাওয়ালেন দুর্যোধন, গঙ্গার তীরে বেহুঁশ মহাপরাক্রম ভীম

১৮৫৯ সালের ১ এপ্রিল ডাঃ  ওয়াকার খবর পেলেন যে কয়েদিরা তাঁকে প্রাণে মারার ফন্দি আঁটছে। সত্যি সত্যি প্রায় শ’দুয়েক কয়েদিদের একটি দল একদিন আক্রমণ চালাল কিন্তু আগাম খবরা থাকার কারণে ডাঃ ওয়াকার পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচালেন আর ব্রিটিশ সৈন্যদল সেই আক্রমণ প্রতিহত করল। যারা ধরা পড়ল তাদের শাস্তির মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেল বটে কিন্তু ওয়াকারের প্রাণের ভয় গেল না।  ৩ অক্টোবর, ১৮৫৯-এ ডাঃ  ওয়াকার ক্যাপ্টেন হাফটনকে কার্যভার বুঝিয়ে দিয়ে আন্দামান থেকে বিদায় নিলেন।  হাফটন আবার বিদায় নিলেন ১৮৬২-তে। এলেন আর. সি. টাইটলার।

টাইটলার ছিলেন বন্দিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তিনি সাধারণভাবে জঙ্গল পরিস্কার করে জমি চাষযোগ্য করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনিই দক্ষিণ আন্দামানে পোর্টব্লেয়ারের উল্টোদিকের পাহাড়ের চূড়াটির নাম রেখেছিলেন তাঁর স্ত্রীর নামে, মাউন্ট হ্যারিয়েট। এটি দক্ষিণ আন্দামানে সব থেকে উঁচু পাহাড়ের চূড়া।

আরও পড়ুন
‘ঈশ্বর’-এর প্রবেশ ও প্রস্থান

অনেক আগে থেকেই মূল ভূখন্ডে যে সমস্ত অপরাধী খুন-জখম-হামলার অপরাধে ধরা পড়ত এবং ফাঁসি থেকে রক্ষা পেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হত, তাদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ থকে ৪৫-এর মধ্যে এবং যারা শারীরিকভাবে সুস্থ তাদের পাঠানো হত আন্দামানে। আবার অনেক মহিলা অপরাধী, যাদের জন্য কঠিন শাস্তি বরাদ্দ হত তাদেরও পাঠানো হত আন্দামানে। এই মহিলা কয়েদিদের সেখানে আলাদা থাকার ব্যবস্থা, আলাদা কাজের জায়গা। এদের মধ্যে যাদের পাঁচ বছরের বেশি দণ্ডভোগ করা হয়ে যেত এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকত না, তাদের জেলের বাইরে বিভিন্ন ব্রিটিশ আধিকারিকদের বাড়িতে ঘরের কাজ করতে অনুমতি দেওয়া হত। আবার যে সব মহিলারা বিবাহযোগ্য, তাদের বিয়ের ব্যবস্থাও করেছিলেন টাইটলার।  

পুরুষ কয়েদিদের বেলায় চারটি শ্রেণী ছিল। নিজেদের স্বভাব-আচরণ, কর্মদক্ষতা প্রমাণ করে তারা ধীরে ধীরে চতুর্থ থেকে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হত। সলিটারি সেল থেকে ব্যারাক, সেখান থেকে অন্যান্যদের সঙ্গে কাজ করা, কঠিন পরিশ্রমসাধ্য কাজ থেকে ক্রমশ হাল্কা কাজের বরাত পাওয়া এইভাবে ধীরে ধীরে উন্নীত হতে হতে তারা যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদি হিসাবে মর্যাদা পেত তখন তাদের জন্য বরাদ্দ হত সামান্য কিছু ভাতা। এই রোজগারে তারা এখন নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে ও ব্যাঙ্কে টাকা জমাতে পারত। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদিদের নিযুক্ত করা যেত সরকারি বা অন্য কারো ব্যক্তিগত কাজে। এইভাবে  সবশুদ্ধ দশ বছর কেটে গেলে প্রথম শ্রেণীর কয়েদি হিসাবে তাদের ‘স্বাবলম্বী’ বলে ঘোষণা করে ‘ছুটির টিকিট’ দেওয়া হত। এই টিকিট পেয়ে তারা জেল থেকে বেরিয়ে বাইরে ‘স্বাবলম্বন গ্রাম’এ চলে যেত। এখন তারা স্বাধীন ভাবে জমিতে চাষবাস, পশুপালন করে রোজগার করতে পারে। আবার কোনো ব্রিটিশ আধিকারিকের কাজে বা সরকারি দপ্তরে নিযুক্তও হতে পারে। এই সময় তারা অনুমতি পেলে বিয়েও করত। তবে তারা কিন্তু সেই অর্থে মুক্ত নয় অর্থাৎ তারা আন্দামান ছেড়ে চলে যেতে পারত না। বড়জোর এখন তারা নিজের দেশে তাদের পরিবারকে নিজেদের রোজগারের একটা অংশ পাঠানোর অনুমতি পায়।

১৮০৭ সালের ১৯-এ মে সাউথ পয়েন্টে, সমুদ্রের ধারে প্রথম মহিলাদের জন্য জেলখানা স্থাপিত হয়। প্রথম ১৫ জন মহিলা কয়েদিদের দল ১০ ডিসেম্বর ১৮০৭-এ আন্দামানে পা রাখে। এরপর ১৮৬০-৬১ সালের মধ্যে অন্ততপক্ষে ১২৫ জন মহিলা কয়েদিকে আন্দামানে আনা হয়েছিল। মহিলা কয়েদিরা ছিল দুই শ্রেণীর। এখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদিরা নিজের কাজকর্ম দক্ষতার সঙ্গে করলে, স্বভাব-আচরণ সন্তোষজনক হলে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে পারত। এর দু’বছর পর বিবাহযোগ্য মহিলারা বিয়ে করার অনুমতি পেত।

আন্দামানে কয়েদিদের বিয়ের রীতিটা ছিল এরকম – যে সমস্ত পুরুষ কয়েদিরা জেলজীবন থেকে মুক্ত হয়ে বাইরে গেল, তারা ইচ্ছে করলে এবার মহিলা কয়েদিদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করতে পারে। তার জন্য তাকে আবেদন করতে হবে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। অনেকের আবেদনপত্র এলে পরে জেল কর্তৃপক্ষ একটা দিন ঠিক করে একটা ঘরে সমস্ত বিবাহেচ্ছুক পুরুষ কয়েদিদের ডেকে পাঠাবে। এবার মহিলা কয়েদিদের নিয়ে আসা হবে। সেখানে পুরুষ ও মহিলা কয়েদিদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পুরুষ কয়েদিদের অধিকার সর্বাগ্রে। প্রথমেই কোনো এক পুরুষ কয়েদি তার নিজের জন্য পাত্রী বেছে নেবার সুযোগ পাবে। এবার সেই পাত্রীর যদি পুরুষটিকে মনে ধরে তাহলে সে হ্যাঁ বললে বিয়ে পাকা। কিছুদিনের মধ্যে জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তাদের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিলে তারা নিজেদের মতো স্বাধীনভাবে ‘স্বাবলম্বন গ্রাম’এ যেখানে ইতিমধ্যে পুরুষটি বাড়ি বানিয়েছে সেখানে গিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারবে। এইভাবেই আন্দামানে গড়ে উঠতে শুরু করল ‘পেনাল সেটেলমেন্ট’।

যে সমস্ত পুরুষ কয়েদি বিবাহিত হবার পর মূল ভূখণ্ড থকে দণ্ড ভোগ করতে এই দ্বীপে এসেছিল এবং পাঁচবছরের বেশি কারাদণ্ড ভোগ করে ‘স্বাবলম্বী’ হয়েছিল, তাদের অবস্থা হয় সব থেকে করুণ। এখানে এমনিতে পুরুষ কয়েদিদের তুলনায় মহিলা কয়েদির সংখ্যা কম, তাই সেই সব বিবাহিত কয়েদিদের আবার বিয়ে করার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য তারা এবার মনে করলে দেশ থেকে তাদের পরিবারকে আনিয়ে নিতে পারে। কিন্তু সাগর পার হওয়া মানে তখনকার দিনে জাতচ্যুত হওয়া তাই কারোরই স্ত্রী দেশ থেকে এখানে আসতে চাইত না। তখন কথাতেই বলা হত কালাপানি পার হওয়া মানেই ধর্মচ্যুতি – তা সে ইংল্যান্ড যাত্রাই হোক আর আন্দামানই হোক।

Powered by Froala Editor

Latest News See More