মুকুজ্জের দপ্তর – ৩
আগের পর্বে
বিদ্যাসাগর মৌলিক ফিকশনের থেকে অধিক যন্ত নিয়ে করেছিলেন অনুবাদের কাজ। তাঁর সৃষ্টি ‘বেতাল’ একটি স্বার্থক ভৌতিক মোটিফ। বঙ্কিমের সমকালীন লেখক পাঁচকড়ি দে রহস্য-গোয়েন্দা গল্পের জন্য মিথ হয়ে গেলেও তিনি উপহার দিয়েছেন একাধিক ভৌতিক গল্প। ‘সর্বনাশিনী’-তে সাইকিডেলিক প্রলাপ আর কবিতায় দমবন্ধ একটা সাসপেন্সের জন্ম দিয়েছিলেন। যা পশ্চিমী সাইকোলজিকাল হরের মতই চূড়ান্ত মরবিড।
হুনুর (ডিটেকটিভ) রবার্ট ব্লেককে নিয়ে ‘রহস্য লহরী’ সিরিজ লিখে যিনি বাঙালিশাবকের চিত্ত হরণ করেন, সেই দীনেন্দ্রকুমার রায় (১৮৬৯-১৯৪৩) ভূতের গল্পেও ছিলেন দড়। নমুনা হিসেবে পাচ্ছি ‘উৎপীড়িতের প্রতিহিংসা’ নামের একটা লেখা। এর প্রেক্ষাপট হচ্ছে ১৮৫৭ সালের ‘মহাবিদ্রোহ’ যা গপ্পের সাথেও চমৎকার জোড়কলম করেছে। নামেই বোঝা যায় এটি সোজাসাপ্টা ‘রিভেঞ্জ স্টোরি’ – যেখানে আততায়ী হল মানুষের বদলে প্রেত। গল্পের যা-কিছু উপাদান সবই আতঙ্ক তৈরিতে যথাযথ; তবু একে নিছক ভূতের গল্প বলতে দ্বিধা থাকছে।
বিলিতি গল্পের ছাঁচে এপিসোডিক লেখা, পর্যাপ্ত ডিটেল ও টানটান বর্ণনা। গপ্পো সরল তবু বলব দীনেন রায় জমিয়ে লিখেছেন। ...‘ভূত’টি ভয়ের হলেও আসলে সে-ই হচ্ছে ‘হিরো’, তার আচরণ বীরোচিত এবং যাকে-বলা-হয়-‘জাস্টিফায়েড’। স্বরাজ-চেতনার ইশারা এখানে লুকোনো নেই, পাঠকেরও ক্ষীণ সমর্থন তার পক্ষে থাকে। প্যাট্রিয়ট মানুষের কাহিনি তো অনেক শুনেছি, ‘উৎপীড়িতের...’ সেদিক থেকে একটি দৃষ্টান্ত কেননা তার ‘প্যাট্রিয়ট’ হল অশরীরী। ইভিল চরিত্র বরং যিনি সাঙ্গ হবেন সেই জলজ্যান্ত সাহেব নিজেই।