মুকুজ্জের দপ্তর : ২
আগের পর্বে
বাঙালি অথচ ব্রহ্মদত্যি, শাঁখচুন্নি, প্রেত, ডাইনি, পিশাচ, নিশি এসবের নাম শোনেনি— এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুর্লভ। গ্রাম বাংলাতে যেমন আছে, তেমন ডাহা শহরেও বেশ নামডাক রয়েইছে ভূতের। তবে একটু গ্রামের দিকে থমথমে পরিবেশ, নিশুত রাত, ঝিঁঝিঁর কনসার্ট একটু আলাদাই করে দেয় পরিস্থিতি। সে পরিস্থিতি নানানভাবে ফিরে ফিরে এসেছে বাংলার সাহিত্যে। হয়ে গেছে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। হুমায়ূন আহমেদ থেকে হুতোম প্যাঁচা সকলেই ঘুরে এসেছেন তার দপ্তর। বাংলায় ভয়ের সঙ্গেই মিশেছে মজা। বিদেশি হরর গল্প আর এই রোমহর্ষক গল্পের মধ্যে ফারাক আছে অবশ্যই। তবে বিদেশি ধাঁচে গল্প লেখার চেষ্টাও করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। শেষ করতে পারেননি। তা সম্ভব হলে বাংলা সাহিত্যের চিরকালীন এক সম্পদ হয়েই থাকত সেই রচনা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৌলিক ফিকশন তত লভ্য নয়, কিছু স্যাটায়ার গল্প যদি বাদ দিই। অনুবাদের কাজে তিনি অধিক যত্ন করেছেন, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ বইয়ের গল্পগুলি তারই স্মরণীয় নমুনা। এর মূল লেখা হিন্দিতে ও আরো আগে সংস্কৃত ভাষায় মেলে।
এই ‘বেতাল’ বস্তুটি (যাকে চাইলে আপনি ‘জিন্দা লাশ’ বলেও ডাকতে পারেন) - একটি সার্থক ভৌতিক মোটিফ। যদিও লেখক চাইছেন নীতিশিক্ষা, তা হলেও ছমছমে পরিবেশ আর কাহিনির টেনশন শিহরণ জাগায় ভরপুর। আমরা পাচ্ছি দুর্গম শ্মশান, নিশুতি রাত, বৃক্ষে ঝুলন্ত শব - যে পারে বিক্রমাদিত্যের কাঁধে চড়ে রগুড়ে আলাপ করে উঠতে (এবং ধাঁধা-গল্পের উত্তর মিললে খিলখিলিয়ে হেসে গাছে ফিরে যেতেও) এবং অকুতোভয় রাজা বিক্রম - যিনি প্রতিবারই তাকে হরণ করে নিয়ে আসেন ও ধাঁধাগুলির ঠিক ঠিক উত্তর দিয়ে যান (যেখানে ভুল উত্তর দিলেই রয়েছে তাঁর ‘খবর’) ... আতঙ্কের কোনও অভাবই হয় না বলতে গেলে। অ-মৌলিক ও অনূদিত ‘বেতাল...’ বাঙালির ভূতুড়ে পাঠ-অভ্যাসে একটা ফ্রেম কিংবা গড়ন তৈরি করে দিয়েছে নিঃসন্দেহে।