অভিভাবকহীন সমস্ত শিশুর ‘ইন্টারনেট ফাদার’ রব কেনি

স্কুলে যাওয়ার আগে টাই বা জুতোর ফিতে বাঁধা হোক, বা টয়লেটের ফ্ল্যাশ ঠিক করা – বাবা-মা থাকতে এইসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয় না ছোটোদের। কিন্তু যারা জীবনে তেমন অভিভাবক পায়নি, তাদের কাছে এইসব ছোটোখাটো বিষয়ই হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে বড়ো যুদ্ধ। তবে সেইসব শিশুদের জন্যই এবার এগিয়ে এসেছেন রব কেনি (Rob Kenney)। আমেরিকা এবং অন্যান্য অনেক দেশেই তাঁকে মানুষ চেনেন ‘ইন্টারনেট ফাদার’ (Internet Father) নামে। সত্যিই বাবার ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের সাহায্যে ছোটোদের শেখাচ্ছেন টুকিটাকি সমস্ত বিষয়। এমনকি যাদের কাছে ইন্টারনেট পরিষেবা নেই, তাদের জন্য আস্ত একটি বইও লিখে ফেলেছেন রব। নাম দিয়েছেন ‘ড্যাড, হাউ ডু আই!’ (Dad, How Do I!)।

করোনা অতিমারীর ঠিক পরেই ইউটিউবে ‘ড্যাড, হাউ ডু আই!’ নামে একটি চ্যানেল খুলে ফেলেছিলেন রব। প্রথম ভিডিওতে শিখিয়েছিলেন টয়লেটের ফ্ল্যাশ ঠিক করার পদ্ধতি। এরপর একে একে দৈনন্দিন জীবনের নানা টুকিটাকি বিষয় শিখিয়ে চলেছেন তিনি। এমনকি একটু বড়ো কিশোর কিশোরীদের জন্য শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের মতো জটিল বিষয় সম্বন্ধেও ভিডিও বানিয়েছেন তিনি। আর দেখতে দেখতে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে তাঁর এই চ্যানেল। বর্তমানে তাঁর দর্শক সংখ্যা কোটির অঙ্ক ছাড়িয়েছে।

তবে জনপ্রিয়তার আকর্ষণে এই চ্যানেল খোলেননি রব। বরং তাঁকে তাড়া করত শৈশবের স্মৃতি। রবের বয়স তখন মাত্র ১৪। সেই সময় তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। মা ছিলেন মদ্যপ। তাই আদালত তাঁকে সন্তানের দায়িত্ব দিতে রাজি হয়নি। এদিকে বিবাহবিচ্ছেদের কিছুদিনের মধ্যেই অন্য এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর বাবার। সন্তানদের ফেলে রেখে সেই মহিলার সঙ্গে তিনিও বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে তো পড়তে হয়েছেই। তার চেয়েও বেশি কঠিন ছিল অভিভাবকহীনতা। ভাই-বোনরা নিজেরাই একটু একটু করে শিখতে শুরু করেন দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত বিষয়। আর প্রত্যেকেই জানতেন, তাঁরা বড়ো হলে তাঁদের বাবা-মায়ের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে উঠবেন না।

পড়াশোনা শেষ করে সিয়াটেল শহরে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ শুরু করেন রব। বিবাহও করেন। দুই সন্তান নিয়ে সুখী পরিবার গড়ে ওঠে। তাঁর ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হননি। কিন্তু রবের মনে হয়, পৃথিবীতে অনেক শিশুই তো বাবা-মায়ের স্নেহ পায় না। কেউ হয়তো বাবা-মায়ের পরিচয়ই জানে না। আবার কারোর বাবা-মা তাঁর বাবা-মায়ের মতোই দায়িত্বজ্ঞানহীন। তাই তাদের জন্যই একদিন শুরু করে দেন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের কাজ। ২০২০ সালের মে মাস থেকে প্রতি মাসে একটি করে ভিডিও পোস্ট করে চলেছেন তিনি। অভিভাবকহীন সমস্ত শিশুর বাবার ভূমিকা পালন করছেন রব। এতেই তাঁর তৃপ্তি।

Powered by Froala Editor