নদীকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে লড়াই ‘যোদ্ধা’দের

কাজটা নেহাত সহজ ছিল না। ইন্দোনেশিয়ার সমস্ত নদীকে মুক্তি দিতে হবে প্লাস্টিকের আবর্জনা থেকে। বাঁচিয়ে তুলতে হবে ম্যানগ্রোভ অভয়ারণ্য। অথচ বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই দেশবাসীর। তবে উপায়? এগিয়ে এলেন তিন ভাই-বোন। পণ করলেন দেশের নদীদের প্লাস্টিক মুক্ত করে তবে বিশ্রাম নেবেন।

যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ২০২০-র অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার যুবক স্যাম বেঞ্চেঘিব (Sam Bencheghib) গড়ে তুললেন ‘সুঙ্গাই ওয়াচ’ (Sungai Watch) নামের একটি সংগঠন। সঙ্গী পেলেন তাঁর ভাই গ্যারি ও বোন কেলি-কে। ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় ‘সুঙ্গাই’ শব্দের অর্থ ‘নদী’। নিজেদের তাঁরা আখ্যা দিলেন— ‘নদীর যোদ্ধা’।

তিনজনেরই বেড়ে ওঠা বালি শহরে। ছোটো থেকেই দেখে আসছেন ইন্দোনেশিয়ার নদীদের কীভাবে ধীরে ধীরে হত্যা করছে প্লাস্টিকদূষণ। প্রত্যেক সপ্তাহে এক একেকটা গ্রাম থেকে প্রায় ২০০০ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক নদীপথে পৌঁছে যাচ্ছে সমুদ্রে। সাগরপার ভরে যাচ্ছে আবর্জনায়। সমুদ্রে ঘেরা তাঁদের সুন্দর দেশটিকে যেন প্লাস্টিকে গিলে খাচ্ছে। অবশ্য ‘সুঙ্গাই ওয়াচ’ তৈরি করেও প্রাথমিকভাবে কোনো ফল মেলেনি। তাঁরা মাত্র তিনজন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কোনোটাই তাঁদের কাছে নেই। নদীবক্ষে প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে দেশবাসীর মধ্যেও নেই কোনো সচেতনতা।

আরও পড়ুন
জলের পাউচ বাড়াচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ পদক্ষেপ ‘প্লাস্টিক ম্যান’-এর

তবে তাঁরা হাল ছাড়েননি। নদীতে নেমে নিজেরাই পরিষ্কার করতে লাগলেন প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যপদার্থ। পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। নদীগুলির গুরুত্বপূর্ণ মুখগুলিতে তাঁরা বসিয়ে দিলেন একধরনের বাঁধ। আটকে গেল প্লাস্টিকের যাত্রাপথ। তারপর জমা প্লাস্টিক পরিষ্কার করে নদীর স্বাভাবিক রূপ ফিরিয়ে দেন। এভাবে গত তিনবছরে প্রায় দেড় লক্ষ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক নদী থেকে পরিষ্কার করা হয়েছে। ১৮০-টির মতো বাঁধ বসিয়ে প্লাস্টিকমুক্ত করেছে অসংখ্য নদী। সম্প্রতি সম্পূর্ণ একটি প্লাস্টিকমুক্ত নদী থেকে বাঁধ খুলেও নিয়েছে তাঁরা। 

আরও পড়ুন
১০ বছরে হিমালয় থেকে ৬০ লক্ষ কেজি প্লাস্টিক অপসারণ, নজির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার

ক্রমে হাতে হাত রেখে বেড়েছে ‘সুঙ্গাই ওয়াচ’-এর পরিচিতি। ‘নদী যোদ্ধা’-র সংখ্যা তিন থেকে বেড়ে হয়েছে নব্বই। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে নদীসাফাইয়ের কাজ চলছে তীব্র গতিতে। আপাতত দেশজুড়ে এরকম ১০০০টি বাঁধ বসানোই তাঁদের লক্ষ্য। খুশির খবর এটাই যে দেশবাসীও এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছে সাহায্যের জন্য। অকারণে প্লাস্টিক ফেলে দূষিত করছে না নদীদের। ইন্দোনেশিয়ার নদীতে ফিরে এসেছে হারিয়ে যাওয়া মাছের ঝাঁক। নতুন করে সেজে উঠছে সমুদ্রতীরবর্তী ম্যানগ্রোভ অরণ্য। 

ইউনাইটেড ন্যাশনের পক্ষ থেকে এবছরের বিশ্ব যুব দিবস উদযাপন করা হচ্ছে পরিবেশ-সচেতনতাকে মাথায় রেখে। সারা বিশ্বজুড়েই স্যাম, গ্যারি, কেলি-দের মতো এরকম অসংখ্য মানুষ লড়ে যাচ্ছেন প্রকৃতিকে আরও সবুজ করে তুলতে। স্যাম বেঞ্চেঘিব-রা মনে করেন যে কোনো ভাবনাসূত্র দিয়েই পৃথিবী বদলে ফেলা যায়। আর সেটা তাঁরা করে দেখাচ্ছেনও।

Powered by Froala Editor