নদীর ওপর সড়ক। আর সেই সিদ্ধান্ত ঘিরেই বিতর্ক। ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে দেরাদুনের রিস্পানা এবং বিন্দাল নদীদুটির উপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে চলেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। এবং সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হয়েছেন অধিবাসী ও পরিবেশকর্মীরা।
রিস্পানা ও বিন্দাল– দুটি নদীই ক্রমশ মৃত্যুগামী। এদের মধ্যে রিস্পানার উৎস মুসৌরির লাল টপ্পা টিলায়। সেখান থেকে ম্যাসে ও শিখর জলপ্রপাত প্রদক্ষিণ করে দেরাদুনে প্রবেশ করে এই নদী। তারপর আমওয়ালা আর তপোবন পেরিয়ে, আজবপুরের কাছে বিন্দালে মেশে রিস্পানা।
অপরদিকে, গ্রীষ্মে জল নেমে যায় বিন্দালের। বর্ষায় সে দেরাদুনকে বাঁচায়, বন্যার হাত থেকে। দুটি নদীই শহরের প্রাণ। রিস্পানা মাটির উপর ও নিচ, দুভাবেই প্রবাহিত হয়। ফলে দেরাদুন শহরের ভুগর্ভস্থ জলের যোগানদার এই নদীটি। সম্প্রতি রাজপুর খালের দৌলতে মধ্য-দেরাদুনেও ঢুকেছে রিস্পানার জল। পাশাপাশি নদীতীরে ছোটো ছোটো ধানক্ষেতেও জলের প্রধান উৎস এই নদীটি।
দুন সায়েন্স ফোরামের কো-অর্ডিনেটর বিজয় ভট্ট দেখেছেন এককালীন স্ফটিক-স্বচ্ছ রিস্পানাকে বর্জ্যের পাহাড়ে পথ হারাতে। শহরবাসীরা রিস্পানাার জলে ছুঁড়ে ফেলছে ময়লা। নদীর পাড়ে গজিয়ে উঠেছে বেআইনি জনবসতি। অতিদ্রুত নগরায়ণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অনেকেই। ফলে একশো মিটার চওড়া নদীটি পরিণত হয়েছে মাত্র ১০-২০ মিটারের সরু খালে।
বেড়ে চলেছে শহরের জল সংক্রান্ত সমস্যাও। এই বছরেরই মার্চ মাসের একটি রিপোর্ট বলছে, দিনে ৩২৪.৯১ মিলিয়ন জল দৈনিক প্রয়োজন দেরাদুনের। সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২৭৫. ১২ মিলিয়ন লিটার জল। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে শহরের ভুগর্ভস্থ জলও নেমেছে ব্যাপক হারে।
শহরবাসীদের আর্তির উত্তরে, মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং জানিয়েছিলেন ‘মিশন রিস্পানা’র কথা। যেখানে নদীর পাড় বেয়ে পোঁতা হবে প্রায় আড়াই লক্ষ গাছ। ধুঁকতে থাকা নদী আবার ফিরে যাবে ‘ঋষিপর্ণা’র টলটলে কলেবরে। কিন্তু উন্নয়নের চাপে সেই মিশন বন্ধ। ফলে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ৪,৫২৫.৫৩ কোটি এবং ৪৯২৭.১৮ কোটির দুটি রাস্তা নির্মাণের ফরমান জারি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেরাদুনবাসী।
Powered by Froala Editor