নদী বাঁচাতে চাকরি ছেড়ে সাইকেলে ভারতভ্রমণ বঙ্গসন্তানের

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা নদীর দূষণের মাত্রা আমাদের ভাবাচ্ছে। ভাবিয়েছিল সম্রাট মৌলিককেও। কিন্তু আশেপাশের মানুষদের মধ্যেও সেই ভাবনাটা জাগাতে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে শুধু নিজের এলাকা নয়, দেশের নানা জায়গায়, এমনকি বিদেশেও সেই ভাবনা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এই রিভার সাইক্লিস্ট।

স্কুলে রচনা লেখার সময় ভারতকে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই উল্লেখ করেছি নদীমাতৃক দেশ হিসেবে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কৃষ্ণা, কাবেরীর পাশাপাশি এখানে ছড়িয়ে রয়েছে নাম-না-জানা বহু নদী। ব্যাতিক্রম নয় এই পশ্চিমবঙ্গও। বর্তমানে এই নদীগুলোর দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে ক্রমশ। অতীতের বেশ কিছু নদীর আজ আর কোনও চিহ্ন পাওয়া যাবে না। এইসবের সম্পর্কে কতটা সচেতনতা ছড়াচ্ছে জনসাধারণের মধ্যে, সেই প্রশ্ন বারবার উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছিল সম্রাট মৌলিকের মনেও। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় এই মানুষটি সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়তেন সাইকেল নিয়ে। আর তার দরুণ তিনি দেখতে পেলেন নদীগুলোর করুণ চিত্র। গঙ্গার দূষণের কথা তো সর্বজনবিদিত। কিন্তু অন্যান্য নদীগুলির অবস্থা আরও ভয়ংকর। নিজের ভবিষ্যৎ, নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়েছিলেন সম্রাট। ঠিক করলেন, এই দূষণের কথা লোকজনের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আরও সচেতন করতে হবে তাদের।

যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। ২০১৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সম্রাট। নদীর ক্ষয়, গাছ কমে যাওয়া, দূষণ সমস্ত কিছুর বাস্তবিক চিত্রটা দেখতে পেলেন তিনি। কথা বললেন সেই মানুষদের সঙ্গে, যারা নদীর ওপর নির্ভরশীল। তাঁর প্রথম অভিযান ছিল গঙ্গাকে নিয়েই, যেটা শেষ হয়েছিল বাংলাদেশে। পরবর্তীকালে নানা জায়গায় ঘুরেছে তাঁর সাইকেল, দেখেছে ‘নদীমাতৃক’ ভারতের করুণ পরিণতি। এমনকি যে ডাল লেককে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার বলে দেখি আমরা, সেই ডাল লেকও দূষণের এই ভয়াবহতার বাইরে নেই। সম্রাটের মতে, এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সবার আগে নদীকে ‘দেবী’ ভাবা বন্ধ করতে হবে। নদীকে যদি ‘নদী’ হিসেবেই দেখে সবাই, আর যত্ন নেওয়া আরম্ভ করে, তাহলেই কাজটা অনেক এগোবে। নয়ত যে নদীর পাশে একদিন ভারতের উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, এবং প্রতিদিন আরও ‘উন্নতি’ করছে, সেইসব মুছে গেলে আখেরে মুখ থুবড়ে পড়বে সেই সভ্যতাই।