শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ উপন্যাসের বরদাচরণ চরিত্রটার কথা মনে আছে? মূলত গরু চুরি কিংবা গরু হারিয়ে যাওয়ার মামলায় রীতিমতো নামডাক করেছিল স্বঘোষিত গোয়েন্দা বরদাচরণ। তবে বাস্তবে কি এমন চাকরি হয়? হ্যাঁ, চিনের পরিস্থিতি এখন তেমনই। সাম্প্রতিক পোষ্য লোপাট হওয়ার তদন্তে সেখানে রীতিমতো কদর বেড়েছে ‘পেট ডিটেক্টিভ’-দের (Pet Detectives)। কাজ নিখোঁজ পোষ্যদের খুঁজে বের করা।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষত করোনাভাইরাস মহামারী চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন পোষ্য প্রাণী দত্তক নেওয়ার চল বেড়েছে গোটা চিনে (China)। শুধুমাত্র ২০২১ সালেই প্রায় ৭ কোটি মানুষ কুকুর বা বেড়াল দত্তক নিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য প্রাণী বা পাখি তো আছেই। নিঃসঙ্গতা কাটাতেই মানুষ ক্রমশ ঝুঁকছে পোষ্যের দিকে। তবে বেশিরভাগ পোষ্য-মালিক পোষ্য-পালন কিংবা তাদের চরিত্রের ব্যাপারে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নয়। ফলে, পোষ্য পালানো বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিগত দু’বছরে।
বাড়ির প্রিয়জন নিখোঁজ হলে মানুষ দ্বারস্থ হয় থানার। কিন্তু পোষ্য নিখোঁজের ক্ষেত্রে সে-সুযোগ নেই। পুলিশ তো বটেই, পোষ্যের অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ কোনো দপ্তরও নেই চিনের প্রশাসনিক ব্যবস্থায়। তাই বাধ্য হয়েই প্রাইভেট ডিটেক্টিভদের কাছে দ্বারস্থ হতে শুরু করেন চিনের সাধারণ মানুষ। জন্ম নেয় ‘পেট-ডিটেক্টিভ’ নামের এক আশ্চর্য চাকরি। তবে খুব কিছু সহজও নয় এই কাজ। ভিড় রাস্তায় বা শহরাঞ্চলে ছোট্ট কুকুর কিংবা বেড়ালকে খুঁজে বার করতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় এই গোয়েন্দাদের। সন্দেহজনক পোষ্যের দর্শন পেলে সরাসরি তার ছবি দেখানো হয় মালিককে। তিনি নিশ্চিত করলেই শুরু হয় উদ্ধারকার্য।
অবশ্য হারিয়ে যাওয়া পোষ্যকে উদ্ধার করাই শুধু কাজ নয় ‘পেট ডিটেক্টিভ’-দের। পোষ্যের সম্পর্কে মালিকদের ওয়াকিবহাল করা এবং যত্ন-পরিচর্যার মতো বিষয়গুলিতেও রীতিমতো ক্লাস করান পোষ্য-গোয়েন্দারা। সাংহাই, বেজিং, শেনজেং, নানজিয়াং-সহ চিনের বড়ো বড়ো শহরগুলিতে গড়ে উঠেছে পোষ্য-ডিটেক্টিভদের অফিস। সারাদিনই প্রায় পরিষেবা পাওয়া যায় তাঁদের। তবে শুধু চিনই নয়, আগামীদিনে গোটা বিশ্বেই চাহিদা বাড়বে এই পেশার, জানাচ্ছেন চিনের পোষ্য-গোয়েন্দারা। অবশ্য বাংলাতেও তাঁদের আধিপত্য ছড়িয়ে পড়লে, বরদাচরণের নামডাকে টান পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…
Powered by Froala Editor