করোনার দাপটে থমকে গেল রিও ডি জেনেইরো কার্নিভাল, ১০০ বছরে এই প্রথম

কলকাতায় এখনও ধন্দ কাটছে না মহামারীর আবহে বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপুজোর আয়োজন নিয়ে। ঠিক সেই সময়েই পিছিয়ে গেল পৃথিবীর উল্টোপ্রান্তে আয়োজিত বিশ্বের বৃহত্তম উৎসব রিও ডি জেনেইরো কার্নিভাল। এই উৎসবের মেজাজকে দমাতে পারেনি বিশ্বযুদ্ধও। এমনকি ব্রাজিলে দু’ দশক স্বৈরাচার চলাকালীনও অব্যাহত ছিল এই উৎসব। গত এক শতকে এই প্রথমবারের জন্য ভাইরাসের দাপটে ছেদ পড়ল কার্নিভালে। এর আগে শেষ ১৯১২ সালে রিও’র মেয়রের মৃত্যুতে বন্ধ হয়েছিল কার্নিভাল।

রিও লিগ অফ সাম্বা স্কুল গতকাল ঘোষণা করে করোনা পরিস্থিতির জেরেই এই বছর আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না রিও কার্নিভাল। প্রতিবছর কার্নিভালে অংশ নেন ২২ লক্ষাধিক মানুষ। এই বিপুল পরিমাণ মানুষের ঢল রাস্তায় নামলে, সংক্রমণ যে কয়েকগুণ ত্বরান্বিত হবে, সেই সম্ভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে ব্রাজিল এখনও বিশ্বের তৃতীয় স্থানে। এখনও অবধি সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে ৪৬ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের। যা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। 

কার্নিভালে রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান এবং বিখ্যাত প্যারেডের সঙ্গেই আয়োজিত হয় নানান স্ট্রিট-পার্টি। কার্নিভাল বন্ধ থাকলেও স্ট্রিট-পার্টিগুলি এই বছর আয়োজনের অনুমতি মিলবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও কিছু পরিষ্কার করেনি ব্রাজিলের প্রশাসন। 

তবে কার্নিভালের ভবিষ্যৎ এই বছর অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় বড়ো ধাক্কা আসতে চলেছে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে, তা বলাই বাহুল্য। শুধু ব্রাজিল নয়, বরং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন এই উৎসবের টানে। এবার ভাঁটা পড়তে চলেছে সেই জায়গাটাতেই। এই উৎসবের উপরেই উপার্জনের জন্য ভরসা করে থাকেন বহু শিল্পী, হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ। কার্নিভাল বন্ধ হওয়ায় সংকটে পড়তে চলেছেন তাঁরাও। কার্নিভালের প্রতিটা দিন ব্রাজিলের অর্থনীতিতে যোগ করে প্রায় ৭২.৫ কোটি মার্কিন ডলার। সেই ক্ষতস্থন কীভাবে পূরণ হবে তা-ই এখন অনিশ্চিত। 

১৬৪০ সাল থেকেই ইতিহাসে উল্লেখ পাওয়া যায় কার্নিভালের। অবশ্য সুরাপানের গ্রিক দেবতাকে সম্মান জানিয়েই তখন পালিত হত এই উৎসব। পরবর্তীকালে আঠারোর শতকে পর্তুগিজ উৎসব ‘এনট্রুডো’-র ধাঁচেই জন্ম নিয়েছিল এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব, ১৭২৩ সালে। ধীরে ধীরে কার্নিভালের সঙ্গে মিশে ব্রাজিলের সংস্কৃতি, সাম্বা এবং পাখির বেশে সজ্জার রীতি। 

গত বৃহস্পতিবারই জের বলসোনারো ঘোষণা করেছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যেই দেশের ১০ শতাংশ মানুষের জন্য তিনি নিশ্চিত করে ফেলছেন ভাইরাসের ভ্যাকসিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্রাজিলের জনগণ আস্থা পাচ্ছেন না তাঁর কথায়। এই বছরের মতো পরের বছরও যে অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে কার্নিভালের ভাগ্য, তা উঠে আসে রিও লিগ অফ সাম্বা স্কুলের এক আধিকারিকের কথায়। স্পষ্টত সারা বিশ্বের মানুষরা যতদিন এই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করতে পারছেন, ততদিন কার্নিভালের আয়োজন করা অনর্থক বলেই মনে করছেন তিনি...

আরও পড়ুন
জিডিপি নিম্নমুখী, তবু ঐতিহাসিক উন্নতি ব্রাজিলের দারিদ্র্য-হারে

Powered by Froala Editor