রিক্সাচালকের জীবন পেরিয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রের উদ্ভাবক; এক রূপকথার জার্নি

রোজগারের আশায় একদিন গ্রাম ছেড়ে দিল্লি শহরে পাড়ি দিয়েছিলেন ধরমবীর কম্বোজ। সেখানে রোদে ঘেমে সাইকেল-রিক্সা টেনেছেন। আবার সব ছেড়ে গ্রামে ফিরে এসেছেন কৃষিকাজের টানে। আর সেইসঙ্গে চলেছে কৃষিকাজ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা। আবিষ্কার করেছেন এক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র। আর আজ দিল্লির সেই রিক্সাচালক একজন লাখপতি। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র বিক্রি করে এবং কৃষিকাজ করেই বছরে অন্তত ২০-২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি। ২০১৩ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও। ধরমবীর কম্বোজ (Dharambir Kamboj), ওরফে কিষান ধরমবীরের হাত ধরে আজ নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন হরিয়ানা (Haryana) এবং অন্যান্য রাজ্যের বহু কৃষক।

১৯৬৩ সালে হরিয়ানার দামাল গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম ধরমবীরের। কিছু জমিজমা আর একটি গম পেষাইয়ের কল, এই ছিল পারিবারিক সম্পত্তি। বেশ অল্প বয়সেই গম ভানার যন্ত্র চালাতে শিখে গিয়েছিলেন তিনি। প্রযুক্তির দিকে আগ্রহ জন্মায় সেই সময়েই। স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষকের উৎসাহে সেই আগ্রহ আরও বাড়তে থাকে। ঘরের নানা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি করেছেন নিজেই। তবে প্রথাগত পড়াশোনা বেশিদিন চালাতে পারেননি। দশম শ্রেণিতেই শেষ হয় পড়াশোনা। তখন বাড়িতে মা এবং বোন একসঙ্গে অসুস্থ। মা মারা গেলেন ১৯৮৪ সালে। অবশ্য বোন বেঁচে গেলেন। এই সময়েই রোজগারের আশায় দিল্লি চলে যান ধরমবীর। সেখানে রিক্সা চালিয়ে কিছু রোজগার হত। তবে পড়াশোনার নেশা পুরোপুরি ছাড়তে পারলেন না। প্রায়ই চলে যেতেন পাবলিক লাইব্রেরিতে। সেখানে কৃষিকাজ সংক্রান্ত বইয়ের প্রতিই তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি।


লাইব্রেরিতে বসেই তিনি জানতে পারলেন, ব্রকোলি, অ্যাস্পারগাস, লেটুসের মতো শাকসবজি, বাজারে যা চড়া মূল্যে বিক্রি হয়, তাও চাষ করা যায় অতি সহজেই। তাই ১৯৯০ সাল নাগাদ ঠিক করলেন, আবার গ্রামে ফিরে যাবেন। ফিরেও গেলেন। চাষ-আবাদ শুরু করলেন। প্রথমে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলেও ১৯৯৪ সালের মধ্যেই তিনি অর্গ্যানিক ফার্মিং শুরু করলেন। পাশাপাশি নানা সেমিনারেও যেতেন নতুন নতুন পদ্ধতি শিখতে। ২০০২ সালে এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে জানতে পারলেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রের বিষয়ে। নানারকম ফলমূল, শাকসবজি বা ঔষধি গাছ থেকে বাণিজ্যিক পণ্য তৈরি করা যায় অতি সহজে। কিন্তু তার দাম ৫ লক্ষ টাকা। ধরমবীরের মতো দরিদ্র কৃষকরা সেই যন্ত্র কিনবেন কীকরে?

আরও পড়ুন
কৃষিকাজে সাশ্রয় ঘটাতে বিস্ময়কর আবিষ্কার ৭১ বছরের কৃষকের

শেষ পর্যন্ত নিজেই বানিয়ে ফেললেন একটি অপেক্ষাকৃত ছোটো আয়তনের যন্ত্র। নিজে তো প্রক্রিয়াকরণ শুরু করলেনই, সেইসঙ্গে যন্ত্র তৈরির কারখানাও বানিয়ে ফেললেন একটা। আজ তাঁর এই যন্ত্র আমেরিকা, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর নানা দেশে পাড়ি দেয়। পাশাপাশি ভারতের কৃষকদের বিনামূল্যে এই যন্ত্র চালনার প্রশিক্ষণও দেন ধরমবীর। সবচেয়ে বেশি জোর দেন মহিলা কৃষকদের প্রশিক্ষণে। এখনও অবধি অন্তত ৭ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। ধরমবীরের মতো যাঁরা কেবল পুঁজির অভাবে ব্যবসার ঝুঁকি নিতে ভয় পান, তাঁদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। তিনি যেমন পেরেছেন, তেমনই আরও অনেকেই সফল হতে পারবেন। প্রয়োজন শুধু সাহস নিয়ে কাজটা শুরু করা।

আরও পড়ুন
গণেশের আড়ালে বিপ্লবচেতনা, পরাধীন জাতিকে একসূত্রে বাঁধতেই শুরু ‘গণেশ উৎসব’

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গরম জলে গলে যাবে মুহূর্তেই, অভিনব জৈব প্লাস্টিক তৈরি বাঙালি উদ্ভাবকের