কলকাতা থেকে রিকশায় লাদাখ, দূষণমুক্ত পৃথিবীর লক্ষ্যে বিচিত্র অভিযান সত্যেন দাসের

“২০১৭ সালে যখন গিয়েছিলাম, লাদাখের আবহাওয়া বেশ খারাপ ছিল। তবে এবার আবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সম্ভব হলে জুন মাসেই পাড়ি দেব আবার। আর এবারে সঙ্গে থাকবে ২০ হাজার খেজুরের বীজ।” বলছিলেন সত্যেন দাস।

পর্বত অভিযান কোনো নতুন বিষয় নয়। কিন্তু কলকাতা থেকে রিকশা চালিয়ে পাড়ি দেওয়া যায় হিমালয়ের উদ্দেশে? ভাবতে অবেক লাগে নিশ্চই। তবে এই অবাক করা বিষয়কেই দুবার সম্ভব করে তুলেছেন সত্যেন দাস। দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা অঞ্চলের একজন সাধারণ রিকশা চালক তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম বেরিয়ে পড়েছিলেন লাদাখের উদ্দেশে। নিজের রিকশা নিয়ে চলে গিয়েছিলেন খার্দুং পাস। সঙ্গে ছিল খেজুরের বীজ। রাস্তার দুধারে সেইসব বীজ ছড়াতে ছড়াতে গিয়েছেন সত্যেন দাস। উদ্দেশ্য একটাই, দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা।

৯০-এর দশকে সাইকেল নিয়ে সারা ভারত ঘুরেছিলেন সত্যেন দাস। সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই রিকশা পরিক্রমার কথা ভেবেছিলেন তিনি। আর একবারেই চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই। অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর কথায় নাথুলা পাস যাওয়ার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বেরিয়ে পড়েছিলেন ২০১৬ সালে। কিন্তু সিকিম সরকার তাঁকে অনুমতি দেননি। ফলে সেই যাত্রা সফল হয়নি। ২০১৭ সালে আবার বেরিয়ে পড়ে লাদাখের উদ্দেশে। তবে সেবার খার্দুং পাস অবধি পৌঁছতে পারেননি। ফিরতে হল রোটাং পাস থেকেই। ফেরার সময় বিজ্ঞানী সোনম ওয়াংচু-র স্কুলে দিয়ে এলেন নিজস্ব রিকশা। আর কিছু না, তাঁর এই কাজের কথা শুনে অনুপ্রেরণা পাক মানুষ। শুরু হোক দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার কাজ।

তবে দূষণমুক্ত পৃথিবীই তো শেষ কথা নয়। চাই মানবতার পৃথিবী। সত্যেন দাস তাই বলছিলেন, “এবারে আমার প্রচার কর্মসূচিতে আরও একটা বিষয় যোগ করব। সবাইকে বুঝতে হবে, করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে থাকাও প্রয়োজন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের দিকেও।” তিনি নিজে অবশ্য এই মহামারী পরিস্থিতিতে নিজের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। যখন ভাইরাসের আতঙ্কে সাধারণ মানুষ হাসপাতাল থেকে দূরে সরে থাকছিলেন, তিনি তখন স্থানীয় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনা ভাড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন কর্মস্থলে। বছর পঞ্চাশের সত্যেন দাসের শরীরে আজও ক্লান্তি নেই। এই সময়ে দাঁড়িয়ে তিনি সত্যিই এক অনুপ্রেরণার নাম।

Powered by Froala Editor

More From Author See More