একসময়ে ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। যত্ন নিয়ে বড়ো করেছেন ছোটো ছোটো বাচ্চাদের। তাঁদের পড়িয়েছেন, বাড়তে দিয়েছেন। অবসরের পর সম্বল বলতে ছিল পেনশনের টাকা। সেটাই ছিল ভরসা। কিন্তু তারই মধ্যে রাজ্যে শুরু হল করোনার হামলা। চারিদিকে আতঙ্কের পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে নিজের পেনশনের এক লাখ টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দান করলেন শ্যামনগরের রানি ঘোষ।
রানিদেবী নিঃসন্তান। নিজের বলতে ছিলেন শুধু স্বামী। তিনিও চলে গেছেন কয়েক বছর আগে। এখন, নিঃসঙ্গ জীবন কাটে তাঁর। কিন্তু শ্যামনগরের পণ্ডিতপুকুরে যদি ঢোকেন, তাহলে ‘দিদিমনির বাড়ি’ বললেই এক কথায় সবাই দেখিয়ে দেবেন। শালবাগান প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন রানি ঘোষ। সেখান থেকেই অবসর নেন। এলাকার লোকেদের কাছে সম্মানীয়ও তিনি। অবসর হওয়ার পর, আর স্বামী চলে যাওয়ার পর পেনশনের টাকাই ছিল তাঁর সম্বল।
এরই মধ্যে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। পশ্চিমবঙ্গও সেই কবলে পড়ল। দেশজুড়ে ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে মারাও যাচ্ছে মানুষ। চারিদিকের এমন অবস্থা থেকে আর স্থির থাকতে পারলেন না রানিদেবী। সারাটা জীবন সমাজ গড়ার কাজ করে এসেছেন। পড়ুয়াদের বড়ো করেছেন, তাঁরা আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। আর চারিদিকে আজ এই অবস্থা! এমন পরিস্থিতিতে এক মুহূর্তও ভাবলেন না। নিজের শেষ সম্বল, পেনশনের এক লাখ টাকাও দিয়ে দিলেন রাজ্য সরকারকে। করোনা মোকাবিলায় যাতে তাঁর এই দান কাজে আসে এটাই চান। এরপর নিজে কীভাবে কাটাবেন, নিজের খাওয়া, চিকিৎসার কী হবে, সেই কথা ভাবলেন না এক মুহূর্তও। নিঃস্বার্থভাবে সমস্তটা দান করে দিলেন। এমন মানুষ আজকের দিনে সত্যিই খুব বিরল, তাই না!