সারারাত বিছানায় এদিক ওদিক করেও ঘুম আসে না। তারপর সারাদিন মাথাটা ধরে থাকে। মাঝে মাঝে হাতে-পায়ে লাল লাল র্যা শও বেরোয়। এমনই নানা সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে হাজির হয়েছেন এক প্রৌঢ়া। কিছুক্ষণ পরীক্ষা করার পরেই চিকিৎসক প্রশ্ন করলেন, আপনার স্বামী কি সম্প্রতি কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন? আর অদ্ভুতভাবে মিলে গেল সেই অনুমান। ভাবছেন নিছক কাকতালীয়? একেবারেই না। সদ্য অবসর নেওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রীদের এমন সমস্যা হতেই পারে। বিশেষ করে সেই স্ত্রী যদি এতদিন একাই সন্তানপালন থেকে ঘরের যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করে আসেন, তাহলে তো কথাই নেই। আর এই রোগের একটি নামও রেখেছেন চিকিৎসকরা। রিটায়ার্ড হাসব্যান্ড সিন্ড্রোম (Retired Husband Syndrome)। ইতিমধ্যে প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রোগ।
জাপানের চিকিৎসক নোবুও কুরোকাওয়া ৯০-এর দশকের গোড়াতেই এই রোগ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনিই এই রোগের নামকরণও করেন। দেখতে দেখতে গোটা দেশে বাড়তে থাকে রোগের প্রকোপ। একটি সমীক্ষায় বলছে, জাপানে ৪৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিবাহের ২০ বছর পর বা তারও পরে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটে। গার্হস্থ্য জীবনের প্রায় শেষে এসে এমন বিচ্ছেদের ঘটনা অবাক করে। তবে এর পিছনেও রিটায়ার্ড হাসব্যান্ড সিন্ড্রোমই দায়ী বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। ২০০২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল জাপানের ৬০ শতাংশ মহিলাই স্বামীর অবসরের পর এমন রোগে আক্রান্ত হন। বাকি ৪০ শতাংশ মহিলারা হয় যৌথ পরিবারে থাকেন, অথবা তাঁরা নিজেরাও কর্মক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন।
এই রোগ কিন্তু শুধু জাপানের সমস্যা নয়। ২০০৬ সালে আমেরিকাতেও ধরা পড়ে রিটায়ার্ড হাসব্যান্ড সিন্ড্রোমের প্রকোপ। এরপর একে একে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জার্মানির মতো নানা দেশে এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু কেন হয় এমন অদ্ভুত রোগ? এর কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকরা দিতে পারেননি। তবে অনেকের মতে বিষয়টার সঙ্গে মানুষের বদলে যাওয়া জীবনযাপন ভীষণভাবে জড়িয়ে। আজকের পৃথিবীতে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে এইসব পুরুষরা বাড়িতে সময় দিতে পারছেন না একেবারেই। অনেক সময়েই কাজের সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। ফলে গৃহপরিচালনার পুরোটাই স্ত্রীকে সামলাতে হয়। তিনি নিজের মতো করে পুরোটা সামলাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই অবসর গ্রহণের পর যখন স্বামী সারাদিন ঘরে থাকেন, তখন তাঁকে প্রায় অপরিচিত বলেই মনে হয়। আর একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকতে তো সমস্যা হবেই। তবে বিভিন্ন কেস রিপোর্ট থেকে দেখা গিয়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও মানিয়ে নিতে পারছেন না তাঁরা। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং ক্রনিক ডিপ্রেসনের শিকার হচ্ছেন মহিলারা। প্রাণ সংশয় না থাকলেও এই রোগ তাই বর্তমান সময়ে গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
যৌন নির্যাতনের পিছনে ‘পিটার প্যান সিনড্রোম’! কী বলছেন মনোবিদরা?