যখন সন্ত্রাসবাদী হামলায় মানুষের প্রাণ বিপদের মুখে পড়ে, তখন সারা পৃথিবী জুড়ে ওঠে নিন্দার ঝড়। সেই প্রতিবাদ গড়ে ওঠাই উচিৎ। কিন্তু যদি রাষ্ট্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, তবে তার শাস্তি কে দেবে? এই প্রশ্নটাই তুলছেন বেইরুটের প্রতিবাদীরা। বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবেননের মানুষ দাবি করছেন, সরকারের দায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দকে এই দুর্ঘটনার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের দিতে হবে মৃত্যুদণ্ড। অন্তত বিনা বিচারে মুক্তি পেতে পারেন না তাঁরা। আর এই নিয়ে প্রতিবাদী জনতার সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। এমনকি রাবার বুলেট ছোঁড়ার অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু এসবের মধ্যেই সকলকে অবাক করে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দায়াব।
বেইরুট বন্দরের দুর্ঘটনায় এখনও অবধি ১৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ৬০০০ জনের বেশি মানুষ। কিন্তু এত বড় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে? দীর্ঘদিন ধরেই বন্দরের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় ওয়ারহাউসে সঞ্চিত ফসফেট সরিয়ে ফেলার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে বারবার। কিন্তু কোনোকিছুতেই কর্ণপাত করেনি প্রশাসন। তবে এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কি আদৌ কোনো শাস্তি নেই? প্রধানমন্ত্রী কিন্তু সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন। আর সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ঘোষণা করলেন সমস্ত মন্ত্রীসভাই পদত্যাগ করবে। এই ঘোষণা আন্দোলনের এক বিরাট সাফল্য বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বেইরুট দুর্ঘটনার মতো বিধ্বংসী বিস্ফোরণের উদাহরণ পাওয়া যায় শুধু পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঘটনায়। তবে বেইরুটের ঘটনা পারমাণবিক দুর্ঘটনা নয়। এখনও অবধি বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও বন্দরের আশেপাশেই তার মূল, এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আর সেখানে সঞ্চিত রাসায়নিক পদার্থ বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। এর প্রভাব শুধু মানুষের উপরেই পড়েনি। বিস্ফোরণে প্রায় ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক প্রাসাদ। ভেঙে পড়েছে অটোমান সাম্রাজ্যের সাক্ষী রডারিক সারশক প্রাসাদটিও। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। আর তাতেই ক্ষোভ বেড়েছে আরও। কোথায় পরিণতি পাবে এই আন্দোলন? তা সময়ই বলবে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
তীব্রতায় হিরোশিমার প্রায় ২০ শতাংশ, বেইরুটের বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবাননের খাদ্যভাণ্ডারও