পৃথিবীর ইতিহাস বড়োই বিচিত্র। কত শত প্রাণী হাজির হয়েছে এই গ্রহে, নিজের ক্ষমতায় টিকেছে, আবার হারিয়েও গেছে। তবে সেই সবকিছুর ওপরে হাজির হয়েছি আমরা, অর্থাৎ মনুষ্যপ্রজাতি। বুদ্ধি, চিন্তা, সৃজনশীলতার জোরে পার হয়েছি একের পর এক বাধা। এটাই কি সব? ইতিহাস, বিজ্ঞানের বইতে সৃষ্টির ইথাস যেভাবে জেনেছি, সেটাই কি সঠিক? যত দিন যাচ্ছে, সেই তথ্যগুলির ওপরেই প্রশ্নচিহ্ন উঠে আসছে। সত্যিই কি আমরা, অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্সরাই একমেবাদ্বিতীয়ম? নাকি, আরও বেশ কিছু প্রজাতির জন্ম হয়েছিল সেই সময়…
আরেকটু খোলসা করা যাক। বিগত কয়েক বছরে মানবজাতির সৃষ্টির ইতিহাস অনেক ব্যাড বদল করেছে। আগে একভাবে বিবর্তনকে জেনে এসেছি আমরা। জেনেছি অস্ট্রালোপিথেকাস, নিয়ানডারথাল, হোমো ইরেকটাসদের কথা। এদেরই উত্তরপুরুষ হোমো সেপিয়েন্স, যারা কিনা আধুনিক মানুষ হিসেবে পরিচিত। ক্রমাগত বিবর্তন, অভিযোজন হতে হতে আজকের রূপে এসে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় এই ছকটাকেই নতুন করে সাজানোর দরকার হয়ে পড়ে। তার কারণ বেশ কিছু নতুন জীবাশ্মের আবিষ্কার। যে জীবাশ্মগুলো প্রমাণ করে, এই কয়েকটি প্রজাতিতেই শেষ হয়ে যায়নি মানুষের ইতিহাস। বরং এর শিকড় আরও আরও গভীরে…
ঐতিহাসিক ও গবেষকরাও এখন মগ্ন সেই সব বিষয়। তাঁরা এও বলছেন, অস্ট্রালোপিথেকাস, নিয়ানডারথালের পর শুধু হোমো সেপিয়েন্স নামের একটিমাত্র উন্নত মানুষের প্রজাতিই সৃষ্টি হয়েছিল, এটা সম্ভব নয়। অন্তত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়ে তো কখনই মানা যাবে না এমনটা। তাহলে? এখানেই অদ্ভুত একটি তত্ত্ব সামনে আনতে চাইছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, হোমো সেপিয়েন্সের সঙ্গে আরও বেশ কিছু প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কালে কালে আমরাই টিকে আছি, তারা আর নেই। নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কার সেই মিসিং লিঙ্কগুলিকেই ভরাট করছে।
এই গবেষণা করতে করতেই বেশ কিছু বিষয় সামনে উঠে এসেছে। ইতিহাস বলে, আনুমানিক তিন লক্ষ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানুষের উৎপত্তি। তবে তারা একাই যে পৃথিবীতে বিবর্তিত হয়েছিল, তা কিন্তু নয়। এই তো আনুমানিক ১৫ হাজার বছর আগেও যখন আমরা গুহাবাসী ছিলাম, তখন সেপিয়েন্সের সঙ্গে আরও একটি মানবপ্রজাতির অস্তিত্ব ছিল। এই প্রজাতিটির নাম ‘ডেনিসোভানস’। শুধু তাই নয়, মানুষের বিবর্তনের ছকে হোমো ইরেকটাসও আসে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রজাতিটিও আসলে আগের আরও বেশ কিছু প্রজাতির (অস্ট্রালোপিথেকাস, হোমো জর্জিকাস, হোমো এরগাস্টার ইত্যাদি) মিশ্রণ।
আরও আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি ইউরোপীয়দের জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে পড়াশোনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে ওই জিনের মধ্যে অন্তত দুই শতাংশ এসেছে নিয়ানডারথালদের থেকে। আবার একই গবেষণা যদি অস্ট্রেলিয়ার উপজাতিদের নিয়ে করা হয়, তাহলে দেখা যাবে তাদের জিনে নিয়ানডারথাল নয়, ডেনিসোভানসদের বৈশিষ্ট্য। একই পৃথিবীতে দুটো আলাদা জায়গার আলাদা হোমো সেপিয়েন্সদের মধ্যে এমন বৈপরীত্য? গবেষকরা বলছেন এটাই বৈচিত্র্যই প্রমাণ করে হোমো সেপিয়েন্স একা নয়; একই সময় আরও বেশ কিছু প্রজাতির অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে। তাহলে ঠিক কটা মানবপ্রজাতির অস্তিত্ব ছিল এখানে? সেই তালিকাই এখন তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। আপাতত হোমো সেপিয়েন্সের সঙ্গে আরও ২১টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে গবেষণা বাকি এখনও। আরও নতুন নতুন বিস্ময়ের সন্ধান হয়তো পাবো আমরা…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
হলুদ রং, হাসিমুখ ও ‘এনার্জি সিক্রেট’ – স্মাইলির জন্ম ও বিশ্বজয়ের ইতিহাস