কেন ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন ভ্যান গঘ? নতুন অসুস্থতার খোঁজ পেলেন গবেষকরা

নিজের শিল্পের মতোই নিজের জীবনের জন্যেও বরাবর চর্চাতে থেকেই যান প্রবাদপ্রতিম ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। কী ছিল তাঁর অসুস্থতা? অ্যালঝাইমার্স? বাইপোলার ডিসঅর্ডার? সেইসব তত্ত্ব বাতিল করে এবার নয়া কৌতূহলের হদিশ দিলেন একদল গবেষক। সদ্য প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যালকোহল প্রত্যাহারের ফলে 'ডেলিরিয়াম' থেকে ভুগছিলেন শিল্পী।

শিল্পীদের মানসিক রোগ সংক্রান্ত একটি নতুন গবেষণায় সামনে এসেছে এই তথ্য। কী এই ডেলিরিয়াম? চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেলিরিয়াম হল মস্তিষ্কে হঠাৎ পরিবর্তন যা মানসিক বিভ্রান্তি তৈরি করে; স্বাভাবিক চিন্তাভাবনায় বিঘ্ন ঘটায়। মনোযোগে ঘাটতি পড়ে। স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়। ঘুমও হয় না ঠিক মতো। অ্যালকোহল প্রত্যাহারের সময় ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ হিসেবে, অস্ত্রোপচারের পরে অথবা ডিমেনশিয়া থাকলে এই ডেলিরিয়ামের মতো কঠিন ব্যাধি দেখা দিতে পারে।

ডাচ শিল্পী ভ্যান গঘ, তারা ভরা আকাশের ছবি আঁকতেন যিনি অদ্ভুত নীল রঙের মায়ায়, আচমকাই আত্মহত্যা করেছিলেন ৩৭ বছর বয়সে। সালটা ১৮৯০। ততদিনে আঁকা হয়েছে সাকুল্যে ন’শোটার মতো ছবি। চিকিৎসকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন গুরুতর বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগে ভুগছিলেন তিনি। যদিও এই অসুস্থতাগুলি কখনই ধরা পড়েনি।

ভিনসেন্টের মন খারাপের সন্ধান করতে বিশেষজ্ঞরা তন্নতন্ন করে ঘেঁটে দেখেছেন শিল্পীর লেখা ন’শোরও বেশি চিঠি। এর মধ্যে ভাই থিওকেই লেখা অর্ধেকেরও বেশি। ভিনসেন্টের চিকিৎসা করা ডাক্তারদের বয়ানও দেখা হয়েছে খতিয়ে। বারবার দেখা হয়েছে মেডিক্যাল রেকর্ড।

নেদারল্যান্ডসের দ্য ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার গ্রোনিঞ্জেনের গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে ভ্যান গঘ অন্তত দু’বার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন। ১৮৮৮ সালে নিজের কান কেটে ফেলার পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ভিনসেন্টকে। তার পরেই মদ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। দেখা দেয় উইথড্রয়াল সিনড্রোম। চিকিৎসকদের মত, এই অ্যালকোহল প্রত্যাহারের ফলেই স্মৃতি নষ্ট হতে শুরু করে ভিনসেন্টের। আলু ক্ষেতের চাষীদের মুখ আর মনে পড়ছে না তখন ভিনসেন্টের। মন খারাপ হচ্ছে আরও। একাধিকবার গভীর ডিপ্রেসনে চলে গিয়েছিলেন শিল্পী, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরাও।

যদিও চিকিৎসকদের এই দলটি ভিনসেন্টের মনস্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘সিজোফ্রেনিয়া’ এবং ‘পোরফেরিয়া’ রোগদুটির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করেছেন। যদিও কোনও কোনও চিকিৎসকের সন্দেহ করা মৃগী রোগের সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন
গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে, শেষ ছবিটি কোথায় এঁকেছিলেন ভ্যান গঘ? অবশেষে মিলল হদিশ

‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’ সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে গত সোমবার প্রকাশিত গবেষণায় গবেষকরা বলেছেন যে, সম্ভবত ‘ফোকাল এপিলেপসি’তেও ভুগেছিলেন ভিনসেন্ট। এর ফলে উদ্বেগ, বিভ্রান্তি এবং হ্যালুসিনেশনের বিভিন্ন স্তরে সমস্যা তৈরি হতে পারে শিল্পীর। ভ্যান গঘের ক্ষেত্রে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অত্যধিক মদ্যপান, অপুষ্টি, প্রায় না ঘুমানো এবং মানসিক ক্লান্তি। এগুলি অকথ্য চাপ তৈরি করতে পারে মস্তিষ্কে।

যদিও ভ্যান গঘের অসুস্থতা এবং আত্মহত্যার একদম সঠিক কারণ কী, সেই নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করতে চাননি গবেষকেরা। এই অনুসন্ধান আরও চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আদৌ আত্মহত্যা, না খুন – এই বিতর্কও রয়েছে বেশ ভালোমতোই। কিছু গবেষকের স্থির বিশ্বাস, খুন করা হয়েছিল ভ্যান গঘ-কে। তবে সে-প্রসঙ্গ এখন থাক। বরং তারায় মিশে যাওয়া একটা মানুষের মনের সন্ধান পাওয়া কতটা সহজ হবে গবেষকদের পক্ষে, সেদিকেই নজর থাকুক আমাদের...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আত্মহত্যা করেননি ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ; হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে!

More From Author See More

Latest News See More