স্তরে স্তরে সাজানো হয়েছে কাগজ। আর তা দিয়েই তৈরি একটি সম্পূর্ণ স্কার্ট। তবে শুধু কাগজ বললে ভুল বলা হবে। আসলে সেগুলি চিঠি। প্রত্যাখ্যানপত্র। আর তা জুড়ে জুড়েই স্কার্ট বানালেন তরুণী। সেই স্কার্ট পরেই ছবি দিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। মিশিগানের ২৯ বছর বয়সী তরুণ গবেষক কেটলিন কিবরির কাণ্ডে অবাক সোশ্যাল মিডিয়া।
সাফল্যের পথ যে খুব একটা সোজা নয়, তা নতুন করে বলার কিছুই নেই। একাধিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়তে লড়তেই আসে সফলতা। কিন্তু সবাই কি সেই জেদটা ধরে রাখতে পারে? প্রত্যাখ্যাত হতে হতে একসময় মরে যায় উপরে ওঠার ইচ্ছেই। তবে এমনটা যাতে না হয়, সে জন্যই কেটলিনের এই উদ্যোগ।
বিভিন্ন বিজ্ঞান সম্মেলনী, অ্যাকেডেমিক জার্নাল এবং বৃত্তির জন্য বারবার আবেদন করেও ফিরতে হয়েছিল কেটলিনকে। পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পরেও প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল শিক্ষা জগতে। তবে প্রতিবারই নতুন করে লড়াকু মানসিকতা ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অনুভূতিকে গ্রহণ করতে হয়। নাহলে টিকে থাকা যায় না লড়াইয়ে। নিজের ব্যর্থতাকে স্বীকার না করতে পারলে সম্পৃক্ত হয়ে যায় যাত্রাপথ।
বহু প্রত্যাশা নিয়েই বারবার নানান আবেদন করেছেন কেটলিন। অক্লান্ত ভাবে। সম্প্রতি সুফল মিলেছে অবশ্য তাঁর। বর্তমানে নেব্রাস্কা-লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেট করছেন তিনি। জার্মানিতে নগর-কৃষিকাজের ওপর উল্লেখযোগ্য গবেষণার জন্য সম্মানিত হয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ ফুলব্রাইট বৃত্তিতেও।
গবেষণা জীবনের মোট ১৭টি প্রত্যাখ্যানপত্র দিয়ে বানানো স্কার্ট পরে অতীতের দিনগুলোকেই আরও একবার স্মরণ করে নিতে চান কেটলিন। আরও একবার ঝালিয়ে নিতে চান নিজের লড়াকু মানসিকতাকে। তবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দিন এখানেই শেষ নয়, তাও স্বীকার করেছেন কেটলিন। ভবিষ্যতেও তিনি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জন্য প্রস্তুত। জানিয়েছেন, এই স্কার্টের দৈর্ঘ্য আরও দীর্ঘতর হবে নিশ্চয়ই। তবে তা মনখারাপ বা হতাশাজনক কিছুই নয় তাঁর কাছে। বরং নিজের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার আরও কিছু সুযোগ আসবে বলেই আশাবাদী তিনি।
কেটলিনের এই মানসিকতাই যেন এক দৃষ্টান্ত। যেখানে প্রায়শই শিক্ষাক্ষেত্রে হতাশার কারণে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে সারা পৃথিবীতে। সেখানে এই ধরণের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে কেটলিন সমস্ত শিক্ষার্থীদেরই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন একটা প্রত্যাখ্যানই শেষ কথা হতে পারে না নিজের অর্জিত শিক্ষার। আর অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন শক্ত হয়ে নিজের অধিকারের জন্য লড়ে যাওয়ায়...
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে বাংলার গেঁড়ি-গুগলি, আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্সির দুই গবেষক
Powered by Froala Editor