স্কুলে পড়াকালীন ইতিহাস পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন প্রায়শই আসত। ছাত্রছাত্রীরাও নিজেদের তৈরি করে যেতেন সেভাবে। প্রশ্নপত্র পড়লে দেখে নেওয়া সেই অমোঘ প্রশ্নটি এল নাকি! কী প্রশ্ন? ‘সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণগুলি আলোচনা করো’। শুধু পড়ুয়ারাই নয়, বিশেষজ্ঞদের কাছেও এই প্রশ্ন বারবার এসেছে নানা জায়গা থেকে। নিজেরাও গবেষণায় নিয়োজিত থেকেছেন। সম্প্রতি সেরকমই একটি গবেষণা সামনে এসেছে। আর সেই গবেষণা অনুযায়ী, সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের জন্য দায়ী— জলবায়ু পরিবর্তন!
রোচেস্টার ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির ভারতীয় বংশোদ্ভূত গবেষক নিশান্ত মালিক এমন তথ্য পেশ করেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ক্যাওস’-এ প্রকাশিত এই গবেষণার মূল ভিত্তি হল গাণিতিক কিছু প্যাটার্ন। আজ থেকে ৫,৭০০ বছর আগে ভারত এবং সিন্ধু অববাহিকার জলবায়ুর ধরণ কেমন ছিল, ঠিক কী কী সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল সেই সব তথ্য এই গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মনে করছেন। আর আনুমানিক ওই সময়তেই সিন্ধু সভ্যতার পতন হয়েছিল।
অমন বিশাল ও উন্নত একটি সভতার পতনের সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনও অন্যতম। তাহলে এটাকেই কেন জোর দিয়ে দেখা হচ্ছে? এখানে নিশান্ত তুলে ধরছেন অন্যান্য গবেষকদের দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলাফলকে। যেভাবে সিন্ধু সভ্যতার ক্রমাবনতি হয়েছে, আর এখন সেই অঞ্চলের যা ভৌগোলিক পরিস্থিতি তাতে জলবায়ু পরিবর্তনই জোরালো হিসেবে উঠে আসছে। সেখানেই নিশান্ত নিয়ে এসেছেন তাঁর নতুন পদ্ধতি। সাধারণত এই ধরণের গবেষণায় ডায়নামিক সিস্টেম থিয়োরির প্রয়োগ হয়। তবে নিশান্তের দাবি, প্যালিওক্লাইমেটিক তথ্যের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাঁর পদ্ধতিটি বেশি কার্যকরী। সেখান থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্যটি আরও জোরালোভাবে সামনে আসছে।
তবে এই খবরটি আমাদের জন্যও এক প্রকার আশঙ্কার জায়গা তৈরি করে দিল। জলবায়ু পরিবর্তন এই মুহূর্তে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড়ো সমস্যা। প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে দূষণের পরিমাণ। আমাদের অবস্থাও কি এরকম হয়ে যাবে না? এই গবেষণার পাশাপাশি নিজেদের দিকেও ঠিক থাকতে হবে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
সমুদ্রের নিচে প্রাচীন সভ্যতার হদিশ, ঐতিহাসিকদের নজরে অস্ট্রেলিয়ার উপকূল
Powered by Froala Editor