১৪ নভেম্বর, সারা ভারত জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘শিশু দিবস’। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবরের জন্মদিন ১৭ মার্চ পালিত হলেও, পাকিস্তান-সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে শিশু দিবস ২০ নভেম্বর। তার আগেই এক বিপদবার্তা নিয়ে উপস্থিত জাতিসংঘের (United Nations) রিপোর্ট। যেখানে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় (South Asia) কয়েক কোটি শিশু ভয়ানক জলসংকটের (Water Scarity) মুখোমুখি। ভারত-সহ মোট আটটি দেশের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। যে সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই জানাচ্ছে জাতিসংঘ।
সারা বিশ্বজুড়েই প্রবল আকার ধারণ করেছে জলসংকট। এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যার তীব্রতা অনেক গুণ বেশি। মাস কয়েক আগে ‘ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটুট অ্যাকাডেক্ট ওয়াটার রিস্ক অ্যাটলাস’-এর সমীক্ষা জানিয়েছিল ২৫টি দেশে ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে ভলভাণ্ডার। ভারতও ছিল সেই তালিকায়। অর্ধেক বিশ্ববাসী, অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি মানুষকে বছরে অন্তত একটি মাস ভুগতে হয় জলসমস্যায়। ২০৫০-এর মধ্যে এই পরিসংখ্যান একলাফে ৬০ শতাংশ বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে নদীবাঁধ নির্মাণ ও জলের অধিকার নিয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানের মধ্যে ঘটেছে ‘জলযুদ্ধ’-এর মতো ঘটনাও। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ‘ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেন’স এজেন্সি’-র নতুন রিপোর্ট চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
১৩ নভেম্বর প্রকাশিত সেই রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৫ কোটি শিশুকে প্রতিদিন অত্যন্ত উদ্বেগজনক জলসংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যা সারা বিশ্বের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই দেখা দিয়েছে এই পরিস্থিতি। কোথাও ধারাবাহিক খরা, তো কোথাও অত্যধিক মাত্রায় বৃষ্টি। তার সঙ্গে বাড়তি বিপদ ডেকে এনেছে জলদূষণ। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে বসেছে। রিপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে আটটি দেশের কথা। যেগুলি হল আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। অর্থাৎ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশেই জলসমস্যায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে অপুষ্টি ও অন্যান্য মারণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে তাদের শরীরে।
ইউনিসেফের (UNICEF) একটি রিপোর্টে কিছুদিন আগেই জানানো হয়েছিল, দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ৭ কোটি শিশু খরাপ্রবণ এলাকায় থাকে। যেখানে মাটির তলার জল প্রায় শেষ। নদীর জলও বিষাক্ত। রিপোর্ট অনুযায়ী একই বিপদ অপেক্ষা করে আছে গাঙ্গেয় উপত্যকার জন্য। অবৈজ্ঞানিকভাবে কূপখনন, দূষণ, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাব, উদাসীনতা সব কিছুই দায়ী এই জলসংকটের জন্য। মানুষের ন্যূনতম অধিকার হওয়া সত্ত্বেও বহু মানুষের কাছে নদী-পুকুরের বিষাক্ত জল ছাড়া সম্বল বলতে কিছু নেই। কিন্তু বিশেষ করে কেন শিশুদের কথা বলা হচ্ছে? কারণ, এই আটটি দেশে শিশুশ্রমিকের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। যাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা নেই, তাদের বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামাবে কে? তাছাড়া দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলিকেও প্রতিনিয়ত ভুগতে হয় একই সমস্যায়। জীবনের সঙ্গে লড়তে গিয়ে অবহেলা করা হয় জল নামের ‘জীবন’কে। আর সংশ্লিষ্ট সব মহলই এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে।
আরও পড়ুন
জলের পাউচ বাড়াচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ পদক্ষেপ ‘প্লাস্টিক ম্যান’-এর
২০২২-এ ইউনিসেফ-এর রিপোর্টে এই সংখ্যাটা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লক্ষ। দেড় বছরের মধ্যে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেক সংখ্যক শিশুর কাছে বিশুদ্ধ জল পৌঁছোবে না। এমনটাই মনে করছে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা এবং মধ্য আফ্রিকা নিয়েও। সমাধান কী? সকলের চোখের সামনেই রয়েছে তার উত্তর। জল সংরক্ষণ, জল ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি নীতি, জলদূষণ রোধে উপযুক্ত নিলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে অনেকটা। কিন্তু, প্রশ্নটা হল দায়িত্বটা নেবে কে? বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই রাজনৈতিক নেতা, সরকার-বিরোধী পক্ষ, এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও। জলসংকটের থেকে কম উদ্বেগজনক নয় এই উদাসীনতা!
আরও পড়ুন
শুকিয়ে যাচ্ছে সমস্ত জলাধার, জলসংকটের শিকার কোলহাপুর সংলগ্ন ১৬০০টি গ্রাম
Powered by Froala Editor