দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উঠলে সবসময় আলোচনায় উঠে আসে তরুণ প্রজন্মের কথা। তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা। অথচ এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ছায়ায় রয়েছেন তাঁরাও, বয়সের কারণেই যাঁরা সমাজে আর নিজেদের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পান না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ-উপদেষ্টা কমিটি থেকে তাঁদের নিয়েই এক ব্যতিক্রমী রিপোর্ট জমা পড়েছে। বলা ভালো, ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে কোনো অর্থনৈতিক রিপোর্ট জমা পড়ল। এই পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাজস্থান, মিজোরাম, হিমাচলপ্রদেশ এবং চণ্ডীগড়। আর কাশ্মীর, গুজরাট, তেলেঙ্গানা এবং হিমাচল প্রদেশের পরিকাঠামো সবচেয়ে খারাপ।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ-উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায়ের মতে, একটা দেশের অর্থনৈতিক নীতি যদি বয়স্ক মানুষদের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে সেটা একটা বড়ো ব্যর্থতা। আর এই নীতি তৈরি করতে গেলে একটা পরিসংখ্যান প্রয়োজন। এতদিন সেটাই ছিল না। আর তাই তিনি ইনস্টিটিউট অফ কম্পিটিটিভনেসের গবেষক ডঃ অমিত কাপুরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এমন একটা পরিসংখ্যান গড়ে তোলার জন্য। তিনি সমগ্র রিপোর্টটিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। বয়স্ক মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং নিজস্ব আয়ের সুযোগ। প্রতিটা বিষয়েই সারা ভারতের অবস্থাই বেশ আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ডঃ কাপুর। সব মিলিয়ে ভারতের সার্বিক স্কোর ৩৩ শতাংশের বেশি নয়। অন্যদিকে সার্বিক স্কোরের ভিত্তিতে অধিক সংখ্যক বয়স্ক মানুষ রয়েছেন এমন রাজ্যগুলির মধ্যে এগিয়ে রয়েছে রাজস্থান। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে চণ্ডীগড় এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে হিমাচলপ্রদেশ ও মিজোরাম। এই চার অঞ্চলের স্কোর যথাক্রমে ৫৪.৬১, ৬৩.৭৮, ৬১.০৪ এবং ৫৯.৭৯।
ডঃ কাপুরের মতে, বয়স্ক মানুষরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছেন নিজস্ব আয়ের নিরিখে। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা সন্তানদের উপর নির্ভরশীল, তাই তার ছাপ পড়ে অন্যান্য বিষয়গুলিতেও। সেইসঙ্গে গ্রামেগঞ্জে স্বাস্থ্য পরিষেবা অত্যন্ত বড়ো সমস্যা। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির দুর্গম পরিবেশের কারণেও বহু বয়স্ক মানুষ চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এই সমস্ত বিষয়গুলিতে সরকারের ভূমিকা কতখানি, এবং কীভাবে সরকারি নীতিকে আরও উন্নত করে তোলা যায়, সেটা অবশ্য মন্ত্রীসভার সদস্যরাই ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে যখন জন্মনিয়ন্ত্রণ সাফল্যের দিকে এগোচ্ছে এবং সার্বিক পরিবার পরিকল্পনার পরিবর্তন ঘটছে, তখন সারা দেশের মোট জনসংখ্যার নিরিখে বয়স্ক মানুষদের সংখ্যাও বাড়ছে। বিগত ১০ বছরে দেশে ৬০ বছরের বেশি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৮.৯ শতাংশ। তাই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্যই যে তাঁদের প্রতি আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন, সে-কথা বলাই বাহুল্য। আর এই রিপোর্ট তারই শুরু বলে মনে করছেন অনেকে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বয়স ১০০, বিশ্বের প্রবীণতম ভারোত্তলক হিসেবে গিনেস বুকে এডিথ